শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি : ধরন ও গুরুত্ব
শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি : ধরন ও
গুরুত্ব
শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি বলতে কী বুঝায়?
শ্রেণিকক্ষের অভ্যন্তরে, ল্যাবরেটরিতে, ওয়ার্কশপে অথবা লাইব্রেরিতে যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে শিক্ষাক্রমিক বা একাডেমিক
কার্যক্রম বলা হয়। এই কার্যাবলি শিখন শেখানোর অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এগুলো বাস্তবায়নে
শিক্ষকের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে।
শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলির ধরন:
ক) শ্রেণি কার্যক্রম: আলোচনা, প্রশ্নোত্তর, গাইডেড কার্যক্রম, মূল্যায়ন ইত্যাদি
খ) পাঠাগারের কার্যক্রম: বই পড়া, জার্নাল পড়া, রেফারেন্স গ্রন্থ পড়া ইত্যাদি
গ) ল্যাবরেটরির কার্যক্রম: পরীক্ষণ
ঘ) সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স
ঙ) প্যানেল আলোচনা
সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি বলতে কী বুঝায়?
শিক্ষার্থীর
সার্বিক বিকাশে তার কল্পনা, সৃজনশীলতা, কৌত‚হল এবং সুকুমার বৃত্তির বিকাশ সাধনে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বা ভিতরে
যেসব কার্যাবলি সম্পাদিত হয় সেগুলোকে সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি বলা হয়।
সহ-শিক্ষাক্রমিক
কার্যাবলির ধরনঃ
ক) শারীরিক:
প্যারেড-পিটি, ব্যায়াম, খেলাধূলা, সাঁতার, এথলেটিকস, মেডিটেশন ইত্যাদি।
খ) সাংস্কৃতিক:
সংগীত,
নৃত্য, অংকন, অভিনয়, শিক্ষামূলক নাটিকা, উৎসব পালন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক
দিবস পালন ইত্যাদি।
গ) সাহিত্য
বিষয়ক: আবৃত্তি, বিতর্ক, গল্প রচনা, গল্প বলা, কবিতা লেখা, প্রবন্ধ রচনা, কুইজ প্রতিযোগিতা, গল্প লেখা প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকা, ভাষা ক্লাব ইত্যাদি।
ঘ) সামাজিক:
বৃক্ষরোপণ, ক্ষুদে ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রম উদ্যাপন, স্টুডেন্টস কাউন্সিল, কাব স্কাউটস কার্যক্রম, রেডক্রস ইত্যাদি।
শিক্ষাক্রমিক ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলির গুরুত্ব
শিক্ষার প্রধান
উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূলবোধের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর কাক্সিক্ষত যোগ্যতা
অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা। শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মৌলিক
দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করে থাকে। ভাষার দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর যোগাযোগ
দক্ষতাসহ অন্যান্য দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। গাণিতিক দক্ষতার মাধ্যমে শিক্ষার্থী হিসাব
নিকাশসহ গাণিতিক যুক্তি প্রয়োগ করে সমস্যা সমাধান করতে পারে। এভাবে শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলির
মাধ্যমে অর্জিত একাডেমিক দক্ষতাগুলো শিক্ষার্থীকে তার পরবর্তী জীবনে উচ্চতর শিক্ষা
গ্রহণ ও জীবিকা অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে।
সহ-শিক্ষাক্রমিক
কার্যাবলি শিশুর সার্বিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেমন- খেলাধুলা ও শরীর চর্চার
বিষয়টি শিশুর দৈহিক বিকাশে বা শারীরিক বর্ধনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের
অনুশীলন শিশুমনের সুকুমার বৃত্তির উন্মেষ ঘটায় এবং শিশুর নান্দনিকতার বিকাশ সাধন করে।
সাহিত্য বিষয়ক কর্মকান্ডের অনুশীলন শিশুর লেখালেখির হাত মজবুত করে সাহিত্য প্রতিভার
বিকাশ সাধন করে। সামগ্রিকভাবে বলা যায় সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের
সামগ্রিক বিকাশ সাধন করে, আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করে, একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করে, সামাজিকীকরণে সহায়তা করে, মানবীয় সম্পর্ক স্থাপনে
সহায়তা করে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন
সাধন করে।
শিক্ষাক্রমিক ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি বাস্তবায়নে করণীয়-
- v নিজে শিক্ষাক্রমিক ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করা।
- v শিক্ষাক্রমিক ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলির গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং বিদ্যালয়ে এগুলো বাস্তবায়নে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা।
- v বিভিন্ন ধরণের সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি আয়োজন কৌশল সম্বন্ধে জানা।
- v নিজে (প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে) এবং বিদ্যালয়ের সকলকে সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনায় সম্পৃক্ত করা।
- v সহকারী শিক্ষকদের সক্ষমতা ও আগ্রহ অনুযায়ী দায়িত্ব বন্টন করা (প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে) ।
- v প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া।
- v শিক্ষাক্রমিক ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালনে সম্পৃক্ত করা।
- v নিয়মিতভাবে সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলির আয়োজন করা এবং সেজন্য লিখিত পরিকল্পনা করা।
- v সকল কার্যাবলির রেকর্ড রাখা এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নকালে শিক্ষাক্রমিক ও সহ-শিক্ষাক্রমিক উভয় কার্যাবলিকে মূল্যায়নের আওতায় আনা।
মতামত দিন