বাইবেল, খিস্ট ধর্ম মতবাদ, বিশ্বাস সূত্র, যিশুর অষ্টকল্যাণ বাণী
বাইবেল, খিস্ট ধর্ম মতবাদ, বিশ্বাস সূত্র, ইশ্বর প্রদত্ত মানুষের বৈশিষ্ট্য, যিশুর
অষ্টকল্যাণ বাণী, মানুষর সৎ গুণ
ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:
v
বাইবেল কী?
v
বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তক সমূহের ভাগগুলোর
নাম লিখুন।
v
খ্রিস্ট ধর্মানুসারীদের প্রধান পর্ব বা উৎসবাদির
বর্ণনা দিন।
v
ক্যাথলিক মণ্ডলীতে কয়টি ও কী কী সাক্রামেন্ত বা
সংস্কার পালন করতে হয়?
v
চিত্র বা ডায়াগ্রামের মাধ্যমে রোমান ক্যাথলিক
মণ্ডলীর সাংগঠনিক কাঠামো প্রদর্শন করুন।
v
খ্রিস্ট ধর্মের মতবাদ কয়টি ও কী কী?
v
খ্রিস্টমণ্ডলী বলতে কী বুঝেন?
v
খ্রিস্ট ধর্ম বিশ্বাসীদের কাছে রবিবারের তাৎপর্য
কী?
v
যীশুখ্রিস্টের পুণরুত্থান খ্রিস্টানদের
বিশ্বাসের মূল ভিত্তি- ব্যাখ্যা করুন।
v
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে এমন
কয়েকটি বেসরকারি খ্রিস্টীয় উন্নয়ন সংস্থার নাম লিখুন।
v
বিশ্বাস সূত্র বা মন্ত্রের সারসংক্ষেপ লিখুন।
v
মানুষের ঈশ্বর প্রদত্ত বৈশিষ্ট্যগুলো লিখুন।
v
যিশুর অষ্টকল্যাণ বাণী কী?
v
মানুষের সৎ গুণগুলোর বর্ণনা দিন।
বাইবেল কী?
পবিত্র
বাইবেল হচ্ছে খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ। বাইবেল শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ-
‘বিবলিয়া’ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে পুস্তকসমূহ।
বাইবেল হলো ঈশ্বরের মঙ্গল পরিকল্পনার ইতিহাসের বিবরণ। উল্লেখ্য যে, পুরাতন নিয়ম বা বাইবেলের প্রথম অংশ ইহুদিদেরও ধর্মগ্রন্থ, যা হিব্রু ও সিরিয়ার আঞ্চলিক ভাষা এরামাইক ভাষায় সংকলিত হয়। পবিত্র
বাইবেল হলো ঈশ্বরের বাণী। বাইবেল বলতে আমরা সাধারণত একটা মাত্র পুস্তক মনে করি।
কিন্তু আসলে বাইবেলের রয়েছে ৬৬টি পুস্তক। পুরাতন নিয়মে ৩৯ টি এবং নতুন নিয়মে
২৭টি। রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলী পবিত্র বাইবেলে আরও সাতটি পুস্তক অনুসরণ করেন।
বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তক সমূহের ভাগগুলোর নাম লিখুন।
পুরাতন নিয়মের পুস্তক গুলোকে কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা
যায়। ভাগগুলো নিম্নরূপঃ
ক) পঞ্চ পুস্তক
খ) ঐতিহাসিক পুস্তক সমূহ
গ) জ্ঞানধর্মী গ্রন্থাবলী
ঘ) প্রাবক্তিক ভাববাদী
গ্রন্থাবলী।
খ্রিস্ট ধর্মানুসারীদের প্রধান পর্ব বা উৎসবাদির বর্ণনা দিন।
খ্রিস্ট
ধর্মানুসারীদের পর্বাদিঃ খ্রিস ধর্মানুসারীদের অন্যতম প্রধান পর্বাদি বা উৎসবাদি
নিম্নে উল্লেখ করা হল-
ক)
বড়দিনঃ বড়দিন বা ক্রিসমাস খ্রিস্ট ধর্মানুসারীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বা
পর্ব। ইংরেজি ক্রিসমাস শব্দের সমার্থক রূপে বাংলায় বড়দিন বলা হয়। রোমান সম্রাট
কনস্টানটাইন ২৫ ডিসেম্বর দিনটিকে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন বলে চালু করেন।
খ)
ইস্টারঃ যীশুকে কবরস্থ করার তৃতীয় দিবসে তাঁর সশরীরে পুনরুত্থান করার
ঘটনাকে স্মরণ করার দিনটিকেই ইস্টার উৎসব বলা হয়।
গ)
গুড ফ্রাইডে বা পুণ্য শুক্রবারঃএটি ইস্টারের পূর্ববর্তী শুক্রবার, যেদিনে যীশুখ্রিস্টকে ক্রুশে পেরেকবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল।
ক্যাথলিক
মণ্ডলীতে কয়টি ও কী কী সাক্রামেন্ত বা সংস্কার পালন করতে হয়?
