বি.এড

জ্যাঁ পিয়াজের জ্ঞান বিকাশের তত্ত্ব

Cognitive developmental theory of Jean Piaget

জ্যাঁ পিয়াজের জ্ঞান বিকাশের তত্ত্ব

সুইজারল্যান্ডের দার্শনিক ও মনোবিজ্ঞানী জ্যাঁ পিয়াজে জ্ঞানমূলক বিকাশের বিভিন্ন দশা নিয়ে তত্ত্ব প্রকাশ করেন। তাঁর পুরো নাম Jean William Fritz Piaget (৯ই আগস্ট ১৮৯৬ - ১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৮০)।  প্রথম দিকে তিনি জীববিজ্ঞানী হিসেবে কর্মজীবন সূচনা করলেও জ্ঞানমূলক বিকাশ নিয়ে গভীর থেকে গভীরতরভাবে অনুসন্ধিৎসু হয়ে পড়েন। তিনি শিশুদের মধ্যে পরিবেশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বস্তুর প্রতি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন। গর্ভাবস্থা থেকেই শিশু শিখতে শুরু করে৷ গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিটা শিশুই গর্ভ থেকে শেখার জন্য তৈরি হয়৷ শিশুর জ্ঞানের বিকাশ কিভাবে ঘটে বা শিশু কিভাবে পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে সে সম্পর্কে জ্যাঁ পিয়াজে জ্ঞান বিকাশ নামক তত্ত্ব আবিষ্কার করেন৷ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিখন তত্ত্ব অধ্যয়েনের ক্ষেত্রে এই তত্ত্বটি জ্যাঁ পিয়াজের জ্ঞান বিকাশের তত্ত্ব নামে পরিচিত৷

জ্যাঁ পিয়াজের জ্ঞান বিকাশের তত্ত্ব মতে, প্রতিটি শিশু তার নিজস্ব চিন্তা বা মানসিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীকে নিজের মতো করে প্রত্যক্ষ করতে শেখে৷ শিশুরা নিজের মতো করে পৃথিবীর নানা কিছু সম্পর্কে জ্ঞান ও তথ্য সংগ্রহ করতে শেখে এবং সে আস্তে আস্তে তার পরিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে শেখে৷ পারিপার্শ্বিক বিভিন বস্তু ও ঘটনার সাথে পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর খাপ খাওয়ানোর এই প্রক্রিয়াই পিয়াজের তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়৷

জ্যাঁ পিয়াজে শিশুদেরকে তাদের বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখেন৷ পিয়াজের মতে, একটি শিশুর বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশ হচ্ছে ক্রমশ জটিল মানসিক কাঠামোর গঠন প্রক্রিয়া এবং এটিকে তিনি “স্কিমাস্‌” (schemes) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন৷ পিয়াজের মতে, শিশুরা সক্রিয়ভাবে তাদের চারপাশের পরিবেশ অনুসন্ধান (exploration) এবং পরিবেশের বিদ্যমান উপকরণসমূহ দক্ষতা সহকারে ব্যবহারের (manipulation) মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে নিজস্ব জ্ঞান অর্জন করে৷ তিনি বিশ্বাস করেন যে, শিশুরা নতুন তথ্য অথবা ধারণা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিদ্যমান চিন্তা-ভাবনাকে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করে এবং এই নতুন তথ্যই পরবর্তীতে তাদেরকে কোনো কিছু বুঝতে সাহায্য করে এভাবেই শিখন সংগঠিত হয়৷ পিয়াজে শিশুকাল থেকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশের চারটি প্রধান ধাপ চিহ্নিত করেছেন৷ প্রতিটি ধাপেই ব্যক্তিবিশেষ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে, নাড়াচাড়া এবং অনুসন্ধান করার মাধ্যমে তার চারপাশের পরিবেশ থেকে জ্ঞান অর্জন করার জন্য সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত৷ এ তত্ত্বের আলোকে, একজন শিশুকে ‘একক খুদে বিজ্ঞানী’ হিসেবে অভিহিত করা যায়৷ শিশুর চিন্তা করার প্রক্রিয়া বয়স্ক মানুরে চিন্তা করার প্রক্রিয়া থেকে আলাদা৷ পিয়াজের মতানুসারে মানুষ তার চিন্তা করার প্রক্রিয়াকে মানসিক কাঠামোতে সংগঠিত করার ক্ষমতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে৷ এই মানসিক কাঠামোর সাহায্যেই শিশুরা পরিবেশের সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে এবং পৃথিবী সম্পর্কে নানারকম জ্ঞান লাভ করে৷ শিশুর সাধারণ মানসিক কাঠামোগুলো আস্তে আস্তে একত্র হয়ে কার্যকরী বা সমন্বিত মানসিক কাঠামোতে পরিণত হয়৷

