বি.এড

ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব

Ecological system theory of Bronfrenbrenner

ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব

শিশুর শিখন ও বিকাশে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ মানুষ সাধারণত তার নিকট পরিবেশ থেকে শেখে৷ শিশুর চারপাশের পরিবেশ তার জীবনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ফেলে৷ পরিবেশের প্রভাবের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে, গতানুগতিক ধারণা ও তত্ত্বের বাইরে অনেকটা ব্যতিক্রমধর্মী ও কার্যকরী ধারণার উদ্ভাবন করেন ব্রনফেনব্রেনার নামক একজন শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী৷ তাঁর এ তত্ত্ব ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব (Ecological system theory) নামে পরিচিত৷ এ তত্ত্বে শিশুকে একটি পূর্ণাঙ্গ সত্তা হিসেবে দেখে তাকে সমাজের প্রতিটা স্তর বা সিস্টেমে কিভাবে প্রভাবিত করছে এবং তাঁর আচরণে প্রভাব ফেলছে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে৷ তার মতে, শিশু শুধু শিশু নয়, সে একটি পরিবারের অংশ, আবার পাড়ার একজন সক্রিয় সদস্য, আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (বিদ্যালয়/ ক্লাব/দলের) এবং রাষ্ট্র ও সমাজেরও একজন নাগরিক৷ তাই তাকে সমাজে সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রতি জোর দিয়ে মতামত ব্যক্তি করা হয়৷ আধুনিক যুগে শিক্ষা-বিজ্ঞানে এ তত্ত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ শিশু তার নিকট পরিবেশ থেকে দেখে বা নিজে বাস্তবে প্রয়োগ করে অনেক কিছু শেখে৷ বাস্তু-সংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বের মূল কথা হলো- শিশু পরিবেশ, পরিবেশের বিভিন্ন সদস্য ও উপাদান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বৃহত্তর সমাজ ও এগুলোর মধ্যকার বিদ্যমান সিস্টেম শিশুর শিখন ও বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে৷ বাস্তুসংস্থান তত্ত্বটি সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল৷ এ তত্ত্ব শিশুর নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও পরিবেশের ভিন্নতাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে না, বরং তত্ত্বটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে সার্বিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে৷ শিশুর বিকাশে পরিবেশের এই প্রভাবকে এ তত্ত্বে খুবই সুসংগঠিতভাবে দেখানো হয়৷ বর্তমান যুগে এ তত্ত্বটি শিশু শিক্ষায় বেশ গুরুত্বের সাথে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়৷

তত্ত্বটিতে মানব উন্নয়নের ধারাকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে পরিবার, স্থানীয় সামাজিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিদ্যালয়, গণমাধ্যম (রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজ, বিজ্ঞাপন) রাষ্ট্র এবং বর্তমান রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়৷ এ তত্ত্ব অনুযায়ী শিশু যে পরিবেশে বাস করে তার একটি প্রভাব তার জীবনের বিভিন পর্যায়ে পড়ে থাকে৷ এখানে পরিবেশ বলতে শুধু শিশুর পারিবারিক পরিবেশের কথা বলা হয়নি৷ বরং তার চারপাশে যে পরিবেশ সেগুলোকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে, যেমন-তার পরিবার, সহপাঠী ও খেলার সাথী, পাড়া-প্রতিবেশী, শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজন এবং নানা ধরনের সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ও নিয়ম-কানুন, যা তাকে প্রভাবিত করে তার কথাও বলা হয়েছে৷ পারিবারিক পর্যায়ে যেমন-ভাইবোনের আচরণ, বাবা/মায়ের নির্দেশনা তাকে ভালো আচরণ বা নিয়মিত বিদ্যালয়ে হাজির হতে প্রভাবিত করছে; তেমনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন আইন/ বিধিও (বিদ্যালয়ে শিশুদের কোনো শাস্তি প্রদান করা যাবে না, নির্দিষ্ট বয়সে টীকা দেয়া, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিকারের প্রশ্নে) শিশুর শিখন ও বিকাশে প্রভাব ফেলছে, অনুরূপভাবে শিশুর প্রতি বৃহত্তর সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি (রাস্তায়/মিডিয়াতে/রাজনীতি/খেলার মাঠ) শিশুর আচরণ ও বিকাশের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে৷ বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বে শিশু তার পরিবেশের সাথে কিভাবে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয় ও বিভিন্ন সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) হয় তা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়৷ এ তত্ত্বে একটি সিস্টেমের বা চক্রের মাধ্যমে মানব উন্নয়নের বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করা হয়েছে৷

ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব –এর ধাপসমূহ

মাইক্রো সিস্টেম (Microsystem) :

