প্রক্রিয়াগতভাবে অঙ্কনের প্রকারভেদ

প্রক্রিয়াগতভাবে অঙ্কনের প্রকারভেদ

১. প্রক্রিয়াগতভাবে অঙ্কনকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

অঙ্কনের মূলসূত্র এবং অঙ্কনের প্রক্রিয়া অথবা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে অঙ্কনের প্রকারভেদ চিহ্নিত করা হয়েছে। অঙ্কনের সূত্র ধরে বলতে পারা যায় কোনটি কোন ধরনের অঙ্কন কোন সূত্র ধরে আঁকা হয়েছে এবং কীভাবে আঁকা হয়েছে।

অঙ্কনের প্রকারভেদ অনুযায়ী অঙ্কনকে ৯ (নয়) ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

১. ঘর্ষিত চিত্রাঙ্কন (Mass Drawing)

যে ড্রইং চক, কয়লা, প্যাস্টেল রঙ কিংবা পোড়ামাটির মতো কোন মাধ্যমে ঘষে ঘষে করা হয়, সে সকল অঙ্কনকে ঘর্ষিত চিত্রাঙ্কন বলা হয়। শিশু চিত্রাংকনের জন্য এ মাধ্যমটি খু্বই সহজ কারণ এ বয়সে রেখার সাহায্যে চিত্রের রূপ দেওয়া কঠিন। এ পদ্ধতিতে কোন একটা বিন্দু থেকে মাধ্যমটি দ্বারা ঘঘে ঘষে পরিকল্পিত রূপ দেওয়া যায়।

২. সীমারেখা চিত্রাঙ্কন (Outline Drawing)

ঘর্ষনের বিপরীত অঙ্কন পদ্ধতি হলো সীমারেখা ড্রইং বা চিত্রাঙ্কন। এ প্রক্রিয়ায় চিত্রের বাহিরে লাইন বা রেখা দিয়ে ছবি অঙ্কন করা হয়। যেমন- একটি গোলাপ ফুল আঁকতে শুধুমাত্র গোলাপ ফুলের পাপড়ির লাইনগুলো অঙ্কন করাই হলো সীমারেখা চিত্রাঙ্কন।

৩. মুক্তহস্তে চিত্রাঙ্কন (Freehand Drawing)

যখন কোন চিত্র অঙ্কনের জন্য কোন প্রকার যন্ত্র বা প্রযুক্তির সাহায্য না নিয়ে শিল্পী তার নিজ হাজে মুক্তভাবে ছবি এঁকে থাকে তখন তাকে মুক্তহস্তে চিত্রাঙ্কন বলা হয়। এক কথায় মুক্তহস্ত চিত্রাঙ্কন হলো কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই খালি হাতে ছবি আঁকা। প্রাথমিক পর্যায়ে অঙ্কনের প্রথম দিকে শিশুদের এ পদ্ধতিতে আঁকার প্রতি উৎসাহিত করা যেতে পারে। এর ফলে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

৪. যন্ত্রের সাহায্যে চিত্রাঙ্কন (Instrument Drawing)

কিছু চিত্র আছে যা আঁকার জন্য যন্ত্রের সাহায্য জরুরী যেমন জাতীয় পতাকা অঙ্কনের জন্য স্কেল, রুলার ইত্যাদির ব্যবহার। জ্যামিতিক আকৃতি যেমন ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভূজ ইত্যাদি অঙ্কনের জন্য যখন যন্ত্রের সাহায্যে ছবি আঁকা হয় তথন তাকে যন্ত্রের সাহায্যে চিত্রাঙ্কন বলা হয়। গাণিতিক ধারণার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি বেশ কার্যকর। এছাড়াও আর্কিটেকচারাল ডিজাইন করার জন্য যন্ত্রের সাহায্যে চিত্রাঙ্কন করা হয়।

৫. আদর্শ দেখে চিত্রাঙ্কন (Model Drawing)

আদর্শ দেখে চিত্রাঙ্কন মডেল ড্রইং নামে বেশি পরিচিত। কোন বস্তু কিংবা প্রাণী প্রতিকৃতি দেখে ছবি আঁকার পদ্ধতিকে ‘আদর্শ দেখে চিত্রাঙ্কন’ বলা হয়। কাল্পনিকভাবে অঙ্কন করার চেয়ে বস্তু বা প্রাণির মূল কাঠামো দেখে চিত্রাঙ্কন করা হয়। বাস্তব জিনিস সম্পর্কে ধারণা প্রদানের জন্য শিশুদের মডেল দেখে আঁকা শেখালে জ্ঞানার্জন সহজ হয়।

৬. স্মৃতির সাহায্যে চিত্রাঙ্কন (Memory Drawing)

কোন ধরণের মডেল না দেখে স্মৃতির সাহায়্যে চিত্রাঙ্কন করাকে ‘স্মৃতির সাহায্যে চিত্রাঙ্কন’ বলা হয়। অঙ্কনযোগ্য ছবিকে প্রথমে মানসপটে অঙ্কন করার পর শিল্পী যখন সেই মানসপটের দৃশ্যকে রং তুলি বা পেন্সিলের সাহায্যে ক্যানভাস বা কাগজের অঙ্কন করে তখন আমরা তাকে স্মৃতির সাহায্যে চিত্রাঙ্কন বলে থাকি।

৭. কাল্পনিক চিত্রাঙ্কন (Imaginary Drawing)

কোন বস্তু, আদর্শ বা চিত্রের অনুকরণ না করে শিল্পী নিজের কল্পনা থেকে যখন নতুন কিছু অঙ্কন করে তখন তাকে কাল্পনিক চিত্রাঙ্কন বলে। সাধারণভাবে এ ধরণের চিত্রাঙ্কন শিল্পী বাস্তব ও অবাস্তব কল্পনার সংমিশ্রণে চিত্রাঙ্কন করে থাকে। যেমন-ময়ূরপঙ্খী নাও।

৮. বর্ণনামূলক চিত্রাঙ্কন (Descriptive Drawing)

শিল্পী যখন কোন ঘটনা বা কোন দৃশ্যের বর্ণনা শুনে বা পাঠ করে তার উপর ভিত্তি করে অঙ্কন করে তখন তাকে বর্ণনামূলক চিত্রাঙ্কন বলে। অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে কোন একজন চাক্ষুষ সাক্ষী যখন অপরাধীকে দেখেছে কিন্তু তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনে না তখন তার বর্ণনা শুনে ছবি আঁকার মাধ্যমে অপরাধী সনাক্ত করার কাজে এ ধরণের চিত্রাঙ্কন প্রক্রিয়া বেশ কার্যকর। এছাড়াও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক নির্দেশনার মাধ্যমে কোন একটি বস্তুর বর্ণনা দিয়ে শিশুকে চিত্রাঙ্কন করতে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যায়।

৯. সৃজনাত্মক চিত্রাঙ্কন (Creative Drawing)

কোন ছবি অনুকরণ বা কপি না করে সম্পূর্ণ নিজস্ব ভাবধারা ও প্রক্রিয়ায় সৃজিত চিত্রাঙ্কনকে সৃজনাত্মক চিত্রাঙ্কন বলা হয়। শিল্পী তার সৃজনশীল প্রতিভার পরিচয় প্রদানের জন্য নতুন ভাবধারার মাধ্যমে যে ছবি অঙ্কন করা হয়, তাকে সৃজনাত্মক চিত্রাঙ্কন বলা হয়। সৃজনাত্মক চিত্রাঙ্কন বলতে মূলত শিশু চিত্রকলাকেই বুঝায়।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।