শিশুর জ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রে স্কিমার ভূমিকা

পিয়াজে তাঁর জ্ঞান বিকাশের তত্ত্বে শিশুর এ ধরনের মানসিক কাঠামোকে বলেছেন স্কিমা (schema)৷ এই স্কিমাগুলোই শিশুর চিন্তার মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে৷ শিশুর স্কিমা সুসংগঠিত ও নতুন স্কিমা বিকাশ লাভ করার মাধ্যমেই সে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে৷ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য দুটি মৌলিক প্রক্রিয়া কাজ করে৷ এগুলো হলো আত্মীকরণ (assimilation) এবং অভিযোজন (accommodation)৷ শিশু তার স্কিমার সাহায্যে যে কোনো তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ ও নির্বাচন করে থাকে৷ সে যদি কোনো নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে সে তার বর্তমান স্কিমার সাহায্যে সমাধানের চেষ্টা করে৷ যেমন-একটি শিশুর যদি বিড়ালের বাচ্চা দেখার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে সে কুকুরের বাচ্চা দেখলে তাকে প্রমে বিড়ালের বাচ্চা ভাবতে থাকে৷ বর্তমান অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে সমস্যার সমাধানের এই প্রক্রিয়া আসলে আত্মীকরণ৷ আবার সমস্যা সমাধানে শিশুর বর্তমান স্কিমা যদি কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে তার প্রয়োজন হয় নতুন স্কিমার৷ শিশু নতুন স্কিমা সৃষ্টি করে তার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হয়৷ এভাবে নতুন স্কিমা সৃষ্টি হলো অভিযোজন৷ মূলত আত্মীকরণ ও অভিযোজন এ দুই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশু তার মধ্যে সৃষ্ট সাময়িক ভারসাম্য দূর করার চেষ্টা করে এবং সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ভারসাম্য অবস্থায় ফিরে আসে৷ একটি শিশুর এই ভারসাম্য অবস্থানে ফিরে আসা হলো উপযোজন (adaptation)৷

শিশুর জ্ঞান বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ স্তর বা কাল :

পিয়াজে তাঁর জ্ঞান বিকাশের তত্ত্বকে মোট চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন৷

১. ইন্দ্রিয়-পেশির সমন্বয়কাল (sensorimotor period) জন্ম থেকে ২ বছর

২. প্রাক-প্রায়োগিক কাল (pre-operational period) ২ থেকে ৭ বছর

৩. বাস্তব প্রায়োগিক কাল (concrete operational period) ৭ থেকে ১১ বছর

৪. রীতিবদ্ধ প্রায়োগিক কাল (formal operational period) ১১ থেকে ১৫-১৬ বছর৷

১. ইন্দ্রিয়-পেশির সমন্বয়কাল (শিশুর জন্ম থেকে ২ বছর) :

এই পর্যায়ে শিশুর বিকাশ মূলত ইন্দ্রিয় ও পেশির নড়াচড়ার মাধ্যমে হয়৷ এই পর্যায়ে একটি শিশুর মাঝে দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, (১) বস্তুর স্থায়িত্বের ধারণা ও (২) লক্ষ্যাভিমুখী আচরণ৷ শিশুর সামনে থেকে কোনো কিছু সরিয়ে নিলে সে বস্তুটি কোথায় আছে সে সম্পর্কে ধারণা পায়৷ এছাড়া শিশু কোনো কিছু দেখলে তা ধরতে চায় এবং সেদিকে অগ্রসর হয়৷ শিশুর এই বিকাশের কালকে পিয়াজে আবার ছয় স্তরে ভাগ করেছেন৷

