বি.এড

শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল

Teaching Method and Strategies

শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল বলতে কী বুঝায়?

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বিভিন্ন রকম শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল প্রচলিত আছে। দিনে দিনে এ সকল পদ্ধতির পরিবর্তন, পরিমার্জন হচ্ছে। কোনো কাজ করতে গিয়ে আমরা যথাযথ উপায় বা ধাপ অনুসরণ করি৷ কাজ করার জন্য এই যথাযথ উপায় অনুসরণই হচ্ছে পদ্ধতি৷ শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল মূলত উদ্দেশ্যমূলক কাজ, যা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়৷ শিখনের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ধারাবাহিক যে প্রক্রিয়া বা কৌশলের মাধ্যমে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকেই শিখন শেখানোর পদ্ধতি বলা হয় (লতিফ, ২০০৭)৷

শিখন শেখানো কার্যক্রমের তিনটি প্রধান উপাদান হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু৷ শিখন শেখানো পদ্ধতির কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থী ও তার শেখার বিষয়ের মধ্যে বন্ধন বা যোগাযোগ তৈরির মাধ্যমে আচরণিক উদ্দেশ্য বা শিখনফল অর্জনের চেষ্টা করা৷ অর্থাৎ শিক্ষক নির্দিষ্ট পদ্ধতির ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার বিষয়বস্তুর মধ্যে যোগাযোগ ঘটান (মালেক ও অন্যান্য, ২০০৯)৷

প্রাচীন ও মধ্যযুগের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক ছিলেন শিক্ষা প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু৷ শিক্ষার্থী ছিল গৌণ৷ শিক্ষক বা গুরু যা শেখাতেন, যেভাবে শেখাতেন তা-ই শিক্ষার্থীদের শিখতে হতো অনেকটা বাধ্য হয়ে৷ সময়ের সাথে এই তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব পরিবর্তিত হয়েছে৷ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীই মুখ্য এবং শিক্ষকের কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীর কাজের মাধ্যমে শিখনে সাহায্য করা৷ শিক্ষার্থীর বয়স, অভিজ্ঞতা, রুচি, আগ্রহ ও পরিবেশ ইত্যাদির প্রতি লক্ষ রেখে শিক্ষক উপযুক্ত শিখন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করবেন৷

প্রত্যেকটি পদ্ধতি কয়েকটি ধাপ বা স্তরের সমন্বয়৷ শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের আগেই তাই শিক্ষক পাঠের উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করে সে অনুযায়ী ধাপে ধাপে অগ্রসর হন৷ একজন ভালো শিক্ষক কোনো একক পদ্ধতি বা কৌশলের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন না৷ শিখন শেখানো একটি সৃজনশীল কাজ৷ যে শিক্ষক যত সৃজনশীল তাঁর পাঠদান তত চমৎকার ও ফলপ্রসূ (লতিফ, ২০০৭)৷

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার এ যুগে শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল গুলো সম্পূর্ণভাবে শিশু বা শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে যে সকল পদ্ধতি চালু আছে সেগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১. শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি (Teachers Centred Method) ও

২. শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতি (Learner Centred Participatory Method) ।

শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি কাকে বলে?

সুপ্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত বেশকিছু শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি চালু রয়েছে। মূলত যে শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশলের মধ্যে শিক্ষার্থী অপেক্ষা শিক্ষকের কর্মতৎপরতা অধিক থাকে তাকেই শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি বলা হয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে এদেরকে সনাতন বা গতানুগতিক পদ্ধতি বলা চলে। যে পাঠদান পদ্ধতিতে শিক্ষকের ভূমিকা মুখ্য এবং শিক্ষার্থীদের ভূমিকা গৌণ সে পদ্ধতিগুলো শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি তুলে ধরা হলো :

  • বক্তৃতা পদ্ধতি;
  • প্রদর্শন পদ্ধতি;
  • টিউটোরিয়াল পদ্ধতি;
  • আবৃত্তি পদ্ধতি;
  • সর্দার-পড়ো ব্যবস্থা ইত্যাদি।

শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি কাকে বলে?

