স্ব-ব্যবস্থাপনা কী? এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

স্ব-ব্যবস্থাপনা কী? এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

What is self-management? Its characteristics and importance

স্ব-ব্যবস্থাপনা বলতে কী বুঝায়?

স্ব-ব্যবস্থাপনা বলতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একজনের আবেগ, চিন্তাভাবনা এবং আচরণকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতাকে বোঝায়। স্ব-ব্যবস্থাপনাকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ বা আত্ম-পরিচালন দক্ষতা হিসেবেও অভিহিত করা হয়।  স্ব-ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ, সহজেই পরিতৃপ্ত না হওয়া, নিজেকে অনুপ্রাণিত করা, এবং ব্যক্তিগত ও একাডেমিক লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা।

স্ব-ব্যবস্থাপনায় দক্ষ শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি ক্লাসে আসে, পাঠে মনোযোগী থাকে, শিক্ষকের নির্দেশাবলি যথাযথভাবে অনুসরণ করে, সহপাঠীরা কথা বলার সময় বাঁধা দেয় না, এবং একক কাজ গুরুত্ব দিয়ে সম্পন্ন করে। শিশুর স্ব-ব্যবস্থাপনা দক্ষতাতার ভবিষ্যতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ইঙ্গিত দেয়। যেমন সে কতটা সফলতার সাথে পড়ালেখা সমাপ্ত করবে, শারীরিক স্বাস্থ্য কেমন থাকবে, কতটা উৎপাদনশীল হবে, সবকিছুতেই পরনির্ভরশীল থাকবে কি না, অপরাধমূলক কাজে জড়াবে কি না ইত্যাদি।

স্ব-ব্যবস্থাপনাকে নিজের কাজ এবং সময় পরিচালনা করার ক্ষমতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। শিশু নিজেকে সংগঠনের দক্ষতা, নিজেকে নির্দেশনা প্রদান, নিজেকে অনুপ্রাণিত করা এবং নিজেকে নিরীক্ষণের দক্ষতাও এর অন্তর্ভুক্ত। তবে শুধুমাত্র একজন শিশু হিসাবে কার্য সম্পাদনের সক্ষমতা নয়, অপরকে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করার ক্ষমতাও এর আওতাভুক্ত।

স্ব-ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক রয়েছেযেমন

  • v  স্ব-সচেতনতা,
  • v  স্ব-প্রেরণা,
  • v  স্ব-যত্ন এবং
  • v  স্ব-নেতৃত্ব।

যে শিশু এই দক্ষতাগুলিতে ভাল, তারা তাদের জীবনের দায়িত্ব নিতে এবং কার্যকরভাবে তাদের কাজ পরিচালনা করতে সক্ষম। স্ব-ব্যবস্থাপনায় দক্ষ শিশু বুঝতে পারবে কোন কাজগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কাজ সম্পাদনে শিশু নিজের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলি সনাক্ত করতে পারেন। 

স্ব-ব্যবস্থাপনাকে একজনের জীবনে ছোট পরিবর্তন আনয়নের একটি প্রক্রিয়া হিসাবে দেখা যেতে পারে যা সময়ের সাথে সাথে বড় পরিবর্তন ঘটায়। এটি এমন এক দক্ষতা যা মানুষকে তাদের কর্মজীবনে সফল হতে সহযোগিতা করে। 

স্ব-ব্যবস্থাপনা বৈশিষ্ট্য:

  • v  নিজের শক্তি, দুর্বলতা, লক্ষ্য এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতনতা।
  • v  নিজের আবেগ, আচরণ এবং চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।
  • v  স্ব-নিয়ন্ত্রণ থাকা। চাপের মধ্যেও শান্ত এবং দৃঢ় থাকা।
  • v  অর্জন উপযোগী লক্ষ্যগুলি নির্ধারণ।
  • v  পরিকল্পনা থাকা।
  • v  সময়কে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতা।
  • v  দক্ষতা এবং ক্ষমতা উন্নত করার জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন।
  • v  অভিজ্ঞতা থেকে শেখা এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য কাজ করা।
  • v  প্রতিটি কাজ স¤পাদনের পর তার প্রতিফলন থাকা।
  • একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শিশুকে স্ব-ব্যবস্থাপনা বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন নিশ্চিত করা। 

