শিক্ষকতায় পেশাগত মূল্যবোধ ও সম্পর্ক স্থাপন

শিক্ষকতায় পেশাগত মূল্যবোধ ও সম্পর্ক স্থাপন

Establishing professional values and relationships in teaching

শিক্ষকতায় পেশাগত মূল্যবোধ

পেশাগত মূল্যবোধ বলতে পেশাজীবীর দায়িত্ব-কর্তব্য ও কাজের আচরণ নির্দেশনাদানকারী নীতিমালাকে বুঝায়। সমতার প্রতি অঙ্গীকার এবং চিন্তা অনুশীলন ও পেশাগত উন্নয়নের সাথে পেশাগত মূল্যবোধের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, প্রত্যেক শিশুর মধ্যে নিহিত সম্ভাবনার পূর্ণ মাত্রায় বিকাশের অধিকারসহ একীভূত শিক্ষা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সমতার প্রতি অঙ্গীকার, শিক্ষকের বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। একইভাবে, শিক্ষকগণ সমগ্র শিক্ষকতার জীবনে পেশাগত উন্নয়নের প্রতি এবং সক্রিয়ভাবে চিন্তা অনুশীলনের প্রতি অঙ্গীকার প্রদর্শন করে থাকেন।

 পেশাগত মূল্যবোধ সম্পর্কিত শিক্ষক যোগ্যতা:

  • v  শিশুর জ্ঞান ও দক্ষতা, আগ্রহ এবং সক্রিয়তা সম্পর্কে শিক্ষকের পরিপূর্ণ উপলব্ধি থাকা;
  • v  লিঙ্গ, ধর্ম, জাতি, ভাষা, বর্ণ, দৈহিক অক্ষমতা অথবা আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে শিক্ষককে সকল শিশুর চাহিদা সঠিকভাবে এবং সমতার ভিত্তিতে পূরণে সামর্থ থাকা;
  • v  প্রত্যেক শিশুর ব্যক্তিগত অবস্থা সম্পর্কে সজাগ থেকে প্রত্যেকের সাথে পেশাগত এবং ইতিবাচক সম্পর্ক রক্ষা করা;
  • v  কৃষ্টিগত, ধর্মীয় এবং ভাষাগত পার্থক্যগুলোকে নেতিবাচক হিসাবে না নিয়ে বরং এ পার্থক্যকে শক্তি হিসাবে বিশ্বাস করা
  • v  শিক্ষাদান দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এবং তা সময়সময় আধুনিকায়নের জন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা;
  • v  নিজেদের শিক্ষাদানের পারদর্শিতা এবং শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জন উন্নয়নের জন্য সক্রিয়ভাবে চিন্তা ভাবনা থাকা;
  • v  শিক্ষাদানে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য সহকর্মী এবং পেশাজীবীদের পরামর্শ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা।

 

শিক্ষকের পেশাগত মূল্যবোধ অর্জনের পারদর্শিতার সূচক:

  • v  শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সাথে ইতিবাচকভাবে মেলামেশা করেন এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থী সম্পর্কে উচ্চাশা পোষণ করেন;
  • v  প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জানেন এবং সে জ্ঞান শিখনের সাথে সম্পর্কিত করে থাকেন;
  • v  সামাজিক, কৃষ্টিগত, লৈঙ্গিক, ধর্মীয়, জাতীয়, ভাষাগত এবং আর্থিক অবস্থান নির্বিশেষে শিক্ষক সকল শিশুর প্রতি বৈষম্যহীন আচরণ করেন;
  • v  প্রশিক্ষণসহ শিক্ষকদের পেশা উন্নয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে সচেতন থাকেন;
  • v  বিভিন্ন জার্নাল ও পত্রিকায় লেখার মাধ্যমে শিক্ষকের পেশা সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা উন্মেষ ঘটান যা প্রভাব প্রাত্যহিকভাবে প্রণীত পাঠ পরিকল্পনাতেও থাকে;
  • v  শিক্ষক যেকোন ইতিবাচক ফিডব্যাক গ্রহণ করে সে অনুসারে কাজ করে থাকেন।

 

 শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষকের পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল

