শিশু বিকাশের স্তর

নবজাতককাল কী?

ভূমিষ্ট হবার পর থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত এ ধাপ বিস্তৃত । এ সংক্ষিপ্ত সময়ে সম্পূর্ন ভিন্ন একটি জগতের তথা নতুনপরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে শুরু করে এবং খাপ খাওয়ানো না হওয়া পর্যন্ত বিকাশ ব্যাহত হয়। পর্যায়টি নবজাতকের জন্য বিপদজনক। এ পর্যায়ে সঙ্গতিবিধানের অন্যতম বিষয় হলো:

  • পরিবর্তিত তাপমাত্রার সাথে সঙ্গতি বিধান (কারণ মার পেটে থাকাকালীন সে ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটে থাকে),
  • শ্বাস-প্রশ্বাস,
  • চোষা,
  • গলধকরণ করা কঠিন হবার কারনে এসময়ে ওজন হ্রাস পায়।
  • জন্মগতভাবেই নবজাতক যে স্বতন্ত্র এবং পৃথক মেজাজের অধিকারী তা তার কর্মতৎপরতা ও সংবেদনশীলতায় ধরা পড়ে যা পরবর্তীতে তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যতায় প্রভাব ফেলে।

নবজাতকের অভিযোজন (Adjustment) ক্ষমতা সম্পর্কে লিখুন।

শিশুর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জন্ম পরবর্তী প্রথম মাসটি অত্যন্ত সংকটময়। কারণ এ সময় শিশু অতি সহজে যে কোন রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কেননা নবজাতকের পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে সঙ্গত বিধান করার ক্ষমতার যথেষ্ট অভাব থাকে। নিজ অস্তিত্ব বজায় রাখার সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ৪টি শারীরবৃত্তীয় চাহিদা অপরিহার্য।

১) শ্বাসকার্য,

২) তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা,

৩) খাদ্যগ্রহণ এবং মলমূত্র ত্যাগ এবং

৪) বাহ্যিক পরিবেশের সাথে উপযোজন।

প্রাক-শৈশবকাল কী?

এর সময়কাল শিশু জন্মের ২ সপ্তাহ থেকে ২ বছর পর্যন্ত । প্রাক-শৈশবে শিশুর দৈহিক বিকাশ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দৈহিক বিকাশের সাথে সাথে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে- এর ফলে দৈহিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জনের ফলে স্বনির্ভরতার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়।

এসময় শিশুরা মূলত বিভিন্ন ইন্দ্রিয় অনুভূতির মাধ্যমে শেখে এবং চোখে পড়ার মতো কিছু অপরিহার্য দক্ষতা যেমন-গড়াগড়ি দেওয়া, পাশ ফেরা, জিনিস ধরা, হামাগুড়ি দেয়া,বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা, কথা বলা  ইত্যাদি দক্ষতা অর্জন করে। শিশুরা তার সেবাদানকারীকে (বাবা/মা) চিনতে পারে ও বিভিন্ন আচরণে সাড়া দেয়।

বাল্যকাল (Early Childhood) বলতে কী বুঝায়?

২ থেকে ৫ বছর এ পর্যায়টি অর্জনের সময়। এ পর্যায়ে শিশুর প্রতি যে সামাজিক প্রত্যাশার প্রভাব তার আগ্রহ, আচরণ, মূল্যবোধে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে। সমাজ ও পরিবেশ বিষয়ক সরল ধারণা গড়ে ওঠে। আচরণে ন্যায় অন্যায় বোধের প্রতিফলন সুস্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। এ পর্যায়ে শিশুরা যে সকল ক্সবশিষ্ট্য অর্জন করে তাহলো শক্ত খাবার খেতে শেখে, ভালভাবে হাঁটতে শেখা, মলমূত্র নিয়ন্ত্রণ করা, স্ত্রী পুরুষের বিদ্যমান পার্থক্য করতে পারা, লেখাপড়া শুরু করার জন্য প্রস্তুত হওয়া, সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার মাধ্যমে বিবেক গড়ে ওঠা ইত্যাদি। দলের সদস্যপদ প্রাপ্তির প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন এ পর্যায়ের শিশুদের অন্যতম বিকাশমূলক কাজ। তাই এপর্যায়কে দলপূর্ব (pre-gang age) বয়স বলা হয়ে থাকে। এ বয়স থেকেই সামাজিক অভিযোজন প্রক্রিয়ার সূচনা হয়।

হেভিংহাস্টের মতে লেট চাইল্ডহুড এর বৈশিষ্ট্যগুলো কী?

৬ বছর থেকে ১০ /১১ বছর বাল্যকাল (Late Childhood) মানব জীবনের এপর্যায়ে বিশেষ কিছু দক্ষতা অর্জন করে যা তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অভিযোজনে সহায়তা করে। হেভিংহাস্টের মতে অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:

  • খেলাধূলার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক নৈপুণ্য;
  • উচ্চতর এবং বিকাশমান প্রাণী হিসাবে যথাযথ মনোভাব;
  • সমবয়সীদের সাথে মিথষ্ক্রিয়া করা;
  • লিঙ্গ অনুযায়ী সামাজিক ভূমিকা পালন;
  • লেখাপড়া ও গণনার মৌলিক কৌশল অর্জন;
  • জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন ধারণা অর্জনের মাধ্যমে নৈতিক বিকাশ সাধন;
  • বিভিন্ন জনগোষ্ঠি ও প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে মনোভাব তৈরি;
  • স্বাবলম্বিতা ও সক্ষমতা অর্জন।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।