বিটিপিটি

শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল

শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল 


পদ্ধতি ও কৌশল
অর্থের দিক থেকে পদ্ধতি ও কৌশলের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই; পদ্ধতি হলো কোনো কাজ সম্পাদনের রূপরেখা, আর কৌশল হলো সেই রূপরেখা অর্জনের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ;
প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত পদ্ধতি ও কৌশলসমূহ
জড়তামুক্তকরণ
ব্যাখ্যাকরণ 
প্রশ্নকরণ
স্নো-বলিং
প্লেনারি আলোচনা
সিমুলেশন 
দলগত কাজ
বক্তৃতা পদ্ধতি
প্রদর্শন পদ্ধতি
আলোচনা পদ্ধতি
আরোপিত/অর্পিত কাজ
মাইক্রো টিচিং 
মার্কেট প্লেস 
বিতর্ক
ব্রেইন-স্টর্মিং 
মাইন্ড ম্যাপিং
ভূমিকাভিনয়  
জিগ্স
দলীয় প্রকল্প/অনুসন্ধান
সর্তীর্থ শিখন
একক কাজ
পোস্টবক্স এক্টিভিটি 
সমস্যা-সমাধান পদ্ধতি

শিখন শেখানো কাজে ব্যবহৃত পদ্ধতি ও কৌশল 

অংশগ্রহণকারীদের মান ও সামর্থ্য, সময়, পদমর্যাদা বা কাজের ধরন বা অবস্থানভেদে প্রশিক্ষককে বিভিন্ন পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। বিশেষ করে বিষয় ও সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষণ পদ্ধতিরও পরিবর্তন হচ্ছে। এ কারণে প্রশিক্ষণ কৌশলগুলো সম্পর্কে জানা এবং প্রশিক্ষণে উপযুক্ত কৌশল নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এই সহায়িকায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন কৌশলগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

বক্তৃতা পদ্ধতি (Lecture Method)

বক্তৃতা পদ্ধতি এমন একটি পদ্ধতি যার ক্ষেত্রে শিক্ষককে মৌখিক বিবৃতির সাহায্যে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর কাছে উপস্থাপন করতে হয়। এখানে শিক্ষকের বক্তৃতাদানের পারদর্শিতা, বক্তৃতাদানের কলাকৌশল, বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীর নিকট হৃদয়গ্রাহী করে তোলার ক্ষমতা, শিক্ষার্থীর বয়স, মেধা, আগ্রহ, পারগতা, বোধগম্যতা ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়বস্তুকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের দক্ষতার ওপর শিক্ষাদানের সার্থকতা অনেকাংশে নির্ভর করে। বাচনিক তৎপরতার মাধ্যমে বিষয়বস্তুর বিস্তৃত বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা এ পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া বক্তৃতা পদ্ধতিতে এক সাথে অনেক শিক্ষার্থীকে শিখনে সহায়তা করা সম্ভব হয়। অন্যদিকে বক্তৃতা পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তার অভাব। শিক্ষার্থীরা নিষ্ক্রিয় বলে তারা অন্য কোন বিষয়ে মনোযোগী হয়ে পড়ে। 


প্রদর্শন পদ্ধতি (Demonstration Method)
শ্রেণি পাঠদানে কোন বাস্তব ঘটনা বা বিষয় প্রত্যক্ষভাবে উপস্থাপনের প্রক্রিয়াকে প্রদর্শন পদ্ধতি বলে অভিহিত করা হয়। এই পদ্ধতিতে পাঠ উপস্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো পাঠের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তবভাবে দেখানো। প্রদর্শন পদ্ধতিতে শিক্ষক উপস্থাপকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপোকরণের সাহায্যে এবং মৌখিক বিবৃতির মাধ্যম বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের হৃদয়ঙ্গম করাতে সচেষ্ট হন। তবে শিক্ষাপোকরণের অপ্রতুলতাহেতু এই পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা অধিকাংশ সময়ই সম্ভবপর হয়ে উঠে না।