শিক্ষকের রয়েছে কতগুলো পেশাগত মানদন্ড এবং মূল্যবোধ। যা পূর্বের অধিবেশনে জেনেছেন এবং অনুশীলন করেছেন। এই মানদন্ড ও মূল্যবোধের আলোকে প্রত্যেক শিক্ষক তাদের পেশাগত কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া শিক্ষক পেশাগত দক্ষতা প্রয়োগ করে দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে সকল কর্মকান্ডে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন। সুতরাং শিক্ষার্থীর আচরণিক বিকাশ ও উন্নয়নে শিক্ষককে সর্বদাই সম্পর্ক স্থাপন করতে হয় এবং এই পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে তাদেরকে কতগুলো কৌশল অবলম্বন করতে হয়। 

এই কৌশলগুলো হলো-

  • Ø  বিদ্যালয়ে প্রথমদিনে শিক্ষার্থীকে সাদরে গ্রহণ করা এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে পরিচিতি করানো;
  • Ø  শিক্ষার্থীর নাম জানা এবং নাম ধরে ডাকা;
  • Ø  শিক্ষার্থীর আগ্রহ, শখ ও প্রত্যাশা জানা এবং প্রোফাইল রেকর্ডে সংরক্ষণ করা;
  • Ø  শিক্ষার্থীর বিভিন্ন ক্ষেত্রভিত্তিক আচরণ পর্যবেক্ষণ করা এবং রেকর্ড সংরক্ষণ করা;
  • Ø  শিক্ষার্থীর আচারণিক বিষয়ে শিক্ষার্থীর পিতা-মাতা বা অভিভাবকের নিকট পজেটিভ ধারণা দেয়া;
  • Ø  শিক্ষার্থী শিক্ষকের নিকট স্বাতন্ত্র্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অনুভতি ও আবেগ প্রকাশ করা;
  • Ø  শিক্ষার্থীর নিকট শিক্ষক অত্যন্ত সহজ এবং বন্ধু, নিরাপদ, ভয়হীন, পক্ষপাতহীন, সব কথা বলা যায় এমন আবেগ প্রকাশ করা;
  • Ø  শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের বক্তব্য, কোনো সমস্যা ধৈর্য্য সহকারে শ্রবণ করার ক্ষমতা প্রকাশ, সহিষ্ণু, সহানুভতিশীল অনুভতি প্রকাশ ও প্রয়োগ করা;
  • Ø  শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের আচরণ বিষয়ে কোনো নিন্দাসূচক মন্তব্য, বিচারসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ না করা;
  • Ø  শিক্ষকের সকল সহায়তার ক্ষেত্রে উদার ও আন্তরিকতার প্রকাশ থাকতে হবে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক অনেক ক্ষেত্রে তাদের মনের ইচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ ও সিদ্ধান্তের রূপরেখা শিক্ষকের নিকট উপস্থাপন করতে চাইতে পারে সে ক্ষেত্রে কোনরূপ আদেশ সম্বলিত নির্দেশ প্রদান না করা;
  • Ø  শিক্ষার্থীর অনেক নেতিবাচক আচরণ, সমস্যা এবং গোপনীয় তথ্য শিক্ষক জানতে পারেন যা কখনো অন্যের কাছে প্রকাশ না করা;
  • Ø  শিক্ষক সর্বদাই শিক্ষার্থীর মঙ্গল চান, সে যা হতে চায় তাকে এ বিষয়ে সচেতন করা এবং উদ্বুদ্ধ করা;
  • Ø  শিক্ষার্থীর ভালো দিকগুলো পরিবারের সদস্যের সাথে সাক্ষাতে বলা;
  • Ø  শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পূর্বে শ্রেণিতে যাওয়া এবং শ্রেণি কার্যক্রম শেষে সকলের সাথে আগামী ক্লাশে দেখা হবে বলে বিদায় নেয়া;
  • Ø  শিক্ষার্থী যাতে তার বিভিন্নমুখী অনুভতি প্রকাশ করতে পারে এমন পরিবেশ সৃষ্টি নিশ্চিত করা;
  • Ø  শিক্ষার্থীর আবেগ, অনুভতি এবং সমস্যা প্রকাশের সময় শিক্ষকের আবেগ সংযত রাখা;
  • Ø  শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীর চমৎকার সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদানে সর্বদাই তাকে মনেপ্রাণে গ্রহণ এবং বিশ^াসস্থাপন করা;
  • Ø  সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীর সাথে সর্বদাই যোগাযোগ রাখা। শিক্ষার্থীদের সাথে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ও খেলাধুলায় শিক্ষকের অংশগ্রহণ;
  • Ø  শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের আচরণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং সর্বদাই হাসিমুখে পারস্পরিক আচরণ করা।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।