প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলককরণ) আইন, ১৯৯০

সাংবিধানিক অঙ্গীকার এবং প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলককরণ) আইন, ১৯৯০

প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত সাংবিধানিক অঙ্গীকার

ঔপনিবেশিক আমলের দুশ বছরেরও অধিককাল শোষণ আর বৈষম্যমূলক নীতি ও পরিকল্পনায় জীর্ণ, পাকিস্তান আমলের নয়া-ঔপনিবেশিক বঞ্চনায় ভঙ্গুর এবং মুক্তিযুদ্ধকালে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে তৎকালীন সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেন। দেশের নব প্রণীত সংবিধানে সকল শিশুর জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

 গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ১১টি ভাগ এবং ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। সংবিধানের ২য় ভাগ এর অনুচ্ছেদ-১৭ তে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা সম্পর্কে নিম্নরূপ কথা বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় ভাগ

(রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি)

অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা:

১৭। রাষ্ট্র

(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য;

(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য;

(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।

তৃতীয় ভাগ

(মৌলিক অধিকার)

ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য:

২৮।

(১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।

(২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।

(৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।

(৪) নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।

ধর্মীয় স্বাধীনতা:

৪১।

(১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে;

(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় স¤প্রদায় ও উপ-স¤প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।

(২)  কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।

 

সাংবিধানিক প্রেরণা ও অঙ্গীকার পূরণে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে জাতীয়করণ করেন। এর মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ৩৬,১৬৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ১,৫৭,৭৪২ জন শিক্ষককে সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষাকে সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের উপায় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সুদীর্ঘকালধরে বঞ্চিত প্রাথমিক শিক্ষকদের মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এসময় আরও প্রস্তাব করা হয়, প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৭৮) দেশে ৫ হাজার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।

রাষ্ট্রীয়করণের পর দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৭০ সালে এ দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা ছিল ২৯০২৯, স্বাধীনতা অর্জনের ৫ বছরের মধ্যে বিদ্যালয় সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৫ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৩৮ হাজার সরকারি বিদ্যালয়। বর্তমান সময়ে (২০১৩) ২৬ হাজার ১৯৩ বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কেও সরকারিকরণ করায় সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল তা ব্যাপকভাবে দূর হয়েছে।

 

প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলক করণ) আইন, ১৯৯০

জাতিসংঘ তার অঙ্গ সংগঠনের মাধ্যমে সবার জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করতে ১৯৯০ সালের ৫ থেকে ৯ মার্চ থাইল্যান্ডের জমতিয়েন শহরে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে এ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে। এ সম্মেলনে নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে লক্ষ্য ছিল ২০০০ সালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক দেশ তাদের জাতীয় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৪ বছর বয়সের কমপক্ষে ৮০ ভাগ শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল; ২০০০ সালের মধ্যে- (১) শিক্ষার্থী ভর্তির হার ৯৫ ভাগে উন্নীত করা, (২) মেয়ে শিশু ভর্তির হার ৯৪ ভাগে উন্নীত করা, (৩) প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপন হার ৭০ ভাগে উন্নীত করা। জমতিয়েন ঘোষণার পর বাংলাদেশ শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি করে প্রাথমিক শিক্ষার পরিমাণগত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে।

১৯৯০ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন ১৯৯০ অনুযায়ী সকল অভিভাবক তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয় গমনোপযোগী সন্তানকে (আইনগত কারণ ছাড়া) নিকটবর্তী কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে বাধ্য। প্রথমে কয়েকটি উপজেলায়, পরবর্তীতে তা আরও এলাকায় সম্প্রসারিত করা হয় এবং ১৯৯৩ সালে সারাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়। কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে এ আইনের সমর্থনে দারিদ্র্যসীমার নিচে যেসকল পরিবারের আয় তাদের শিক্ষার জন্য ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছর থেকে শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি চালু করা হয়। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের প্রয়োজনে ১৯৯২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক একটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব ও কাজের পরিধি বিবেচনায় ২০০৩ সালে পৃথক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।

