কার্যকর শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা
কার্যকর শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা
শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা বলতে কী বুঝায়?
শ্রেণি কার্যক্রমের প্রতিফলন ঘটে শ্রেণিকক্ষে। তাই শ্রেণিকক্ষে ইতিবাচক পরিবেশ
আবশ্যক। শ্রেণিকক্ষে উপযুক্ত জ্ঞান চর্চার অনুকূল পরিবেশ
সৃষ্টির জন্যই প্রয়োজন শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা
বলতে শিক্ষার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য হাসিল করার জন্য ভৌত এবং মানবীয় উপাদানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা
করে জ্ঞান চর্চার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির সামগ্রিক প্রক্রিয়াকেই বোঝায়। অর্থাৎ
শিক্ষক শিক্ষাক্রমের আলোকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়াকে সফলভাবে বাস্তবায়ন
করার জন্য যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকেন তাকেই শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা বলে।
শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার উপাদান কয়টি ও কী কী?
শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার উপাদানসমূহ
শ্রেণি ব্যবস্থাপনার উপাদানসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন
১. ভৌত ব্যবস্থাপনা
২. মানবীয় ব্যবস্থাপনা
১. ভৌত ব্যবস্থাপনা:
শ্রেণিকক্ষের ভৌত সুবিধাদি এ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত। যেমন,
- শ্রেণিকক্ষ
- শিক্ষার্থী
উপযোগী আসন সামগ্রী
- বোর্ড
- বোর্ডে
লেখার সামগ্রী
২. মানবীয় ব্যবস্থাপনা
শিক্ষার্থীর পাঠ ধারণ উপযোগী সুবিধাদি এ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত। যেমন,
- আসনবিন্যাস
- শিখন
পদ্ধতি ও কৌশল
- পরিকল্পিত
কাজ
- পাঠ
উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি
- ফলপ্রসূ
পাঠ উপস্থাপন
- শিক্ষার্থীর
মনোযোগ ও আগ্রহ সৃষ্টি
- বিষয়বস্তু
সংশ্লিষ্ট উপকরণ ব্যবহার
- মূল্যায়ন
ও ফলাবর্তন
শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
কার্যকর পাঠদান ও পাঠগ্রহণের জন্য শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষার্থীর আচরণিক, সামাজিক ও নির্দেশনামূলক শিক্ষা প্রদান করা হয়। তাই পাঠদানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা আবশ্যক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শ্রেণির কাজ শেষ করা, শ্রেণি শৃঙ্খলা বজায় রাখা, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা, পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। উপরোক্ত কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অত্যধিক। শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর শিখন পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এবং একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল ফলে শিক্ষাদান প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও আনন্দময় করার ক্ষেত্রে শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় বৈচিত্র্য আনায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার কয়েকটি
দিক নিচে উল্লেখ করা হলো-
- শিক্ষার্থীর
আগ্রহ ও কৌতূহল বৃদ্ধি পায়;
- শ্রেণিতে
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের দুষ্টুমি প্রবণতা কমে;
- শিক্ষার্থীর
মনোযোগ বৃদ্ধি পায়;
- শ্রেণিতে
শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়;
- শিক্ষক
শিক্ষার্থীদের আত্মিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়;
- বিদ্যালয়ে
জ্ঞান চর্চার অনকূল পরিবেশ তৈরি হয়;
- যথার্থ
উপকরণের সঠিক ব্যবহার সুনিশ্চিত হয়;
- শিক্ষার্থীর
মূল্যায়ন যথার্থভাবে সম্পন্ন করা যায়;
- বিদ্যালয়ে
ধারাবাহিক মূল্যায়ন কার্যক্রম ফলপ্রসূ করা যায়;
- ঝরে
পড়া বা অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পায়;
- সার্বিক
মূল্যায়নে বিদ্যালয়ের ফলাফল ভাল হয়;
- শিক্ষকের দায়িত্ব সচেতনতা এবং কর্ম-তৎপরতা সম্প্রসারিত হয়।
কার্যকর শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার কৌশলসমূহ
শ্রেণিকক্ষ হচ্ছে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম স্থান। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী একটি অন্যরকম আবহ সৃষ্টি করে। নিজের সব কিছুকে উজাড় করে দিয়ে বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর হৃদয়গ্রাহী করে তোলেন শিক্ষক, উদ্দেশ্য একটিই শিখনফল অর্জন।
শিখনফল অর্জনে কার্যকর শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার কিছু কৌশল নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- শ্রেণিকক্ষ পরিপাটি সুসজ্জিত রাখা
- শিক্ষার্থীর শিখন চাহিদা ও চ্যালেঞ্জসমূহ বিবেচনায় রেখে আসনবিন্যাস ব্যবস্থাপনা
- যথাযথ পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ব্যবহার করা
- যথাযথ ও অংশগ্রহণমূলক শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করা
- আকর্ষণীয় ও শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখন শেখানো কৌশল প্রয়োগ করা
- বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাল্টিসেনসরি আকর্ষণীয় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করা
- দলগত কাজ প্রদানে শিক্ষার্থীর সামর্থ্য বিবেচনায় রাখা
- শিক্ষার্থীর মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্র বিবেচনায় রাখা
- শিখনের জন্য মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা
- শিক্ষার্থীর শিখন চাহিদা ও চ্যালেঞ্জসমূহ বিবেচনায় বিকল্প মূল্যায়নের প্রয়োগ করা
- শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে তাদের বয়স চাহিদা ও সামর্থ্য বিবেচনা করা
- প্রমিত উচ্চারণে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা
- শিক্ষকের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, শালীন ও রুচিশীল পোশাক পরিধান করা
- শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত কাজের প্রশংসা করা
- শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর প্রতি প্রয়োজন অনুযাযী যথাযথ গুরুত্ব প্রদাম করা
- শিক্ষার্থীদের নাম ধরে ডাকা।
মতামত দিন