শিশু বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব

বংশগতি ও পরিবেশ বলতে কী বোঝায়? শিশু বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব ব্যাখ্যা করুন।

শিশুর বিকাশে বংশগতি না পরিবেশ কোনটি গুরুত্বপূর্ণ তা জানার আগে আমাদের জানা খুব প্রয়োজন। বংশগতি হল মা, বাবা ও পূবর্ পুরুষের কাছ থেকে জন্মগতভাবে পাওয়া শারীরিক, মানসিক এবং স্বভাবগত কিছু বৈশিষ্ট্য। এই সব বৈশিষ্ট্যের জন্যই একজন ছেলে বা মেয়ে বাবা, মা কিংবা পরিবারের অন্য কোনো পূবর্ পুরুষের অবিকল এক চেহারা সম্পন্ন হয় অথবা কথাবার্তা, চাল-চলনে ও মন মানসিকতায় একই ধরনের হয়ে থাকে। অন্যদিকে, ব্যক্তির চারপাশে যা কিছু আছে তা সবই তার পরিবেশ। অর্থাৎ পরিবেশ বলতে বোঝায় তার ঘর-বাড়ি, স্কুল, মা-বাবা, সংস্কৃতি, ধর্ম পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি সব বিষয়। এককথায়, যা একক অথবা সমষ্টিগতভাবে ব্যক্তির আচরণে প্রভাব ফেলে তাই ব্যক্তির পরিবেশ।

বংশগতি

বংশগতির কারণে মানুষের সন্তান মানুষের মতো দেখতে হয়। আবার উচ্চতা, দেহের গঠন, চুল, চোখ, চামড়ার রং ইত্যাদি দৈহিক গুণাবলি এবং বিভিন্ন মানসিক গুণাবলি বংশগতির কারণে একেক জনের একেক রকম হয়। বংশগতির প্রভাব জীবনের সূচনা থেকে শুরু করে সারা জীবনব্যাপী চলতে থাকে। বংশগতির সূচনা হয় মাতৃগর্ভ  থেকে। কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানী বুদ্ধি বিকাশে বংশগতির ধারাকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েছেন। তাদের মতে, কোনো ব্যক্তি কতটুকু বুদ্ধিমান হবে তা সে জন্মগতভাবেই পেয়ে থাকে। তাঁরা এর স্বপক্ষে নানা রকম যুক্তি ও গবেষণালব্ধ তথ্য প্রকাশ করেছেন। বংশগতিবিদ হিসেবে ফ্রান্সিস গ্যালটনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি সমাজের ৯৭৭ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনদের জীবন ইতিহাস পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে দেখতে পান যে তার মধ্যে ৫৩৬ জনই সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত অপরদিকে সমাজের অতি সাধারণ ৯৭৭ জন ব্যক্তির বংশের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে দেখতে পান যে, এদের মধ্যে মাত্র ৪ জন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ থেকে তিনি বলেন যে, এর মূল কারণ হল বংশধারার প্রভাব।

পরিবেশ

বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলে একথাও প্রমানিত হয়েছে যে, শিশুর বিকাশে বংশগতি নয় বরং পরিবেশই প্রধান। মনোবিজ্ঞানী ওয়াটসনের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।  তিনিই বংশগতিবিদদের বলেছেন যে, “আমাকে একজন সুস্থ স্বাভাবিক শিশু দিন, আমি ইচ্ছামত তাদের বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে পরিপূর্ণতা এনে দিতে পারি। জন লক, রবাটর্  আওয়েল এই মতকে সমর্থন করেন। হেলেন ও গ্লাডিস নামে দুই সমকোষী জমজ শিশু ঘটনা চক্রে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে মানুষ হয়, অনেক বছর পর তাদের পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তাদের মধ্যে সামাজিক, মানসিক ও আবেগের বিকাশে ব্যাপক পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।

বংশগতি ও পরিবেশের পারস্পরিক প্রভাব

আমরা বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করলাম। তবে, শিশুর বিকাশে উভয় উপাদানেরই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। একটিকে ছাড়া অন্যটি অচল। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা অবশ্য একথা সমর্থন করেন। ধরা যাক একটি বুদ্ধিদীপ্ত পরিবারের শিশুকে প্রতিক‚ল পরিবেশে রাখা হল। এতে দেখা যাবে যে, উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে তার সুপ্ত সম্ভাবনা বিকশিত হয়নি। একইভাবে, জন্মগতভাবে একটি অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন শিশুকে ভালো পরিবেশে রাখা হলেও দেখা যাবে যে, তার বুদ্ধ্যাংক তেমন বাড়তে পারছেনা।

বংশগতি ও পরিবেশ নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানাভাবে গবেষণা করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত তারা দেখাতে চেয়েছেন যে, ব্যক্তি জীবনের বিকাশ কেবল বংশ ধারার উপরই নিভর্ র করে না বরং পরিবেশের উপরও তার কিছুটা নিভর্ রতা রয়েছে। শিশুর জন্মমুহুর্ত যে সম্ভাবনা থাকে পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য পরিবেশের প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিবেশ যত উন্নতই হোক না কেন, শিশুর মধ্যে যদি বিকাশধর্মী উপাদান না থাকে, তার জীবন বিকাশ কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। অর্থাৎ শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশ উভয়েরই বিরাট ভ‚মিকা রয়েছে। শিশুর মধ্যে তার বংশগত বুদ্ধির সীমারেখা জন্মগতভাবেই থাকে, তা বিকশিত হয় উপযুক্ত পরিবেশের মাধ্যমে।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।