বি.এড

শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার

Teaching Aids : Uses & Its Principles, Collection, Making and Preservation

শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার

প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ শিশুর সামনে বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য শিক্ষোপকরণের বিকল্প নেই৷ এর মাধ্যমে জটিল, বিমূর্ত, ও দূর্বোধ্য বিষয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের সামনে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা যায়৷ একজন শিক্ষকের তাই শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা প্রয়োজন৷ 

শ্রেণিতে শিক্ষাপোকরণ ব্যবহার করে কি ধরণের সুবিধা পাওয়া যায়, পাঠকে কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, কিভাবে পাঠকে বাস্তবভিত্তিক করে তোলা যায় কিভাবে বিমূর্ত বিষয়কে মূর্ত করে তোলা যায় এগুলো বোঝার জন্য শিক্ষাপোকরণের প্রয়োজনীয়তা জানা প্রয়োজন৷

শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা

  • বিষয়বস্তুকে সহজ ও প্রাণবন্ত করতে;
  • শিক্ষার্থীদের মনযোগ আকর্ষণ করতে;
  • শিখনফল অর্জন নিশ্চিত করা;
  • জটিল বিষয়কে খুব সহজে উপস্থাপন করা;
  • শিখনফল দীর্ঘস্থায়ী করা;
  • শিখন ফলপ্রসূ ও স্থায়ী করতে;
  • উপকরণ ব্যবহার ও অনুশীলনের যথাযথ সুযোগ সৃষ্টি করা;
  • শিখন শেখানো কার্যক্রমে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা;
  • পাঠকে জীবনভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত করা;
  • শিক্ষার্থীদের পাঠের সাথে সম্পৃক্ত করে তুলতে;
  • শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও চিন্তাশীল করে তুলতে;
  • পাঠের একঘেয়েমী দূর করতে;
  • ইন্দ্রিয় শক্তির ব্যবহার বাড়াতে;
  • শ্রেণি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে।

শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের নীতিমালা

  • শ্রেণির আয়তন ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার প্রতি খেয়াল রেখে উপকরণের সাইজ নির্ধারণ করা।
  • পেছনের সারি হতেও যাতে দেখা যায় তা মাথায় রেখে সকলের দৃষ্টিগ্রাহ্য ও স্পষ্টতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া।
  • শিক্ষার্থীর বয়স, মেধা, রূচি ও সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখা।
  • পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর সহিত মিল রাখা।
  • কাঠিন্য পরিহার করে সহজভাবে উপস্থাপন করা।
  • উপকরণকে শিক্ষাক্রমের সাথে সমন্বয় করা।
  • অকারণেই অধিক চাকচিক্য পরিহার করা।
  • উপকরণকে বোধগম্য ও অর্থপূর্ণ করা।

উপকরণ ব্যবহারের কৌশল

  • শ্রেণিতে প্রবেশ করেই উপকরণ প্রদর্শন না করা;
  • উপস্থাপন পর্যায়ে যখন প্রয়োজন তখন প্রদর্শন করা;
  • যতক্ষণ প্রয়োজন ঝুলিয়ে রাখা;
  • উপকরণ প্রদর্শনে শিশুদের সহায়তা নেওয়া;
  • উপকরণ হিসেবে শ্রেণির শিশুদের ব্যবহার করা;
  • সকলের জন্য দৃশ্যমান করে উপকরণ উপস্থাপন করা;
  • শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি জিনিসকে প্রয়োজনে পাঠের সাথে সংশ্লিষ্ট করে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা;
  • উপকরণের ওপর প্রশ্ন করা বা উপকরণ সম্পর্কে কিছু বলতে দেওয়া।

আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানান রকমের শিক্ষোপকরণ ব্যবহার হয়৷ বিষয় ভিত্তিক নানান উপকরণ রয়েছে৷ উপকরণগুলোর ব্যবহার শৈলীর মধ্যেও অনেক পার্থক্য আছে৷ একজন শিক্ষকের এই ভিন্ন ভিন্ন উপকরণগুলোর ব্যবহার শৈলী জানা প্রয়োজন৷ এছাড়াও শ্রেণিকক্ষে উপকরণ প্রদর্শনের নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন আছে যাতে সকল শিক্ষার্থী উপকরণ ব্যবহারের সুফল পায় এবং শ্রেণি পাঠদান সার্থক হয়৷  

