শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ কৌশল

শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ কৌশল

আলোচিত বিষয়:
  • যোগাযোগ কী?
  • শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ বলতে কী বুঝেন?
  • শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগযোগ্য যোগাযোগ কৌশল কী কী হতে পারে 
  • বাচনিক যোগাযোগ কৌশল কাকে বলে?
  • অবাচনিক যোগাযোগ কৌশল কাকে বলে?
  • শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা বা চ্যালেঞ্জসমুহ 
  • শ্রেণিকক্ষে কার্যকর যোগাযোগে নিশ্চিতকরণে শিক্ষকের করণীয় দিকসমূহ 

যোগাযোগ কী?

Information is power অর্থাৎ তথ্যই শক্তি। আর তথ্য যোগাযোগের মাধ্যমেই আদান প্রদান হয়। ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের মাঝে তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াকে যোগাযোগ বলে। অন্যকথায়, বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে তথ্যাদির আদান-প্রদান প্রক্রিয়াকে যোগাযোগ (Communication) বলা হয়।

ডাই ম্যাকুয়েল এর মতে-

“যোগাযোগ হল সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার আদান-প্রদান প্রক্রিয়া যেখানে জীবনযাপনের বিধি বিধান, প্রথা, লোকাচার, লোকরীতি, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের যাবতীয় চেতনা বিদ্যমান রয়েছে।”

সুতরাং বলা যায় যে, যোগাযোগ একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা একে অন্যের সাথে আমাদের অনুভূতি, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও তথ্য ভাগাভাগি করি।

শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ বলতে কী বুঝেন?

শ্রেণিতে যোগাযোগ তথা তথ্য আদান-প্রদানের ভূমিকায় থাকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা আমদের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি অন্যদের সাথে বিনিময় করি। শ্রেণিতে যোগাযোগের অন্যতম হাতিয়ার হলো প্রশ্নকরণ। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ভাব বিনিময়, জ্ঞান, তথ্য ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করার প্রক্রিয়াকে শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ বলা যায়। শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ বলতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সকল ধরনের যোগাযোগকে বোঝায়।

শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগযোগ্য যোগাযোগ কৌশল কী কী হতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করুন।
শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ধরণের যোগাযোগ কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. দৃষ্টিনির্ভর যোগাযোগ কৌশল:যেখানে শিখন-শেখানোর কৌশল হিসেবে দৃষ্টিশক্তিকে ব্যবহার করা হয়, যেমন- বিভিন্ন প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার, ছবি, মডেল ইত্যাদি ব্যবহার করে যোগাযোগ করা হয়।

২. কথন-শ্রবণ নির্ভর যোগাযোগ কৌশল: মূলত পরস্পরের আলোচনা, ব্যাখ্যা, বক্তৃতা ইত্যাদি বিনিময় ও শোনার মাধ্যমে এ ধরনের যোগাযোগ ঘটে।

৩. পঠন-লিখন নির্ভর যোগাযোগ কৌশল: কোন নির্দেশনা লেখা বা পাঠের মাধ্যমে এ ধরনের যোগাযোগ ঘটে। বোর্ড, খাতা বা বইয়ে লিখে এবং তা পাঠের মাধ্যমে এ ধরনের যোগাযোগ সংঘটিত হয়।

৪. অনুভূতি-স্পর্শ নির্ভর যোগাযোগ কৌশল: কোন কিছুর প্রতিকৃতি তৈরি করা, হাতের কাজ করা, কিংবা হাতে-কলমে কোন কিছু করা এই ধরনের কৌশলের অন্তর্ভুক্ত।

এর বাইরেও যোগাযোগের অন্য যেসব উপায় আছে তার ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ কৌশল প্রধানত ২ ধরনের। যথা:

  ১) বাচনিক যোগাযোগ ও

  ২) অবাচনিক যোগাযোগ কৌশল।

বাচনিক যোগাযোগ কৌশল কাকে বলে?

যেখানে মৌখিকভাবে বা ভাষা ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ করা হয় তাকে বাচনিক যোগাযোগ বলা হয়। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করা, বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেয়া, প্রশংসা করা সবই বাচনিক যোগাযোগের উদাহরণ। শ্রেণিকক্ষের অধিকাংশ যোগাযোগই ঘটে বাচনিক দক্ষতার প্রয়োগ করে। বিভিন্ন ধরনের শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল, যেমন- বক্তৃতা পদ্ধতি, আলোচনা পদ্ধতি, প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি ইত্যাদি ঘটে বাচনিক যোগাযোগ কৌশল ব্যবহার করে।

অবাচনিক যোগাযোগ কৌশল কাকে বলে?

