শিশুর শিখন সীমাবদ্ধতা বা প্রতিবন্ধকতা

শিশুর শিখন সীমাবদ্ধতা বা প্রতিবন্ধকতা

ক্লাসের আলোচিত বিষয়:

  • প্রতিবন্ধী কাকে বলে?
  • প্রতিবন্ধী শিশুর শ্রেণিবিভাগ কয়টি ও কী কী?
  • শিক্ষার্থীদের শিখন সীমাবদ্ধতার পেছনে প্রতিবন্ধকতাগুলো উল্লেখ করুন।
  • শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা কী? এর কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।
  • শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চাহিদা নিরসনে করণীয় দিকগুলো উল্লেখ করুন।
  • দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা কী? দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতার ৫ টি লক্ষণ লিখুন।
  • শ্রেণিকক্ষে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কোন কোন ধরণের চাহিদা লক্ষ্য করা যায় তা বর্ণনা করুন।

প্রতিবন্ধী কাকে বলে?

প্রতিবন্ধিত্ব বলতে স্বাভাবিক সক্ষমতার অভাবকে বুঝায়। সাধারণতঃ প্রতিবন্ধী বলতে স্বাভাবিক কর্ম অক্ষম ব্যক্তিকে বুঝায়। যেসব শিশুর শারীরিক ক্ষমতা, মানসিক যোগ্যতা, সংবেদীয় ক্ষমতা, সামাজিক ও ভাববিনিময় দক্ষতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিক শিশুর তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম থাকে, তাদের প্রতিবন্ধী শিশু বলা হয়। যাদের দেহের কোনো অঙ্গ যেমন- হাত-পা নেই, দৈহিক গঠন অস্বাভাবিক, চোখে দেখে না বা কানে শোনে না, বুদ্ধিমত্তা কম-এরাই প্রতিবন্ধী শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। এরা আমাদের সমাজেরই অন্যতম।

প্রতিবন্ধী শিশুর শ্রেণিবিভাগ কয়টি ও কী কী?
প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

ক) শারীরিক প্রতিবন্ধী

খ) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

গ) শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী

ঘ) বুদ্ধি বা মানসিক প্রতিবন্ধী

ঙ) বহু প্রতিবন্ধী (একাধিক প্রতবন্ধীতা)।

শিক্ষার্থীদের শিখন সীমাবদ্ধতার পেছনে প্রতিবন্ধকতাগুলো উল্লেখ করুন।

পাঠদানের ক্ষেত্রে একই শ্রেণিতে সকল শিক্ষার্থীর অগ্রগতি সমান হয় না। কেউ খুব দ্রুত বুঝে আবার কেউ ধীরে শেখে। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের ব্যবধান বা পার্থক্য থেকে যায়। সুতরাং একই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পারগতার স্তরগত এই ভিন্নতা নির্ণয় করা প্রয়োজন হয় এবং সে অনুসারে তাদের শিখন সীমাবদ্ধতাগুলো দূরা করার ব্যবস্থা করতে হয়। শিক্ষার্থীদের শিখন সীমাবদ্ধতার পেছন কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রতিবন্ধকতাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  • শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা,
  • দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা,
  • শারীরিক প্রতিবন্ধকতা,
  • বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা,
  • অটিজম ও শিখন প্রতিবন্ধকতা।

শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা কী? এর কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।
শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা বলতে কানে কম শোনা বা একেবারেই না শোনাকে বোঝায়। যারা শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করে বা না করে কেবল কানের সাহায্যে অন্যের কথা শুনতে পায় না, তাদের শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলা হয়। শ্রবণ ক্ষমতা মাপার একককে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডেসিবল (dB) বলা হয়। স্বাভাবিক শ্রবণক্ষমতা ০-২৬ ডেসিবল। অনেক সময় শ্রবণ সমস্যাগ্রস্ত দেখে বোঝা যায় না যে তার সমস্যা রয়েছে।

