শিক্ষকের পেশাগত অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা
শিক্ষকের
পেশাগত অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা
বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পেশাদারিত্ব ও অঙ্গীকার
বিদ্যালয়ে
শিক্ষকের পেশাদারিত্ব (Professionalism) হচ্ছে এমন মনোভাব,
যা একজন শিক্ষককে তার পাঠদান কার্যক্রম ছাড়াও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট
বিশেষ বিশেষ দায়িত্বসমূহ সুচারুভাবে পালন করতে হয়। আর একাজগুলো পালন করার মাধ্যমে
একজন শিক্ষক নিজেকে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। একজন শিক্ষকের বিদ্যালয়
সংশ্লিষ্ট পেশাদারিত্ব ও অঙ্গীকার হচ্ছে-
- Ø শিক্ষকতা
পেশার দায়িত্বগুলো বোঝা এবং এগুলোর প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা;
- Ø শিক্ষার্থীর
শিখনের উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা যা তার প্রধান দায়িত্ব;
- Ø শিক্ষার্থী, সহকর্মী, ও স্কুল কমিউনিটির সাথে আচরণ করার
ক্ষেত্রে সবসময় খুব উঁচু ধরনের পেশাগত আচরণ করার চেষ্টা করা;
- Ø শিক্ষার
দর্শন খুব ভালোভাবে বোঝা;
- Ø সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার যে পেশাগত দায়বদ্ধতা আছে তা বোঝা;
- Ø এই
বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষকতা কাজ পরিচালনা করা যে, প্রতিটি শিশুরই শেখার ক্ষমতা আছে এবং তাদের সমানভাবে বিচার করতে হয়;
- Ø প্রতিটি
শিশুর ভিন্নতাকে বোঝা এবং গুরুত্ব দেয়া;
- Ø শিক্ষার
নীতি নির্ধারণ ও শিক্ষাসংক্রান্ত যে কোন পরিবর্তনে অবদান রাখা;
- Ø শিক্ষার্থীর
শারীরিক,
মানসিক, নৈতিক, মানবিক, আধ্যাত্মিক, সামাজিক,
সাংস্কৃতিক, সৃজনশীল, নান্দনিক এবং আবেগিক বিকাশে একজন সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখা;
- Ø শিখন
শেখানোর ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলোর গুরুত্ব দেয়া;
- Ø নিজ
শিখনের উন্ন্য়নে আগ্রহ ও সচেতন থাকা;
- Ø শিখন
শেখানোর পরিকল্পনা করা এবং তা পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে করা;
- Ø বিভিন্ন
ধরনের মূল্যায়ন কার্য পরিচালনা করা;
- Ø সহশিক্ষাক্রমিক
কার্যক্রমে দক্ষ হওয়া;
- Ø শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সহকর্মীর সাথে আত্ববিশ্বাস, বিশ্বস্ততা এবং আন্তরিকতার সাথে আচরণ করা;
- Ø শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সহকর্মী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে
ইতিবাচক যোগাযোগ রাখা;
- Ø বিদ্যালযের
ভৌত অবকাঠামো ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করা;
- Ø বিদ্যালয়ের সকল তথ্য সম্পর্কে ধারণা রাখা।
বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পেশাদারিত্ব ও অঙ্গীকারের ক্ষেত্র
১.
পেশাগত উন্নয়ন
২.
বিদ্যালয়ের পরিবেশ
৩.
নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা
৪.
সমাজ সম্পৃক্ততা
৫.
পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন
শিক্ষকের
অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা
১. শিক্ষকের
ব্যক্তিগত অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা:
- Ø শিক্ষক
হবেন সময়নিষ্ঠ;
- Ø পেশাগত
উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ নেন এবং গৃহীত প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে পাঠদান করেন;
- Ø মাল্টিমিডিয়া
ক্লাস গ্রহণে দক্ষতা অর্জন করেন;
- Ø পাঠ
পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করেন;
- Ø তিনি
হবেন একজন পাঠক। সবরকম জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট থাকেন;
- Ø পারিবারিক
ও সামাজিক ক্ষেত্রে সকলের সাথে মিলেমিশে কাজ করেন;
- Ø সকলের অধিকার রক্ষা করেন।
২. শিক্ষকের
প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন কেন্দ্রিক অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা:
- Ø কর্তৃপক্ষ
কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেন;
- Ø কর্তৃপক্ষের
অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করবেন না এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন না;
- Ø যে
কোন প্রকার ছুটির জন্য কর্তৃপক্ষকে জানাবেন এবং ছুটি মঞ্জুর করেন;
- Ø নিজের
প্রয়োজন ও সুবিধা-অসুবিধার কথা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানান;
- Ø ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন।
৩. শিক্ষকের
শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা:
- Ø সময়মত
শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হন এবং নির্ধারিত সময়ে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করেন;
- Ø শিক্ষার্থীদের
নামে সম্বোধন করেন;
- Ø শিক্ষার্থীদের
নাম,
ঠিকানা ও অভিভাবকের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করেন;
- Ø পূর্ব
প্রস্তুতি ছাড়া পাঠদান করেন না;
- Ø শিক্ষার্থীদের
পাঠে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন;
- Ø শিখনফল
অর্জিত হচ্ছে কি-না তা মূল্যায়ন করেন;
- Ø শিক্ষার্থীদের
কারো প্রতি বিদ্বেষ এবং কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না;
- Ø মূল্যায়নকালে
পক্ষপাতিত্ব করেন না;
- Ø শিক্ষার্থীদের
প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন;
- Ø শিক্ষার্থীর
সাথে অসদাচরণ করেন না এবং সকল শিক্ষার্থীকে সমান গুরুত্ব দেন;
- Ø শিক্ষার্থীদের
জ্ঞান,
দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নে সচেষ্ট
থাকেন, তাদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টি করেন;
- Ø তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করেন।
৪. শিক্ষকের
সহকর্মী কেন্দ্রিক অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা:
- Ø সিনিয়রদের
সম্মান,
জুনিয়রদের স্নেহ এবং সমবয়সীদের ভালোবাসা জানান;
- Ø তাদের
সঙ্গে ভ্রাতৃসুলভ আচরণ করেন;
- Ø শিক্ষণ-শিখন
বিষয়ে পারদর্শিতা ও দক্ষতা অর্জনে তাদের পরামর্শ নেন;
- Ø প্রতিষ্ঠানের
অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখেন;
- Ø সকলের সুখে-দুঃখে সহমর্মিতা জানান এবং যথাসাধ্য সহযোগিতা করেন।
৫. শিক্ষকের
সার্বিক অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা:
আদর্শ
শিক্ষকের সুনাম শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় বিদ্যমান থাকে এমনটি নয়। তাঁর
দৃষ্টিভঙ্গি, নির্দেশনা এবং আদর্শ, স্থান-কাল-পাত্র,
জাতি, ধর্ম ও বর্ণভেদের ঊর্ধ্বে উঠে
মানবতার কল্যাণে বিস্তৃত হয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীর শিখন মূল্যায়ন সম্পন্নকরণ,
পেশাগত মূল্যবোধ ও নৈতিকতা অনুশীলন, সকল
শিক্ষার্থীর সঙ্গে ব্যবহারে সমতাবিধান, একীভূতকরণ ও
ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করবেন। তাঁর প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সময়মতো এবং নীতি মেনে পালন
করবেন, পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের জন্য শিক্ষক পেশাগত
দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সহকর্মী,
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং অভিভাবকদের সাথে পেশাগত সম্পর্ক
স্থাপন করবেন। একইসাথে তিনি শিক্ষার্থীর ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি
তাদেরকে সহযোগিতা ও সার্বিক তত্ত্বাবধান করবেন। শিক্ষক
প্রশিক্ষণ ও প্রতিফলনমূলক অনুশীলনের মাধ্যমে সবসময় তার নিজের পেশাগত দক্ষতা
উন্নয়নে অঙ্গীকার প্রদর্শন করবেন এবং সচেষ্ট থাকবেন।
মতামত দিন