এম.এড

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম

Competency based curriculum in Bangladesh

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম

বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ শুরু হয় ১৯৮৬ সালে এবং এই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম দেশব্যাপী প্রবর্তনের কাজ আরম্ভ করা হয় ১৯৯২ সালে প্রথম শ্রেণীতে এবং পর্যায়ক্রমে পঞ্চম শ্রেণীতে সম্পন্ন হয় ১৯৯৬ সালে।

প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ জন কার প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসরণ করে বলা যায় যে, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে এবং বাইরে যে সকল কর্মকান্ডের পরিকল্পনা করে তা হল শিক্ষাক্রম। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর শিখন সংক্রান্ত বিদ্যালয়ে যাবতীয় পরিকল্পিত কর্মকান্ডই শিক্ষাক্রমের আওতায় পড়ে। ওপরের সংজ্ঞা থেকে দেখা যায় শিক্ষাক্রম হল কতকগুলো পরিকল্পিত কর্মকান্ড। এ কর্মকান্ডগুলোর মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আচরণিক পরিবর্তন হয় এবং তারা বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করে। শিক্ষার্থীদের এ জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গী এবং দক্ষতাকে বলা হয় যোগ্যতা।

শিক্ষার্থীগণ একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যেমন- প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে ৫ বছরে যে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের যে ধরনের আচরণিক পরিবর্তন ঘটবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয় তাকে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম বলে।

ধরা যাক প্রথম শ্রেণী শেষে বাংলা বিষয়ে ‘আম আন‘ এই বাক্যটি শিক্ষক শিশুদের সামনে উপস্থাপন করছেন। তাহলে দেখতে হবে এর মাধ্যমে শিক্ষক শিশুকে দিয়ে কি কি যোগ্যতা অর্জন করাতে চান্? মোটামোটিভাবে বলা যায় শিশুরা এই বাক্যটির মাধ্যমে নিম্নলিখিত যোগ্যতা অর্জন করবে:

যোগ্যতা

পড়া: বাক্যটি পড়তে পারবে।

ক. বাক্যের অন্তর্গত শব্দ দুটি (আম, আন) সনাক্ত করতে ও পড়তে পারবে।

খ. বাক্যের অন্তর্গত বর্ণ তিনটি (আ ,ম, ন) চিনতে ও পড়তে পারবে।

লেখা:  বাক্যটি লিখতে পারবে।

ক. বাক্যের অর্ন্তগত শব্দ দুটি লিখতে পারবে।

খ. বাক্যের অর্ন্তগত বর্ণ তিনটি লিখতে পারবে।

পূর্বে আমাদের দেশে- পৃথিবীর অনেক দেশের মতই বিষয়বস্তুভিত্তিক শিক্ষক্রম প্রচলিত ছিল। বিদ্যালয়ে কী কী বিষয় পড়ানো হয়, সে সব বিষয়ে কি কি বিষয়বস্তু থাকবে তা উল্লেখ করে এ ধরনের শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়। এ ধরনের শিক্ষাক্রমে মূলত জ্ঞান প্রাধান্য পায়।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের প্রকৃতি

১. শিক্ষার্থী কোন শ্রেণীতে কোন বিষয়ে কি কি যোগ্যতা (জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গী) অর্জন করবে তা সুনির্দিষ্টকরণ।

২. শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ্য ও মানসিক পরিণমন এবং তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করে যোগ্যতা নির্বাচনের ক্ষেত্র সুনিদিষ্টকরণ।

৩. শিক্ষার্থীর অর্জিত যোগ্যতা তাৎক্ষণিক প্রয়োগ করানোর মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনে তাকে আত্মপ্রত্যয়ীকরণ।

৪. শহর ও পল্লী অঞ্চলের সকল বিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে কতটুকু শেখাতে হবে এবং কি যোগ্যতা অর্জন করাতে হবে সেগুলোর সঙ্গে শিক্ষকগণের পরিচিতিকরণ।

৫. জীবনের প্রস্তুতির জন্য শিক্ষা, মুখস্থ করে সনদপত্র অর্জনের জন্য শিক্ষা নয় তা সামনে রেখেই শিক্ষার সমস্ত কর্মকান্ডের আয়োজন।

৬. পুরোপুরি শিখন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অপ্রয়োজনীয় তত্ত¡ ও তথ্য পরিহারপূর্বক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের পরিসর

সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যেই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের পরিসর নিহিত। তবুও অবহিত হওয়ার সুবিধার্থে সেগুলো নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল:

১. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগমন উপযোগী সকল স্বাভাবিক শিশুর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি।

২. বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাশেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ধরে রেখে পুরোপুরি শিখন নিশ্চিতকরণ। অসুবিধাগ্রস্ত পরিবার থেকে আগত শিশুর পূর্বপ্রস্তুতিমূলক শিক্ষাদান করে বিদ্যালয়ে তাদের উপস্থিতি স্থিতিশীলকরণ।

৪. বিশেষ করে মেয়ে শিশুর বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের বাধাবিপত্তি (যেমন: লিঙ্গ তারতম্য) দূরীকরণ এবং খাদ্যের বদলে শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিতকরণ।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।