শিক্ষার্থীর স্ব-ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির গুরুত্ব

The Collaborative for Academic, Social and Emotional Learning (CASEL) দ্বারা চিহ্নিত পাঁচটি সামাজিক-সংবেদনশীল শিক্ষার (Social Emotional Learning) দক্ষতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হল স্ব-ব্যবস্থাপনা। এই দক্ষতা তাদের নিজস্ব শিখনে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার এবং স্বাধীনতা অর্জন করার ক্ষমতা দেয়। সেই সাথে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমায়। এটি এমন একটি দক্ষতা যা শিক্ষার্থীদের সারাজীবন সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীর স্ব-ব্যবস্থাপনা দক্ষতা তার বিদ্যালয় ও ব্যক্তিজীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। যেমন-

  • v  ঝড়ে পড়ার সম্ভাবনা কমায়।
  • v  একাডেমিক ফলাফলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • v  জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায়।
  • v  আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়।
  • v  উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
  • v  অল্প সময়ে কাজ সম্পন্ন করার দক্ষতা বাড়ায়।
  • v  অপরের উপর নির্ভরশীলতা কমায়।

শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে নিয়মনীতি ও করণীয় নির্ধারণ

শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে শ্রেণিকক্ষের নিয়মনীতি, পাঠের করণীয় ইত্যাদি নির্ধারণ করা তাদের স্ব-ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধির একটি কৌশল হতে পারে। পূর্বের নির্ধারণ করা নিয়মনীতির সাথে শিক্ষার্থীরা সত্যিকারের সংযুক্তি খুঁজে নাও পেতে পারে। শিক্ষার্থীরা যখন আদর্শ/নিয়মনীতি তৈরি করে অথবা এসব তৈরিতে তাদের মতামত নেয়া হয়, তখন তারা সেগুলি অনুসরণ করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। উপরন্তু, শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের মধ্যে নিয়ম ও চুক্তি তৈরির মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে।

কাজের তালিকা তৈরি 

শিক্ষার্থীদের চিন্তা, পরিকল্পনা, এবং সামগ্রিক কাজ সংগঠিত করার জন্য কাজের তালিকা তৈরি একটি কার্যকর কৌশল। এর ফলে তাদের স্ব-ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা দলে কাজ করলে দলের সদস্যদের কাজ নির্দিষ্ট করে কাজের তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। তবে এই তালিকা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় তৈরি করলে তা আরো কার্যকর হবে।

চেকলিস্ট ও রুব্রিক্স তৈরি

রুব্রিক্স এবং চেকলিস্ট তৈরি স্ব-ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির একটি ভালো কৌশল। এগুলো আরও কার্যকর হয় যখন সেগুলি শিক্ষার্থীদের সাথে সহ-সৃষ্টি করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের কাছে এসবের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। শিক্ষার্থীদের নিজেদের এবং তাদের সমবয়সীদের কাজ মূল্যায়ন করতে এসব ব্যবহার করা হয়।

সময় ব্যবস্থাপনা লগ তৈরি

সময় ব্যবস্থাপনা লগ তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নথিভুক্ত করে যে তারা নির্দিষ্ট কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট বা অন্যান্য কাজে কতক্ষণ ব্যয় করবে। লগ তাদের সময়কে আরও দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে অনুপ্রাণিত করে।

নমনীয় আসন এবং স্থান

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কাজ করার জন্য বিভিন্ন জায়গা থাকে। কিছু ছাত্র একা একা এককোণে নীরবে কাজ করতে পছন্দ করে, আবার অন্যরা দলীয়ভাবে টেবিলে বসে কাজ করতে পছন্দ করে। কে কোনো টেবিলে/অবস্থানে শিখবে এই স্বাধীনতা দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্ব-পরিচালন শেখানো যেতে পারে। শিক্ষক হিসাবে আপনি কাজ এবং শেখার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করার মাধ্যমে তাদের স্ব-পরিচালন প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।

লক্ষ্য নির্ধারণ

লক্ষ্য নির্ধারণ শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যবস্থাপনা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি আরো কার্যকর হয় যখন শিক্ষার্থী নিজেই নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। শিক্ষকের কাজ হল শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করা।  

স্ব- অনুচিন্তন

উপরের বর্ণিত কৌশলগুলো অকার্যকর হতে পারে যদি না শিক্ষার্থীরা সেগুলির প্রয়োগ এর ব্যাপারে স্ব-অনুচিন্তন করতে না পারে। আমরা যেমন কোন বিষয়বস্তু শেখার সময় স্ব-অনুচিন্তন করি, তেমনি আমাদের শেখার প্রক্রিয়া নিয়েও অনুচিন্তন দরকার। সেই সাথে স্ব-ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধিরও স্ব- অনুচিন্তন দরকার।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।