ক্যাথলিক
মণ্ডলীতে সাতটি সাক্রামেন্ত বা সংস্কার পালন করতে হয়। এগুলো হলোঃ
ক) দীক্ষাস্নান
খ) হস্তার্পণ
গ) খ্রিস্ট প্রসাদ
ঘ) পাপ স্বীকার
ঙ) রোগী লেপন
চ) যাজক বরণ ও
ছ) বিবাহ।
চিত্র বা ডায়াগ্রামের মাধ্যমে রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলীর সাংগঠনিক
কাঠামো প্রদর্শন করুন।
রোমান
ক্যাথলিক মণ্ডলীর সাংগঠনিক কাঠামোর ডায়াগ্রামটি নিম্নরূপঃ
মহামান্য পোপ → কার্ডিনাল →আর্চ বিশপ→ বিশপ/ধর্মপাল→ ফাদার/প্রিস্ট →ডিকন
খ্রিস্ট ধর্মের মতবাদ কয়টি ও কী কী?
খ্রিস্ট
ধর্মের মতবাদ ৩টি। মতবাদগুলো হলো-
ক) রোমান ক্যাথলিক মতবাদ
খ) অর্থোডক্স মতবাদ
গ) প্রোটেস্টেন্ট মতবাদ
খ্রিস্টমণ্ডলী বলতে কী বুঝেন?
খ্রিস্টমণ্ডলী
হচ্ছে ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে নবমিলন। ‘মণ্ডলী’ কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘Church’, যার উৎপত্তি জার্মান শব্দ Kzriake(
কিরখে) থেকে। কিরখে গ্রিক ভাষার সমার্থক শব্দ।
খ্রিস্ট ধর্ম বিশ্বাসীদের
কাছে রবিবারের তাৎপর্য কী!?
খ্রিস্টানগণ
রবিবারকে পবিত্র দিন হিসেবে পালন করে। কারণ খ্রিস্টানদের পবিত্র বাইবেলে বলা
হয়েছে, সপ্তাহের
প্রথম দিনেই যীশু মৃতদের মধ্যে থেকে পুণরুত্থান করেছেন। খ্রিস্ট বিশ্বাসীদের জন্য
রবিবার দিনটি হয়েছে সব দিনের প্রথম এবং সকল পর্বের প্রথম পর্ব; এদিন প্রভুর দিন। এ প্রভুর দিনেই খ্রিস্ট ভক্তগণ রবিবাসরীয় উপাসনা ও
অন্যান্য খ্রিস্টযজ্ঞে মিলিত হয়।
যীশুখ্রিস্টের পুণরুত্থান খ্রিস্টানদের বিশ্বাসের মূল ভিত্তি-
ব্যাখ্যা করুন।
খ্রিস্টানদের
ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে- জগতের সকল মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য খ্রিস্ট
মৃত্যু বরণ করেছিলেন, সমাধিস্থ হয়েছিলেন এবং তৃতীয় দিবসে
পুণরুত্থিত হয়েছিলেন। বিশ্বাসের মূল বিষয় হিসেবে যীশুর পুণরুত্থান একটি অলৌকিক
ঘটনা। যিশুখ্রিস্টের প্রেরিত শিষ্যগণ ও সাধু পৌলের সুসমাচার প্রচারের মৌলিক বিষয়
ছিল যীশুর মৃত্যু ও পুণরুত্থান। বাইবেল শাস্ত্র মতে, প্রেরিত
শিষ্যের অনেকেই তাঁর দর্শন পেয়েছেন। পুণরুত্থিত যীশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান
খ্রিস্টানদের বিশ্বাসের ভিত্তি।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি
খ্রিস্টীয় উন্নয়ন সংস্থার নাম লিখুন।
বাংলাদেশের
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বেসরকারি খ্রিস্টীয় উন্নয়ন সংস্থা গুলোর মধ্যে রয়েছে-
কারিতাস বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, সিসিডিবি, আরডিআরএস, ব্যাপ্টিস্ট এইড, সিআরসিডব্লিউআরসি, পারী, হিড বাংলাদেশ, ওয়াইএমসিএ, ওয়াডব্লিউসিএ, কনসার্ন প্রভৃতি।
বিশ্বাস সূত্র বা মন্ত্রের সারসংক্ষেপ লিখুন।
বিশ্বাস
সূত্রের সারসংক্ষেপ হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মবিশ্বাসীগণ বিশ্বাস করে, ঈশ্বরে, যিনি স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, সর্বশক্তিমান
