শিশুর সামাজিক ও আবেগিক বিকাশ

শিশুর সামাজিক বিকাশ কী?

জন্মের পর থেকেই অত্যন্ত যত্ন সহকারে শিশুর চাহিদা পূরণ করার মধ্য দিয়ে মা এবং আপনজন শিশুকে সামাজিকভাবে প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলেন। এসময়ে তারা শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করেন, খাওয়ান, যত্নাদি করেন, যার মাধ্যমে শিশুর বিভিন্ন ইন্দ্রিয়সমূহ উদ্দীপিত হয়, শিশু আরাম ও পরিতৃপ্তি লাভ করে এর মধ্য দিয়ে আশ্বস্ততা এবং বিশ্বস্ততার সূচনা হয়। উদ্দীপনা শিশুকে আনন্দ দেয়, পরিতৃপ্ত করে ফলে শিশু ও মায়ের মধ্যে মধুর সম্পর্কের দ্বারা ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। আর যেসকল শিশু যত্ন  থেকে বঞ্চিত হয় তাদের মধ্যে হিংসা, আক্রমণাত্মক, নেতিবাচক, কলহপ্রবণ এবং অসহযোগী মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। দুই মাস বয়সে শিশুর মধ্যে সামাজিক হাসি লক্ষ্য করা যায়।

শিশুর আবেগিক বিকাশ কী?

খুশি হলে হাসা, ব্যথা পেলে কাঁদা, কোন কিছু চেয়ে না পেলে জেদ করা ইত্যাদি আবেগের বহি:প্রকাশ। নবজাত শিশুর মধ্যে অবিমিশ্র উত্তেজনা হল প্রথম আবেগ। জীববিদদের মতে মস্তিষ্কের থ্যালামাস আবেগের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং এ্যড্রিনাল গ্রন্থির নিঃসরণ- এ্যড্রিনালিন আবেগকে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালিত করে। আবেগ দুই প্রকার ধনাত্মক হাসি, আনন্দ, স্নেহ-ভালবাসার অনুভূতির প্র্রকাশ ও অন্য দিকে ক্রোধ, ভয়, আক্রমণাত্মক আচরণ, এড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি নেতিবাচক আবেগ। আবেগের গঠনমূলক ও ধ্বংসাত্মক, দুটো দিক রয়েছে। শিশু  ইতিবাচকভাবে পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে সমবয়সী ও বড়দের সাথে সম্পর্কস্থাপন করা ও বজায় রাখা, অর্থাৎ প্রচেষ্টা ও ভুল, অনুকরণ, সাপেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের দ্বারা আবেগের নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভাল লাগা, মন্দ লাগা, আবেগ অনুভূতির সঠিক ভাবে প্রকাশ করার দক্ষতা অর্জন করে। মূল্যবোধ, আদর্শ, অন্যের প্রতি আগ্রহ ও অন্যের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা, সামাজিক রীতি-নীতির প্রতি সম্মান, নিজের হিত চিন্তা ইত্যাদি শিশুর আবেগময় জীবনকে প্রভাবিত করে।

শিশুর বিলম্বিত বিকাশ কী?

যখন কোন শিশু সমবয়সী অন্যান্য শিশুদের তুলনার পিছিয়ে থাকে অর্থাৎ যে বয়সে যা যা করতে পারার কথা তা করতে পারেনা তখন সেই অবস্থাকে শিশুর বিলম্বিত বিকাশ বলা হয়। কোন বিশেষ কারনে একটি শিশু যদি তার সমবয়সী অন্যান্য শিশুদের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে পিছিয়ে পড়ে তবে ঐ নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তার আচরণিক সমস্যা হয়। যেমন-

  • বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়লে বুদ্ধি করে কথা বলতে পারবে না বা কাজ করতে পারবে না।
  • শারীরিক বিকাশে বিঘ্ন হলে জিনিস ধরতে, তুলতে, নিতে- দিতে পারবে না, হাঁটা চলায় সমস্যা হয়।
  • ভাষা যোগাযোগে পিছিয়ে পড়লে কথা বলা, ভাব বিনিময়ে ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়।
  • নিজের প্রয়োজন বুঝাতে পারবে না, ফলে জীবন অনেক বেশি স্থবির হয়ে পড়বে।

বিলম্বিত বিকাশের ক্ষেত্রে করণীয়:

১. শিশুর বয়স, সামর্থ্য ও আগ্রহ বা অনুরাগ, ভাল লাগা, মন্দ লাগা অর্থাৎ শিশুকে পরিপূর্ণভাবে বুঝা;

২. শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা;

৩. শিশুর স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেড়ে ওঠার জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা;

৪. প্রতি বিষয়ে বা কর্মকান্ডে শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা;

৫. শিশুর পরিবেশকে অনেক বেশি উদ্দীপনাময় করা;

৬. উপযোগী উদ্দীপকের দ্বারা বারবার, বিভিন্নভাবে একটি বিষয় অনুশীলন করানো;

৭. শিশুর একাকীত্ব দূর করার জন্য সঙ্গ দেওয়া;

৮. পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা;

৯. শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকা;

১০. শিশুর বেড়ে ওঠা বা শিখনের জন্য শিখন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা;

১১. খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ রাখা;

১২. শিশুর সকল কর্মকান্ড বন্ধুসুলভ ভাবে মনিটরিং করা;


মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।