এটি হলো এ চক্রের প্রথম স্তর৷ শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব, সকল অভিজ্ঞতা, সকল প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সহযোগে মাইক্রো সিস্টেম অংশটি গঠিত৷ পরিবার, শিশু সেবাকারী এবং সহকারী, বিদ্যালয়, শিক্ষক, শিশু চিকিৎসাসেবা, সামাজিক সেবা ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত৷ শিশুরা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও শিশু কর্তৃক প্রভাবিত হয়৷ যেমন-শিশু তার পরিবারের লোকজন এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক প্রভাবিত হয়৷ একইভাবে শিশুর আচরণের ফলে তাদেরও মানসিক পরিবর্তন আসে৷ শিশুর সামাজিক আচরণ শিক্ষকের নির্দিষ্ট ধরনের কর্মকান্ড দ্বারা প্রভাবিত হয়; একইভাবে শিক্ষক কী করবেন সেটি শিশুর আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়৷

মেসো সিস্টেম (Mesosystem) :

মাইক্রো সিস্টেমে একজন দ্বারা অন্যজনের প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে বা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার কারণেই বাস্তববিদ্যার দ্বিতীয় স্তরের সৃষ্টি হয়, যাকে তিনি নাম দিয়েছেন মেসো সিস্টেম৷ এর মাধ্যমে একটি সম্পর্কের শক্ত ভিত গড়ে ওঠে৷ মেসো সিস্টেমে যখন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে দৃঢ় সহযোগিতা এবং যোগাযোগ বর্তমান থাকে তখন বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বানুযায়ী শিশু উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়৷

এক্সো সিস্টেম (Exosystem) :

শিশুর উন্নয়নের ওপর প্রভাবকারী পরিবেশের এই ধাপ (এক্সো সিস্টেম) যা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরস্পর সংযুক্তি তৈরি করে তবে তা শিশুর জীবনকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে না৷ কিন্তু, পরোক্ষভাবে তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে৷ দেখা যায় যে, অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, সরকারি ব্যবস্থা, ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদি প্রত্যক্ষভাবে শিশুর সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে সহায়তা না করলেও শিশুর পরিবার, পিতা-মাতাকে সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সহায়তা করে, যা পরোক্ষভাবে শিশুর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ যা বিশেষভাবে শিশুর শিখন ও সার্বিক বিকাশে প্রভাব ফেলে৷ যেমন, একটি দেশ যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করে, কিংবা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন বা শিশু অধিকার সম্পর্কে কার্যকরী বিধি-বিধান প্রণয়ন করে, তা শিশুর বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে৷

ম্যাক্রো সিস্টেম (Macrosystem) :

বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বের/চক্রের শেষ বা চূড়াস্ত ধাপ৷ এখানে মূলত সমাজে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও আদর্শের দিকগুলোর কথা বলা হয়েছে৷ আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় শিশুর উনড়বয়নে এর সংশ্লিষ্টতা নেই, কিন্তু বাস্তবে শিশুর সার্বিক উন্নয়নে এর গভীর প্রভাব রয়েছে৷ যেমন-যে সমাজে শিশু নির্যাতনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় সেখানে শিশুনির্যাতনের ঘটনা কম ঘটে৷ একইভাবে যে সমাজ বা রাষ্ট্র শিশুর বিকাশের উপযোগী আইন তৈরি করে (শিশুদের সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া, তার খেলা/কাজকে ও শিখনকে গুরুত্ব দেয়া হয়) সেখানে শিশু যেভাবে বেড়ে উঠবে, যে সমাজে এ ধরনের সংস্কৃতি ও মূলবোধ নেই সেখানে অন্যভাবে বেড়ে উঠবে৷

ক্রোনো সিস্টেম (Chronosystem):

এটি এরিক ব্রনফেনব্রেনার কর্তৃক প্রদত্ত কোনো ধাপ নয়৷ পরবর্তীতে বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বের ধাপগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, শিশু এসব ধাপ দ্বারা সৃষ্ট প্রভাবের বাইরেও কোনো ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে৷ যেমন-পারিবারিক বিপর্যয়, সামাজিক বিপর্যয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি বিষয় শিশুকে প্রভাবিত করে৷ বলা হয়ে থাকে, যে কোন প্রাকৃতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিপর্যয়ে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি৷ যেমন, যখন বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে অথবা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হয় তখন শিশুরাই মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়৷ এসব ঘটনাকে ক্রোনো সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷

শিক্ষাক্ষেত্রে ‘ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব’ -এর প্রভাব

শিক্ষাক্ষেত্রে বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে৷ একটি শিশু যে পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে সেই পরিবেশের যাবতীয় উপাদানের দ্বারা শিশুটির শিখন ও বিকাশে প্রভাব পড়ে৷ যেমন-