১. প্রথম স্তর (জন্ম থেকে এক মাস) : এই পর্যায়ে শিশুর সংগতিবিহীন অঙ্গ সঞ্চালন দেখা যায়৷

২. দ্বিতীয় স্তর (১ থেকে ৪ মাস) : শিশু অসংগতিপূর্ণভাবে হাত-পা নাড়াচাড়া করে৷ সে তার হাতের আঙুল চুষতে পারে৷

৩. তৃতীয় স্তর (৪ থেকে ৮ মাস) : এই অবস্থায় শিশু তার নাগালের মধ্যে সবকিছু ধরতে চেষ্টা করে৷

৪. চতুর্থ স্তর (৮ থেকে ১২ মাস) : এই সময় শিশু শারীরিক বিকাশের সাথে সাথে মানসিক বিকাশ লাভ করে৷ সে হামাগুড়ি দিতে শেখে, কোনো কিছু ধরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে৷

৫. পঞ্চম স্তর (১২ থেকে ১৮ মাস) : শিশুরা এই পর্যায়ে হাঁটতে শেখে এবং নতুন নতুন উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে৷

৬. ষষ্ঠ স্তর (১৮ থেকে ২৪ মাস) : অনুকরণের মাধ্যমে এই পর্যায়ে শিশু বিকাশ লাভ করে৷ শিশু অনুকরণের মাধ্যমে শব্দ, খেলাধুলা ইত্যাদি আয়ত্ত করতে শেখে৷ শিশু কোনো বস্তুর বদলে প্রতীক ব্যবহার করতে শেখে, যেমন-শিশু লাঠির ওপর ভর দিয়ে লাঠিকে ঘোড়া হিসেবে ব্যবহার করে৷

২. প্রাক-প্রায়োগিক কাল (২ থেকে ৭ বছর) :

এই পর্যায়ে শিশু তার মানসিক ক্ষমতা পরিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারে না৷ পিয়াজে এই স্তরকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন৷ একটি প্রাক-ধারণার স্তর, অপরটি উপলব্ধির স্তর৷ প্রাক-ধারণার স্তরে (২ থেকে ৪ বছর) শিশুর শব্দভান্ডার ২০০ থেকে ২০০০ শব্দে বৃদ্ধি পায়৷ শিশুর চিন্তাধারা থাকে একমুখী৷ শিশুর ভাষার ব্যবহার বেড়ে গেলেও সে তার ইন্দ্রিয়ের দ্বারা লব্ধ জ্ঞান সুবিন্যস্ত আকারে প্রকাশ করতে পারে না৷ যেমন-তাকে গল্প বলতে বললে সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে না৷

উপলব্ধির স্তরে (৪ থেকে ৭ বছর) শিশুদের মধ্যে নতুন নতুন মানসিক ক্ষমতা ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটে৷ শিশু বস্তুর ধারণা ও তার ভৌত পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে৷ তবে এই জ্ঞান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে অস্পষ্ট৷ বস্তুর ভৌত পরিবর্তন সম্পর্কিত ধারণাকে বলা হয় সংরক্ষণ৷ যেমন-একটি শিশুকে যদি সমপরিমাণ দুই গ্লাস পানি দেখানো হয় তাহলে সে বলবে পানির পরিমাণ সমান৷ আবার সরু গ্লাস পরিবর্তন করে একটি সঁরু গ্লাসে এবং অপরটি স্বাভাবিক গ্লাসে রাখার পর শিশু স্বাভাবিকভাবেই বলবে গ্লাসে পানি বেশি আছে৷ কিন্তু উপলব্ধির স্তরের শিশুরা বলবে দুপাত্রেই পানি সমান পরিমাণে আছে৷

