নেতৃত্ব উন্নয়নের উপায়সমূহ

নেতৃত্ব উন্নয়নের উপায়সমূহ (Ways to develop leadership)

যদিও অনেক মানুষ সহজাতভাবেই নেতা, কিন্তু যে কোনো ব্যক্তিই নির্দিষ্ট গুণ ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন সফল নেতা হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার ইচ্ছা শক্তি ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। প্রকৃতপক্ষে, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নেতৃত্বের সাধারণ গুণাবলি ও দক্ষতা অর্জন করা যায়।

ক) শৃঙ্খলা অনুশীলন করা: একজন নেতা হওয়ার জন্য পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে আবশ্যিকভাবে শৃঙ্খলার অনুশীলন করতে হবে। অন্যদেরকে পেশাগত জীবনে সুশৃঙ্খল হতে অনুপ্রাণিত করতেও একজন নেতাকে সবসময় শৃঙ্খলার অনুশীলন করতে হয়। একজন নেতার শৃঙ্খলাবোধ দেখে কর্মীরা তার নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতার মূল্যায়ন করে থাকে।

খ) সময়ানুগ হওয়া: সর্বদা কঠোরভাবে সময়ানুবর্তিতা মেনে, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিসমূহ সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করে, সঠিক সময়ের মধ্যে সভা শেষ করে কর্মক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রদর্শন করুন। বাড়িতেও ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন, যেমন: সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা, প্রতিদিনের ব্যায়াম করা, নিয়মিত অধ্যয়ন করা ইত্যাদি।

অধিক দায়িত্ব গ্রহণ করা: নেতৃত্ব বিকাশের চমৎকার উপায় হলো অধিক দায়িত্ব গ্রহণ করা। আপনি যতটুকু কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম তার থেকে বেশি দায়িত্ব না নিলেও চলবে, কিন্তু আপনি যদি বড় হতে চান নেতৃত্ব দিতে চান তাহলে আপনাকে রুটিন কাজের চেয়ে বেশি কিছু করতে হবে। নতুন কিছু শিখতে হলে আপনাকে আপনার কমফোর্ট জোন থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে এবং বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এভাবে একজন উদ্যোগী ব্যক্তি হিসেবে আপনি আপনার দলের সদস্যদের এবং কর্তৃপক্ষের নজরে আসতে পারেন। 

গ) অপরকে অনুসরণ করতে শেখা: একজন সত্যিকারের নেতা প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত ক্ষেত্রে অন্যের নিকট নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দিতে দ্বিধা করেন না। যখন কেউ আপনার সাথে একমত না হয়, আপনার চিন্তাভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বা তাদের নিজস্ব ধারণা প্রকাশ করে তখন আপনার অস্বস্তি, বিব্রত বা হুমকি বোধ করা উচিত নয়। মুক্ত মন-মানসিকতা লালন করুন এবং যার যা কৃতিত্ব প্রাপ্য তা তাকে দিন। যদিও এটি সবসময় সহজ হবে না, তবে আপনি যদি আপনার দলের অন্যদের স্বীকৃতি দিতে এবং সম্মান করতে শেখেন তাহলে তারা আপনার আহবানে অধিক কর্মতৎপর হবেন।

ঘ) পরিস্থিতিগত সচেতনতা অর্জন: একজন সফল নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পরিস্থিতিগত সচেতনতা। তিনি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিত বোঝেন এবং সমস্যাসমূহ সংঘটিত হওয়ার আগেই তিনি সে বিষয়ে অনুমান করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে জটিল কোনো কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এটি একটি মূল্যবান দক্ষতা। সম্ভাব্য সমস্যাগুলি এড়ানোর জন্য সে সম্পর্কে পূর্বাভাস ও পরামর্শ দেওয়ার সক্ষমতা একজন নেতার জন্য জরুরী। এই সক্ষমতার মাধ্যমে যে সকল সুযোগ বা সম্ভাবনা অন্যের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না তা চিহ্নিত করে আপনি অপরের স্বীকৃতি ও প্রশংসা লাভ করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে অবহিত থেকে এবং সচেতনভাবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই দক্ষতা অর্জন করা যায়।

