সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতা কী? ধারণা ও গুরুত্ব

সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতা কী? ধারণা ও গুরুত্ব

Critical Thinking Skill : Concept and Importance                          

শিক্ষার্থীর সূক্ষ্ম-চিন্তন এর ধারণা

সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতা (Critical Thinking Skill) কোনো বিষয় অনুপুঙ্খভাবে অনুধাবন বা সমস্যা সমাধান করার জন্য তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও ব্যবহার করার বিশেষ ধরনের পদ্ধতিগত চিন্তন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারাকে সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা নামে অভিহিত করা হয়। সূক্ষ্ম চিন্তন করার সময় মানুষ চিন্তনের কতগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধ ধাপ অনুসরণ করে কোনো একটি সমাধান বা সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। এমন দক্ষতায় পারদর্শী শিক্ষার্থীরা যেকোনো জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করার সময় অনুসন্ধানী দৃষ্টিকোণ থেকে একাধিক চিন্তন দক্ষতাকে সমন্বয় করে কাজ করে; যেমন: বিষয়টির ধরন অনুযায়ী চিন্তার কৌশল নিয়ে চিন্তা করা, অনুসন্ধানী প্রশ্ন করার কৌশল অনুসরণ, বিশ্লেষণ-সংযোজন ও যৌক্তিকতা নির্ধারণ ইত্যাদি। এর ফলে জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়। পরিবর্তনশীল বিশ্বে এমন দক্ষতাই ব্যক্তি ও সমাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। শিশু উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এই যোগ্যতা তাদের সহজাতভাবেই বিকশিত হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় এই নির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে দেয়া হয়েছে। পাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন ও পাঠ পরিচালনায় কার্যকর পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীর সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে হবে।

সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা কী?

শিক্ষার্থীর যে কোনো বিমূর্ত ও তাত্তি¡ক বিষয় বা বাস্তব জীবনের সমস্যা অনুপুঙ্খভাবে অনুধাবন বা সমাধান করার জন্য তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও ব্যবহার করার বিশেষ ধরনের পদ্ধতিগত চিন্তন প্রক্রিয়াই সূক্ষ্ম চিন্তন।

এই পদ্ধতিগত চিন্তন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারাকে সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা বলা হয় (জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১)।

এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়

  • v  সমস্যার সম্ভাব্য কারণ উপলব্ধি করতে পারা;
  • v  কোনো বিষয়কে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে পারা;
  • v  সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের উপায় চিহ্নিত করতে পারা;
  • v  কোনো কিছুর ভালো ও মন্দ দুটি দিক বিবেচনা করতে পারা;
  • v  নৈর্ব্যক্তিকভাবে কোনো কিছু ব্যাখ্যা করতে পারা;
  • v  যুক্তির ব্যবহার করা;
  • v  সমস্যা বিশ্লেষণ করতে পারা;
  • v  শেষে মূল্যায়নের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা সমাধান করতে পারা।

সূক্ষ্ম-চিন্তন -এর উদাহরণ-

  • v  সামর্থ ও দুর্বলতা সনাক্তকরণ,
  • v  সীমিত তথ্যের ভিত্তিতে পূর্বানুমান করা,
  • v  বিতর্ক মডারেট করা,
  • v  বিচারকার্য করা,
  • v  রচনা গ্রেডিং করা,
  • v  কিছু বিশ্বাস করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেয়া,
  • v  যে কোনো পরিস্থিতির সর্বোত্তম সমাধান করা। 

শিক্ষার্থীর সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতা গুরুত্ব

  • Ø  সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতা শিক্ষার্থীকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
  • Ø  কোনো বিষয়বস্তু বুঝতে সহায়তা করে।
  • Ø  সঠিক তথ্য পেতে সহায়তা করে।
  • Ø  সঠিক মূল্যায়নে সহায়তা করে।
  • Ø  সূক্ষ্ম-চিন্তন শিখনকে স্থায়ী করে।
  • Ø   শিক্ষার্থীকে নতুন সমস্যাসমূহের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ও প্রতিক্রিয়া জানাতে সহায়তা করে।
  • Ø  শিক্ষার্থী নতুন সমস্যাসমূহ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়।
  • Ø  বিশ্লেষণ করার দক্ষতা শিক্ষার্থীর নতুন বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রকাশ পায়।

 শিক্ষার্থীর সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতা যেভাবে উন্নয়ন করা যায়

শিক্ষার্থীর সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতাকে উন্নয়ন করতে তাদের সামর্থ্য ও বয়স বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতা উন্নয়নের কয়েকটি কৌশল:

v  বোধ্যগম্যতা বাড়াতে বার বার পড়তে দেয়া: শিক্ষার্থীর কোনো বিষয়ে চিন্তন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বার বার পড়তে দিতে হবে। তাদেরকে ছোট ছোট প্রশ্ন করে চিন্তনে উৎসাহিত করতে হবে যাতে বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে পারে।

v  সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানগুলির মধ্যে হতে উত্তম সমাধান বাছাই করা: কোনো সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানগুলি হতে কোনটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বা উত্তম তা বাছাই করতে দেয়া। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীকে সহায়তা করা যাতে সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে চিন্তা করতে হয়।

v  গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে সমাধানের দিকে যাওয়া: কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে শিক্ষক নিজে না করে শিক্ষার্থীদের কাছে উপায় জিজ্ঞেস করে মতামত নেয়া। তাদেরকে বার বার প্রশ্ন করে সূক্ষ্ম চিন্তার করতে সহায়তা করার মাধ্যমে সমস্যার গভীরে প্রবেশ করানো যাতে তারা সঠিক সমাধানের দিকে যেতে পারে।

v  মূল্যায়নের মাধ্যমে চিন্তন দক্ষতা বাড়াতে করণীয়: শিক্ষার্থী যা শিখেছে তা স্মরণ করতে পারা, যা শিখেছে তা অনুধাবন করতে পারা, লব্ধ ধারণা নিজের ভাষায় প্রকাশ করতে পারা, তথ্যকে শ্রেণিবিন্যাস করতে পারা, সারসংক্ষেপ তৈরি বা ব্যাখ্যা করতে পারা। অর্জিত জ্ঞান নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে পারা, ধারণা বা যুক্তিকে বিশ্লেষণ করতে পারা, কোনো বিষয়ে যুক্তি সহকারে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে পারা, কোনো শিক্ষার্থীর বাড়তি সহায়তা প্রয়োজন কিনা, এমন প্রশ্ন করা যাতে শিক্ষার্থী পাঠ্যপুস্তকে সরাসরি উত্তর না পায় চিন্তা করে উত্তর বের করতে হয়।

 ৫ম শ্রেণির শিক্ষাক্রম থেকে সূক্ষ্ম-চিন্তন দক্ষতা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি শিখনফলের নমুনা

১. বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (১৫.৩.৪): বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান উল্লেখ করতে পারবে।

২. বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (১২.১.১): জনসংখ্যা জনসম্পদে রূপান্তরের উপায় বলতে পারবে।

৩. প্রাথমিক বিজ্ঞান (১০.২.১): প্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন যাপনের মান উন্নয়নের বর্ণনা করতে পারবে।

৪. আমার বাংলা বই (৩.১.১): ছবি দেখে উক্ত বিষয় নিয়ে রচনা লিখতে পারবে।

৫. গণিত (২০.৭.২): সরলীকরণের মাধ্যমে ভগ্নাংশের যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ও বন্ধনী ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনের সহজ সমাধান করতে পারবে।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।