শিল্পকলা

শারীরিক শিক্ষা ও এর শ্রেণিবিন্যাস এবং শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

শারীরিক শিক্ষা ও এর শ্রেণিবিন্যাস এবং শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

আলোচ্য বিষয়:
  • শারীরিক শিক্ষা বলতে কী বোঝায়?
  • শারীরিক শিক্ষার শ্রেণীবিন্যাস আলোচনা করুন।
  • শারীরিক শিক্ষার তত্ত্বীয় বিষয়সমুহ কী কী?
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করুন।
শারীরিক শিক্ষা বলতে কী বোঝায়?

শারীরিক শিক্ষা:

‘শারীরিক শিক্ষা’ কথাটি বিশ্লেষণ করলে দু’টি ভিন্ন তত্ত্ব পাওয়া যায়। যার একটি ‘শরীরের জন্য শিক্ষা’ আর অন্যটি হলো ‘শরীরের মাধ্যমে শিক্ষা’। শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষা অসম্পূর্ণ। উক্তিটি বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, যে জ্ঞান বা শিক্ষা দ্বারা শরীরের গঠন, এর কার্যকলাপ, বৃদ্ধি, উন্নতি ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্বন্ধে অবহিত হওয়া যায় তা-ই শারীরিক শিক্ষা। বর্তমানে শারীরিক উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনই হলো শারীরিক শিক্ষা।

শারীরিক শিক্ষার সংজ্ঞা:

ডি. কে. ম্যাথিউস এর মতে-  “শারীরিক কার্যকলাপের দ্বারা বা মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষাই শারীরিক শিক্ষা।”

স্মিথ ও ক্লিফটন বলেছেন- “বিজ্ঞানসম্মত ও কৌশলগত অঙ্গসঞ্চালনের নাম শারীরিক শিক্ষা।”

জে. বি. ন্যাশের ভাষায়, ‘শারীরিক শিক্ষা গোটা শিক্ষার এমন একদিক যা মাংসপেশির সঠিক সঞ্চালন ও এর প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে ব্যক্তির দেহের ও স্বভাবের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করে।

এম. জি. ম্যানসন ও এ. জি. এল. ভ্যান্ট্রির মতে- “ব্যক্তির উন্নতি ও সমাজের পারস্পরিক কর্মকাণ্ডই আধুনিক শারীরিক শিক্ষা।”

পরিশেষে বলা যায়, যে শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধনের মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে তাকে শারীরিক শিক্ষা বলে।

শারীরিক শিক্ষার শ্রেণীবিন্যাস আলোচনা করুন।

শারীরিক শিক্ষার শ্রেণিবিভাগ:

সাধারণভাবে শারীরিক শিক্ষার বিষয়সমূহকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: ১. ব্যবহারিক বিষয় এবং ২. তত্ত্বীয় বিষয়।

ব্যবহারিক দিক থেকে শারীরিক শিক্ষা আবার বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল-

১) প্রধান খেলা (Major Game): ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেট বল, হ্যান্ডবল, ভলিবল।

২) স্বল্প পরিসর খেলা (Small Area Game): কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, বিল টেনিস, টেনিস ও খো-খো।

৩) জিমন্যাস্টিক্স: জিমন্যাস্টিক্সকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

ক) মৌলিক জিমন্যাস্টিক্স:  দৌড়ানো, জাম্পিং, ফ্রন্টরোল, ব্যাকরোল, কার্টহুইল, রোমান রিং, হেডস্ট্যান্ড।

খ) ক্রীড়া জিমন্যাস্টিক্স: প্যারালাল বার, হরাইজেন্টাল বার, রোমান রিং, পমেল হর্স, গ্রাউন্ড এক্সারসাইজ।

গ) সাহায্যকারী জিমন্যাস্টিক্স: শারীরিকভাবে অসুস্থ, কর্মজীবি বা চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত জিমন্যাস্টিক্স যা সরাসরি নয় বরং পরোক্ষভাবে সাহায্যকারী জিমন্যাস্টিক্স।

৪) এ্যাথলেটিক্স: ওয়ার্ম আপ, দৌড়, হার্ডলস ও রীলে, হাইজাম্প, লংজাম্প, ডিসকাস, জেভলিন, হ্যামার থ্রো।

৫) একোয়াটিক্‌স (জল ক্রীড়া): ফ্লোটিং, সাঁতার (বুক, চিৎ, প্রজাপতি), লাইফ সেভিং, বক্সিং, কুস্তি, জুডো, কারাত, সোয়াড ডিল।

৬) রিদমিক্স একটিভিটিস: মার্চ পিটি, মাইনর গেমস, ক্যালেস্থনিক, এ্যারোবিবাস।

শারীরিক শিক্ষার তত্ত্বীয় বিষয়সমুহ কী কী?

শারীরিক শিক্ষার তত্ত্বীয় বিষয়সমুহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  • শারীরিক শিক্ষার ইতিহাস,
  • শারীরিক শিক্ষার তত্ত্ব ও নীতি,
  • শিক্ষা ও ক্রীড়া মনোবিজ্ঞান,
  • শারীরিক শিক্ষার শিক্ষাদান পদ্ধতি,
  • এনাটমী ও স্পোর্টস ফিজিওলজী,
  • খেলাধুলার নিয়ম কানুন, এবং
  • স্বাস্থ্য শিক্ষা ও প্রাথমিক চিকিৎসা।
শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব বর্ণনা করুন।

উইলিয়ামস-এর মতে, ‘শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো ব্যক্তির শারীরিক, সামাজিক ও অন্যান্য দিকের সুষম উন্নতি ঘটিয়ে ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের চেষ্টা করা’। শারীরিক শিক্ষার মধ্যে শিক্ষার্থীর সর্বতোমুখী উন্নতির দিকটি বিশেষভাবে বিদ্যমান।

শিক্ষাবিদ ম্যাসলোর মতে, শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজন তিনটি স্তরে সাজানো যেমন- ১. শারীরিক প্রয়োজন, ২. মানসিক প্রয়োজন এবং ৩. সামাজিক প্রয়োজন।

শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব:

১. শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর দৈহিক গঠন সুন্দর ও মজবুত করে;

২. শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর শারীরিক সক্ষমতার উন্নতি করে;

৩. সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;

৪. শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর সুস্থ্য মনের জন্য সুস্থ্য শরীর গড়ে তোলে;

৫. পড়াশুনার একঘেয়েমী দূর করে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে;

৬. শারীরিক শিক্ষা চারিত্রিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটায়;

৭. এর মাধ্যমে ক্রোধ, রাগ ইত্যাদি প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়;

৮. শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর আত্মসচেতনতা, আত্ম নির্ভরতা, আত্ম উপলব্ধি ও আত্ম শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়;

৯. শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর সৃজনশীল মনোভাগ গঠন করে;

১০. খেলাধুলায় অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীকে সকল ক্ষতিকর নেশা থেকে বিরত রাখে;

১১. নেতৃত্বদানের ক্ষমতার বিকাশ ঘটে;

১২. দেশ, জাতি ও সমাজের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটে;

১৩. মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে ফলে উদার মানসিকতা তৈরি করে;

১১. গণতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে তোলে;

১২. বৈশ্বিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে বিশ্ব নাগরিক তৈরিতে সহায়তা করে।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।