ঙ) অন্যদেরকে উদ্বুদ্ধ করা: একজন নেতা হওয়ার অর্থ হলো আপনি একটি দলের অংশ এবং দলের নেতা হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো দলের সদস্যদেরকে একে অপরকে সর্বোত্তমভাবে সহযোগিতা করতে উদ্বুদ্ধ করা। দলের একজন সদস্যের যখন উৎসাহ, নির্দেশনা বা সহযোগিতা প্রয়োজন তখন তাকে তা দেওয়া। কখনো কখনো একজন ব্যক্তির শুধুমাত্র এইটুকু চাওয়া থাকে যে, কেউ তার কথা শুনুক বা তার প্রতি একটি সহানুভতিশীল হোক।

শিখন চালিয়ে যাওয়া: একজন ভালো নেতা হওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো নিজ কর্মক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীর ও বিস্তৃত জ্ঞানার্জন করা এবং নতুন কিছু শিখতে সর্বদা প্রস্তুত ও সচেষ্ট থাকা। এটি আপনার মনকে তীক্ষ্ণ রাখে এবং আপনার দক্ষতাকে সতেজ রাখে। এভাবে একজন নেতা কোনো কাজ সফলতার সাথে করতে সক্ষম হয় এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শী হয়ে ওঠে।

চ) দলের সদস্যদের ক্ষমতায়ন করা: কেউই সবকিছুতে সেরা নয়, সকলেই কোনো না কোনো কিছুতে পারদর্শী। যত দ্রুত আপনি এটি উপলব্ধি করতে পারবেন, তত দ্রুত আপনি একজন সফল নেতা হয়ে উঠতে পারবেন। অপরের উপর দায়িত্ব অর্পণ আপনাকে কাজের আধিক্য থেকে মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি আপনার দলের অন্যান্য ব্যক্তিদেরকে সেই কাজ সম্পাদনে দক্ষ হয়ে উঠতে সহায়তা করবে। দলের সদস্যগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদেরকে আরো কর্মক্ষম করে তোলা যায়।

ছ) দ্বন্দ্ব নিরসন করা: একটি প্রতিষ্ঠানে বা দলে কাজ করতে গেলে কর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। দলের সকল সদস্য সবসময় কাক্সিক্ষত আচরণ বা ফলাফল নাও প্রদর্শন করতে পারে। একে অপরের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে পারে। এ রকম পরিস্থিতিকে অবহেলা করা বা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সদস্যদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ-আলোচনা করে দ্বদ্ব নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। দ্বন্দ্ব নিরসন করা সম্ভব না হলে তাদের ভিন্ন দায়িত্বে সম্পৃক্ত করতে হবে।

জ) মনোযোগী শ্রোতা হওয়া: একজন নেতা হওয়ার মানে এই নয় যে, আপনিই সকল কাজে মধ্যমণি হয়ে থাকবেন। একজন ভালো নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি অন্যের কথা, ধারণা, পরামর্শ ও সমালোচনা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেন। একজন ভালো শ্রোতা জানেন যে, যোগাযোগ শুধুমাত্র ভাষা বা কথোপকথোনের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়না, বরং ইশারা-ইঙ্গিত, চোখের ভাষা ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও মানুষ অনেক কিছু বলে।  

ঝ) নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জনে সচেষ্ট থাকা: সর্বোপরি, নেতৃত্ব উন্নয়নের জন্য বা নেতা হয়ে উঠতে হলে আপনাকে নিবিড়ভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করতে হবে এবং একজন নেতা হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, ছোট বড় সকল কাজেই নেতৃত্বের ভূমিকা আছে। 

যদিও অনেক মানুষ সহজাতভাবেই নেতা, কিন্তু যে কোনো ব্যক্তিই নির্দিষ্ট গুণ ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন সফল নেতা হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার ইচ্ছা শক্তি ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। প্রকৃতপক্ষে, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নেতৃত্বের সাধারণ গুণাবলি ও দক্ষতা অর্জন করা যায়।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।