শিক্ষক যোগ্যতা ও এর ক্ষেত্র

শিক্ষক যোগ্যতা কী?

শিক্ষকের জ্ঞান, প্রয়োজনীয়তা দক্ষতাভিত্তিক কাজ করার সু-অভ্যাস এবং কিছু আচরণিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় করার ক্ষমতাকে শিক্ষক যোগ্যতা বলা হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য একজন শিক্ষককে বিদ্যালয় ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক বেশকিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেকারণে শিক্ষকের যথাযথ পেশাগত দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতার মধ্যে তাঁর পেশা ও বিষয় সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুশীলন এবং এ বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বা মূল্যবোধ থাকা অপরিহার্য। মূলত এই তিনটি বিষয়ে সমন্বয়েই শিক্ষক হিসেবে কে কতটা সফল বা যোগ্যতা বিবেচিত হয়।

সারাবিশ্বেই শিক্ষকদের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু শিক্ষক যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় এস্টিম প্রকল্প সর্বপ্রথম বাংলাদেশে শিক্ষক যোগ্যতা নিয়ে কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় এর পরিমার্জন, পুনঃচিন্তন শিক্ষক যোগ্যতাকে একটি নতুন আঙ্গিক ও অবয়ব প্রদান করেছে।

শিক্ষক যোগ্যতার ক্ষেত্র কয়টি ও কী কী?

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য শিক্ষকযোগ্যতার ৩ টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো:

১. পেশাগত জ্ঞান ও উপলব্ধি (Professional Knowledge)

২. পেশাগত অনুশীলন (Professional Practice)

৩. পেশাগত মূল্যবোধ ও সম্পর্ক স্থাপন (Professional Values / (Relationship)

পেশাগত জ্ঞান ও উপলব্ধি (Professional Knowledge)

১. প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের পূর্ণ পরিধি কার্যকর ও আস্থার সঙ্গে শিক্ষাদান ও মূল্যায়নের জন্য বিষয়জ্ঞানের পরিকল্পনা;

২. প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের পূর্ণ পরিধি কার্যকর ও আস্থার সঙ্গে শিক্ষাদান ও মূল্যায়নের জন্য শিক্ষণ বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের পরিকল্পনা;

৩. জাতীয় প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম, শিক্ষাক্রমের কাঠামো, বিষয়, যোগ্যতাসমূহ এবং মূল্যায়ন কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা;

৪. কার্যকর ও সামগ্রিকভাবে শিক্ষাদানের জন্য শিশুবিকাশ ও শিক্ষণ তত্ত্বসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান ও উপলব্ধি থাকা;

৫. শিক্ষকতার দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যবহৃত বিধিবিধান ও নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত থাকা ।

পেশাগত অনুশীলন (Professional Practice)

১. শিক্ষার্থীদের চাহিদার আলোকে পৃথক পৃথক শিক্ষণতত্ত্ব ও শিক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণে পাঠপরিকল্পনা ও পাঠ পরিচালনার সক্ষমতা থাকা;

২. সকল শিক্ষার্থীর উচ্চ-প্রত্যাশা উপলব্ধি করতে পারা;

৩. যোগাযোগ দক্ষতা- সকল শিশু যাতে শিখনের বিষয়বস্তু সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারে সে জন্য উপস্থাপন করতে পারা;

৪. যোগাযোগ দক্ষতা- বিভিন্ন ধরনের কর্মতৎপরতা ও যথাযথ প্রশ্ন করার কে․শল জানা, এবং শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা দক্ষতার মাধ্যমে একটি শিখন পরিবেশ (scaffold of learning) তৈরির সক্ষমতা থাকা;

৫. নিরাপদ, যত্নশীল, সৃজনশীল, উদ্ভূদ্ধকরণ ও চ্যালেজ্ঞিং এবং একীভূত শিখন পরিবেশ সৃষ্টির দক্ষতা থাকা;

৬. পাঠসংশ্লিষ্ট ও কার্যকর এবং ICT -সহ শিক্ষোপকরণ পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ব্যবহারের দক্ষতা থাকা;

৭. শিক্ষার্থীদের শিখন এবং একীভূত শিক্ষা সম্প্রসারণে সমর্থন ও সহায়তাদানে পরিকল্পনা জ্ঞান ও মূল্যায়ন পরিচালনা দক্ষতা থাকা।

পেশাগত মূল্যবোধ ও সম্পর্ক স্থাপন (Professional Values / (Relationship)

১. শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীর সংগে ব্যবহারে সমতাবিধান, একীভূতকরণ ও ন্যায়পরায়ণতার প্রতি দায়বদ্ধ থাকা;

২. শিক্ষক অনুচিন্তন অনুশীলন ও ধারাবাহিক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে দায়বদ্ধ থাকা;

৩. শিক্ষক সমাজের সকল সদস্যদের সঙ্গে একত্রে কার্যকরভাবে কাজ করতে দায়বদ্ধ ও সক্ষম হওয়া;

৪. সহকর্মীদের সাথে পেশাগত সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করার ব্যাপারে দায়িত্বশীল থাকা।


শিক্ষকমান কী?

শিক্ষকমান হলো শিক্ষকদের পেশাগত পারদর্শিতা মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত কিছু আদর্শ (Standard) এর সমন্বয়, যার মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে শিক্ষকদের পারদর্শিতার অবস্থা যাচাই করা হয়। শিক্ষক তার আত্মমূল্যায়নের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাবেন। এজন্য শিক্ষক নিজ থেকে যেমন সচেষ্ট থাকবেন, তেমনি শিক্ষকের সেই চেষ্টা কতটুকু ফলপ্রসূ তা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষকমান মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। সাধারণত শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তত্ত্বাবধান, পরিবীক্ষণ বা মূল্যায়ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে এক ধরনের মূল্যায়নের কাজ করে থাকে। কখনো কখনো বিদ্যালয় শিক্ষকদের পারদর্শিতা মূল্যায়ন করে। মূলত মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষকের অর্জন ব্যবধান ও দুর্বলতা ধরা পড়ে এবং শিক্ষক তা অর্জনে সচেষ্ট হন।

শিক্ষক যোগ্যতার সাথে শিক্ষকমানের নিবিঢ় সম্পর্ক রয়েছে। ডিপিএড শিক্ষাক্রমে ২৩টি শিক্ষকমান সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই শিক্ষকমানগুলো প্রধান তিনটি ক্ষেত্রে ভাগ করা হয়েছে। যেমন: পেশাগত জ্ঞান ও উপলব্ধি, পেশাগত অনুশীলন এবং পেশাগত মূল্যবোধ ও সম্পর্কস্থাপন। প্রত্যেকটি প্রধান ক্ষেত্রকে কয়েকটি শিখন ক্ষেত্রে ভাগ করে তার আলোকে শিক্ষকমানগুলোকে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ডিপিএড প্রোগ্রামে ১ম-৪র্থ টার্মের সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষকমান (Teacher Standard) মূল্যায়ন করা হয়।

এক্ষেত্রে শিক্ষকমান মূল্যায়ন করা হয় প্রমাণপত্রের মাধ্যমে। সকল শিক্ষার্থীকে ২৩টি শিক্ষকমানেই ৮০% বা তদুর্ধ্ব নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রথম থেকে তৃতীয় টার্ম পর্যন্ত শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জন যাচাই করার জন্য অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক প্রমান সংগ্রহ করা হয়। এই প্রমানের ভিত্তিতে নির্ধারিত ছকে শিক্ষার্থীকে যোগ্যতাভিত্তিক গ্রেড প্রদান করা হয়ে থাকে।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।