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক মুখে কী বলছেন শুধু তাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, কীভাবে তা উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটিওগুরুত্বপূর্ণ। মূলত মৌখিক যোগাযোগ বাদে আকার-ইঙ্গিত, মুখভঙ্গি বা অন্য কোন উপায়ে শিক্ষার্থীদের যে বার্তা শিক্ষক দেন তাই অভাষিক যোগাযোগ কৌশল । এগুলো হতে পারে-

  • শিক্ষকের মুখের ভাব
  • বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গি ও দেহভঙ্গিমা
  • শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের চলাফেরা করা
  • শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি যাওয়া
  • শিক্ষার্থীদের সাথে দৃষ্টি বিনিময় ইত্যাদি।

শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা বা চ্যালেঞ্জসমুহ
শ্রেণিকক্ষে সফল যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়সমুহ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে:
  • পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া অপরিকল্পিত বা অগোছালোভাবে বক্তব্য প্রদান করা।
  • শ্রেণিতে প্রমিত ভাষার ব্যবহার ও আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করা।
  • শ্রেণিকক্ষের ভৌত পরিবেশ অনেক সময় যোগাযোগর ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।
  •  শিক্ষকের শব্দভান্ডারে প্রয়োজনীয় শব্দের অভাব।
  • শ্রেণিতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী থাকলে তাদের সাথে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করা দুরূহু হতে পারে।
  • শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মানসিক ও আবেগিক প্রস্তুতির ঘাটতি।
  • সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা বা ভিন্নতা।
  • অপ্রয়োজনীয় অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি কারণে যোগাযোগ বিঘ্ন হতে পারে।
শ্রেণিকক্ষে কার্যকর যোগাযোগে নিশ্চিতকরণে শিক্ষকের করণীয় দিকসমূহ আলোচনা করুন।
শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ কার্যকরী করতে বিভিন্ন ধরণের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য শিক্ষক হিসাবে পাঠদান ফলপ্রসূ তথা নিশ্চিতকরণে করণীয় দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:
  • পাঠদানের পূর্বে যথাযথ পরিকল্পনা করা। যদি পূর্ণাঙ্গ পাঠ পরিকল্পনা সম্ভব না হয় তবে অবশ্যই পরিকল্পনাটির সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করা।
  • প্রতি ধাপে সতর্কতার সহিত শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা।
  • শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সক্রিয় রাখা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।
  • শ্রেণিকক্ষের ভৌত পরিবেশ শিক্ষার্থীবান্ধব করা।  
  • শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের অবস্থান ঠিক রাখা। বিভিন্ন একটিভিটির ধরণ অনুসারে শিক্ষার্থীদের নিকট তাদের চাহিদা অনুসারে অবস্থান অর্থাৎ নৈকট্য বজায় রাখা।
  • চোখে চোখে যোগাযোগ (Eye contact) এর মাধ্যমে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা।
  • সহজ-সরল ও বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করা।
  • সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা। প্রয়োজনে নির্দেশনাটি পুনরাবৃত্তি করা।
  • কণ্ঠস্বরের উঠা-নামা এবং শ্রেণির আকার অনুসারে প্রয়োজন মাফিক ব্যবহার করা।
  • শারীরিক ভাষা ও অঙ্গভঙ্গির ব্যবহার করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের চলাচল, হাত পা নাড়ানো, মুখের এক্সপ্রেশন বা প্রকাশভঙ্গি বক্তব্যের ভাবার্থ অনুযায়ী শিক্ষার্থীকে সঠিক বিষয়টি অনুধাবনে সহায়তা করতে হবে।
  • প্রতিবন্ধী কোন শিক্ষার্থী থাকলে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন: তাদের কাছে গিয়ে বলা এবং উপকরণ থাকলে তাদের কাছে নিয়ে দেখানো।
  • আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করা। যেমন- মজার গল্প বলা, প্রাসঙ্গিক কৌতুক বলা, মজার কোন অভিজ্ঞতা বলা ইত্যাদি।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।