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি প্রণয়ন করা হয়।  বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শিশুর সক্রিয়তা, কর্মকেন্দ্রিকতা, সামর্থ্য ও আগ্রহকে কাজে লাগানো। কাজেই শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, আবেগিক সামর্থ্য, আগ্রহ, বুদ্ধি ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিয়ে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখনফল অর্জনের জন্য যে সকল পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করা হয় সে সকল পদ্ধতিগুলোকে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে গঠনবাদ তত্ত্ব অনুসারে শিক্ষার্থীর নিজস্ব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সাথে নতুন জ্ঞানের সংযোগ ঘটানোর সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সহায়তায় নিজেরাই গভীর চিন্তা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে বিষয়বস্তুর ভেতরে গিয়ে নিজের মধ্যে আত্মস্থ
 করে। উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতি হলো:

  • আলোচনা পদ্ধতি;
  • প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি;
  • আরোপিত কাজ পদ্ধতি;
  • সেমিনার পদ্ধতি;
  • বিতর্ক পদ্ধতি ইত্যাদি।

শিখন-শেখানো পদ্ধতি

ক) বক্তৃতা পদ্ধতি (Lecture Method)

শিখন শেখানোর কাজে ব্যবহৃত বিভিন পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম ও বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে বক্তৃতা পদ্ধতি৷ শিক্ষককেন্দ্রিক এই পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এ পদ্ধতিতে শিক্ষক মৌখিক বিবৃতি বা বক্তৃতার মাধ্যমে পাঠের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন৷ বক্তৃতা পদ্ধতি এমন একটি পদ্ধতি যার ক্ষেত্রে শিক্ষককে মৌখিক বিবৃতির সাহায্যে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর শিক্ষার্থীর কাছে্‌ উপস্থাপন করতে হয়। এখানে শিক্ষকের বক্তৃতাদানের পারদর্শিতা, বক্তৃতাদানের কলাকৌশল, বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীর নিকট হৃদয়গ্রাহী করে তোলার ক্ষমতা, শিক্ষার্থীর বয়স, মেধা, আগ্রহ, পারগতা, বোধগম্যতা ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়বস্তুকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের দক্ষতার ওপর শিক্ষাদানের সার্থকতা অনেকাংশে নির্ভর করে।

খ) আলোচনা পদ্ধতি (Discussion Method)

এই পদ্ধতিতে পাঠের বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে আলোচনা করে এবং সেক্ষেত্রে বুঝতে কোনো ধরনের সমস্যা হলে শিক্ষকের পরামর্শ ও তাঁর সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি আয়ত্ত করে। এক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং শিক্ষার্থীরা স্বশিখনের সুযোগ পায়৷ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়সহ প্রায় সকল বিষয়ের পাঠ উপস্থাপনায় এই পদ্ধতিটি বেশ কার্যকর।

গ) প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি (Question-Answer Method)

এ পদ্ধতিতে কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে ছোট ছোট প্রশেড়বর সাহায্যে মূল বক্তব্যকে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয় এবং শিক্ষার্থীরা তার উত্তর দিতে চেষ্টা করে, কোনো উত্তর জানা না থাকলে শিক্ষক নিজে সে প্রশেড়বর উত্তর দেন এবং শিক্ষার্থীদের দিয়ে সঠিক উত্তরের পুনরাবৃত্তি করান৷ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক এ পদ্ধতির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে শিক্ষকের দক্ষতা ও কৌশলের ওপর৷

ঘ) সমস্যা-সমাধান পদ্ধতি (Problem-Solving Method)

এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্মিলিত চেষ্টায় শিক্ষা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা সমাধান করেন৷ একে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিও বলা হয়৷ শনাক্ত করে কতকগুলো নির্দিষ্ট ধাপে সমাধানের চেষ্টা করা হয়৷ সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার ধাপগুলো হলো-

১. সমস্যা শনাক্তকরণ;

