বুদ্ধিমত্তা কী? হাওয়ার্ড গার্ডনারের বহুমূখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্ব

বুদ্ধিমত্তা, বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য এবং হাওয়ার্ড গার্ডনারের বহুমূখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্ব

আলোচ্য বিষয়:
  • বুদ্ধিমত্তা কী?
  • বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করুন।
  • বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা (Multiple Intelligence) তত্ত্ব কী?
  • বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা কত প্রকার ও কী কী?

বুদ্ধিমত্তা কী?

বুদ্ধিমত্তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ব্যক্তির যুক্তি, বোধ, আত্মসচেতনতা, শিখন, আবেগিক জ্ঞান, যৌক্তিকতা, পরিকল্পনা, সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। 

বুদ্ধিমত্তাকে আরও বিস্তৃত করে সংজ্ঞায়িত করলে বলা যায় যে তথ্য বুঝতে পারার ক্ষমতা ও তা জ্ঞান হিসেবে ধারণ এবং পরবর্তীতে পরিবেশ অথবা অবস্থা অনুযায়ী খাপ খাইয়ে চলার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাই হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা। David Wechsler বুদ্ধিমত্তাকে ব্যক্তির আপন পরিবেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার, যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করা এবং কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করাকে বুঝিয়েছেন।

যে সকল প্রভাবক শিক্ষা গ্রহণকে প্রভাবিত করে, তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা। বুদ্ধিমত্তাহচ্ছে জ্ঞান অর্জন এবং প্রয়োগের সক্ষমতা। শিক্ষা, পেশা, সমাজে খাপ খাইয়ে চলাসহ সকল ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার ধারণা বিস্তৃত।

সুতরাং বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলা, বিভিন্ন বস্তু এবং পদ্ধতির মাঝে সম্পর্ক অনুধাবনকরা, সমস্যা সমাধান করতে পারা, স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারা, স্বল্প সময়ে অধিক বিষয় সম্পর্কে জানতে

পারা, নিজের এবং অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে লাভবান হবার সামর্থ্য।

বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য

বুদ্ধিমত্তার মূল বিষয়গুলো নিম্নে তুলে ধরা হল-

১. এটি শিশুর স্বল্প সময়ের মধ্যে অধিক জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে।

২. শিশু ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে পারবে।

৩. শিশু তার পূর্বের অভিজ্ঞতা হতে সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।

৪. শিশু নিয়ম মেনে ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়।

৫. সে সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে।

৬. জন্ম থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে।

৭. ছেলে এবং মেয়েদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সামান্য পার্থক্য দেখা যায়।

৮. ছেলে এবং মেয়েদের বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পার্থক্য দেখা যায়।

৯. বুদ্ধিমত্তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বংশগতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় কিন্তু এর উন্নতির জন্য সহায়ক পরিবেশ আবশ্যক।

বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা (Multiple Intelligence) তত্ত্ব কী?

আমেরিকার হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হাওয়ার্ড গার্ডনার (Howard Gardner) ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর ‘Frames of Mind’ গ্রন্থে বুদ্ধির বহু উপাদান তত্ত্বটি প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তিনি বলেন, “An intelligence is the ability to solve problems, or to create products, that are valued within one or more cultural settings”। 

বুদ্ধি বলতে তিনি সমস্যা সমাধানের যোগ্যতাকে বুঝিয়েছেন। গার্ডনার এর মতে, ব্যক্তির বুদ্ধি কেবল গাণিতিক এবং ভাষাগত ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বুদ্ধিকে একক সংখ্যা (IQ) দ্বারা পরিমাপ করলে বুদ্ধির সঠিক প্রতিফলন বুঝা সম্ভব হয় না। বরং মানুষের একাধিক বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। এজন্য ভাষাগত ও গাণিতিক বুদ্ধির পরিবর্তে তিনি বহুমূখী বুদ্ধির উল্লেখ করেছেন, যার মাধ্যমে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন এবং অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে।

বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা কত প্রকার ও কী কী?

হাওয়ার্ড গার্ডনারের তত্ত্ব মতে বুদ্ধিমত্তা হলো নয় প্রকার। যথা:

১. মৌখিক বা ভাষাভিত্তিক বুদ্ধিমত্তা (Verbal or Linguistic intelligence),

২. যুক্তিমূলক-গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা (Logical-mathematical intelligence),

৩. দৃষ্টি বা স্থান সম্পর্কীয় বুদ্ধিমত্তা (Spatial intelligence),

৪. শরীরবৃত্তীয় বা শারীরিক ক্রিয়াজনিত বুদ্ধিমত্তা (Bodily-kinesthetic intelligence),

৫. সংগীতে পারদর্শিতা বা সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তা (Musical intelligence),

৬. আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা (Interpersonal Intelligence),

৭. অন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা বা বুদ্ধিমত্তা (Intrapersonal intelligence),

৮. প্রকৃতিবিষয়ক দক্ষতা বা বুদ্ধিমত্তা (Naturalist Intelligence),

৯. অস্তিত্বমূলক বুদ্ধিমত্তা (Existential intelligence)।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।