চারুকলার ব্যবহারিক উপাদান: অনুপাত ও পরিপ্রেক্ষিত

চারুকলার ব্যবহারিক উপাদান: অনুপাত ও পরিপ্রেক্ষিত এবং ছবি আঁকার উপকরণ

চারুকলার ব্যবহারিক উপাদানসমূহ কী কী?
চারুকলার ব্যবহারিক উপাদান

চারু ও কারুকলার ব্যবহারিক উপাদানগুলোই হচ্ছে অঙ্কনের মূল বিষয় বা হাতিয়ার। ব্যবহারিক বিষয়গুলোর কোন একটির অনুপস্থিতি ছবিকে অসম্পূর্ণ করে রাখে। ভাল একটি ছবি আঁকতে এর কোনটিকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। যার জন্য অঙ্কন শেখার পূর্বে এই ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে ধারণা থাকা একজন আঁকিয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অঙ্কনের মাধ্যমে শিক্ষক ব্যবহারিক দিকগুলোর কলা-কৌশল আয়ত্ত করে ছবি অঙ্কনের সময় তা প্রয়োগ করবেন।

প্রশিক্ষক এবং শিক্ষককে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এ নিয়ম কেবল বড়দের জন্য, শিশুদের জন্য নয়।

চারু ও কারুকলার উল্লেখযোগ্য উপাদানসমূহ:

  • অনুপাত (Proportion)
  • সমতা (Symmetry)
  • পরিপ্রেক্ষিত (Perspective)
  • আলোছায়া (Light and Shade)
  • ভারসাম্য (Balance)
  • কেন্দ্রীয় আকর্ষণ (Central Interse)
  • গঠন বা রচনাশৈলী (Composition)

নিম্নে উপাদানসমূহের বিস্তারিত ধারণা ব্যাখ্যা করা হলো:

অনুপাত (PROPORTION)

অঙ্কনের জন্য অনুপাত একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। একই দৃশ্যপটে তুলনামূলকভাবে দেখা একটি জিনিস থেকে আর একটা জিনিস কত বড় বা কত ছোট, তাই অনুপাত। অনুপাতের সঠিক ব্যবহারের কোন বাস্তবধর্মী ছবিই সফল হতে পারে না। একটি দৃশ্যপটে যদি একটি হাতি এবং একটি ছাগল আঁকা হয়, তাহলে হাতি ছাগলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কত বড় হবে অথবা ছাগলটি তুলনামুলকভাবে কত ছোট হবে সেটা অনুপাতের মাধ্যমে ঠিক করা হয়।

পরিপ্রেক্ষিত (PERSPECTIVE)

ভালমানের ছবি আঁকার জন্য পরিপ্রেক্ষিত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে  বাস্তবধর্মী চিত্র অংকনে এটি দরকার হয়। অংকনের সময় কোন একটি বস্তু অপর একটি বস্তু থেকে কত দূরে অবস্থান করছে এবং বিভিন্ন বস্তু কোন দৃষ্টিকোণ হতে শিল্পী দেখেছেন, এই দুটি দেখানোই পরিপ্রেক্ষিত।

ছবিতে কোন বস্তুর দুরত্ব বুঝানোর ক্ষেত্রে কাছের বস্তুটির আকার বড় আর যতই দূরে দেখানো হবে বস্তুটি ঠিক ততই তুলনামূলকভাবে ছোট হয়ে যাবে এটাই পরিপ্রেক্ষিত। আকাশের প্রান্তরেখা নিচের দিকে আর জমিনের প্রান্তরেখা উপর দিকে যা সমুদ্রের তীরে দাঁড়ালে দেখা যায়। আকাশ দূরে যেন পানির সাথে মিশে আছে যাকে আমরা দিগন্ত রেখা বলে থাকি।

আলো-ছায়া (Light and Shade)

বাস্তবধর্মী চিত্রাঙ্কনের ক্ষেত্রে আলোছায়ার গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত সীমারেখা দিয়ে ছবি আঁকা হলেও তাকে বাস্তবধর্মী চিত্র বলা যাবে না। আলোছায়ার মাধ্যমে একটি বস্তুর সঠিক অবস্থান বুঝাতে আলোছায়ার ব্যবহার করা হয়। সাধারণত তিন রকমের আলো বা টোন ব্যবহার করা হয়। যেমন-

  • লাইট টোন,
  • মিডল টোন ও
  • ডার্ক টোন।

ভারসাম্য (Balance)

ছবির বিভিন্ন অংশের মধ্যে রেখা, রং ও বিষয়ের সমন্বয় থাকাকে ভারসাম্য বলা হয়। এর প্রধান দিক হলো রেখা ও রং-এর মাত্রা যেন সমপর্যায়ে থাকে। একটি চিত্রকে আকর্ষণীয় করার জন্য রং, রেখা ও বিষয়বস্তুর মধ্যে পারস্পারিক মিল রাখার জন্য ভারসাম্য জরুরি। ক্যানভাসের কোথাও ফাঁকা রাখা যাবে না।

কেন্দ্রিয় আকর্ষণ (Central Interse)

প্রত্যেকটি শিল্পকর্মের মধ্যে একটি জায়গা ফোকাস করা হয় যাতে মূল বিষয়বস্তুটি পূর্ণাঙ্গতা পায়। কেন্দ্রিয় আকর্ষণ একটি চিত্রকর্মের মূল আকর্ষণ যার মাধ্যমে দর্শকের চোখ পড়ে তথা মন ও আবেগকে নাড়া দেয়। আর মূল বিষয়বস্তকে ফুটিয়ে তোলার জন্য আরও কিছু ছোটখাটো বিষয়কে ব্যবহার করা হয়।

গঠন বা রচনাশৈলী (Composition)

প্রতিটি শিল্পকর্ম তৈরির পূর্বে একজন শিল্প একটি খসড়া তৈরি করেন। ছবিতে কোন কোন জিনিস থাকবে সেগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকেই মূলত গঠন বা রচনা শৈলী বলা হয়। গঠন শৈলী যত পরিকল্পিত ও পরিপাটি হবে চিত্রের গুণগত মান বা নান্দনিকতা তত বৃদ্ধি পাবে।


মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।