২. তথ্য সংগ্রহ;

৩. অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ;

৪. পরীক্ষণ;

৫. উপাত্ত সংগ্রহ;

৬. সিদ্ধান্ত/ফলাফল৷

তবে এক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান বা অনুশীলন শিক্ষার্থীদের দিয়েই করা হয়৷ এর লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যার সমাধানে দক্ষ করে তোলা৷

ঙ) প্রকল্প পদ্ধতি (Project Method)

প্রকল্প পদ্ধতি অনেকটা সমস্যামূলক পদ্ধতির মতো৷ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক এ পদ্ধতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে কোনো একটা সমস্যা বা বিষয়কে প্রকল্প হিসেবে দেন, যা তারা নিজস্ব পরিকল্পনা, বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্পাদন করে৷ এর ফলে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক পরিবেশে কাজ করার মাধ্যমে শিখনফল অর্জন করতে পারে৷

চ) বিতর্ক পদ্ধতি (Debate Method)

এ পদ্ধতিতে পাঠ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দুটি দল বিষয়টির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে৷ অন্যান্য শিক্ষার্থী এ আলোচনা শোনে৷ শিক্ষক বিতর্ক অনুষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং অন্য কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন৷ ভাবে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি ও আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সম্পর্কে গভীরভাবে জানার সুযোগ পায়৷

ছ) ভূমিকাভিনয় পদ্ধতি (Role Play Method)

সাধারণত ইতিহাস, সাহিত্য বা সামাজিক ঘটনাবলি সংশ্লিষ্ট পাঠ শেখার ক্ষেত্রে ভূমিকাভিনয় একটি কার্যকর পদ্ধতি৷ এক্ষেত্রে পাঠ সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনাকে অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন ভূমিকায় অভিনয় করে৷ এতে শিক্ষার্থীরা বিষয়টির গভীরে গিয়ে যেমন শিখতে পারে, তেমনি চরিত্রের মাধ্যমে ঘটনাগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে৷ শিক্ষার্থীদের একঘেয়েমি দূর হয়ে আনন্দের মধ্য দিয়ে শেখা হয়৷

জ) প্রদর্শন পদ্ধতি (Demonstration Method)

পাঠের কোনো বিষয়কে প্রত্যক্ষভাবে উপকরণ প্রদর্শন করে উপস্থাপনের প্রক্রিয়াকে প্রদর্শন পদ্ধতি বলা হয়৷ এখানে শিক্ষক পাঠ সংশ্লিষ্ট বিভিন ধরনের উপকরণ প্রদর্শন করেন৷ পাঠের কোনো বিষয়কে প্রত্যক্ষভাবে উপকরণ প্রদর্শন করে উপস্থাপনের প্রক্রিয়াকে প্রদর্শন পদ্ধতি বলা হয়৷ এখানে শিক্ষক পাঠ সংশ্লিষ্ট বিভিন ধরনের উপকরণ প্রদর্শন করেন৷ এরপর তিনি মৌখিক বর্ণনা ও প্রশেড়বাত্তরের মাধ্যমে বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন৷ এ পদ্ধতিতে শিক্ষক দু-একজন শিক্ষার্থীকে উপকরণ প্রদর্শন বা পরীক্ষণে সাহায্য নিতে পারেন তবে অন্য শিক্ষার্থীরা নিষ্ঙিঊয় দর্শকের ভূমিকায় থাকে৷

শিখন শেখানো কৌশল (Teaching-Learning Techniques) বলতে কী বুঝায়?