একটি শিক্ষোপকরণ শুধু একবারই ব্যবহার হয় না৷ কিংবা বিদ্যালয়ে শুধু একজন শিক্ষকই ব্যবহার করেন না৷ এগুলো বার বার ব্যবহার হয়৷ তাই এগুলো সঠিক ভাবে সংরক্ষণের উপায় জানা জরুরী৷ বিদ্যালয়ে বিষয় অনুযায়ী উপকরণ গুলো সাজিয়ে রাখলে খুজে পেতে সুবিধা হয়৷ ছোট ছোট উপকরণ গুলো বক্সে রাখা যেতে পারে৷ পোস্টার, ছবি, মানচিত্র ইত্যাদি দেয়ালে ঝুলিয়ে বা গোল করে পেচিয়ে রাখা যেতে পারে৷ সকল উপকরণ শুকনা স্থানে রাখা প্রয়োজন৷

শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি

প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষক স্ব-প্রণোদিত হয়ে বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও সংগ্রহ করবেন। একজন শিক্ষক নিজ উদ্যোগে শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও সংগ্রহ করার জন্য যা করতে পারেন:

  • তিনি যেসকল বিষয়ে পাঠদান করেন তার একটি তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
  • তালিকা দেখে কোন কোন উপকরণ সহজলভ্য ও স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাবে তা চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে তালিকা প্রণয়নের সময় সহজলভ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
  • তালিকা অনুসারে প্রথমে নিকট পরিবেশ, স্থানীয় জনগণ ও অভিভাবকদের থেকে সহজলভ্য উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে।
  • বিনামূল্যে উপকরণ সংগ্রহ করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
  • যে সকল উপকরণ সংগ্রহ করা হবে তার স্থায়ীত্ব বিবেচনা করে তা দীর্ঘদিন অথবা বারবার ব্যবহার করা যাবে কিনা তা মাথায় রাখতে হবে।
  • শিক্ষার্থীর বয়স, আগ্রহ, সামর্থ্য ও রুচির প্রতি খেয়াল রেখে শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পরিকল্পনা করতে হবে।
  • সম্ভাব্য উপকরণটি শিক্ষার্থীর পাঠ গ্রহণে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সহায়ক কি না তা বিবেচনা করতে হবে।
  • প্রয়োজনে একই উপকরণ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবহার করা যায় কি না তা খেয়াল রাখতে হবে।
  • শিক্ষা উপকরণের কাঠামো শ্রেণী উপযোগী কি না তা বিবেচনা করতে হবে।
  • তালিকা অনুসারে উপকরণ সংগ্রহের পাশাপাশি স্বল্পখরচে উপকরণ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সকলে মিলে পরিকল্পনা মাফিক সময় নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়েও কম খরচে ও স্বল্প পরিশ্রমে উপকরণ তৈরি করতে হবে।

শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণ

শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পাশাপাশি শিক্ষককে অবশ্যই একটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে তা হলো যথাযথভাবে উপকরণ সংরক্ষণ করা। আমাদের দেশে উপকরণ সংরক্ষণ করে সেই উপকরণ বারবার ব্যবহার করার বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। সঠিকভাবে শিক্ষা উপকরণ সংগঠিত না করলে এবং এগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পুরো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে। কাজেই শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি হয়ে গেলে এসবের যথাযথ সংরক্ষণ করা জরুরী।

শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণের কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো:

  • সর্বপ্রথমে একটি উপকরণ কর্ণার নির্ধারণ করতে হবে।
  • স্টক রেজিস্টার চালু করতে হবে এবং সব ঠিকঠাক আছে কিনা নিয়মিত যাচাই করতে হবে।
  • কক্ষটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, যথাযথ আলোর ব্যবস্থা এবং অবশ্যই জীবাণুমুক্ত ও কীট পতঙ্গমুক্ত হতে হবে।
  • প্রত্যেক শ্রেণি ও বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা আলমারী কিংবা র‌্যাক ট্যাগ লাগিয়ে রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনের সময় দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়।
  • প্রতিটি শিক্ষা উপকরণের নাম, সংগ্রহের তারিখ, স্থান, সংগ্রহকারীর নাম ইত্যাদির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণযুক্ত লেবেল লাগিয়ে রাখলে ভালো হয়।
  • দামী ও দুর্লভ উপকরণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
  • ব্যবহারের পর অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • পঁচনশীল উপকরণ সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি, ফরমালিন ইত্যাদি মিশিয়ে রাখতে হবে।
  • বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করার পূর্বেই তা পরীক্ষা করতে হবে এবং অতি সাবধানতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
  • উপকরণ সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত কক্ষের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষককে প্রদান করলে ভালো হয়।
  • যেসব উপকরণ শ্রেণীকক্ষে ঘন ঘন ব্যবহারের প্রয়োজন হয় সেসব উপকরণ একটি নির্দিষ্ট স্থানে এবং যেসব উপকরণ ঘন ঘন ব্যবহার হয় না সেসব উপকরণ পৃথক স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।