শিশু কারা? শিশুরা কীভাবে শেখে?
শিশু বলতে কী বুঝায়?
শিশু হলো অফুরন্ত সম্ভাবনাময় মানবসত্তা।
শিশু শব্দটি শুনলেই প্রথমত তার অবয়বগত বা শারীরিক যেমন-শরীর, চেহারা, আকার-আকৃতিগত
বৈশিষ্ট্য এবং দ্বিতীয়ত, তার বিকাশ বা গুণগত দিক অর্থাৎ মন, দক্ষতা ও আচরণিক বৈশিষ্ট্যসমূহ
আমাদের বিবেচনায় আসে।
বাংলাদেশ শিশু নীতি (২০১১) অনুযায়ী প্রদত্ত শিশু সম্পর্কিত সংজ্ঞা অনুসারে - ‘শিশু বলতে আঠারো বছরের নিচের বাংলাদেশের সকল ব্যক্তিকে বুঝায়।’
জাতিসংঘ শিশু অধিকার নীতিমালায় (UNCRC, ১৯৮৯) শিশুদের বয়স, অধিকার ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এ সনদের আলোকে (সনদ নং-১) ‘১৮ বছরের নিচে সব মানব সন্তানকে শিশু বলা হবে, যদি না শিশুর জন্য প্রয়োজ্য আইনের আওতায় ১৮ বছরের আগেও শিশুকে সাবালক বিবেচনা করা হয়।’
এছাড়াও মনোবিজ্ঞানীগণ এবং বিকাশ বিশারদগণও জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত সময়কে শিশু বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
আমাদের দেশের মোট জনগোষ্ঠির প্রায় অর্ধেকই (৪৭%) শিশু। ডেমোগ্রাফিকস অব বাংলাদেশ এর তথ্য অনুযায়ী দেশের জনগোষ্ঠির ৩৩.৪% হলো ০-১৪ বছরের শিশু। এই বিরাট শিশু জনগোষ্ঠিকে সার্বিকভাবে বিকশিত করার জন্য বিশ শতক পরবর্তীকালে আইন ও বিভিন্ন বিধিবিধান দিয়ে অধিকতর সুরক্ষিত ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে। কারণ অদূর ভবিষ্যতে এরাই দেশ পরিচালনায় বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত হবে। আর তাই পৃথিবীর সব দেশই শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করছে।
শিশুর বৈশিষ্ট্যসমূহ
প্রতিটি শিশুই অনন্য ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য, পছন্দ, চিন্তা, আচরণ ও চাহিদার ভিন্নতা ইত্যাদির কারণেই তারা স্বতন্ত্র্য। আর এই স্বাতন্ত্রতার মূলে রয়েছে শিশুর বংশ ও পরিবেশের প্রভাব। শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য কার্যক্রম নির্ধারণ, সঠিক মিথষ্ক্রিয়া, নিয়মিত যোগাযোগ ও বিভিন্ন বয়সে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও সামগ্রিক বিকাশের ধারা মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে শিশু সম্পর্কে এসব ধারণা আমাদের বিশেষভাবে সহায়তা করে। শিশুদের নিয়ে কার্যক্রম নির্ধারণ ও পরিচালনার করার জন্যে প্রতিটি শিক্ষকর শিশুদের বৈচিত্র্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো জানা আবশ্যক। নিম্নে শিশুদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল:
- প্রতিটি শিশুই অপর শিশু থেকে আলাদা। প্রত্যেকের নিজস্ব সত্তা রয়েছে। কেউ পড়তে পছন্দ করে, কেউ খেলতে, কেউ বা বেড়াতে, কেউ শান্ত স্বভাবের আবার কেউ চঞ্চল প্রকৃতির।
- শিশুদের পছন্দ, চাহিদা ও শিখনের ধরন আলাদা আলাদা হয়। শিশুর পছন্দ গড়ে উঠে বিশেষত: তার বেড়ে উঠার পরিবেশের উপর।
- শিশুরা নিজেদের মতো করে পৃথিবী দেখে, বড়দের মতো করে নয়। তারা পৃথিবীকে অবাস্তবভাবে ফ্যান্টাসী/দিবা স্বপ দেখে।
- শিশুদের মনোযোগের পরিসর অত্যন্ত সীমিত।
- শিশুরা খেলতে পছন্দ করে। সাধারনত: শিশুরা স্বত:স্ফূর্তভাবে খেলায় অংশগ্রহন করে। খেলার মাধ্যমে শিশুর মনোযোগ বাড়ে, শিশুর প্রত্যক্ষণ সুস্পষ্ট হয়।
- শিশুরা সৃজনশীল হয় যে কারণে তারা ছবি দেখতে ও আঁকতে পছন্দ করে।
- প্রকৃতিগত ভাবে শিশুরা চঞ্চল বা অস্থির প্রকৃতির।
- শিশুরা আনন্দপ্রিয় ও কৌতূহলী হয়।
- শিশুরা সাধারণত আত্মকেন্দ্রিক হয়। তারা নিজেদের বাইরে অন্য কোন দিকে খুব বেশী নজর দেয় না।
- বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে, ও নিজস্ব সত্তাকে প্রকাশ করে।
শিশুরা কীভাবে শেখে?
জন্মের পর থেকেই মানুষের শিক্ষা শুরু হয়। শিশু নানা উপায়ে নানা মাধ্যমে শিখতে থাকে। প্রতিনিয়ত আমরা অনেক কিছু শিখি। ছোট থেকে বড় হওয়ার পর আমরা হাঁটতে শিখি, সাঁতার শিখি, গাছে চড়তে শিখি, লেখাপড়া শিখি ইত্যাদি। আমাদেরকে হয়তো কেউ এগুলো বলে দেয়নি তবু আমরা শিখেছি। শিক্ষক হিসেবে আমরা যদি বিদ্যালয় ও পরিবারে শিশুতোষ পরিবেশ এবং শিশুদের শিখনের জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক উপাদান নিশ্চিত করতে পারি তাহলে শিশুদের শিখন উন্নয়ন সম্ভব। নিম্নে শিশুরা কীভাবে শেখে তা বুলেট আকারে উপস্থাপন করা হল:
- দেখে শেখে,
- শুনে শেখে,
- গন্ধ নিয়ে শেখে,
- কল্পনা করে শেখে,
- তুলনা করে শেখে,
- অংশগ্রহণ করে শেখে,
- দলে কাজ করে শেখে,
- স্বাদ নিয়ে শেখে,
- ছবির মাধ্যমে শেখে,
- তুলনা করে শেখে,
- নাড়াচাড়া করে শেখে,
- ছড়ার মাধ্যমে শেখে,
- বারবার চেষ্টা করে শেখে,
- পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শেখে,
- গল্পের মাধ্যমে শেখে,
- বই পড়ে শেখে,
- অভিনয়ের মাধ্যমে শেখে,
- প্রশ্ন করে শেখে,
- অনুকরণ করে শেখে,
- খেলে শেখে,
- গান করে শেখে,
- নির্দেশনা থেকে শেখে,
- একাকী চিন্তা করে শেখে,
- অনুসন্ধান করে শেখে,
- নাচের মাধ্যমে ইত্যাদি নানাভাবে শেখে।
মতামত দিন