এম.এড

প্রান্তিক যোগ্যতা কী?

Terminal Competency in Primary Education

প্রান্তিক যোগ্যতা কী?

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তর শেষে শিশুর পক্ষে যে সকল যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব তাকে প্রান্তিক যোগ্যতা বলা যায়। যেসব শিশু প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত নির্ধারিত শিক্ষাক্রম সার্থকভাবে সমাপ্ত করতে সক্ষম হবে তারাই সে সকল যোগ্যতা অর্জন করবে। যেকোন যোগ্যতা অর্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয় প্রথম শ্রেণী থেকে এবং তা চলমান থাকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। তবে কোন কোন প্রান্তিক যোগ্যতার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এর শুরু ও শেষ হওয়ার পর্যায় ভিন্নতরও হতে পারে।

পাঁচ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিশু যে যোগ্যতাগুলো অর্জন করবে বলে আশা করা যায় সেগুলোকে বলা যায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতা। এক কথায় বলা যায়, প্রাথমিক শিক্ষাক্রমটি হলো যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অর্জিত যোগ্যতার সমষ্টিই হলো প্রান্তিক যোগ্যতা।

এনসিটিবির বিশেষজ্ঞসহ দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, বিষয় বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক প্রশিক্ষক ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের সহায়তায় প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের জন্য সর্বমোট ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়।

নিম্নে ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা উল্লেখ করা হলো:

১. সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন, সকল সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসায় উদ্বীপ্ত হওয়া।

২. নিজ নিজ ধর্ম প্রবর্তকের আদর্শ এবং ধর্মীয় অনুশাসন অনুশীলনের মাধ্যমে নৈতিক ও চারিত্র্যিক গুণাবলি অর্জন করা।

৩. সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বীপ্ত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

৪. কল্পনা, কৌতূহল, সৃজনশীলতা ও বুদ্ধির বিকাশে আগ্রহী হওয়া।

৫. সংগীত, চারু ও কারুকলা ইত্যাদির মাধ্যমে সৃজনশীলতা, সৌন্দর্যচেতনা, সুকুমারবৃত্তি ও নান্দনিকবোধের প্রকাশ এবং সৃজনশীলতার আনন্দ ও সৌন্দর্য উপভোগে সামর্থ্য অর্জন করা।

৬. প্রকৃতির নিয়মগুলো জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা।

৭. বিজ্ঞানের নীতি ও পদ্ধতি এবং যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের অভ্যাস গঠন এবং বিজ্ঞানমনস্কতা অর্জন করা।

৮. প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা ও প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।

৯.বাংলা ভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা।

১০. বিদেশী ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও ব্যবহার করা।

১১. গাণিতিক ধারণা ও দক্ষতা অর্জন করা।

১২. যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারা।

১৩. মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বসংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

১৪. স্বাধীন ও মুক্তচিন্তায় উৎসাহিত হওয়া এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুশীলন করা।

১৫. নৈতিক ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপণ এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা।

১৬. ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সংরক্ষেণে যত্নশীল হওয়া।

১৭. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ নারী-পুরুষ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের মানসিকতা অর্জন করা।

১৮. অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে ত্যাগের মনোভাব অর্জন ও পরমতসহিষ্ণুতা প্রদর্শন এবং মানবিক গুণাবলি অর্জন করা।

১৯. সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহন এবং নিজের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

২০. প্রতিকূলতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে জানা এবং তা মোকাবেলায় দক্ষ ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া।

২১. নিজের কাজ নিজে করা এবং শ্রমের মর্যাদা দেওয়া।

২২. প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানা ও ভালোবাসা এবং পরিবেশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ হওয়া।

২৩. আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবেলায় ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহন।

২৪.মানুষের মৌলিক চাহিদা ও পরিবেশের ওপর জনসংখ্যার প্রভাব এবং জনসম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা।

২৫. শরীরচর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন এবং নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করা।

২৬. নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের অভ্যাস গঠন করা।

২৭. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হওয়া এবং ত্যাগের মনোভাব গঠন ও দেশ গড়ার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহন করা।

২৮. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা এবং এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

২৯. বাংলাদেশকে জানা ও ভালোবাসা।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।