 

প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলক করণ) আইন, ১৯৯০

১৯৯০ সালের ২৭ নং আইন (১৩ ফেব্রæয়ারি ১৯৯০)

প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণকল্পে প্রণীত আইন৷

যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম

১। এই আইন প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলক করণ) আইন, ১৯৯০ নামে অভিহিত হইবে।

সংজ্ঞা

২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কিছু না থাকিলে, এই আইনে,-

(ক) অভিভাবক অর্থ শিশুর পিতা বা পিতার অবর্তমানে মাতা বা উভয়ের অবর্তমানে শিশুর তত্ত্বাবধানে রহিয়াছেন এমন কোন ব্যক্তি;

(খ) কমিটি অর্থ ধারা ৪ এর অধীন গঠিত বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি;

(গ) প্রাথমিক শিক্ষা অর্থ শিশুদের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বা অনুমোদিত শিক্ষা;

(ঘ) প্রাাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থ যে কোন সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা রহিয়াছে;

(ঙ) শিশু অর্থ ছয় বৎসরের কম নহে এবং দশ বৎসরের অধিক নহে এইরূপ বয়সের যে কোন বালক বা বালিকা।

প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণ

৩। (১) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দেশের যে কোন এলাকায় যে কোন তারিখ হইতে প্রাাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করিতে পারিবে।

(২) যে এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হইবে সেই এলাকায় বসবাসরত প্রত্যেক শিশুর অভিভাবক তাহার শিশুকে, যুক্তিসংগত কারণ না থাকিলে, প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে উক্ত এলাকায় অবস্থিত তাহার বাসস্থানের নিকটস্থ প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাইবেন।

(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত যুক্তিসংগত কারণ বলিতে নিম্নলিখিত কারণগুলিকে বুঝাইবে, যথা :-

(ক) অসুস্থতা বা অন্য কোন অনিবার্য কারণে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা সম্ভব না হওয়া;

(খ) শিশুর আবাসস্থল হইতে দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকা;

(গ) আবেদন করা সত্তে¡ও শিশুকে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাইতে না পারা;

(ঘ) প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিবেচনায় শিশু বর্তমানে যে শিক্ষা গ্রহণ করিতেছে তাহা প্রাথমিক শিক্ষার সমমানের না হওয়া;

(ঙ) প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিবেচনায় শিশুর মানসিক অক্ষমতার কারণে তাঁহাকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো বাঞ্ছনীয় না হওয়া।

(৪) যে এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হইবে সেই এলাকায় কোন ব্যক্তি কোন শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য হাজির হওয়ার ব্যাপারে বিঘেœর সৃষ্টি করিতে পারে এমন কোন কাজকর্মে ব্যাপৃত রাখিতে পারিবেন না।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি

৪। (১) যে এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হইবে সেই এলাকায় ইউনিয়ন বা পৌর এলাকাসমূহের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি নামে একটি কমিটি থাকিবে।

(২) কোন ইউনিয়নের ওয়ার্ডের জন্য কমিটি নিম্নবর্ণিত সদস্য-সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথা :-

(ক) উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত একজন ওয়ার্ড মেম্বার, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন;

(খ) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সহিত আলোচনাক্রমে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিদ্যোৎসাহী পুরুষ;

(গ) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সহিত আলোচনাক্রমে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিদ্যোৎসাহী মহিলা;

(ঘ) প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী, যিনি উহার সচিবও হইবেন।

(৩) কোন পৌর এলাকার ওয়ার্ডের জন্য কমিটি নিম্নবর্ণিত সদস্য-সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথা :-

(ক) পৌর কর্পোরেশনের মেয়র বা পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত একজন ওয়ার্ড কমিশনার, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন;

(খ) ওয়ার্ড কমিশনারের সহিত আলোচনাক্রমে উক্ত মেয়র বা চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিদ্যোৎসাহী পুরুষ;

