শিশুর ভিন্নতার ধরণ
শিশুর ভিন্নতার ধরণ
- একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থায় কী বলা হয়েছে?
- শিশুর ভিন্নতা বলতে কী বুঝায়?
- শিশুদের ভিন্নতার ধরনসমূহ উল্লেখপূর্বক বর্ণনা করুন।
- শিক্ষার্থীদের ভিন্নতা চিহ্নিতকরণ ও চাহিদা নিরূপণের উপায় লিখুন।
শিশুর ভিন্নতা বলতে কী বুঝায়?
সকল শিশুর শেখার ধরণ এক নয়। শিশুদের এই ভিন্নতার জন্যেই বিভিন্ন শিখন তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে। প্রতিটি শিশুই অনন্য এবং সতন্ত্র। ফলে শ্রেণিকক্ষের অনেক শিশুর মধ্যে নানা ধরনের ভিন্নতা দেখা যায়। কেউ হয়তো দ্রুত শিখে, কেউ ধীরে, কেউ হয়তো কম শুনতে বা কম দেখতে পায় ইত্যাদি।
শিশুদের ভিন্নতার ধরনসমূহ উল্লেখপূর্বক বর্ণনা করুন।
প্রতিটি শিশুই আলাদা। শ্রেণি শিশুরা একসাথে পাশাপাশি অবস্থান করলেও কেউ হয়ত লাজুক, কেউ চটপটে, কেউ দ্রুত শিখে, কেউ ধীরে, কেউ পড়ায় ভালো কিন্তু অঙ্কে কাঁচা, কেউ ক্লাসে মনোযোগী, কেউ নিজে মনোযোগী নয় আবার অন্যদেরও সমস্যা করে, কেউ অন্যদের মত ভালো দেখতে বা শুনতে পায় না। শিশুদের নানান ভিন্নতা তাদের শিখনকে প্রভাবিত করে। শিশুদের এসব ভিন্নতাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-
শিক্ষার্থীদের শেখার ধরনগত ভিন্নতা:
হাওয়ার্ড গার্ডনার তাঁর বহুমূখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বে শিক্ষার্থীদের শেখার ভিন্নতার কথা উল্লেখ করেছেন। কেউ ভাষাগত বিষয় ভালো শেখে, কেউ গাণিতিক বিষয় ভালো শেখে, কেউ পড়ে ভালো শেখে, কেউ কাজ করার মাধ্যমে ভালো শেখে ইত্যাদি।
শিক্ষার্থীদের পারগতার স্তরে ভিন্নতা:
শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার ভিন্নতার কারণে এ ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। যেমন- কেউ দ্রুত শেখে, কেউ ধীরে শেখে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধিতার কারণে সৃষ্ট ভিন্নতা:
প্রতিবন্ধিতা শিশুদের শিখনের ক্ষেত্রে প্রচুর অন্তরায় সৃষ্টি করে। যেমন- দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা ইত্যাদি কারণে অন্য শিশুদের থেকে তারা কিছুটা ভিন্ন হয়।
শিক্ষার্থীদের আচরণগত ভিন্নতা:
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের আচরণের ভিত্তিতেও তাদেরকে আলাদা করা হয়। যেমন- কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে যারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে, শিক্ষকের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ অথবা প্রতিবন্ধকতাও তৈরি করে।
শিক্ষার্থীদের জেন্ডার ভিন্নতা:
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জেন্ডার ভিন্নতার কারণে শিশুদের শিখন কার্যক্রম প্রভাবিত হয়। তবে উন্নত দেশগুলো তেমন প্রভাবিত হয় না।
শিক্ষার্থীদের ভাষাগত ভিন্নতা:
ভাষাগত ভিন্নতাও শিশুদের শিখনকে প্রভাবিত করে। বাংলাভাষী শিশুদের কাছে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও বিভিন্ন ভাষাভাষী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা (যেমন: ত্রিপুরা, লুসাই, তঞ্চঙ্গ্যা) বিদ্যালয়ে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়।
শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থাগত ভিন্নতা:
শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থাগত পার্থক্য ইত্যাদি কারণেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- যেসব শিশুর বাসায় পড়াশোনা জানা লোক নেই তাদের বাড়ির কাজ দেয়া হলে সহায়তার অভাবে তাদের পক্ষে সেটা করা সম্ভব নাও হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের ভিন্নতা চিহ্নিতকরণ ও চাহিদা নিরূপণের উপায় লিখুন।
একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর ভিন্নতার ধরণ জানা থাকলে শিখন শেখানো কার্যক্রম সহজ হয়। কিছু লক্ষণ দেখে শিশুদের ভিন্নতা ও চাহিদা চিহ্নিত করা যায়। যেমন-
- পড়ে শেখে,
- দেখে শেখে,
- শোনার মাধ্যমে শেখে,
- বলার মাধ্যমে শেখে,
- কাজের মাধ্যমে শেখে,
- গন্ধ শুঁকে শেখে,
- ছুয়ে শেখে,
- কেউ কেউ গল্প শুনে শেখে,
- কিছু শিক্ষার্থী যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে আয়ত্ব করে,
- কেউ কেউ ছবি বা ভিডিও দেখে শিখতে পছন্দ করে,
- কেউ কেউ আবার প্রকৃতি থেকে শিখতে ভালবাসে,
- শিশুরা লেখার মাধ্যমে শেখে,
- এমন কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা ছন্দ বা সঙ্গীতের মাধ্যমে শেখে ইত্যাদি।
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। এমনকি একজন ব্যক্তির একাধিক বুদ্ধিমত্তা থাকতে পারে। শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রধান বুদ্ধিমত্তাকে কাছে লাগিয়ে কোন কিছু আয়ত্ব করতে শেখে। হাওয়ার্ড গার্ডনার মূলত মানুষের এই বহুমূখী বুদ্ধিমত্তার উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের ভিন্নতা চিহ্নিত করে তাদের চাহিদা অনুসারে পাঠদানের পরামর্শ দিয়েছেন।
একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থায় কী বলা হয়েছে?
আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে সকল শিশুর অংশগ্রহণের অধিকার আছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদ, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশ সরকার প্রণীত শিশু অধিকার আইন অনুযায়ী সকল শিশুরই মৌলিক শিক্ষার অধিকার আছে এবং এ উদ্দেশ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অধিকার আছে। আমাদের শিক্ষানীতিও একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নের কথা বলেছে যেখানে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা নির্বিশেষে সকল শিশুরই একই বিদ্যালয়ে এবং একই শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষালাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং বাস্তব কারণেই শ্রেণিকক্ষ বলতে এখন একীভূত শ্রেণিকক্ষই বোঝায়।
মতামত দিন