শ্রবণ প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ

  • কানের গঠনগত ত্রুটি বা বিকৃতি থাকলে, কান পাকা রোগ ইত্যাদি সমস্যা থাকা।
  • উচ্চারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা বা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের অসুবিধা বা উচ্চারণ এড়িয়ে যাওয়া।
  • শ্রেণি কার্যক্রমে অমনোযোগিতা, শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী পাঠ গ্রহণে সমস্যা হলে।
  • কানে শুনতে অসুবিধাগ্রস্ত শিশুরা ছোট গ্রুপে, নির্জন পরিবেশে ও ক্লাসের সামনের সারিতে বসে কাজ করতে আগ্রহী হয়।
  • প্রশ্ন করা হলে ভুল উত্তর দেয় অথবা উত্তর দিতে পারে না।
  • জন্মের পরে কথা বলার বয়সে কথা না বলে হাত এবং মুখ ভঙ্গিমার মাধ্যমে ভাব বিনিময় করা।
  • বিশেষ আচরণ করে যেমন- শিক্ষার্থী নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে, কোন কৌতুক বা রসিকতার সময় তা না বোঝার কারণে সবার সঙ্গে হাসে না ইত্যাদি।

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চাহিদা নিরসনে করণীয় দিকগুলো উল্লেখ করুন।

শ্রবণ প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর চাহিদাগুলো নিরসনের উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  • শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা হিয়ারিং ডিভাইস ব্যবহার করে শুনতে পায়। সুতরাং এমন শিক্ষার্থীদের হিয়ারিং ব্যবহারের মাধ্যমে শোনা।
  • স্বল্প শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীর কাছকাছি গিয়ে কিছুটা জোরে কথা বলা।
  • আসন ব্যবস্থা পূনর্বিন্যাসের মাধ্যমে তাদের ক্লাসের সামনে বা শিক্ষকের কাছাকাছি বসার ব্যবস্থা করা।
  • বিকল্প উপায় ব্যবহার করা যাতে না শুনলেও তারা বিষয়বস্তু বুঝতে পারে। যেমন- ছবি বা ভিডিও প্রদর্শন। ইশারা ভাষা ব্যবহার বা আকার-ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বিষয়বস্তু বোঝানো।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা কী? দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতার ৫ টি লক্ষণ লিখুন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা

যারা চোখে খুব সামান্য দেখে বা এক চোখে দেখতে পায় না বা দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়, তাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলা হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা বিভিন্ন প্রকার ও মাত্রার হতে পারে। যেমন- অনেকে আলো আঁধারের পার্থক্য বুঝতে পারে, কিন্তু কোনো বস্তুর আকার বুঝতে পারে না। আবার অনেকে বড় আকৃতির বস্তু দেখতে পায়, কিন্তু ছোট জিনিস দেখতে পায় না।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ:

  • পড়া বা অন্য কাজে সমস্যা হয় এবং চোখের কাছে নিয়ে দেখা।
  • কোনো বর্ণ বা শব্দ উল্টো দেখা।
  • ঘন ঘন চোখ রগড়ানো।
  • চোখ ঢেকে রাখা ও ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করা।
  • উজ্জ্বল আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা।
  • দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া।
  • বর্ণ চিনতে ভুল করা ইত্যাদি।
  • লিখতে গিয়ে খাতার লাইনের বাইরে লেখা কিংবা আঁকাবাঁকা করে লেখা ইত্যাদি।
  • স্বাভাবিক দৃষ্টিতে পড়তে অসুবিধা হওয়া যেমন- পড়ার সময় ট্যারা চোখে তাকানো।

শ্রেণিকক্ষে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কোন কোন ধরণের চাহিদা লক্ষ্য করা যায় তা বর্ণনা করুন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর দিক থেকে যে যে ধরনের চাহিদা লক্ষ্য করা যায় তা হলো:

  • ভালমতো দেখতে না পেয়ে বিকল্প উপায়ে শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করা। যেমন- মৌখিক যোগাযোগ ও বিষয়বস্তু মুখে বর্ণনা করা ও শোনানো।
  • স্বল্প দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর কাছাকাছি থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া।
  • লেখার ক্ষেত্রে সহপাঠী বা অন্য শ্রুতি লেখকের সহায়তা নেয়া।
  • প্রয়োজনে ব্রেইল পদ্ধতির সহায়তা নেয়া।
  • অডিও রেকর্ড বা লিখিত বর্ণনা সংরক্ষণ যা পরবর্তীতেও শুনে অনুশীলন করার সুযোগ রাখা।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।