আলোচনা পদ্ধতি (Discussion Method)
যে পদ্ধতি অনুসরণ করে পাঠ্য বিষয়বস্তুর মূল বক্তব্য শিক্ষার্থীরা নিজেরা একে অপরের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আয়ত্ত করতে পারে এবং তা আয়ত্ত করতে কোন জটিল সমস্যার সম্মুখীন হলে বিষয় শিক্ষকের পরামর্শ ও তার সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সমাধান খুঁজে পায়, তাকে আলোচনা পদ্ধতি নামে অভিহিত করা হয়। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়। আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। আলোচনা এক ধরনের দলগত পদ্ধতি। স্বচেষ্টায় জ্ঞান অর্জনের ফলে লব্ধজ্ঞান অভিজ্ঞতায় পরিণত হয় এবং সেই অভিজ্ঞতা তাদের মনে দীর্ঘস্থায়ী হয়। সেঅনুসারে বিষয়বস্তু নির্বাচন ও সময় নির্ধারণ করে আলোচনা পদ্ধতি প্রয়োগ করলে ফলপ্রসূতা লাভ করা যায়।

আরোপিত কাজ পদ্ধতি (Assignment Method)
আরোপিত কাজ এমন একটি শিক্ষণ পদ্ধতি, যাতে শিক্ষক নিজে পাঠ্যবিষয় আলোচনা করার পূর্বেই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিজেদেরই পাঠ্যবিষয়টি অনুধাবন করার নির্দেশ দান করেন। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে চিন্তাভাবনা, মতামত প্রকাশ করার সুযোগ পায়। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে থাকে। শিক্ষকের নির্দেশ মতো শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবিষয়টি পড়ে ও বুঝে নিজেরাও তার মর্ম গ্রহণে তৎপর হলে তাদের কল্পনা শক্তি, চিন্তাশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, মতামত গঠনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। 

দলীয় প্রকল্প/অনুসন্ধান (Group project)
প্রজেক্ট পদ্ধতিতে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখনফল অর্জন করে। শিক্ষার্থী তার স্বকীয় প্রেরণায় কাজ করে, প্রয়োজনে শিক্ষকের নির্দেশনা নেয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকলের কাজ শেষ হলে দলনেতা বা শিক্ষকের দায়িত্বে একটি সমন্বিতরূপ দাঁড় করানো হয় যা থেকে সমস্যার সমাধান নির্ণয় করা হয়। তবে, সমাধান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরা নিজেরা স্থির করে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত হয়ে কর্মের মাধ্যমে শিখন অভিজ্ঞতা লাভ করে। এতে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব চিন্তা ও কর্মকৌশল বিকশিত হয়। তাদের সৃজনশীল ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এ পদ্ধতিতে অর্জিত শিখন অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনেও কাজে লাগে। এ দিক থেকে শিক্ষা হয়ে উঠে জীবনমুখী। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা অন্যের বিশেষত শিক্ষকের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে নিজস্ব ধারায় শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনে সক্ষম হয়। 

সতীর্থ শিখন (Peer learning)
আধুনিক শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতিতে সতীর্থ শিখন বা জুটিতে শিখন বা চববৎ খবধৎহরহম একটি জনপ্রিয় ও কার্যকর শিখন কৌশল। এর শাব্দিক অর্থ জোড়ায় জোড়ায় শেখা। যখন সমমনা শিক্ষার্থীদের একজন অন্যজনের জুটিবদ্ধ হয়ে শিখনে পরস্পরকে সাহায্য করে তাকে জুটিতে শিখন বলে। জুটিতে শিখন সেক্ষেত্রে একটি কার্যকর ও সফল পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে জুটি তৈরির সময় যদি পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর সাথে অগ্রগামী শিক্ষার্থীকে মিলিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এটি আরো কার্যকর ও ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ কৌশল প্রয়োগের ফলে শ্রেণিতে পারদর্শী শিক্ষার্থী তার শিখন অবস্থা যাচাই করতে পারে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়। 


একক কাজ (Individual work)
কোন কাজ যখন শিক্ষার্থী একাই সম্পন্ন করে এবং কাজটির ফলাফলে তার একক মতামত প্রতিফলিত হয় তখন সেই কাজকে একক কাজ বলে। শিক্ষার্থী যখন কোন কাজে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত করে অর্থাৎ একাগ্রচিত্তে কোন কাজ সম্পন্ন করে তখন সে কাজটির প্রতিটি পদক্ষেপে নিজস্ব প্রতিভা ও সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রয়োগ ঘটায়। সে অর্থে একক কাজও এক ধরনের সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক কাজ। এ ধরনের কাজে শিক্ষার্থী নিজেই সব করে, ফলে কাজের সব অংশে তার ব্যক্তিত্বের সম্পূর্ণ প্রকাশ ঘটার সুযোগ থাকে।

