চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য
চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য
Aims and Characteristics of in service training
চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ কাকে বলে?
চাকরিতে
কর্মরত থাকাকালিন সময়ে যে প্রশিক্ষণ তাই চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ। চাকুরিতে যোগদানের
পর পেশাগত বিভিন্ন প্রয়োজনে শিক্ষকগণকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। যেমন-
বিষয়ভিত্তিক, পেডাগজি (Pedagogy) বিষয়ক, আইসিটি বিষয়ক, প্রশাসনিক, যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এসব
প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে মূলত শিক্ষকগণকে যুগোপযোগী রাখার জন্য, নতুন শিক্ষাক্রমের সাথে শিক্ষককে পরিচিত করার জন্য, শিক্ষার পরিবর্তিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষককে অবহিত করার
জন্য। চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষক চাকরিপূর্ব প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান
ও দক্ষতা নতুনভাবে পরিমার্জন করে। শিক্ষাবিজ্ঞানের নতুন বিষয়বস্তু অর্জনের জন্য
প্রয়োজন চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ।
চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের বৈশিষ্ট্য
চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ শিক্ষকের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় শিক্ষক শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকেন এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে মিথষ্ক্রিয়া সম্পন্ন করেন।। ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুধাবন করতে এবং নিজের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে সক্ষম হন। ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ ও নিজের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শনাক্ত করে তাতে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকের নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হবার পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন সম্ভব হয়।
চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের আরো কিছু ধরন আছে। যথাঃ
o
চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ
o
স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ
o
নির্দিষ্ট বিষয় বা দক্ষতাভিত্তিক
প্রশিক্ষণ
চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য
চাকরিকালীন
সময়ে শিক্ষকতা পেশার দায়িত্বসমূহ সূচারুরূপে পালনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষকের
উত্তরোত্তর দক্ষতা বৃদ্ধি। পেশা সংশ্লিষ্ট সকল নতুন পরিবর্তনের সাথে শিক্ষককে
পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নতুন চাহিদা পূরণের পদ্ধতি সম্পর্কেও তাঁকে
জানতে হয় এবং এরজন্য প্রয়োজন চাকুরিতে কর্মরত থাকাকালীন প্রশিক্ষণ।
- v শিক্ষকগণের
ধারাবাহিক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করা;
- v একটি
নির্দিষ্ট দক্ষতা বৃদ্ধি বা অর্জন করা;
- v শিক্ষকগণের
পেশাগত জ্ঞান বা দক্ষতার ঘাটতি পূরণে সহায়তা করা;
- v শিক্ষকগণের
আচরণে পরিবর্তন সাধন করা;
- v শিক্ষকগণের
মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া বৃদ্ধি করা;
- v পেশায়
দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করা;
- v শিক্ষকগণের
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি;
- v সকল
বিদ্যালয়ে একই মানের শিক্ষক তৈরি করা;
- v উপকরণ
তৈরির দক্ষতা অর্জন করা;
- v শিক্ষকগণের
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা;
- v শিক্ষকগণের
দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পারা;
- v শিক্ষকগণকে সাম্প্রতিক তথ্যসমৃদ্ধ করা।
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রচলিত কিছু চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ হলো:
- o
লিডারশীপ প্রশিক্ষণ;
- o
একাডেমিক সুপারভিশন প্রশিক্ষণ;
- o
বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ;
- o
পেডাগজি প্রশিক্ষণ;
- o
ডিজিটাল কন্টেন্ট প্রণয়ন প্রশিক্ষণ;
- o
যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন
প্রশিক্ষণ;
- o
একীভূত
শিক্ষা বাস্তবায়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ;
o
অটিজম শীর্ষক প্রশিক্ষণ;
o
শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণ;
o
জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা বিষয়ক
প্রশিক্ষণ;
o
আইসিটি বিষয়ক মৌলিক প্রশিক্ষণ;
o
এডভান্সড আইসিটি প্রশিক্ষণ, ইত্যাদি।
শিক্ষক
আত্মবিশ্লেষণের জন্য নিজেকে নিম্নবর্ণিত প্রশ্ন
করতে পারেন-
- ü আমি
কি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পূর্বে যথাযথ পদ্ধতি গ্রহণ করি?
- ü আমি
কি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর চাহিদা, মেধা ও আগ্রহের প্রতি
সচেতন থাকি?
- ü সকল
শিক্ষার্থীর প্রতি আমার আচরণ কি সমান থাকে?
- ü পিছিয়ে
পড়া শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার মনোভাব কি সহানুভ‚তিশীল
ও সহযোগিতাপূর্ণ?
- ü শিক্ষার্থীর
কাজের প্রশংসার প্রতি আমি কি সচেতন থাকি?
- ü পেশাগত
উন্নয়নের জন্য আমার প্রচেষ্টা রয়েছে কি?
- ü সহকর্মী
ও শিক্ষার্থীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আমি কি সচেষ্ট?
- ü সহপাঠক্রমিক
কাজ পরিচালনায় আমার কি কোন ভ‚মিকা আছে?
- ü আমার
ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে আমি কি সচেষ্ট?
প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকগণে পেশাগত উন্নয়ন কৌশল এবং বিদ্যমান সুযোগ
পেশাগত
উন্নয়ন বৃদ্ধির কৌশল
- v ধারাবাহিক
পেশাগত প্রশিক্ষণ;
- v পাঠ্যপুস্তক, সহায়ক গ্রন্থপাঠ ও অনুশীলন;
- v পেশাগত
সংগঠনের সদস্য হওয়া;
- v নিয়মিত
জার্নাল,
নিউজ লেটার ও পত্রিকা গঠন;
- v সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সিম্পোজিয়াম, বিতর্ক ও প্রদর্শনী আয়োজন এবং অংশগ্রহণ;
- v শিক্ষামূলক
ভ্রমণ,
ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি নিয়মিত করা;
- v বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিভিন্ন শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা।
মতামত দিন