জ্ঞানবাদ ও সমগ্রতাবাদ তত্ত্ব

জ্ঞানবাদ ও সমগ্রতাবাদ তত্ত্ব

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

  •  জ্ঞানবাদ কী?
  • সমগ্রতাবাদ তত্ত্ব কী?
  • সমগ্রতাবাদ তত্ত্বের আলোকে শিম্পাঞ্জির পরীক্ষণ।

জ্ঞানবাদ কী?

আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানে জ্ঞানবাদ (Cognitism) মতবাদটি তুলনামূলকভাবে নতুন। মূলত আচরণবাদ মতবাদের সীমাবদ্ধতার কারণে এই মতবাদের উত্থান ঘটে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষের অনেক জটিল আচরণের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা আচরণবাদীরা দিতে পারছিলেন না। সেক্ষেত্রে জ্ঞানবাদীদের ব্যাখ্যা এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করে। জ্ঞানবাদে শিক্ষার্থী কীভাবে শেখে এবং জ্ঞানের প্রকৃতি কেমন তা ব্যাখ্যা করে। আচরণবাদীরা শিখনের ফলকে পরিমাপ করেন উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়া হিসাবে কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়ায় মানসিক কোন সংযুক্তি থাকে কিনা তা বিবেচনা করা হয় না। কিন্তু শিখনে উদ্দীপক ছাড়াও যে জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া থাকে তা আচরণবাদীরা খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। জ্ঞানবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে করা হয় শিখন হলো ব্যক্তির নিজস্ব ও অন্তর্নিহিত কোন এক প্রক্রিয়া যা শিখন সম্পাদন করে থাকে। তাদের কাছে শিখন একটি প্রক্রিয়াজাত বিষয় এবং এটি সরাসরি পরিমাপ করা যায় না বরং তা ব্যাখ্যার বিষয়।

জ্ঞানীয় মতবাদের পক্ষে নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা হলেন ওয়ার্দিমার, কোহলার ও কাফকার সমগ্রতাবাদ (Gestalt Theory) এবং পিঁয়াজে, ভিগট্‌স্কির, ব্রুনার, অসুবেল প্রমুখের তত্ত্বের আলোকে প্রণীত গঠনবাদ (Constructivism)। এছাড়া কার্ট লিউইনের ফিল্ড থিওরি ও সিগমন্ড ফ্রয়েডের মনসমীক্ষণবাদ এর মধ্যেও জ্ঞানবাদের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। জ্ঞানবাদ তত্ত্বগুলোর মধ্যে দু’টি তত্ত্ব শিক্ষাক্ষেত্রে বহুল আলোচিত। অন্যতম এ তত্ত্ব দু’টি হলো:

  • সমগ্রতাবাদ তত্ত্ব ও
  • গঠনবাদ তত্ত্ব

'ব্যক্তি কেবল উদ্দীপক অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া ঘটায় না বরং উদ্দীপককে প্রত্যক্ষণ করে' -উক্তিটির আলোকে সমগ্রতাবাদ তত্ত্ব

১৯১২ সালে জার্মানিতে ম্যাক্স ওয়ার্দিমার Gestalt Theory মতবাদটি প্রকাশ করেন। gestalt একটি জার্মান শব্দ যার বাংলা অর্থ রূপ অথবা আকার। গেস্টাল্ট মতবাদটি বাংলায় সমগ্রতাবাদ বা অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন তত্ত্ব নামে পরিচিত। সমগ্রতাবাদীরা মনে করেন যে, কেবল উদ্দীপক অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া ঘটে না। বরং ব্যক্তি উদ্দীপককে কীভাবে প্রত্যক্ষণ করে এবং প্রত্যক্ষণ অনুযায়ী কীভাবে সাজায় তার ওপর নির্ভর করে তার প্রতিক্রিয়া ঘটে। এ কারণেই একই উদ্দীপকের প্রেক্ষিতে সবার প্রতিক্রিয়া সমান হয় না। মূলত উদ্দীপককে অনুধাবন করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও প্রত্যক্ষণ তথা জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সমগ্রতাবাদ মতবাদের শিম্পাঞ্জি পরীক্ষণ

সমগ্রতাবাদী মনোবিজ্ঞানীগণ দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়ে সমগ্রতাবাদ মতবাদ তথা অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন তত্ত্ব প্রদান করেন। তারা একটি শিম্পাঞ্জি নিয়ে এই গবেষণার দ্বারা মতবাদটি প্রমাণ করে দেখান। শিম্পাঞ্জি নিয়ে পরীক্ষণটির বর্ণনা নিচে বর্ণনা করা হলো:

  • একটি শিম্পাঞ্জি খাঁচায় রেখে তার ভেতরে ২টি লাঠি এমনভাবে রাখা হলো যাতে লাঠি দুটিকে একত্রে জোড়া দিয়ে লম্বা করা যায়।
  • এরপর খাঁচার বাইরে একটি কলা এমনভাবে রাখলেন যা হাত বাড়িয়ে আনা যায় না, আবার কেবল একটি লাঠি দিয়েও আনা যায় না। কিন্তু দুটি লাঠি জোড়া দিয়ে লম্বা করে সেটা আনা যায়।
  • শিম্পাঞ্জিটি বহু চেষ্টা করেও হাত, পা বা একটি লাঠি দিয়ে কলার নাগাল না পেয়ে সে যখন ব্যর্থ মনোরথ হয়ে বসেছিল তখন হঠাৎ করেই তার মনে লাঠি জোড়া দেওয়ার চিন্তা আসলো।
  •  চিন্তা অনুসারে মুহুর্তের মধ্যে উঠে গিয়ে লাঠি দু’টি বারবার নাড়াচাড়া করতে করতে হঠাৎ একটি লাঠি আরেকটি লাঠির মধ্যে ঢুকে যায়। এর ফলে সেই লম্বা লাঠি দিয়ে কলা পাওয়া সহজ হলো এবং তা খেতে পারলো।

উপরোক্ত বর্ণনায় শিম্পাঞ্জির লাঠি জোড়া দেওয়া আচরণবাদের ফল নয় বরং তা শিম্পাঞ্জিটির অন্তর্দৃষ্টি তথা জ্ঞানীয় দৃষ্টিভঙ্গির ফলাফল। কলা খেতে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা তার এই অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে। এক্ষেত্রে কলাটি বলবর্ধক হিসেবে কাজ করেছে। মূলত অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন একটি সমগ্রতাবাদী বিষয়; কারণ এখানে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রাণীর চিন্তা চেতনায় প্রতিক্রিয়াটি সৃষ্টি হয় এবং সে অনুযায়ী আচরণ সম্পন্ন করে।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।