বিদ্যালয় উন্নয়নে নেতৃত্বের গুরুত্ব

বিদ্যালয় উন্নয়নে নেতৃত্বের গুরুত্ব

The importance of leadership in school development

যে কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন কার্যকর নেতৃত্ব। নেতা তার প্রতিষ্ঠানের অংশীজনদের মতামতে বা এককভাবে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Vision and Mission) নির্ধারণ করে। নেতা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে অংশীজনদের অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করে এবং দিক নির্দেশনা প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের মাঝে যোগাযোগ ও সহযোগিতার সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে, কার্যকর নেতৃত্ব ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনা। তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মত বিদ্যালয়েও নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম।

নেতৃত্ব শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান প্রধানের মধ্যে সীমিত থাকে না। একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের মাঝেও নেতৃত্ব বিস্তৃত। একটি বিদ্যালয়ের সফলতার জন্য প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি সহকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কমিউনিটিকেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া  জরুরী। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে সকলের কার্যকর নেতৃত্বের মাধ্যমেই কেবল একটি আদর্শ বিদ্যালয় বিনির্মাণ সম্ভব।

 

কোনো দলে বা প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?

ক) যোগাযোগ উন্নয়ন:

একজন নেতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠানের সকলের মাঝে কার্যকর আন্ত:ব্যক্তিক যোগাযোগ নিশ্চিত করা। যেকোনো দলের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত যোগাযোগ অপরিহার্য। সফল নেতাগণ তাদের সাথে যোগাযোগের পথ সবসময়ই উন্মুক্ত রাখেন এবং তারা এমন এক মুক্ত ও অন্তভুর্ক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করে যাতে কর্মীগণ স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের উদ্বেগ, মতামত ও ধারণাগুলি প্রকাশ করতে পারে।

খ) উন্নত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি:

উন্নত ও উপযোগী কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে নেতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেতা একে অপরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও সম্মানের পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা সৃজনশীলতা ও সহযোগিতাকে উৎসাহিত করে এবং দলে বা প্রতিষ্ঠানে একটি চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করে।

গ) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি:

একজন কার্যকর নেতা তার প্রতিষ্ঠানের সকলের বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। কর্মীরা যখন উদ্বুদ্ধ থাকে এবং নিজেদের কর্মের স্বীকৃতি পায়, তখন তাদের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়। অন্যদিকে, দুর্বল নেতৃত্বের কারণে কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত হয় এবং তাদের কর্মতৎপরতা হ্রাস পায়।

ঘ) দক্ষতা বৃদ্ধি:

একজন সফল নেতা প্রয়োজনীয় উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা প্রদান করে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কর্মীদের প্রতি নেতার উচ্চাকাক্সক্ষা পোষণ ও প্রশংসা কর্মীদের অধিকতর যোগ্য হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ করে।

ঙ) ভুল-ত্রুটি হ্রাস:

একজন সফল নেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মতৎপরতায় ভুল-ত্রুটি হ্রাস করে প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করে। তিনি সম্ভাব্য ভুলগুলি সংঘটিত হওয়ার আগেই চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

চ) কর্মীদের উদ্বুদ্ধকরণ:

একজন ভালো নেতা জানেন কীভাবে কর্মীদের বা দলের সদস্যদের কার্যকরভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হয়। তিনি জানেন প্রত্যেক কর্মী বা সদস্যই স্বতন্ত্র, একেক জনের একেক বিষয়ে পারদর্র্শিতা থাকে। তিনি তার কর্মীদের স্বতন্ত্র প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য গভীরভাবে জানেন এবং বোঝেন যে কীভাবে তারা সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ হবে। তিনি এমন একটি কাজের পরিবেশ তৈরি করে যেখানে কর্মীরা অনুভব করে যে, দলে তাদের যথেষ্ট সম্মান ও স্বীকৃতি আছে। যখন কর্মী বা সদস্যরা বোঝে যে, তারা দলের একটি অংশ এবং তাদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ; তখন তারা বেশি অনুপ্রাণিত ও সক্রিয় হন।

ছ) রোল মডেল:

একজন কার্যকর নেতা জানেন যে, একটি ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা অন্যদের অনুপ্রাণিত করার সেরা উপায়গুলির মধ্যে অন্যতম। সর্বোপরি, মানুষ যাকে রোল মডেল মনে করে তাকেই বেশি অনুসরণ করে। তাই দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রদান করা অতীব জরুরী। দলের একজন সফল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সদস্যের দায়িত্ব ও কর্তব্য কেমন হওয়া উচিত একজন নেতা তা দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে সদস্যদের উপলব্ধি করতে সহায়তা করে।

জ) ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃঢ় লক্ষ্য ও দিক নির্দেশনা:

একজন সফল নেতা বোঝেন যে, কীভাবে প্রতিষ্ঠানের বা দলের জন্য একটি দৃঢ় লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয় যা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত সফলতার দিকে নিয়ে যাবে।  একটি দৃঢ় লক্ষ্য মানে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনটি কোথায় যাচ্ছে এবং কী অর্জন করতে চায় সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা কর্মীদেরকে সক্রিয়ভাবে কর্মতৎপর হতে উদ্বুদ্ধ করে। একজন কার্যকর নেতা তার কর্মীদের মাঝে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য সম্পর্কে অংশীদারিত্ব তৈরি করে।

ঝ) কর্মীদের সঠিক পথে পরিচালিত করা ও লক্ষ্য অর্জন:

একজন নেতার প্রধান দায়িত্ব হলো লক্ষ্য অর্জনের নপথে কর্মীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করা।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।