শিল্পকলা

সংগীত কী? সংগীতের স্বর, তাল ও সপ্তক

 সংগীত কী? সংগীতের স্বর, তাল ও সপ্তক

আলোচ্য বিষয়ঃ

  • সংগীত বলতে কী বুঝায়?
  • গীত, বাদ্য ও নৃত্য কী?
  • স্বর কাকে বলে? প্রত্যেক স্বর এর পূর্ণ নাম লিখুন।
  • স্বর কয় প্রকার ও কী কী?
  • সপ্তক কাকে বলে ? কত প্রকার কি কি ?
  • আরোহণ ও অবরোহণ কী?
  • তাল বলতে কী বোঝায়? তাল কত প্রকার ও কী কী বর্ননা করুন।
  • গান কী? গানের কয়টি অংশ ও কী কী?
সংগীত বলতে কী বুঝায়?

সংগীত বলতে চিত্ত বিনোদনে সমর্থ্য স্বরসমূহের বিন্যাসের মাধ্যমে বিচিত্র ও মধুর রচনাকে বোঝায়। গীত, বাদ্য ও নৃত্য এই তিনটি কলার সমন্বয়েই সংগীত। সংক্ষেপে বলা যায় যে, স্বর ও তালবদ্ধ মনোরঞ্জক রচনাকে সংগীত বলা হয়। গীত, বাদ্য ও নৃত্য তিনটি স্বতন্ত্র জিনিস, আবার এই তিনের সমাবেশেই হয় সংগীত। অসাধারণ ক্ষমতা এই সংগীতের। গ্রিক মনীষী প্লেটো বলেছেন, ‘Music for soul’। খাদ্য যেমন দেহের ক্ষুধা মিটিয়ে শরীরের পুষ্টিসাধন করে, তেমনি আত্মার জন্য প্রয়োজন সংগীত, যা চিত্তকে প্রসারিত করে।

সংগীত সাধারণত ২ প্রকার। যথা:

১. উচ্চাঙ্গ বা মার্গ সংগীত:

রাগ , খেয়াল , ধুন ইত্যাদি সংগীতকে উচ্চাঙ্গ বা মার্গ সঙ্গীত বলা হয়।

২. লঘু  সংগীত বা দেশীয় সংগীত:

আধুনিক,পল্লিগীতি ভাটিয়ালী ইত্যাদি গানগুলোকে লঘু সংগীত বলা হয়। উল্লেখ্য যে, বিদেশী ধাঁচের ব্যান্ড ঘরানার গানগুলোও লঘু সংগীতের অন্তর্ভুক্ত।

গীত, বাদ্য ও নৃত্য কী?

গীত:

সুর, অর্থপূর্ণ শব্দ ও তালের সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করাকে গীত বলা হয়। বাদ্য যন্ত্রবিহীন শুধু কণ্ঠের সাহায্যে শ্রুতিমধুরভাবে পরিবেশনাকেও গীত বলা যায় । গীত নানা প্রকারের হয়ে থাকে ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুমরী, ভাটিয়ালী ইত্যাদি।

বাদ্য:

সুর ও তালের মাধ্যমে যন্ত্রের সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করাকে বলে বাদ্য বলা হয়।

নৃত্য:

ছন্দ ও মুদ্রা সহযোগে সুললিত অঙ্গভঙ্গির সমন্বয়ে মনের ভাব প্রকাশ করাকে নৃত্য বলা হয়।

স্বর কাকে বলে? প্রত্যেক স্বর এর পূর্ণ নাম

গ্রহণযোগ্য সুমধুর যে ধ্বনি, তাকেই সংগীতের নাদ বা স্বর বলে। স্বরই সংগীতের প্রধান অঙ্গ বা প্রাণ। সংগীতের আছে প্রধান সাতটি স্বর।

সাতটি স্বরের পূর্ণ নামগুলো নিম্নরূপ:

সা রে গা মা পা ধা নি।

স্বর কয় প্রকার ও কী কী?