  • শিশুর পরিবারে তার বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন তাকে কিভাবে লালন-পালন করছে তার ওপর শিশুটির বেড়ে ওঠা তথা যাবতীয় বিকাশ নির্ভর করে৷ ক্রমান্বয়ে শিশুটি যখন বড় হতে থাকে তখন তার আশপাশে যে সমস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থাকে তারা শিশুটির বিকাশে ভূমিকা রাখে৷
  • সমাজের সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, রীতি-নীতি ইত্যদির প্রভাবও শিশুটির ওপর পড়তে থাকে৷ একটি দেশের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা কেমন হবে তার ওপর নির্ভর করে শিশুটির সাথে বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কী ধরনের আচরণ করছে বা সেবা প্রদান করছে৷ সুতরাং, শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক কেমন হবে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক কেমন আচরণ করবেন, পাঠদান পদ্ধতি কেমন হবে এতদ্‌সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় ঐ দেশের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে, যা বাস্তববিদ্যার তত্ত্বেরই উপাদান৷ আবার, দেশে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও শিশুদের বেশি প্রভাবিত হতে দেখা যায়৷
  • বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বটি সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল৷ এটা শুধু সাংস্কৃতিক ভিন্নতাকেই গ্রহণ করে না, বরং ভিন্নতাকে মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত করার চেষ্টা করে৷ তত্ত্বটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷
  • শিশুকে শুধু একক শিশু হিসেবে না দেখে তাকে একটি পরিবারের, নিকট পাড়া/গ্রাম, বন্ধু-বান্ধব, বিদ্যালয়, রাষ্ট্র ও সমাজের সদস্য হিসেবে দেখতে হবে৷ তাকে, প্রতিটা স্তরেই এক এক ধরনের মিথস্ক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে লিপ্ত হতে হয়, যা দ্বারা সে প্রভাবিত হয়৷ শিশুর উন্নয়নে তাই এসব বিষয়ও আমাদেরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে৷
  • আমাদের দায়িত্ব হলো, শিশু-বান্ধব শিখন ও বিকাশ উপযোগী পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি, রাষ্ট্র ও সমাজ উপহার দেয়া যা তাকে সার্বিক বিকাশে বিকশিত করে তুলবে৷ আর বাস্তববিদ্যা তত্ত্বে এ কথাগুলোই গুরুত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷

শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং বিকাশের ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব -এর আলোকে শিক্ষকের করণীয়

আমরা জানি শিশু হলো অফুরন্ত সম্ভাবনাময় একটি পূর্ণাঙ্গ মানবসত্তা৷ উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় উদ্দীপনার সুযোগ পেলে পরিপূর্ণ বিকাশে লাভ করবে৷ যুগে যুগে শিশু সম্পর্কে মানুষের ধারণার অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে৷ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুর শিখন ও বিকাশ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা ও তত্ত্বের উদ্ভাবন শিশুদের সম্পর্কে উন্নত ধারণার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷ শিশুর সম্পর্কে ধারণা অর্জন, দৃষ্টিভঙ্গি, শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও সার্বিক বিকাশ সম্পর্কিত ধারণা একজন শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত জরুরি৷

একথা সহজে বোধগম্য যে, একজন শিক্ষক যিনি শিশুদের সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারন করেন, শিশুর বৃদ্ধি, বিকাশ ও শিখন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা রাখেন তার সাথে, যে শিক্ষক এ সম্পর্কিত ধারণা ও দক্ষতা রাখে না তার শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়৷ শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশ ও শিখন দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষকের এসকল বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক৷

শিশু একজন মানুষ হিসেবে পরিবারের, রাষ্ট্রের ও সমাজের সদস্য হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরিতে এবং শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনের জন্য শিক্ষকের দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ শিক্ষকের সহায়তা তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, বিকাশমূলক চাহিদা ও প্রয়োজন মেটানো ও সার্বিকভাবে দেখা জরুরি৷ শিশু বিকাশের সাথে মস্তিষ্কের বিকাশের ভূমিকা এবং সেক্ষেত্রে পরিবেশ ও বড়দের সেবা/পরিচর্যার প্রভাব দুই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ৷ পাশাপাশি পরিবেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাব ও বড়দের বিভিন্ন রকম ক্রিয়ামূলক কাজের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা থাকতে হবে, যা আমাদের করণীয় কাজসমূহ নির্ধারণ ও প্রণয়নে ভূমিকা রাখে৷

একথা সত্য যে, একটি শিশুর সামাজিক প্রেক্ষাপঠ, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে তার বিকাশে ভিন্নতা দেখা দেয়৷ পাশাপাশি, এটাও সত্য যে, বিকাশের ধারাবাহিক যে ধারাক্রম বা বয়ঃক্রম বেড়ে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে তা বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া প্রায় সকল শিশুর ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করে৷ আর এসব বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ও সার্বিক ধারণা লাভ (ব্যবহারের কৌশল প্রয়োগ) করা একজন শিক্ষক হিসেবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।