পোস্ট বক্স এক্টিভিটি (Post box activities)
ডাক প্রেরণের মত এটি শিখনের একটি জনপ্রিয় প্রক্রিয়া। এ কৌশলে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে সক্রিয় থাকে, পাঠদান বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় হয় এবং আনন্দঘন পরিবেশে নিজেদের মতামত প্রকাশের মাধ্যমে শেখার কাজটি সম্পাদন করতে পারে। এ কৌশলটি প্রয়োগের জন্য পূর্বেই নম্বর দেওয়া ৫/৬ টি বাক্স সংগ্রহ করে রাখতে হয় (যেমন-টিস্যু বক্স, ঔষধের বাক্স বা মোটা কাগজের দ্বারা তৈরি বাক্স)। শিক্ষক সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক ৫/৬ টি প্রশ্ন টুকরো কাগজে লিখে রাখবেন। কাজ শুরুর আগে দল গঠন করে নিবেন। ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর লিখিত কাগজটি ১ নম্বর বাক্সে ফেলতে হবে। এভাবে নম্বর অনুসারে উত্তরের কাগজগুলো সব বাক্সে ফেলতে হবে। শিক্ষক ডিজিটাল ছবি ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে পোস্ট বক্স দেখাবেন। এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে ধারণা স্পষ্ট করবেন। শিক্ষক ৫/৬ টি দল গঠন করে সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিয়ে পোস্ট বক্স কৌশল প্রয়োগ করার প্রক্রিয়া দেখিয়ে দিবেন।

সমস্যা-সমাধান পদ্ধতি (Problem-solving Method)
যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষাসংক্রান্ত কোন সমস্যা বা অসুবিধা দূর করে তাকেই সমস্যা-সমাধান পদ্ধতি বলা হয়। সমস্যা-সমাধান পদ্ধতিতে কোন সমস্যা বা বিষয়ের সমাধান বা অনুশীলন শিক্ষার্থীদের দিয়েই করা হয়। এ পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটায়। সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটায়। যে পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোনো সমস্যার সঠিক ও উপযুক্ত সমাধান চিহ্নিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের নিকট উপস্থাপন করেন সেটাই সমস্যা সমাধান পদ্ধতি। আর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক কর্তৃক উত্থাপিত সমস্যার বাস্তবভিত্তিক সমাধান চিহ্নিত করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালায়। শিখন-শেখানো কার্যক্রম কার্যকর করার জন্যে এই পদ্ধতি প্রয়োগে শিক্ষক কর্তৃক বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোনো সমস্যা শিক্ষার্থীদের নিকট উপস্থাপন করতে হয়। শিক্ষার্থীরা এ সমস্যাটির যুক্তিগ্রাহ্য সঠিক ও উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়। 

জড়তামুক্তকরণ (Worming up)
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শুরুতে দুই ধরনের কাজ করা হয়। এগুলো হলোÑ
১। জড়তামুক্তকরণ,
২। উদ্দীপনামূলক কাজ
জড়তামুক্তকরণ : অংশগ্রহণকারীদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং সংকোচ কাটিয়ে ওঠার জন্য জড়তামুক্তকরণের বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা হয়। এতে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অংশগ্রহণকারীরা সাবলীলভাবে নিজেদেরকে কোনো কাজে সম্পৃক্ত করতে পারেন। 

উদ্দীপনামূলক কাজ : এরূপ কার্যাবলিকে প্রণোদনামূলক অনুশীলন হিসেবেও অভিহিত করা যায়। উদ্দীপনামূলক বিষয় প্রয়োগ করলে সকলের মধ্যে উৎসাহ, উদ্যোগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। জতামুক্তকরণের মতো এর প্রয়োগ শুধু শুরুতেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রশিক্ষণ চলাকালে যেকোনো অবস্থায় উপস্থাপন করা সম্ভব।    

ব্যাখ্যাকরণ (Explaining)
ব্যাখ্যাকরণ শিখন শেখানো এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত একটি আবশ্যকীয় কৌশল। এর অর্থ হলো শিক্ষার্থীদের ও অংশগ্রহণকারীদের কাছে কোনো বিষয়কে উদাহরণসহ বোধগম্য করে তোলার জন্য বিশ্লেষণ করার কৌশল। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে সঠিক ও প্রাণবন্ত উদাহরণসহ বিষয়বস্তু উপস্থাপন করলে শিক্ষার্থীরা সহজেই বুঝতে ও আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়। প্রশিক্ষণেও এই কৌশল সমানভাবে কার্যকর। 

