এম.এড

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম ও এর বৈশিষ্ট্য

Competency based curriculum and its features

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম

যোগ্যতা বলতে সুনির্দিষ্ট আচরণকে বোঝানো হয়। পঠনপাঠনের মধ্য দিয়ে কোন জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ব করার পর শিক্ষার্থী তার বাস্তব জীবনে প্রয়োজনের সময় কাজে লাগাতে পারলে সেই জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টিকে যোগ্যতা বলে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় যে কোন যোগ্যতা অর্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। তবে কোন কোন প্রন্তিক যোগ্যতার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এর শুর থেকে শেষ হওয়ার পর্যায় পর্যন্ত অর্জিত যোগ্যতার সমষ্টিই হল প্রান্তিক যোগ্যতা।

যে শিক্ষাক্রমে শিক্ষা শেষে প্রত্যেক বিষয় ও শ্রেণির নির্ধারিত অর্জন উপযোগি যোগ্যতাগুলো ক্রমানুসারে অর্জন করার লক্ষ্যে বিন্যস্ত করা হয়েছে তাকে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম বলে।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের বৈশিষ্ট্য

১. যোগ্যতাগুলো সুনির্দিষ্ট করা থাকে।

২. প্রতিটি যোগ্যতার পরিসর অনুসারে পাঠদান করা হয়।

৩. যোগ্যতাসমূহের নির্বাচনে শিক্ষার্থীর বয়স ও গ্রহণ ক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি আরোপ করা হয়।

৪. যোগ্যতার কাঠিন্য অনুসারে শ্রেণিভিত্তিক বিন্যাস করা থাকে।

৫. যোগ্যতাসমূহ নির্বাচনে জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষতার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়।

৬. বৈচিত্র্যময় শিখন শেখানো পদ্ধতিতে পাঠদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।

৭. শিখন অগ্রগতি যাচাই ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা করা।

যোগ্যতা

পড়া: বাক্যটি পড়তে পারবে।

ক. বাক্যের অন্তর্গত শব্দ দুটি (আম, আন) সনাক্ত করতে ও পড়তে পারবে।

খ. বাক্যের অন্তর্গত বর্ণ তিনটি (আ ,ম, ন) চিনতে ও পড়তে পারবে।

লেখা:  বাক্যটি লিখতে পারবে।

ক. বাক্যের অর্ন্তগত শব্দ দুটি লিখতে পারবে।

খ. বাক্যের অর্ন্তগত বর্ণ তিনটি লিখতে পারবে।

পূর্বে আমাদের দেশে- পৃথিবীর অনেক দেশের মতই বিষয়বস্তুভিত্তিক শিক্ষক্রম প্রচলিত ছিল। বিদ্যালয়ে কী কী বিষয় পড়ানো হয়, সে সব বিষয়ে কি কি বিষয়বস্তু থাকবে তা উল্লেখ করে এ ধরনের শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়। এ ধরনের শিক্ষাক্রমে মূলত জ্ঞান প্রাধান্য পায়।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের প্রকৃতি:

১. শিক্ষার্থী কোন শ্রেণীতে কোন বিষয়ে কি কি যোগ্যতা (জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গী) অর্জন করবে তা সুনির্দিষ্টকরণ।

২. শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ্য ও মানসিক পরিণমন এবং তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করে যোগ্যতা নির্বাচনের ক্ষেত্র সুনিদিষ্টকরণ।

৩. শিক্ষার্থীর অর্জিত যোগ্যতা তাৎক্ষণিক প্রয়োগ করানোর মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনে তাকে আত্মপ্রত্যয়ীকরণ।

৪. শহর ও পল্লী অঞ্চলের সকল বিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে কতটুকু শেখাতে হবে এবং কি যোগ্যতা অর্জন করাতে হবে সেগুলোর সঙ্গে শিক্ষকগণের পরিচিতিকরণ।

৫. জীবনের প্রস্তুতির জন্য শিক্ষা, মুখস্থ করে সনদপত্র অর্জনের জন্য শিক্ষা নয় তা সামনে রেখেই শিক্ষার সমস্ত কর্মকান্ডের আয়োজন।

৬. পুরোপুরি শিখন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অপ্রয়োজনীয় তত্ত¡ ও তথ্য পরিহারপূর্বক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের পরিসর:

সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যেই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের পরিসর নিহিত। তবুও অবহিত হওয়ার সুবিধার্থে সেগুলো নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল:

১. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগমন উপযোগী সকল স্বাভাবিক শিশুর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি।

২. বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাশেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ধরে রেখে পুরোপুরি শিখন নিশ্চিতকরণ। অসুবিধাগ্রস্ত পরিবার থেকে আগত শিশুর পূর্বপ্রস্তুতিমূলক শিক্ষাদান করে বিদ্যালয়ে তাদের উপস্থিতি স্থিতিশীলকরণ।

৪. বিশেষ করে মেয়ে শিশুর বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের বাধাবিপত্তি (যেমন: লিঙ্গ তারতম্য) দূরীকরণ এবং খাদ্যের বদলে শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিতকরণ।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।