সামাজিক দক্ষতা কী? সামাজিক দক্ষতার ক্ষেত্র ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়
সামাজিক দক্ষতা কী? সামাজিক দক্ষতার ক্ষেত্র ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়
Social Skill: Areas of social skills and actions to improve social skills
সামাজিক
দক্ষতা বলতে কী বুঝায়?
মহিলা ও শিশু
বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের 'শিশুর প্রারম্ভিক যত্ন ও বিকাশের
সমন্বিত নীতি ২০১২' এ সামাজিক বিকাশের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে 'সামাজিক বিকাশ বলতে মূলত শিশুর সামাজিক সম্পর্ক
গড়ে তোলার কলাকৌশলকে বোঝানো হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলঃ যোগাযোগ নৈপুন্য,
ভাব বিনিময়, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং
অন্যদের সাথে সম্পর্ক নির্মাণ।'
পারস্পারিক তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য মৌখিক, লিখিত,
অ-বাচনিক (ইশারা, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি
ইত্যাদি), এবং ব্যক্তিগত উপস্থিতির মাধ্যমে যোগাযোগ
দক্ষতাই সামাজিক দক্ষতা।
সামাজিক
দক্ষতা শিশু বিকাশের মৌলিক দক্ষতা। জীবনের প্রথম বছরগুলিতে শিশুদের সামাজিকীকরণ
এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশ শুরু হয়। শৈশবকালে এই সামাজিক দক্ষতার বিকাশ একটি শিশুর
পরবর্তী বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। যে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই এই দক্ষতা
অর্জন করে, তাদের সাথে অন্যদের বোঝাপড়া ভাল হয়। তাদের
অন্যদের সাথে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সম্পর্ক তৈরি, কর্মক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং একটি
সুস্থ সামাজিক জীবন বজায় রাখার জন্য সামাজিক দক্ষতা অপরিহার্য। সামাজিক দক্ষতা এমন
আচরণ যা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।
সামাজিক দক্ষতাসমূহ:
মৌখিক
যোগাযোগ,
অ-মৌখিক (অবাচনিক) যোগাযোগ, সহানুভূতি, নেতৃত্ব, সমস্যা
সমাধান, সৃজনশীলতা, সহানুভূতি, সমানুভূতি, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, দানশীলতা, সততা,
সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা, ধন্যবাদ জ্ঞাপন, ভদ্রতা, শ্রদ্ধাবোধ, আত্নবিশ্বাস,
সৎসাহস, সমতা, সাম্যতা,
মিতব্যয়িতা, ধৈর্য্যধারণ, নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন প্রভৃতি।
সামাজিক দক্ষতার ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ
- v যোগাযোগ
দক্ষতা: মৌখিক, লিখিত ও অবাচনিক যোগাযোগ দক্ষতাসমূহ।
- v সহানুভ‚তিমূলক
দক্ষতা: সহানুভ‚তি, সমানুভূতি, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, দানশীলতা, অন্যের
- v অনুভূতি ও চাহিদা বুঝতে শেখা, প্রকৃতির সাথে বন্ধুত
প্রভৃতি।
- v মূল্যবোধ
অনুশীলনমূলক দক্ষতা: সততা, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা প্রভৃতি।
- v শিষ্টাচার
অনুশীলনমূলক দক্ষতা: সম্ভাষণ, ধন্যবাদ জ্ঞাপন, ভদ্রতা, শ্রদ্ধাবোধ প্রভৃতি।
- v দায়িত্বশীল
আচরণের দক্ষতা: আত্নবিশ্বাস, সৎসাহস, সমতা, সাম্যতা, মিতব্যয়িতা,
ধৈর্য্যধারণ, নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য
পালন প্রভৃতি।
সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষক হিসেবে করণীয়
সামাজিক
দক্ষতা স্থির নয়, সময়ের সাথে সাথে উন্নত ও পরিমার্জিত
