শিক্ষাক্রমের ব্যবহারিক সংজ্ঞা

শিক্ষাক্রমের ব্যবহারিক বা কার্যকরি সংজ্ঞা (Connotation of Curriculum)

শিক্ষা ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ ইত্যাদির বিকাশ ও উন্নয়ন করে থাকে। এ দিকগুলোর বিকাশ ও গড়ে তোলার সামগ্রিক যোগান বা পরিকল্পনাকে সাধারণভাবে শিক্ষাক্রম বলা যায়। শিক্ষাক্রমের ব্যবহারিক দিকের ওপর লক্ষ্য রেখে আমরা এক নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত করতে পারি:

  • সুনির্দিষ্ট কয়েকটি লক্ষ্যের ভিত্তিতে নির্ণীত শিখন অভিজ্ঞতা, পাঠন-পাঠন সামগ্রী এবং শিক্ষাদান কার্যাবলীর সমন্বিত রূপরেখাই হচ্ছে শিক্ষাক্রম।
  • শিক্ষার্থীর আচার-আচরণ, মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও বাঞ্ছিত পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্য তাদেরকে যাথাযথ শিখন অভিজ্ঞতা ওেয়ার জন্য পরিকল্পিত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত সুবিন্যস্ত কর্মকান্ডকে শিক্ষাক্রম বলা হয়।
  • বিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত একটি সুনির্দিষ্ট শিক্ষাস্তরের জন্য পূর্বনির্ধারিত ও পর্যায়ক্রমে বিন্যস্ত জ্ঞান, দক্ষতা, যোগ্যতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি অর্জন এবং তার স্বীকৃত স্বরূপকে সামগ্রীকভাবে শিক্ষাক্রম বলে।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে শিক্ষাক্রমের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:

শিক্ষাক্রমের প্রবক্তা রাফ টাইলার শিক্ষাক্রমের সরাসরি সংজ্ঞা প্রদান না করে চারটি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষাক্রমের একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদানের চেষ্টা করেছেন। এ প্রশ্নগুলো হচ্ছে-

  • শিক্ষার্থীরা কি কি উদ্দেশ্য অর্জন করবে?
  • কি কি শিখন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিদ্যালয়ে উল্লিখিত উদ্দেশ্য অর্জন করবে?
  • এ সকল শিখন অভিজ্ঞতা কি উপায়ে সংগঠন ও বিন্যাস করা যাবে?
  • উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হয়েছে কি না তা কিভাবে যাচাই করা যাবে?

উপরিউক্ত প্রশ্নগুলো থেকে এটা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে. একটি শিক্ষাক্রমে- উদ্দেশ্য, শিখন অভিজ্ঞতা, শিখন অভিজ্ঞতার সংগঠন ও বিন্যাস এবং শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনের মাত্রা নিরূপণের জন্য মূল্যায়ন প্রক্রিয়া-এই চারটি দিক অন্তর্ভূক্ত থাকে।

  • হিলডা তাবার মতে- ‘যুগের চিন্তাভাবনার অবয়বহীন ফসলই হলো শিক্ষাক্রম (The amorphous product of generations of thinking)। অন্যকথায়, শিক্ষাক্রমে সমকালীন জগৎ ও জীবনের প্রতিফলন ঘটে।
  • হুইলারের মতে-‘ শিক্ষাক্রম বলতে শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিখন অভিজ্ঞতা নির্বাচন, বিষয়বস্তু শনাক্তকরণ, বিষয়বস্তু সংগঠন, মূল্যায়ন ইত্যাদির একটি বৃত্তাকার প্রক্রিয়া।’
  • কার এর মতে- বিদ্যালয় কর্তৃক পরিকল্পিত ও পরিচালিত  যাবতীয় শিখন যা বিদ্যালয়ে এবং বিদ্যালয়ের বাইরে দলগত বা ব্যক্তিগতভাবে সম্পন্ন করা হয় তাই শিক্ষাক্রম। (‘All learning which is planned or guided by the school whether it is carried on in groups or individually inside or outside the school.’)
  • সেলর ও আলেকজান্ডার মনে করেন- শ্রেণিকক্ষে, খেলার মাঠে বা বিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের শিখনকে প্রভাবান্বিত করার জন্য বিদ্যালয়ের প্রচেষ্টার সমষ্টিই শিক্ষাক্রম। (All the efforts of the schools to influence learning of the pupils carried out in the classroom, playground or outside the school.)
  • ওচস এর মতে-
  • কোন একটি নির্দিষ্ট স্তরের কেবল একটি বিষয়ের জন্য একটি কার্যক্রম।
  • কোন একটি সম্পূর্ণ শিক্ষাস্তরের জন্য কেবল একটি বিষয়ের একটি কার্যক্রম।
  • কোন একটি সম্পূর্ণ শিক্ষাস্তরের জন্য কেবল বহু বিষয়ের একটি কার্যক্রম।
  • লেভির মতে- বর্তমানে শিক্ষাক্রম শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে, এতে সংযোজিত হচ্ছে শিক্ষার্থীর তৎপরতা, নানা রকম শিখন-শেখানো সামগ্রী, শিক্ষাদানের কলা-কৌশল, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ইত্যাদি।

উপরে বর্ণিত সংজ্ঞা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সময়ের পরিবর্তন, শিক্ষার বহুমূখী চাহিদা, জ্ঞানের নতুন নতুন ক্ষেত্র উম্মোচনের ফলে শিক্ষাক্রমের ধারণা, প্রকৃতি ও পরিসরের ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। তাই শিক্ষাক্রমকে গতিশীল রাখার জন্য ধারাবাহিকভাবে পরিমার্জন ও নবায়ন করতে হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া ক্রমাগত চলবে।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।