পিতা, বিশ্বাস করে তাঁর এক জাত পুত্র যীশুখ্রিস্টে। যিনি
পবিত্র আত্মা দ্বারা গর্ভস্থ হলেন, কুমারী মরিয়ম হতে
জন্ম নিলেন, পন্তীয় পিলাতের সময় দুঃখ ভোগ করলেন,
ক্রুশবিদ্ধ হলেন, মৃত্যু বরণ করলেন এবং
কবরস্থ হলেন, পরলোকগত হলেন, তৃতীয়
দিবসে মৃতদের মধ্যে থেকে পুণরুত্থিত হলেন, স্বর্গে আরোহন
করলেন এবং পিতা ঈশ্বরের দক্ষিণ পাশে বসে আছেন; তথা হতে
জীবিত ও মৃতদের বিচার করতে আসবেন। খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণ বিশ্বাস করেন, ‘পবিত্র আত্মায়, পবিত্র বিশ্বব্যাপী মণ্ডলীতে,
বিশ্বাসীর সহভাগিতায় ও অনন্ত জীবনে।’ এটিকে প্রৈরিতিক
বিশ্বাস সূত্রও বলা হয়।
মানুষের ঈশ্বর প্রদত্ত বৈশিষ্ট্যগুলো লিখুন।
ঈশ্বর
প্রদত্ত মানুষের বৈশিষ্ট্যবলি নিম্নরূপঃ
ক) মানুষ ঈশ্বরের
প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট।
খ) সকল সৃষ্টির মধ্যে
একমাত্র মানুষেরই স্বাধীন ইচ্ছা আছে।
গ) একমাত্র মানুষই তার মনের
ভাব কথার দ্বারা অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে।
ঘ) ঈশ্বর মানুষকে দিয়েছেন
চিন্তাশক্তি, বিচার-বুদ্ধি
ও বিবেক।
ঙ) মানুষকে ঈশ্বর অন্যান্য
সৃষ্টির যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন।
চ) ঈশ্বরও মানুষকে সৃষ্ট
করেছেন তাঁর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য।
ছ) মানুষ পাপ করলে ঈশ্বরের
ক্ষমা পেতে পারে।
যীশুর অষ্টকল্যাণ বাণী কী?
যীশু
তাঁর প্রচার জীবনের শুরুতে জাগতিক সুখের চেয়ে পারমার্থিক সুখভোগের কিছু পন্থা
তুলে ধরেছেন। তিনি মোট আটটি সুখপন্থার কথা বলেছেন, যা অষ্টকল্যাণ বাণী নামে পরিচিত।
সুখ পন্থাসমূহ বা অষ্টকল্যাণ বাণী নিম্নে উল্লেখ করা
হলো:
১. ধন্য যারা আত্মাতে
দীনহীন, কারণ
স্বর্গরাজ্য তাদেরই।
২. ধন্য যারা শোক করে, কারণ তারা সান্ত¡না পাবে।
৩. ধন্য যারা মৃদুশীল, কারণ তারা দেশের অধিকারী
হবে।
৪. ধন্য যারা ধার্মিকতার
জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, কারণ তারা পরিতৃপ্ত হবে।
৫. ধন্য যারা দয়াশীল, কারণ তারা দয়া পাবে।
৬. ধন্য যারা
নির্মলান্তঃকরণ, কারণ
তারা ঈশ্বরের দর্শন পাবে।
৭. ধন্য যারা মিলন করে দেয়, তারা ঈশ্বরের পুত্র বলে
খ্যাত হবে।
৮. ধন্য যারা ধার্মিকতার
জন্য তাড়িত, কারণ
স্বর্গরাজ্য তাদেরই।
মানুষের সৎ গুণগুলোর বর্ণনা দিন।
মানুষ
কতগুলো সদগুণের অধিকারী। প্রধান ৪টি সদগুণ হলোঃ
ক)
সৎ বিবেচনাঃ সৎ
বিবেচনা দ্বারা আমরা বুঝতে পারি কোনটি ভাল আর কোনটি মন্দ।
খ)
ন্যায়বোধঃ ন্যায়বোধ
দ্বারা যার যা প্রাপ্য তা দিয়ে দেওয়া।
গ)
মনোবলঃ মনোবল
দ্বারা আমরা দুঃখ-কষ্টের সময় ধৈর্য ধারণ করতে পারি।
ঘ)
আত্মসংযম: আত্মসংযম হচ্ছে নিজের আবেগ-অনুভূতি এবং বিভিন্ন কিছুতে নিজের
প্রতিক্রিয়া দমন করার সক্ষমতা। অন্য কথায় বলা যায় আত্মশৃঙ্খলাবোধ।
মতামত দিন