স্বর দুই প্রকার:- ১) চল স্বর ২) অচল স্বর।

১) চল স্বর:

 যে স্বর শ্রুতি বিন্যাসের তারতম্যে বিকৃত বা স্থান চ্যূত হয়, তাকে চল স্বর বা বিকৃত স্বর বলে। যেমন- রে = ঋা, গা = জ্ঞা, মা = ক্ষা, ধা = দা, নি = না।

২) অচল স্বর:

 যে স্বর শ্রুতি বিন্যাসের তারতম্যে বিকৃত হয় না বা স্থান চ্যূত হয় না, তাকে অচল স্বর বলে। অর্থাৎ এরা বিশুদ্ধ স্বর। অচল স্বর ২টি। যথা: ষড়জ (সা) এবং পঞ্চম (পা)।

সপ্তক কাকে বলে ? কত প্রকার কি কি ?

সাতটি স্বর সা রে গা মা পা ধা নি এই সাতটি স্বরের একত্রিত নাম হলো সপ্তক। তবে শুদ্ধ স্বর ৭ টি ও কোমল স্বর ৫ টি মোট ১২ টি স্বরের সমষ্টি হলো সপ্তক। কোমল স্বর গুলো শুদ্ধ স্বরের নাম নেই কিন্তু অবস্থান নেই না সপ্তক তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।

১। উদারা বা মন্দ্র,

২ মুদারা বা মধ্য, এবং

৩। তার বা তারা।

আরোহণ ও অবরোহণ কী?

আরোহণ:

ক্রমান্বয়ে স্বরের উর্ধ্ব গতির নাম হলো আরোহণ। কোন স্বর থেকে পরপর উপরের দিকে যাওয়ার নাম আরোহণ। যেমন- সা রে গা মা পা ধা নি র্সা।

অবরোহণ:

অন্যদিকে ক্রমান্বয়ে স্বরের নিম্ন গতির নাম হলো অবরোহণ। কোন স্বর থেকে পরপর নীচের দিকে যাওয়ার নাম অবরোহণ। যেমন- র্সা নি ধা পা মা গা রে সা।

তাল বলতে কী বোঝায়? তাল কত প্রকার ও কী কী বর্ননা করুন।

সংগীত শাস্ত্রে ‘তাল’ শব্দটির অর্থ হলো কাল পরিমাণ বা সময়ের মাপ। অন্যভাষায় সংগীতে (গীত, বাদ্য ও নৃত্য) কাল ও ক্রিয়ার পরিমাণকে তাল বলা হয়। আর তালের সমান অংশ ও ভাগকে ‘মাত্রা’ বলা হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে তাল হলো কতকগুলো মাত্রার সমষ্টি।

তাল সাধারণত ২ প্রকার। যথা: ১. সমপদী ও বিসমপদী।

১. সমপদী তাল:

সমান ছন্দ বা সমমাত্রায় যে ছন্দ তা হলো সমপদী তাল। যেমন- কাহারবা, দাদ্‌রা, একতাল, ত্রিতাল।

২. বিসমপদী তাল:

মাত্রা বিভাগ অসমান অর্থাৎ সমান না হলে তাকে বিসমপদী তাল বলে। যেমন- ঝম্পক, রূপক, তেওড়া, ঝাঁপতাল।

গান কী? গানের কয়টি অংশ ও কী কী?

সাধারণত কন্ঠ সংগীতকেই গান বলা হয়। কথা, সুর ও তালের মাধ্যমে গায়কের কন্ঠের সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশকে গান বলা হয়।

গানের ৪টি অংশ থাকে। যথা-

১. অস্থায়ী বা স্থায়ী: গানের প্রথম কলিকে অস্থায়ী বা স্থায়ী বলে।

২. অন্তরা: গানের দ্বিতীয় কলিকে অন্তরা বলে।

৩. সঞ্চারী: গানের তৃতীয় কলিকে সঞ্চারী বলে।

৪. আভোগ: গানের চতুর্থ কলিকে আভোগ বলে। আভোগ গানের শেষ কলি যার স্বর বিন্যাস অনেকটা অন্তরার মতো।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।