জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল

জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল
National Integrity Strategy of Bangladesh 

জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল

শুদ্ধাচার বলতে সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণগত উৎকর্ষ বোঝায়। এর দ্বারা একটি সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদন্ড, নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্যও বোঝানো হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে এর অর্থ হলো কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা। এখানে শুদ্ধাচারের এই অর্থটিকেই গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যক্তির সমষ্টিতেই প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয় এবং তাদের সম্মিলিত লক্ষ্যই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রতিফলিত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় পর্যায়ে শুদ্ধাচার অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। রাষ্ট্র্রীয় আইনকানুন ও অন্যান্য নিয়মনীতি ও দর্শন এমনভাবে প্রণীত ও অনুসৃত হওয়া প্রয়োজন যাতে এগুলি শুদ্ধাচারী জীবন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়। বাংলাদেশের সমাজ বিভিন্ন খাত, যথা রাষ্ট্র, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজে বিভিন্ন আইন কানুন, নিয়মনীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পালন ও লালন করে শুদ্ধাচার অনুশীলন করে চলেছে এবং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী তাতে সংস্কার ও উন্নয়ন সাধন করেছে।

বাংলাদেশের রূপকল্প ২০২১ এ উল্লেখ ছিল- আগামী এক দশকে দেশটিতে ক্ষুধা, বেকারত্ব, অশিক্ষা, বঞ্চনা ও দারিদ্র দূর হয়ে দেশে বিরাজ করবে সুখ, শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি। সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষনমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা হবে। যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে। এই লক্ষ্য পূরণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য এবং সেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিপালন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য পরাকৌশল। কিন্তু কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্র্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে একটি আন্দোলন গড়ে তোলা, যাতে নাগরিকগণ চরিত্রনিষ্ঠ হয়, রাষ্ট্র্রীয় ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ও সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠানসমূহে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা পায়। 

বাংলাদেশ জাতিসংঘের United Nation Convention Against Corruption (UNCAC) এর অনুসমর্থনকারী দেশ। এই কনভেনশনে দুর্নীতি নির্মূলের জন্য ফৌজদারী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে দুর্নীতির প্রতিকার ছাড়াও দুর্নীতির ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেরাষ্ট্র্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনই পরিবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও এনজিও এবং শিল্প ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সাকুল্যে অরাষ্ট্রীয় হিসেবে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকাও সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ তিনটি অঙ্গে বিভক্ত - বিচার বিভাগ, আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগ। তারা স্বাধীন সত্তায় তাদের নিজস্ব কর্মবৃত্তে যথাক্রমে বিচারকার্য, রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন ও নির্বাহীকার্য পরিচালনা করে। সংবিধান অনুযায়ী গঠিত আরও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে- যেমন: নির্বাচন কমিশন, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশন, ন্যায়পাল, যারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত এবং যারা বাজেট ও আর্থিক নিয়মাবলি অনুসরণ সাপেক্ষে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে তাদের কর্মসম্পাদন করে। অন্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আলাদা আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট এবং সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ হিসেবে অভিহিত; যেমন- দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি। সংবিধানে স্থানীয় শাসনের যে ব্যবস্থা নির্দেশ করা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাম ও শহরের স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠান যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের সকলের ভূমিকাকে গুরুত্ব প্রদান জরুরি।

রাষ্ট্র ও সমাজে দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আইনকানুন ও বিধিবিধানের সুষ্ঠু প্রয়োগ, তাদের পদ্ধতিগত সংস্কার ও উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত এবং তাদের সঙ্গে সশ্লিষ্ট সকলের চরিত্রনিষ্ঠা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীতব্য কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে। যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে তা হলো:

ক.রাষ্ট্র্রীয় প্রতিষ্ঠান:

(১) নির্বাহী বিভাগ, (২) জাতীয় সংসদ, (৩) বিচার বিভাগ, (৪) নির্বাচন কমিশন, (৫) অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, (৬) সরকারি কর্ম-কমিশন, (৭) মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, (৮) ন্যায়পাল, (৯) দুর্নীতি দমন কমিশন, (১০) স্থানীয় সরকার

খ. অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান:

১. রাজনৈতিক দল, ২. বেসরকারি খাতের শিল্প ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ৩. এনজিও ও সুশিল সমাজ, ৪. পরিবার, ৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৬. গণমাধ্যম।

এই কৌশলটির রূপকল্প হল সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা- রাষ্ট্র এবং সমাজ হিসেবে এটিই বাংলাদেশের গন্তব্য; আর সেই গন্তব্যে পৌছানোর জন্য রাষ্ট্রে ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সবচেয়ে জরুরী কাজ। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশল হিসেবে বিবেচিত।

উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অব্যাহতভাবে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে চলেছে। এগুলিতে পদ্ধতিগত সংস্কারও সাধন করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে এসব কার্যক্রম ও সংস্কার- উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও এগুলির একটি সম্মিলিতরূপ প্রদানের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। এই কৌশলটিতে সে উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে। চিহ্নিত সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের কৃত্য, কৃতি, বিবর্তন, বর্তমান অবস্থা ও তাদের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে এবং প্রত্যেকের জন্য আলাদা কর্মপরিকল্পনা বিধৃত হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নকাল হিসেবে স্বল্পমেয়াদ (এক বছরের মধ্যে), মধ্যমেয়াদ (তিন বছরের মধ্যে) এবং দীর্ঘমেয়াদ (পাঁচ বছরের মধ্যে) চিহ্নিতকরা হয়েছে। 

প্রতিটি প্রতিষ্ঠান/প্রতিষ্ঠানগুচ্ছের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ছকে কার্যক্রম (Intervention) চিহ্নিত করা হয়েছে:

ক্রমিক

কার্যক্রম

কর্মসম্পাদন সূচক

সময়

দায়িত্ব

সহায়তাকারী

 

 

 

 

 

 


 

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।