(গ) ওয়ার্ড কমিশনারের সহিত আলোচনাক্রমে উক্ত মেয়র বা চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিদ্যোৎসাহী মহিলা;

            (ঘ) প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী, যিনি উহার সচিবও হইবেন।

 (৪) যদি কোন ওয়ার্ডে একাধিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকে, তাহা হইলে উহাদের প্রত্যেকটির প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী কমিটির সদস্য হইবেন এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা ক্ষেত্রমত, পৌর কর্পোরেশনের মেয়র বা পৌরসভার চেয়ারম্যান তাহাদের মধ্য হইতে কে কমিটির সচিব হইবেন তাহা নির্ধারণ করিবেন।

কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য

৫। (১) কমিটি উহার এলাকায় বসবাসরত প্রত্যেক শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া এবং রীতিমত হাজির হওয়া নিশ্চিত করিবে এবং এতদুদ্দেশ্যে কমিটি উহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় বা সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।

 (২) কমিটি উহার এলাকায় বসবাসরত সকল শিশুর একটি তালিকা প্রস্তুত করিবে এবং উহাতে প্রত্যেক শিশুর নাম, অভিভাবকের নাম ও শিশুর বয়স উল্লেখ থাকিবে এবং উহাতে এই আইনের অধীন যাহারা প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হইতে বাধ্য এবং যাহারা এই ভর্তি হইতে অব্যাহতি পাওয়ার যোগ্য তাঁহাদের নাম স্বতন্ত্রভাবে প্রদর্শিত হইবে।

 (৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রণীত তালিকা প্রত্যেক বৎসর ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে সংশোধিত হইবে এবং এই সংশোধিত তালিকা হইতে যাহারা নববর্ষের শুরুতে শিশু থাকিবে না তাঁহাদের নাম বাদ পড়িবে এবং যাহারা শিশু হইবে তাঁহাদের নাম উহাতে অন্তর্ভুক্ত হইবে।

 (৪) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত তালিকা এবং উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত সংশোধিত তালিকার একটি করিয়া অনুলিপি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড হইতে দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট প্রেরণ করিতে হইবে৷

(৫) প্রত্যেক বৎসর জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে প্রত্যেক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী তাঁহার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিশুদের নামের একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট কমিটি এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করিবেন।

 (৬) প্রত্যেক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁহার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী মাসে অন্ততঃ সাতদিন অনুপস্থিত ছিল এইরূপ শিশুদের একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট কমিটি এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করিবেন।

 (৭) যেক্ষেত্রে কমিটি দেখিতে পায় যে, উহার তালিকাভুক্ত কোন শিশু যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত কোন প্রথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় নাই বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানশিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রীর বিনা অনুমতিতে মাসের মধ্যে অন্ততঃ সাতদিন অনুপস্থিত রহিয়াছে সেক্ষেত্রে কমিটি শিশুর অভিভাবকের বক্তব্য শ্রবণ করিয়া এবং প্রয়োজনবোধে বিষয়টি তদন্ত করিয়া উক্ত অভিভাবককে ভর্তি না হওয়ার ক্ষেত্রে, উহার শিশুকে কমিটি কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাইবার জন্য এবং অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁহার যথারীতি উপস্থিতি নিশ্চিত করিবার জন্য লিখিতভাবে নির্দেশ দিতে পারিবে।

ণ্ড

৬। (১) যদি কোন কমিটি এই আইনের অধীন উহার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাহা হইলে, উহার প্রত্যেক সদস্য অনধিক দুইশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) যদি কোন অভিভাবক ধারা ৫(৭)-এর অধীন প্রদত্ত নির্দেশ পালনে পরপর তিনবার ব্যর্থ হন তাহা হইলে, তিনি অনধিক দুইশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ

৭। কমিটির চেয়ারম্যানের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করিতে পারিবেন না।

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা

৮। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।