শিক্ষকের নেতৃত্বের গুণাবলি
প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ | Primary Teachers Training
Qualities of Teacher leadership
শিক্ষকের নেতৃত্বের গুণাবলি
শিক্ষকের নেতৃত্বের গুণাবলি বলতে কী বুঝায়?
একজন আদর্শ শিক্ষকের নানাবিধ নেতৃত্বের গুণাবলি থাকে। নীচে এ সম্পর্কে উল্লেখ করা হলঃ
✨ নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Vision and Mission) থাকা: নিজে উন্নত
বিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখা এবং অপরকে উন্নত বিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করা।
বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা এবং সকলের মধ্যে উক্ত
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মালিকানাবোধ সৃষ্টি করা। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিখন শেখানো
কার্যাবলি, বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনাসহ বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে সঠিক লক্ষ্য
নির্ধারণ করার দক্ষতা একজন শিক্ষকের নেতৃত্বের অন্যতম গুণ।
✨ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পারদর্শিতা: নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা
গ্রহণ করা এবং গৃহীত পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার পারদর্শিতা;
✨ সিদ্ধান্ত গ্রহণ: বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিচক্ষণতার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সক্ষমতা;
✨ কৌশলগত ও সমালোচনামূলক (Critical) চিন্তন: প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনদের সম্পর্কে কৌশলগত ও সমালোচনামূলক
চিন্তা করার সক্ষমতা। প্রতিষ্ঠান ও দলের সদস্যদের সবলতা, দুর্বলতা, সম্ভাবনা ও
ঝুঁকি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে সঠিক কর্মকৌশল
নির্ধারণ করার দক্ষতা;
✨ নিজ কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা: শিক্ষাক্রম, শিখন শেখানো পদ্ধতি, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও
শিক্ষার্থীর প্রকৃতি ও বিদ্যমান অবস্থা, শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ ইত্যাদি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা;
✨ যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপন দক্ষতা: শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কমিউনিটি ও কর্তৃপক্ষসহ অংশীজনদের সাথে কার্যকর যোগাযোগ এবং
আন্তরিক ও কার্যকর সম্পর্ক স্থাপনে অত্যন্ত দক্ষ হওয়া। সকলের সাথে কার্যকর
সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ভ‚মিকা রাখা। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে
তাদেরকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া;
✨ অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধকরণ: শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কমিউনিটির অংশীজনদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে
নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য দক্ষতার সাথে কার্যকর ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করতে
অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করা। তাদেরকে উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল হতে উৎসাহিত করা;
✨ প্রভাবিত করা: নিজ জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ দ্বারা অনুসারীদেরকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করা, তাদেরকে সংগঠিত
করা এবং লক্ষ্য অর্জন সংক্রান্ত কর্মতৎপরতায় তাদেরকে স্বতঃস্ফূর্র্ত ও সক্রিয়ভাবে
সম্পৃক্ত করা।
✨ দল গঠন : বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজের জন্য যথোপযুক্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের নিয়ে দল
গঠন করা এবং দলীয় কর্মতৎপরতায় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা;
✨ পরিচালনা ও সহযোগিতা: দলের সদস্যদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে কার্যকরভাবে
পরিচালনা করার দক্ষতা থাকা ও দলের প্রতিটি সদস্যের স্বতন্ত্র প্রকৃতি ও চাহিদা
অনুযায়ী তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও সমর্থন প্রদান করা;
✨ মুক্ত-মন ও সৃজনশীলতা: নতুন ধারণা ও সম্ভাবনা গ্রহণ ও উৎসাহিত করার মত মানসিকতা থাকা। অপরের কথা শোনা, অপরকে
পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের ধরন পরিবর্তন করা;
✨ সততা ও শুদ্ধাচার: নেতাকে সৎ ও শুদ্ধাচারী হতে হয়। কেননা, অনুসারীরা
নেতাকে বিশ্বাস করেন ও নেতার ভিশনের উপর আস্থা রাখেন এবং নেতাকে অনুসরণ করেন;
✨ উন্নত আদর্শের চর্চা: উন্নত আদর্শ চর্চার মাধ্যমে আদর্শবান হওয়া এবং অপরকে
আদর্শবান হতে অনুপ্রাণিত করা। একজন রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা;
✨ স্ব-প্রণোদিত, আত্ম-সচেতন ও আত্ম-বিশ্বাসী: নিজে স্ব-প্রণোদিত, আত্ম-সচেতন ও আত্ম-বিশ্বাসী হওয়া ও অপরকে
হতে উদ্বুদ্ধ করা;
✨ শৃঙ্খলা, পরিশ্রম ও ধৈর্যশীলতা: সকল কর্মতৎপরতায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, সক্রিয়ভাবে
অংশগ্রহণ করা এবং ধৈর্যের সাথে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করা;
✨ মানবিকতা ও সহমর্মিতা: সকলের প্রতি মানবিক আচরণ করা এবং সহমর্মী থাকা;
✨ অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা: অপরের সামর্থ্যরে প্রতি আস্থাশীল থাকা ও তাদের মতামতকে
শ্রদ্ধা করা।
✨ কর্তব্যপরায়নতা ও সময়ানুবর্তিতা: নিষ্ঠার সাথে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা এবং সকল কাজ
সঠিক সময়ে সম্পাদন করা;
✨ প্রশংসা ও স্বীকৃতি দেয়া: অনুসারীদের কাজের প্রশংসা করা ও তাদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি
দেওয়া;
✨ প্রাতিষ্ঠানিক শিষ্টাচার মেনে চলা: সঠিক পোষাক পরিধান করা, প্রমিত ভাষা ব্যবহার ও ভদ্র আচরণ
করা। এ ক্ষেত্রে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করা;
✨ ব্যবস্থাপনা দক্ষতা: বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় সুদক্ষ হওয়া;
✨ লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়তা: লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে
যেতে দলের সদস্যদের উৎসাহিত করা এবং কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাওয়া;
✨ আত্ম-উন্নয়ন: অনুচিন্তনের মাধ্যমে নিজ কর্মতৎপরতার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করা। নিজ জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নে সদা তৎপর থাকা।
আরও পোস্ট দেখুন:
👀
শিশুবান্ধব বিদ্যালয় পরিবেশ
সৃষ্টিতে নেতৃত্ব
মতামত দিন