প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কাকে বলে?

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কাকে বলে?

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুর অংশগ্রহণের এই প্রস্তুতিকালকেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বলা হয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার একটি বিস্তৃত পরিসরের সূচনার অংশ হলো প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। শিশুর শারীরিক, মানসিক, আর্থ-সামাজিক ও ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে শিশু-বান্ধব পরিবেশে আদর যত্ন, স্নেহ ভালবাসা, খেলাধুলা ও বিনোদনের মাধ্যমে ৫+ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করাই হল প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য।

 প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম যা শিশুর ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ও আজীবন শিখনের ভিত্তি ক্সতরি এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম সোপান ও প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। একটি শিশুর জন্মের পর তার মধ্যকার যে সত্ত্বা আছে তাকে বিকশিত করার জন্য এবং তাকে সারা জীবনের শিক্ষা ও প্রস্তুতির জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা অপরিহার্য। নিম্নে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো:

  • শিশুর উল্লেখযোগ্য বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটে;
  • সামাজিক দক্ষতা বাড়ে;
  • বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বাড়ে;
  • বিদ্যালয়ে শিশুর পারদর্শিতা বাড়ে;
  • ঝড়ে পড়া হার কমে;
  • প্রত্যাশিত দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে;
  • উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিশুদের অংশগ্রহণের হার কমে;
  • সামাজিক ও কল্যাণমূলক অন্যান্য সেবার উপর নির্ভরতা কমে;
  • সামাজিক অপরাধ প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
  • শিক্ষা ব্যয় কমে;
  • মাথাপিছু আয় বাড়ে;
  • উৎপাদনশীলতা বাড়ে,
  • আর্থ-সামাজিক ক্সবষম্য দূর হয়,
  • শিশুরমানসিক বিকাশ ঘটে ফলে যুক্তিপূর্ণ চিন্তা করতে শেখে, নতুন পরিবেশে নিজকে খাপ-খাওয়াতে শেখে,
  • ভাষার বিকাশ ঘটে,
  • সামাজিক বিকাশ ঘটে,
  • আবেগীয় বিকাশ ঘটে,
  • শারীরিক ও অঙ্গসঞ্চালনের বিকাশ যেমনঃ  ছবি আঁকা, খেলাধুলা, সাইকেল চড়া,
  • ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে,
  • প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতিমূলক শিক্ষা হিসেবে ভূমিকা রাখে।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রেক্ষাপট/পটভূমি

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের মানসম্মত  শিক্ষা অর্জনের একটি গভীর সংযোগ রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ছোট ছোট শিশুদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাষাবৃত্তিক এবং সামাজিক ও আবেগিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্ব¡পূর্ণ অবদান রাখে। এই গুরুত্বের কথা বিবেচনায় রেখে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ ৫+ বয়সি শিশুদের জন্য এবং পর্যায়ক্রমে ৪+ বছর বয়সি শিশুদের জন্য অর্থাৎ ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। এর পূর্বে ২০০৮ সালে সারাদেশে ৩-৫ বছর বয়সি সকল শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি সর্বজন স্বীকৃত জাতীয় মানের ওপর ভিত্তি করে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যকরভাবে ও সুসংগঠিতরূপে বাস্তবায়নের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পরিচালন কাঠামো প্রণয়ন করা হয়। অনুমোদিত কাঠামোর আলোকে ২০১০ সালে অন্তর্বর্তীকালীন প্যাকেজের মাধ্যমে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে ৫+ বয়সি শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে ২০১৪ সালে ৫+ বয়সি শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এ ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর বিষয়ে গুরুত্ব¡ারোপ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ অনুযায়ী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত কর্মপরিকল্পনায় প্রাক-প্রাথমিক মেয়াদ ১ বৎসর হতে ২ বৎসরে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। 
এই পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ জুন ২০২০ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪+ বয়সি শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার বিষয়টি অনুমোদন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২৯ জুন ২০২০ তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সারাদেশ ৫+ বয়সি শিশুদের জন্য বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখার পাশাপাশি জরুরিভিত্তিতে একটি অন্তর্বতীকালীন প্যাকেজ প্রণয়ন করে ২০২১ সালে নির্বাচিত ৩২১৪টি বিদ্যালয়ে ৪+ বয়সি শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তী সময়ে সারাদেশে ২০২১ সালে ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 
এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ৪+ বয়সি শিশুদের অন্তর্বর্তীকালীন প্যাকেজ তৈরির জন্য ২০২০ সালের আগস্ট মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ও শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রণয়ন কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দের সক্রিয় অংশগ্রহণে কয়েকটি কর্মশালার মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা (৪+) এর অন্তর্বর্তীকালীন প্যাকেজ অভিযোজন ও মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে প্রাক-প্রাথমিক ৪+ শিক্ষাক্রম অনুমোদনের প্রেক্ষিতে অর্ন্তবর্তীকালীন প্যাকেজটি পরিমার্জন করা হয়। এই পরিমার্জনের ক্ষেত্রে নি¤œলিখিত দলিলাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে-
  • প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ২০২২
  • প্রারম্ভিক শিখন ও বিকাশের আদর্শিক মান (Early Learning and Development Standards)
  • বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক ৪-৫ বছর বয়সি শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ কার্যক্রমের জন্য প্রণীত প্যাকেজ 
  • ৫+ বয়সি শিশুদের জন্য বিদ্যমান প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ও শিখন-শেখানো সামগ্রী 
  • ৫+ বয়সি শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রণীত অন্তর্বর্তীকালীন প্যাকেজ 
  • শিশুর প্রারম্ভিক যতœ ও বিকাশের সমন্বিত নীতি ২০১৩ Comprehensive Early Childhood Care and Development Policy 2013
  • প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত খসড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।