প্রশ্নকরণ (Questioning)
শ্রেণিতে বা কোনো অধিবেশনে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য পারদর্শী হতে হয়। তা না হলে অধিবেশনটি নিরানন্দ হয়ে পড়ে। ফলশ্রæতিতে অংশগ্রহণকারীদের দূরত্ব বেড়ে যেতে পারে। প্রশ্ন করতে কিছু নিয়ম বা কৌশল মেনে চলতে হয়। যেমন Ñ
সকলকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করতে হবে
প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার আগে উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে
বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেওয়ার পর প্রশ্ন করতে হবে
অংশগ্রহণকারীদের বয়স ও মানসিক পরিপক্বতা বিবেচনা করে প্রশ্ন করতে হবে
প্রশ্ন করার পর উত্তর দেওয়ার জন্য যুক্তিসংগত সময় দিতে হবে
প্রশ্ন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে অংশগ্রহণকারী বিব্রত বা লজ্জা বা ভয় পাচ্ছে কি না
উত্তরটি সঠিক হলে আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা বাঞ্ছনীয়। বলুন ‘এটি ভালো’, ‘আমি এটি পছন্দ করি’, ‘ভালো চেষ্টা করেছেন’ অথবা ‘মাথা নাড়–ন’)। উত্তরটি পুনরাবৃত্তি করবেন না।

 স্নোবলিং (Snowballing)
স্নোবলিংন অনুশীলনে অংশগ্রহণকারীদের ধারাবাহিকভাবে কোনো বিষয় নিয়ে পর্যায়ক্রমে কাজ করতে দেওয়া হয়। প্রথমে এককভাবে, তারপর জোড়ায় ও ছোটদলে এবং পরিশেষে প্লেনারিতে।  

প্লেনারি (Plenary) আলোচনা
যখন কোনো ক্লাস বা অডিটোরিয়ামে সব অংশগ্রহণকারী উপস্থিত থাকে তখন সেটি প্লেনারি বলা হয়। প্লেনারি আলোচনা হলো সবার উপস্থিতিতে যখন কোনো বিষয় আলোচনা করা হয়। নি¤œরূপ কতিপয় বিষয় এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ-
অধিবেশনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রশ্ন করা
ভিন্ন উত্তরকে পরোক্ষভাবে স্বীকার করে বিতর্ক সৃষ্টি করা
মতামতকে অন্য অংশগ্রহণকারীদের দিয়ে চ্যালেঞ্জ করানো
যৌক্তিক চিন্তার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করা
সবশেষে মতামতের সারসংক্ষেপ করা।

সিমুলেশন (Simulation)
সিমুলেশনের আভিধানিক অর্থ হলো ছদ্মরূপ ধারণ। প্রশিক্ষণে সিমুলেশনকে ‘সাজানো খেলা’ হিসেবে অনেকেই অভিহিত করেন। এই পদ্ধতিতে সরাসরি কোনো প্রশিক্ষণের বিষয় না বলে বা প্রদান না করে সাজানো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য অর্জনের চেষ্টা করা হয়। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি বিবেচনায় জ্ঞান, দক্ষতা, যোগ্যতা ও আচরণিক পরিবর্তন আনয়নে সহায়তা করে।  সিমুলেশন হলো বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে একটি বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপন করা। এই ব্যবস্থায় কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রশিক্ষণ কৌশল আয়ত্ত করানোর চেষ্টা করা হয়। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে এই কৌশল বহুল ব্যবহৃত হয়। 

