একীভূত শিক্ষা কী? একীভূত শিক্ষার মূল ভিত্তি
Inclusive education
একীভূত শিক্ষা কী?
সকল শিশুর শিখন চাহিদা পূরনের একটি টেকসই মাধ্যম হল একীভূত শিক্ষা। একীভূত শিক্ষাকে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রীক উন্নয়নের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেকেই একীভূত শিক্ষাকে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের একটি পদ্ধতি বা উপায় মনে করে থাকেন। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। প্রকৃতপক্ষে একীভূত শিক্ষা এমন একটি শিক্ষা দর্শন যার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যদল নেই, যে কোনো শিশুই শিক্ষাব্যবস্থার যে কোনো প্রেক্ষিতে (যেমন: ভর্তি, অংশগ্রহণ, অর্জন ইত্যাদি) বৈষম্যের স্বীকার হলেই তারা একীভূত শিক্ষার লক্ষ্যদল হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইউনেস্কোর (২০০৯) নির্দেশনা অনুযায়ী একীভূত শিক্ষা হলো :
একটি প্রক্রিয়া যার লক্ষ্য হলো সকল বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেখানে বৈচিত্র্য/ভিন্নতা, ভিন্ন চাহিদা ও সামর্থ্য এবং শিক্ষার্থী ও সমাজের শিখন প্রত্যাশাকে সম্মান দেখানো হয়।
একীভূত শিক্ষার অর্থ হলো সকল শিশুকে তাদের সমাজের মধ্যে রেখেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া৷ একীভূত শিক্ষা হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যা প্রত্যেক শিশুর চাহিদা ও সম্ভাবনা অনুযায়ী শিখন ও জ্ঞান অর্জনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের মাধ্যমে ’সবার জন্য শিক্ষা’ এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা৷
একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থায় সকল শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগ-অনুভুতি, বিশ্বাস, ধর্ম, ভাষা বা অন্য কোন বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও একই বিদ্যালয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করা৷ একই বিদ্যালয়ে যাতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, শ্রমজীবি শিশু, পথ শিশু, যাযাবর সম্প্রদায়ের শিশু, উপজাতি বা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার শিশু এবং সুবিধা বঞ্চিত বিভিন্ন প্রান্তিক পরিবারের শিশুরা শিক্ষা অর্জন করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে৷
বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে পিইডিপি-২-এর আওতায় সারা দেশে একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ ২০১১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী ১০০% শিশু ভর্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে একীভূত শিক্ষার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
সবার জন্য একই মানের গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করাই একীভূত শিক্ষা। সকল শিশু তার বাড়ির কাছের বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে, বিদ্যালয়ের প্রতিটি কার্যক্রমে সবাই সক্রিয় এবং সমভাবে অংশগ্রহণ করবে।
Organization for Economic Co-operation and Development (OECD, 2012) -এর বিবেচনায় একীভূত শিক্ষা হলো,
“সকল শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাস্তর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করা এবং শিক্ষা শেষে একটি গ্রহণযোগ্য কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা।”
একীভূত শিক্ষার দার্শনিক ভিত্তি
(ক) প্রতিটি শিশুর শিক্ষা অর্জনের অধিকার আছে। শিক্ষা মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। এ অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্র ও তার সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন/প্রতিষ্ঠান আন্তর্জতিকভাবে অঙ্গিকারাবদ্ধ।
(খ) প্রতিটি শিশুই আলাদা। জন্মগতভাবেই একটি শিশু অন্যটি হতে কোনো না কোনোভাবে আলাদা হবেই। ফলে তাদের চাহিদা, পছন্দ- অপছন্দ, আগ্রহ, আবেগ-অনুভূতি, প্রত্যক্ষণ, শিখন প্রভৃতিতে ভিন্নতা বিরাজমান। এই ভিন্নতা কোন সমস্যা নয়; এটি মানবজাতির সৌন্দর্য্য।
(গ) সকল শিশুই শিখতে পারে। শিশুদের শিখন কৌশলে ভিন্নতা রয়েছে তবে কোন শিশুই শিখন ক্ষমতার বাইরে নয়। কেউ দ্রুত শেখে, কারো শিখন হয় কিছুটা মন্থর। শিশুরা শেখে তাদের চাহিদা অনুযায়ী। শিশুর শিখন ক্ষমতার পরিবর্তন নয়; বরং শেখানোর ব্যবস্থা পরিবর্তন মূখ্য।
(ঘ) প্রতিটি শিশুর নিকটস্থ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অধিকার আছে। শিশুদের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পৃথক পৃথক বিদ্যালয় নির্ধারণ করা সার্বজনীন মানবাধিকার লংঘনের শামিল। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিদ্যালয়কে এমনভাবে প্রস্তুত হতে হবে যেন ক্সবচিত্রকে স্বাগত জানিয়ে সকল শিশুর চাহিদা পুরন করতে পারে।
একীভূত শিক্ষার মূল ভিত্তি
১। প্রতিটি শিশুই আলাদা,
২। প্রতিটি শিশুরই শিক্ষা অর্জনের অধিকার আছে,
৩। সকল শিশুই শিখতে পারে, এবং
৪। প্রতিটি শিশুরই নিকটস্থ বিদ্যালয়ে ভর্তি অধিকার আছে।
একীভূত শিক্ষায় শিক্ষক শিখন শেখানো পরিকল্পনায় কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যদল নেই। শিক্ষকের সকল পরিকল্পনায় এবং কৌশলে সকল শিক্ষার্থীকে বিবেচনায় রাখবে।
মতামত দিন