বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা কী? বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা বিকাশের উপায়

বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা কী? বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা বিকাশের উপায়

Global Citizenship Skill

শিক্ষার্থীর বিশ্ব নাগরিক দক্ষতা কী?

বিশ্ব নাগরিকত্ব হল এমন একটি ধারণা যা মানুষকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট উপলব্ধি করে সেখানে তার অবস্থান সুনির্দিষ্ট করতে সহায়তা করে। বিশ্ব নাগরিকত্বের দক্ষতা স¤পন্ন ব্যক্তি জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার নিজ পরিসর, সমাজ, সংস্কৃতি তথা দেশে সক্রিয় ভমিকা পালন করে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করেন যা বৈষম্যহীন বিশ্ব তৈরিতে এবং মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে। বিশ্ব নাগরিকত্বের দক্ষতাস¤পন্ন প্রজন্ম দেশ তথা বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত উন্নয়নে সক্রিয় ভমিকা পালন করে। বৈশ্বিক নাগরিকত্ব মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়ে সকলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, সহনশীল, একীভূ, সুরক্ষিত এবং টেশসই বিশ্ব গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করে (জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১)।

শিক্ষার্থীর বিশ্ব নাগরিক দক্ষতা হল সেই দক্ষতাগুলি যা শিক্ষার্থীদের বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমস্যাগুলি সম্পর্কে বোঝার এবং সম্মান করার ক্ষমতা দেয়। এই দক্ষতাগুলি শিক্ষার্থীদের একটি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে এবং একটি ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই বিশ্ব গঠনে অবদান রাখতে সাহায্য করে।

শিক্ষার্থীর বিশ্ব নাগরিক দক্ষতার কিছু উদাহরণ হল:

ü  বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান: শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, এবং বর্তমান ঘটনা সম্পর্কে জানতে হবে।

ü  সমালোচনামূলক চিন্তা: শিক্ষার্থীরা বিশ্বের তথ্য এবং ধারণাগুলিকে সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করতে এবং মূল্যায়ন করতে সক্ষম হতে হবে।

ü  সৃজনশীল চিন্তা: শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সমস্যাগুলির নতুন এবং উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করতে সক্ষম হতে হবে।

ü  যোগাযোগ: শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষম হতে হবে।

ü  সহযোগিতা: শিক্ষার্থীরা অন্যান্য সংস্কৃতির মানুষের সাথে সহযোগিতা করতে সক্ষম হতে হবে।

ü  নেতৃত্ব: শিক্ষার্থীরা বিশ্বের পরিবর্তন আনতে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হতে হবে।

 বিশ্ব নাগরিক বলতে কী বুঝায়?

বিশ্বনাগরিক হলো এমন এক মানব দর্শন, যেখানে ভৌগলিক ও রাজনৈতিক সীমানা পেরিয়ে এক পরিচয়ে বেড়ে উঠতে পারে। আধুনিক বিশ্বের  চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিশ্ব নাগরিক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ব নাগরিক হওয়ার মধ্য দিয়ে একজন নাগরিক বিশ্বনেতৃত্ব ও কর্তব্য পালনের যোগ্যতা অর্জন করে।

 বিশ্ব নাগরিকত্ব শিক্ষা মূলত তিনটি মৌলিক ভাবধারার উপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন -

বুদ্ধিবৃত্তিক

সামাজিক-আবেগীয়

আচরণগত

জ্ঞান, বোঝাপড়া, বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাশীলতা চর্চা করা হয় যার মাধ্যমে স্থানীয়, আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যাসমূহে আলোকপাত করা হয়।

মানবিকতা, মূল্যাবোধ, দায়িত্বশীলতা, একাত্মতা এবং পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা করা হয়।

কার্যকর ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কীভাবে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি ও টেশসই উন্নয়নে কাজ করা যায় তার চর্চা করা হয়।  

 

বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা বিকাশের উপায়

বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা বিকাশের জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এই দক্ষতাগুলি বিকাশে সহায়তা করার জন্য শিক্ষকদের বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যকলাপ এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন কার্যকলাপেও জড়িত হতে পারে।

শিক্ষার্থীর বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা বিকাশের জন্য শিক্ষকরা নিম্নলিখিত কার্যকলাপ এবং পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করতে পারেন:

বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে শিক্ষা: শিক্ষার্থীদের বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি, ইতিহাস, গোল, এবং বর্তমান ঘটনা সম্পর্কে জানতে হবে। শিক্ষকরা বিভিন্ন শিক্ষামূলক উপকরণ ব্যবহার করে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করতে পারেন, যেমন বই, নিবন্ধ, ভিডিও, এবং ওয়েবসাইট-ভিত্তিক শিক্ষা।

সমালোচনামূলক চিন্তা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশ: শিক্ষার্থীরা বিশ্বের তথ্য এবং ধারণাগুলিকে সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করতে এবং মূল্যায়ন করতে সক্ষম হতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সমাধানের কার্যকলাপ এবং প্রকল্পে জড়িত করতে পারেন।

সৃজনশীল চিন্তা এবং উদ্ভাবন উৎসাহিত করা: শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সমস্যাগুলির নতুন এবং উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করতে সক্ষম হতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের সৃজনশীল প্রকল্পে জড়িত করতে পারেন।

যোগাযোগ এবং সহযোগিতা দক্ষতা বিকাশ: শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে এবং সহযোগিতা করতে সক্ষম হতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের যোগাযোগ এবং সহযোগিতামূলক কার্যকলাপ এবং প্রকল্পে জড়িত করতে পারেন।

নেতৃত্ব দক্ষতা উন্নয়ন: শিক্ষার্থীরা বিশ্বের পরিবর্তন আনতে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের নেতৃত্বের ভমিকা এবং প্রকল্পে জড়িত করতে পারেন।

বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে যোগাযোগ এবং মিথস্ক্রিয়া: শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে যোগাযোগ এবং মিথস্ক্রিয়া করে বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে এবং বোঝতে শিখতে পারে। তারা বিভিন্ন ধরণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারে বা বিভিন্ন সংস্কৃতির সম্প্রদায়ের সাথে স্বেচ্ছাসেবক হতে পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানতে এবং শিখতে: শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানতে এবং শিখতে বিভিন্ন ধরণের তথ্য উৎস ব্যবহার করতে পারে, যেমন সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বই, এবং ওয়েবসাইট। তারা বিভিন্ন ধরণের সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রকল্পেও জড়িত হতে পারে।

বিশ্বের পরিবর্তন আনতে কাজ করা: শিক্ষার্থীরা বিশ্বের পরিবর্তন আনতে বিভিন্ন উপায়ে কাজ করতে পারে, যেমন স্বেচ্ছাসেবকতা, রাজনৈতিক কার্যকলাপ বা সামাজিক উদ্যোগে জড়িত হওয়া।

শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করে বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা বিকাশের জন্য একটি শক্তিশালী পরিবেশ তৈরি করতে পারেন। এই দক্ষতাগুলি বিকাশের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা একটি ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই বিশ্ব গঠনে অবদান রাখতে এবং বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে সক্ষম হবে।

তথ্যসূত্র:

  • §  বৈশ্বিক নাগরিকত্ব শিক্ষা, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ৭, প্যালেস দ্য ফন্টেনয়, ৭৫৩৫২ প্যারিস ০৭ এসপি, ফ্রান্স কর্তৃক ২০১৫ সালে প্রকাশিত।
  • §  UNESCO (2014). Global citizenship education: Preparing learners for the challenges of the 21st century.

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।