দলগত কাজ (Group work)
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে এবং শ্রেণি  কাজে দলগত কাজ একটি আবশ্যকীয় কৌশল। এ কাজের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের পারস্পরিক ধারণার আদান-প্রদান বৃদ্ধি পায়। এতে সকলের মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকে বিধায় প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর ধারণা বৃদ্ধি পায়। দলগত কাজে একজন অন্যজনকে শিখতে ও শেখাতে সাহায্য করতে পারেন। তবে শ্রেণিতে বা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে দলগত কাজ করানোর জন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করা আবশ্যক। যেমন Ñ
দলগত কাজ শুরুর আগেই করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে হবে,
এমনভাবে দল গঠন করতে হবে যেন সব ধরনের অংশগ্রহণকারীর প্রতিনিধিত্ব থাকে,
নির্দেশনা যাচাই করে নিতে হবে,
এমন কৌশলে দল বিভাজন করতে হবে যেন সময় অপচয় না হয়,
কাজের জন্য উপকরণ বিতরণ করতে হবে,
সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে,
দলে কাজ করার সময় কাজ মনিটরিং করতে হবে,
দলগত কাজ উপস্থাপন করতে হবে,
দলগত কাজের নির্দেশনার আলোকে কাজের সারসংক্ষেপ করতে হবে। 

মাইক্রো-টিচিং (Micro-teaching)
মাইক্রো-টিচিং একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কৌশল। এই পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক অংশগ্রহণকারী নিয়ে ছোট দলে পাঠের অংশ বিশেষ নিয়ে স্বল্প সময়ে পাঠ উপস্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি দলের অংশগ্রহণকারীগণ পাঠের কোনো একটি অংশ উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং পাঠ উপস্থাপনের জন্য একজনকে শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করেন। পাঠ উপস্থাপন শেষে অংশগ্রহণকারীগণ পাঠের সবল দিক ও সম্ভাব্য উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোর উপরে গঠনমূলক ফলাবর্তন প্রদান করেন। 

কখনও কখনও মাইক্রো-টিচিং-এর পাঠ উপস্থাপন ভিডিও রেকর্ড করা হয় এবং রেকর্ডকৃত ভিডিওটি উপস্থাপনকারীকে দেখিয়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়। সেই আলোকে পুনরায় পাঠ পরিকল্পনা ও উপস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারী অল্প সময়ের মধ্যেই পাঠ উপস্থাপনের দুর্বলতা দূর করে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন। মাইক্রো-টিচিং পদ্ধতির তিনটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলোÑ মাইক্রো-লেসন, মাইক্রো-ক্লাস ও মাইক্রো-টাইম।

মার্কেট প্লেস (Market Place)
এই কৌশলের মাধ্যমে শিখন শেখানো বা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে দলগতভাবে লিখিত বা মুদ্রিত কোনো তথ্য সকল অংশগ্রহণকারীর নিকট একই সময়ে উপস্থাপন করা হয়। সাধারণত দলগত মতামত পোস্টার পেপারে, কার্ডে বা ভিজুয়াল অন্য কোনো মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। শ্রেণিকক্ষ বা প্রশিক্ষণ কক্ষের দেয়ালে বা মেঝেতে এটি প্রদর্শন করা হয়। এর উদ্দেশ্য নি¤œরূপÑ
নির্দিষ্ট বিষয়ে মতামতের ভিন্নতা জানা এবং নিজের ধারণাকে আরও সমৃদ্ধ করা,
দলগত ধারণা উপস্থাপনে বৈচিত্র্য আনা, 
অল্প সময়ে সকল দলের উপস্থাপন সম্পন্ন করা।

বিতর্ক (Debating
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বিতর্ক আয়োজনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মতামতকে শৃঙ্খলার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা এবং যুক্তি দিয়ে কোনো বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে ‘কী করা উচিত’ অথবা ‘কী করতে হবে’ - সেসম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা।  

ব্রেইনস্টর্মিং (Brainstorming)
একা বা দলগতভাবে কোনো কাজ বা সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উন্মুক্তভাবে চিন্তা প্রকাশের মাধ্যমে নতুন আইডিয়া বা পরিকল্পনা খুঁজে বের করাকে বলা হয় ব্রেইনস্টর্মিং। সাধারণভাবে ব্রেইনস্টর্মিং বলতে মাথা খাটানো, চিন্তার ঝড় বা আলোড়ন বুঝায়। কোন গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, সমস্যা বা ইস্যু নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের কিছু সময় (সাধারণত ১-২ মিনিট) চিন্তা করতে বলা হয়। পরে তাদের ধারণা বলে বা লিখে প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীকে একক বা দলীয়ভাবে কাজ করে, চিন্তা করে সমাধানের পথ খুঁজতে হয়। সমাধান সঠিক বা ভুল হোক, সম্পূর্ণ বা আংশিক যা-ই হোক তা নিয়ে সমাধানের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীর চিন্তা করার এই প্রক্রিয়াকে মাথা খাটানো বলে। এ কৌশল পরিচালনার সময় প্রশিক্ষক বা শিক্ষককে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। নীতি দুটি হচ্ছে সকলের মতামত না পাওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং দল থেকে অধিক সংখ্যক ধারণা বের করে আনা। এ প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত ধারণাসমূহের তালিকা পরিশোধন প্রক্রিয়ায় পরিমার্জন করা যায়। 