৩. বাস্তব প্রায়োগিক স্তর (৭ থেকে ১১ বছর):

শিশুর জ্ঞান বিকাশের এই পর্যায়ে শিশুর চিন্তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বস্তু ও ঘটনানির্ভর হয়৷ বস্তুর স্থিতি সম্পর্কে ধারণা লাভ, বস্তুর পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা ও পরিবর্তনের বিপরীতমুখিতা সম্পর্কে ধারণা হলো এই পর্যায়ের মূল বৈশিষ্ট্য৷

৪. রীতিবদ্ধ প্রায়োগিক কাল (১১ থেকে ১৫-১৬ বছর):

শিশুর বিকাশের শেষ স্তর হলো রীতিবদ্ধ প্রায়োগিক কাল৷ এই সময়ে শিশুরা সহযোগিতামূলক মনোভাবের অধিকারী হয়৷ তার জীবনে সামাজিক পরিবর্তনের ধারণা সূচিত হয়৷ সে আলোচনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করে৷ শিশুর মাঝে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও এই পর্যায়ে হয়ে থাকে৷ তার মধ্যে চিন্তা, মনঃসংযোগ ও যৌক্তিক বিশ্লেষণের ধারণা বৃদ্ধি পায়৷ সে কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার যোগ্যতা অর্জন করে৷ চিন্তাশক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে এই স্তরের ছেলে-মেয়েরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ধারণা লাভ করে৷ এই পর্যায়ের আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো বয়ঃসন্ধিকালের আত্মকেন্দ্রিকতা৷ এই সময় একজন শিশু মনে করে তাকে তীক্ষ্ণভাবে নজর রাখে অন্যরা৷ ফলে বেশিরভাগ সময় শিশু আত্মকেন্দ্রিকতায় ভোগে৷

শিশুর শিখনে এ তত্ত্বের প্রভাব ও শিক্ষক হিসেবে করণীয়

শিশুর আচরণ ও বৈশিষ্ট্য তার বয়স ও স্তরভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে৷ শিশুকে তার বয়সের ভিন্নতা অনুযায়ী জানা ও বোঝা যেমন জরুরি, তেমনি সে অনুযায়ী সেবা/ক্রিয়াকর্ম নির্ধারণ করাও জরুরি৷ বয়সভেদে শিশুর চাহিদা ও প্রয়োজন যেমন ভিন্ন হয়, তেমনি তার শিখন ও বিকাশের ধরনেও ভিন্নতা দেখা দেয়৷ শিশুরা বড়দের মতো করে চিন্তা করে না৷ তাদের রয়েছে নিজস্ব চিন্তার জগত্, যা বড়দের থেকে আলাদা৷ জ্ঞান বিকাশের কোনো পর্যায়ে শিশু আছে সে অনুযায়ী তাকে নির্দেশনা দিলে শিশুর জ্ঞানের বিকাশ আরো বৃদ্ধি পাবে৷ সুতরাং, শিশুকে তার স্তর অনুযায়ী নির্দেশনা দেয়া অত্যন্ত জরুরি৷ শিশুর বিকাশের স্তর অনুসারে শিশুকে নির্দেশনা দিতে হবে, যা তার বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে দ্রুত৷ শ্রেণিতে শিখন শেখানো কার্যক্রম বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিশুদের পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষক শিশুর বিকাশের বিভিন স্তর সম্পর্কে একটা পূর্ণাঙ্গ ধারণা ও বিভিন্ন স্তরে শিশুর শিখন কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে৷ সার্বিকভাবে, শিশুর শারীরিক ও মানসিক ধারণক্ষমতার কথা বিবেচনা করে শিখন পদ্ধতি নির্বাচন করতে হবে৷ সর্বোপরি, পিয়াজের মতবাদ অনুধাবন করলে একজন শিক্ষক শিশুর সমস্যা যেমন সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারবেন তেমনি সে অনুযায়ী সমাধানের জন্য অনেক বেশি সচেষ্ট হতে পারবেন৷

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।