শিখন শেখানো কৌশল মূলত পদ্ধতিরই অংশ৷ বিশেষ কোনো পদ্ধতির প্রয়োগ-যোগ্যতা বাড়াতে এবং সেটাকে আরো বেশি ফলপ্রসূ করে তুলতে সহায়ক হিসেবে নানা কৌশল ব্যবহার করা হয়৷ যেমন- বক্তৃতা পদ্ধতির একঘেয়েমি দূর করতে ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তা বাড়াতে প্রশড়ব-উত্তর প্রক্রিয়াকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ আবার প্রশড়ব-উত্তর পদ্ধতিতে বক্তৃতাকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ সুতরাং বলা যায় যে, কোনো একটি বা একাধিক পদ্ধতি অন্য একটি পদ্ধতির ক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, আবার সেই কৌশলটি অন্য ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যায় (মালেক ও অন্যান্য, ২০০৯)৷

নিম্নে উল্লেখযোগ্য কিছুসংখ্যক শিক্ষণ কৌশল সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :

(ক) প্রশ্ন-উত্তর (Question-Answer)

পাঠ উপস্থাপনে এটি বহুল ব্যবহৃত কৌশল৷ প্রায় সব পদ্ধতির সাথেই প্রশড়ব-উত্তর কৌশলের ব্যবহার করে শিখন শেখানো কার্যμমকে আরো বেশি ফলপ্রসূ করে তোলা যায়৷

খ) পর্যবেক্ষণ (Observation)

পর্যবেক্ষণের ফলে শিখন অভিজ্ঞতা স্থায়ী ও পরিপক্ব হয়৷ তাই পাঠের বিষয়বস্তুর যেসব দিক পর্যবেক্ষণযোগ্য তা শিক্ষার্থীদের দিয়ে পর্যবেক্ষণ করানো দরকার৷ এ ধরনের কৌশলের ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব হয়৷

গ) অর্পিত কাজ (Assignment)

অর্পিত কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠ সংশ্লিষ্ট বিভিন কাজ দেয়া৷ যেমন- পাঠের কোনো অংশ আগে থেকেই বাসায় পড়া কিংবা পাঠের ওপর নোট তৈরি করা৷ এর ফলে শিক্ষার্থীরা পাঠ সম্পর্কে গভীরভাবে জানার ও স্বশিখনের সুযোগ লাভ করে৷

ঘ) বিতর্ক (Debate)

বিতর্ককে প্রায় সকল পাঠের ক্ষেত্রে অন্য কোনো পদ্ধতির সহায়ক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ বিশেষ করে সামাজিক বিজ্ঞান, সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে এটি কৌশল হিসেবে খুবই কার্যকর৷

ঙ) সঙ্গীদলে শিখন (Peer Learning)

এ ধরনের পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা নিজেরা তাদের সঙ্গীদলের মধ্যে পরস্পর আলোচনা ও কাজ করার মাধ্যমে শেখে৷ এক্ষেত্রে শিক্ষকের নিয়ন্ত্রণ খুবই কম৷ শিক্ষার্থীরাও কোথাও ঠেকে গেলে শিক্ষক তাদের সহায়তা করেন মাত্র৷

চ) দলগত শিখন (Group Learning)

পাঠে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটিও জোড়ায় শিখনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল৷ এর ফলে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক আদান-প্রদান ও আলোচনার মাধ্যমে কোনো বিষয়ে শিখতে পারে এবং তাদের মধ্যকার জড়তা কেটে সবাই মিলে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হয়৷

ছ) চিন্তার আলোড়ন (Brain Storming)

চিন্তার আলোড়ন বলতে কোনো বিষয় নিয়ে ভাবার বা চিন্তা করার জন্য এক ধরনের উদ্দীপনা তৈরি করাকে বোঝায়৷ সাধারণত পাঠ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে প্রশড়ব ছুড়ে দিয়ে তা নিয়ে ভাবতে বলা হয় এবং সেগুলোকে লিখে বা মুখে বলতে বলা হয়৷ এভাবে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করে।

শিখন শেখানোর কাজে কখনোই কোনো বিশেষ পদ্ধতি এককভাবে সফল হতে পারে না, বরং বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশলের সমন্বিত প্রয়োগের ফলেই শিখন-শেখানো কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়ে ওঠে।

তথ্যসূত্র:

১. ডিপিএড মড্যুল: পেশাগত শিক্ষা: ১ম ও ২য় খন্ড।

২. বি.এড মড্যুল : শিক্ষণ দক্ষতা ও কৌশল।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।