বিটিপিটি

শিখন-ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা

শিখন-ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা

প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মূল যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং প্রাথমিক শিক্ষার সমাপন পর্যায়ে শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ্য, মানসিক পরিপক্কতা, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের বর্তমান ও ভবিষ্যত চাহিদা, বিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধাদি, শিক্ষকের প্রস্তুতি, ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রেখে প্রাথমিক স্তরের শিখনক্ষেত্রভিত্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। এই স্তরের শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীর কতটুকু আচরনিক পরিবর্তন, জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটবে বলে আশা করা যায় তা সুনির্দিষ্ট করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, শিক্ষার্থীেদর উপযোগীতা বিবেচনা করে ‌'জীবন ও জীবিকা' যোগ্যতাটি বিভিন্ন বিষয়ের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়েছে।

শিখনক্ষেত্রশিখন-ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা
ভাষা ও যোগাযোগ  ১. একাধিক ভাষায় কথোপকথন, বক্তৃতা, বর্ণনা শুনে এবং পঠন দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে লিখিত বা অঙ্কিত বিষয়বস্তু পড়ে এবং বুঝে জ্ঞানার্জন অব্যাহত রাখতে সমর্থ হওয়া।
২. পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভাষা ব্যবহার করে, পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে মনোভাব ও অনুভ‚তি সহজ, সঠিক ও কার্যকরভাবে নানান মাধ্যমে প্রকাশ ও আদান-প্রদান করতে পারা।
৩. গল্প, কবিতা, ছড়াসহ সৃজনশীল রচনা শুনে ও পড়ে আনন্দ লাভ করতে পারা; এবং আবৃত্তি ও ভ‚মিকাভিনয়ের মাধ্যমে তা প্রকাশ করতে পারা।  
গণিত ও যুক্তি  ১. গাণিতিক সংখ্যা ও প্রক্রিয়ার (যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ) ধারণা লাভ করে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করা।
২. জ্যামিতিক আকৃতি ও বিভিন্ন ধরণের পরিমাপের ধারণা লাভ করে প্রাত্যহিক জীবনে তা ব্যবহার করতে পারা।
৩. পর্যবেক্ষণ ও পারস্পরিক যোগাযোগের (মিথষ্ক্রিয়া) মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ করে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার দক্ষতা অর্জন করা।
৪. দৈনন্দিন জীবনে সৃজনশীলতার সাথে ইতিবাচক ও যৌক্তিকভাবে গাণিতিক দক্ষতা প্রয়োগ করে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে পারা।  
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  ১. চারপাশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক ঘটনা ও ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে কৌতুহলী হয়ে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে যৌক্তিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে পারা।
২. বাড়ি, বিদ্যালয় ও নিকট পরিবেশের প্রপঞ্চ, ঘটনা ও ঘটনা প্রবাহ চিিহ্নত করা এবং বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমুহ জেনে ও অনুশীলন করে সৃজনশীল উপায়ে কল্যাণকর সমাধানে সচেষ্ট হওয়া।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি১. তথ্য, যোগাযোগ ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অব্যাহত বিকাশ সম্পর্কে অবহিত থাকা, নিত্যনতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা এবং দৈনন্দিন জীবনের নানাক্ষেত্রে এর নিরাপদ, ইতিবাচক, কার্যকর ও যথাযথ ব্যবহারে সক্ষম হওয়া।
পরিবেশ ও জলবায়ু   ১. প্রকৃতি, পরিবেশ, জলবায়ু ইত্যাদির গুরুত্ব ও আন্তঃসম্পর্ক বুঝে মানবসমাজ ও বাস্তুসংস্থান টিকিয়ে রাখায় এগুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারা এবং প্রকৃতি ও পরিবেশকে ভালোবাসতে পারা।
২. প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ু দূষণের কারণ ও প্রতিকার, দুর্যোগ, পরিবেশের প্রতিক‚লতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জেনে পরিবেশ সংরক্ষণে সচেষ্ট হওয়া এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে পারা।
৩. টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ, পরিমিত ও পুনঃ ব্যবহার করতে পারা।
সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব   ১. জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি, লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিক অবস্থান, সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যেরপ্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সম্প্রীতিবোধে উদ্দীপ্ত হওয়া এবং ব্যক্তিগত জীবনে তা চর্চা করা।
২. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জেনে এর চেতনায় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হওয়া এবং নিজের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে পরিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
৩. বাংলাদেশের ভৌগোলিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং এর আন্ত:সম্পর্ক বুঝতে পারা এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্ব সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
মূল্যবোধ ও নৈতিকতা  ১. নিজ নিজ ধর্মীয় আদর্শ ও অনুশাসন অনুশীলনের মাধমে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অর্জন করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে সক্ষম হওয়া।
২. নৈতিক গুণাবলি (সততা, স্বচ্ছতা, পরমতসহিষ্ণুতা, সদাচার, সহমর্মিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ)অর্জন এবং ভালো-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে সক্ষম হয়ে ব্যাক্তি, পরিবার, বিদ্যালয়ে ও সমাজে তা চর্চা করা।
৩. মানুষ-প্রকৃতি-জীবজগৎ ও পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ প্রদর্শন করা।
শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা  ১. শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তন সম্পর্কে জেনে স্বাস্থ্যবিধি (ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শরীরচর্চা ও খেলাধুলা), খাদ্য ও পুষ্টি, সাধারণ রোগ প্রতিকার, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি মেনে স্বাস্থ্যসম্মত, সুরক্ষিত ও নিরাপদ জীবন যাপনে সক্ষম ও অভ্যস্থ হওয়া।
২. মানসিক বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তন সম্পর্কে জেনে এর পরিচর্চার (আত্মসচেতনতা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, আবেগ ব্যবস্থাপনা, সুস্থ বিনোদন চর্চা ইত্যাদি) মাধ্যমে সুস্থ, নিরাপদ, সুরক্ষিত ও আনন্দময় ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন যাপনে সক্ষম ও অভ্যস্থ হওয়া।  
শিল্প ও সংস্কৃতি  ১. ছবি আঁকা, ছড়া, কবিতা, গল্প, গান, অভিনয় ইত্যাদির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লালন করতে সক্ষম হওয়া।
২. চারু ও কারুকলা, সংগীত, নৃত্য, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নান্দনিকতাবোধ অর্জন করে সৃজনশীল মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশে সক্ষম হওয়া।
৩. বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি (রূপকথা, গান, গল্প, লোকাচার, খেলা, চলচ্চিত্র, উৎসব, খাবার ইত্যাদি) সম্পর্কে জানা এবং তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল আচরণ প্রদর্শন করে লালন ও চর্চা করা।
জীবন ও জীবিকাযোগ্যতাটি বিভিন্ন বিষয়ের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়েছে।
বিষয়ের সাথে শিখনক্ষেত্র মিল/সম্পর্ক

শিখনক্ষেত্রবিষয়
ভাষা ও যোগাযোগ  বাংলা ইংরেজি
গণিত ও যুক্তি  গণিত  
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিজ্ঞান
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিজ্ঞান বিষয়ে অন্তর্ভূক্ত  
পরিবেশ ও জলবায়ু   প্রাথমিক স্তরে সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানে অন্তর্ভূক্ত  
সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব   সামাজিক বিজ্ঞান
মূল্যবোধ ও নৈতিকতাধর্ম শিক্ষা  
শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা  শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা
শিল্প ও সংস্কৃতি  শিল্পকলা
জীবন ও জীবিকাপ্রাথমিক স্তরে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে অন্তর্ভূক্তু

এ ধরনের আরও পোস্ট দেখুন:

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।