হতে পারে। এই দক্ষতাগুলি সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং সংস্কৃতির পরিবর্তন দ্বারা
প্রভাবিত। অনুশীলন ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে সামাজিক দক্ষতার উন্নতি হয়। জন্ম থেকেই
বিকশিত হতে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে শক্তিশালী হয়। এই দক্ষতাগুলি শিশুদের সাথে
অন্যান্যদের দৈনন্দিন মিথস্ক্রিয়ার ফলাফল। সামাজিক দক্ষতা বিকাশে ছোটবেলা থেকেই
পিতামাতা, শিক্ষক ও অন্যান্যদের সাথে কাজ করা
গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষক
হিসেবে সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়:
- v শিশুকে
সম্ভাষণ,
অভিবাদন, ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং কুশল
বিনিময় করতে শিখানো।
- v শিক্ষার্থীকে সামাজিক দক্ষতামূলক ইতিবাচক কাজকর্মের দৃষ্টান্ত দেখানোর মাধ্যমে শিখানো।
- v শিক্ষার্থীকে সামাজিক ইতিবাচক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া।
- v শিক্ষার্থীকে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ দেয়া।
- v শিক্ষার্থীকে নতুন লোকেদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য সুযোগ করে দেয়া।
- v বিদ্যালয়ের সকল ধরনের অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
- v শিক্ষার্থীকে
সহানুভূতিশীল হওয়া শিখতে সাহায্য করা।
অন্যদের অনুভূতি বুঝতে এবং তাদের সাথে সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করা।
- v শিক্ষার্থীকে অন্যদের অনুভূতি সম্পর্কে কথা বলতে উৎসাহিত করা।
- v শিক্ষার্থীকে অন্যদের সাহায্য করার সুযোগ করে দেয়া।
- v শিক্ষার্থীকে অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া।
- v শিক্ষার্থীকে
দলগত কাজের দক্ষতা শিখতে সাহায্য করা। দলগত কাজের দক্ষতা শিক্ষার্থীর সামাজিক
দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই, শিক্ষার্থীকে দলগত
প্রকল্পগুলিতে অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করা।
- v দলগত লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য সহযোগিতা করার গুরুত্ব সম্পর্কে তাকে শিক্ষা দেয়া।
- v দলগত কাজের সময় অন্যদের সাথে শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ এবং ধৈর্যশীল হওয়া জন্য তাকে উৎসাহিত করা।
- v শিক্ষার্থীর সামাজিক দক্ষতা উন্নয়নে উৎসাহ এবং সমর্থন প্রদান করা।
- v শিক্ষার্থীর সাফল্যকে স্বীকৃতি দেয়া এবং তাকে উৎসাহিত করা।
- v নির্দেশিত খেলার পাশাপাশি শিশুকে মুক্তভাবে অন্যদের সাথে খেলা শিখানো।
- v বন্ধুদের সঙ্গে খেলনা ভাগ করে একসঙ্গে খেলতে উৎসাহিত করা।
- v গল্প করার পাশাপাশি অন্যের কথা মন দিয়ে শোনার বিষয়ে উৎসাহিত করা।
- v বড় দলের সঙ্গে কাজ ও সহযোগিতামূলক আচরণ করতে শেখানো।
- v পরিবারের
ছোট ছোট কাজে শিশুকে কাজ করতে উৎসাহ দেয়া এবং কে কি কাজ করেছে, তা শুনা।
- v শিশু কিছু চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে না দিয়ে ধৈর্য্য ধরতে শেখানো।
- v ভালো কাজে প্রশংসা করা এবং ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করা।
- v অভিভাবকগণকে বলে দেয়া যেন বাড়িতে অতিথি আসলে তাদের সন্তানকে অতিথির কুশল বিনিময় করার সুযোগ তৈরি করে দিতে বলুন।
- v গল্প করার পাশাপাশি অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা জরুরি। শিক্ষার্থীকে এ বিষয়টিও শেখান।
- v অন্যকে সাহায্য করতে শেখান ও বড় দলের সঙ্গে কাজ বা খেলা করতে উৎসাহিত করা।
মতামত দিন