শিক্ষকতা পেশায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা

শিক্ষকতা পেশায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা

সুন্দর বাচনিক দক্ষতা ও দৃষ্টি বিনিময়

শিক্ষকের সুন্দর বাচনিক দক্ষতা ও শিক্ষার্থীদের সাথে সঠিক দৃষ্টি বিনিময় শিক্ষার্থীদের পাঠে আগ্রহী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা পালন করে। অনেক শিক্ষকের উচ্চারণে আঞ্চলিকতার প্রভাব বা কোন মুদ্রাদোষ থাকে যা শিক্ষার্থীদের কাছে তার পাঠকে হাস্যরসে পরিণত করে। এরফলে শ্রেণিকর্যক্রম ব্যহত হয় এবং শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিখন ব্যহত হয়।

নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন

শিক্ষককে বিদ্যালয় ও সমাজে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। এসব দায়িত্ব পালনের জন্য দরকার নেতৃত্বের গুণাবলি। নেতার গুণাবলি অর্জন ব্যতীত বিদ্যালয় ও সমাজের জন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। শিক্ষকের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি প্রকাশিত না হলে বা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থীদের আচরণেও বিশৃঙ্খলা প্রকাশ পাবে। তাই শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ নেতা। পেশাগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ও সহায়ক গ্রন্থাবলি পড়ার মাধ্যমে শিক্ষক তার নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে পারেন।

মূল্যায়ন দক্ষতা

মূল্যায়নের সাহায্যে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীর সামর্থ্য ও দক্ষতা বুঝা যায় তেমনি শিক্ষক কতটুকু সফলভাবে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে সক্ষম হয়েছেন তা মূল্যায়ন করা যায়। মূল্যায়নের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ও কৌশল রয়েছে। মূল্যায়ন দুই প্রকার, যথা: ১ গাঠনিক মূল্যায়ন এবং ২ সামষ্ঠিক মূল্যায়ন। শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি যাচাই নির্ভর করে শিক্ষকের মূল্যায়ন দক্ষতার ওপর। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়নের বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে স্বল্পসময়ে সার্বিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করে শ্রেণিপাঠের কার্যকারিতা যাচাই ও শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী শনাক্ত করে নিরাময়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রাখে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে সঠিকভাবে মূল্যায়নের জন্য জ্ঞানের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে ধারণা না থাকলে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যহত হবে। শিক্ষার অগ্রগতি পরিমাপের সাথে সাথে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ কতটুকু হয়েছে তা সুষ্ঠুভাবে নিরূপণ নির্ভর করে একজন শিক্ষক আধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছেন কিনা তার ওপর। তাই মূল্যায়নের দক্ষতা পেশাগত উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দক্ষতা

শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে আকর্ষণীয়, ফলপ্রসূ ও দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে শিক্ষককে প্রথমে পাঠের বিষয়বস্তু কতটুকু পড়াবেন, পাঠের উদ্দেশ্য কী হবে, শিক্ষার্থীরা কখন, কোথায় কীভাবে অংশগ্রহণ করবে, কত সময় ধরে পড়াবেন, পদ্ধতি ও কৌশল কী হবে, কী উপকরণ ব্যবহার করা হবে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হবে ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট করতে হয়। এভাবে একটি পিরিয়ডের উপযোগী পরিকল্পনা তৈরি করাকে পাঠ-পরিকল্পনা বলে। পাঠ-পরিকল্পনা তৈরির মাধ্যমে একটি পাঠের প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে শিক্ষকের পূর্বধারণা ও পূর্বপ্রস্তুতি থাকে। ফলে শিখন-শেখানো কার্যাবলি সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়। সঠিক পাঠ-পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, মূল্যায়নের মাধ্যমে পাঠের শিখনফল অর্জন এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। বিক্ষিপ্ত শিখন থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখে ও পাঠকে আনন্দদায়ক ও হৃদয়গ্রাহী করে পাঠ-পরিকল্পনা। কাজেই পাঠ-পরিকল্পনা শিক্ষকগণের পেশাগত দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পাঠ-পরিকল্পনা প্রণয়ন দক্ষতা শিক্ষকগণের পেশাগত উন্নয়নে একটি অন্যতম উপাদান।

নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তি গ্রহণে ইতিবাচক মানসিকতা

শিক্ষককে হতে হবে উদার। নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তি গ্রহণে ইতিবাচক মানসিকতা পোষণ করতে হবে। জ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে, নতুন জ্ঞান তৈরি হচ্ছে, পুরাতন জ্ঞানের পরিমার্জন ও সংশোধন হচ্ছে। শিক্ষককে এসব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষার্থী ও সমাজ উপযোগী জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে তা প্রয়োগ করতে হবে। নতুন জ্ঞান ও ব্যবহারের কৌশল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে একজন শিক্ষক শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা, প্রযুক্তি উপকরণ সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতা, শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সমন্বয় সাধন এবং শ্রেণিকক্ষে তার প্রয়োগ সম্পর্কিত নতুন নতুন তাত্তি¡ক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে যুগোপযোগী হিসেবে তৈরি করবেন।

পেশাগত নৈতিকতা ও মূল্যবোধ

পেশাগত উন্নয়নের অংশহিসেবে শিক্ষকগণ তাঁদের পেশা সম্পর্কিত নৈতিকতা ও মূল্যবোধ অর্জন করেন। এর মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে আদর্শ মূল্যবোধ সম্পন্ন আচরণ প্রদর্শন করতে ভূমিকা রাখে। নিজ বিদ্যালয়ের সহকর্মীদের সাথে কর্ম-সম্পর্ক ভালো রাখে। স্বেচ্ছাসেবায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এছাড়াও বিদ্যালয় কমিউনিটির সাথে মিথষ্ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় এবং বিদ্যালয়ের রূপকল্প, উদ্দেশ্য, সংস্কৃতি ও নিয়ম-নীতি এর সাথে অভিযোজিত হওয়ার মানসিকতা তৈরি করে।

পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন

এমন অনেক মানুষ আছে যারা যে কোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন না। ফলে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষক পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করবেন যেন যে কোন ধরনের পরিস্থিতিতে নিজেকে খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারেন এবং যে কোনো ধরনের পরিবর্তনে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেন।

সহকর্মীদের সাথে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখার দক্ষতা

সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক মূলত বিদ্যালয়ে শিখন পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত। শিখন পরিবেশ বিঘিœত হলে শিক্ষার্থীদের যথাযথ শিখন সম্ভব হয় না। তাছাড়া সহকর্মীদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পেশাগত উন্নয়ন করা যায়। কাজেই সহকর্মীদের সাথে ভালো ও গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখার দক্ষতা একজন শিক্ষকের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। 

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।