মাইন্ড ম্যাপিং (Mind-Mapping)
যে প্রক্রিয়ায় কোনো মূল ধারণা থেকে ক্রমাগত উপধারায় অর্থপূর্ণ এবং যৌক্তিক কাঠামো মেনে বিশ্লেষণ করা হয় তাকে মাইন্ড ম্যাপিং বলে। মাইন্ড ম্যাপিং কৌশলকে মাইন্ড ম্যাপও বলা হয়ে থাকে। মাইন্ড ম্যাপিং কৌশলে অংশগ্রহণকারীগণ একক, জোড়ায় অথবা দলীয়ভাবে কাজ করতে পারে। তবে তা নির্ভর করে সহায়কের পরিকল্পনার ওপর।
  
ভূমিকাভিনয় (Role Play)
অভিনয়ের মাধ্যমে কোন পাঠ্যবিষয় উপস্থাপনের প্রক্রিয়াই হলো ভূমিকাভিনয় কৌশল। শ্রেণিকক্ষে শিখন শেখানো কার্যক্রমে বৈচিত্র্য আনয়নের উদ্দেশ্যেই এ পদ্ধতির উদ্ভব। এ পদ্ধতি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও ব্যবহার করা হয়। এই কাজের সময় প্রশিক্ষক নিজেও অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অভিনয় করতে পারেন কিংবা তিনি নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনার অন্তরালে থাকতে পারেন। শিক্ষণীয় বিষয় নাটকে রূপান্তরিত করে অংশগ্রহণকারীদের দিয়ে অভিনয় করালে ঐ বিষয় সর্ম্পকে স্পষ্ট ধারণা জন্মায়। সুতরাং অভিনয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐ বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ ধারণা জন্মে। কার্যকর ভূমিকাভিনয়ে শিক্ষকের করণীয়-
বিষয়বস্তু নির্ধারণ,
চরিত্র সুস্পষ্ট করতে দৃশ্যপট বা কাহিনী চিত্র প্রণয়ন,
দলীয় আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনেতা নির্বাচন,
কথোপকথনের ভাষা, মৌখিক অভিব্যক্তি ও শারীরিক ভাষার দিকগুলোর প্রতি নির্দেশনা প্রদান;
অভিনয় পরিচালনা,
ফলাবর্তন প্রদান (শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে),
মূল শিক্ষণীয় বিষয় শিক্ষার্থীর নিকট থেকে আদায়।

জিগ্স (Jigsaw)
এই কৌশল হলো সহযোগিতামূলক বা অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ব্রেইনস্টর্মিং করার সুযোগ রয়েছে। প্রথমে একটি বিষয়বস্তুকে নির্বাচন করে ৪/৫ ভাগে বিভক্ত করতে হয়। অংশগ্রহণকারীদেরও সমসংখ্যক দলে ভাগ করতে হয়। প্রতিটি দলের সদস্যদের নির্বাচিত বিষয়বস্তুর অংশ পড়ে এবং আলোচনা করে একটি বস্তুনির্ভর সারাংশ তৈরি করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এরপর একটি নতুন দল গঠন করতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় যেন পূর্বে গঠিত দল থেকে একজন করে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক দলে থাকেন। অতঃপর অংশগ্রহণকারীগণ নতুন দলে একজন অন্যজনকে পূর্বের বিষয়বস্তুর আলোচনা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করেন। পূর্বের দলে ফিরে গিয়ে সামগ্রিক বা পূর্ণাঙ্গ ধারণা প্রদান করেন।  


দলগত কাজের জন্য নির্দেশনা কার্ড

অংশগ্রহণকারীদের দলে ভাগ করা
কাজের নির্দেশনা প্রদান করা
উপকরণ বণ্টন করা
কাজের সার-সংক্ষেপ করা
কাজের জন্য সময় নির্ধারণ করা
কাজের নির্দেশনা যাচাই করা
দলের কাজ পরিবীক্ষণ করা 
দলগত কাজ উপস্থাপন করা

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।