শিক্ষক প্রশিক্ষণ কী? শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রকারভেদ ও উদ্দেশ্য
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কী? শিক্ষক প্রশিক্ষণের
প্রকারভেদ ও উদ্দেশ্য
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কী?
প্রশিক্ষণ হচ্ছে কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয়
জ্ঞান ও দক্ষতা সরবরাহের জন্য স্বল্পকালীন আয়োজন। শিক্ষকতা পেশার জন্য
প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা বা দক্ষতা সরবরাহের জন্য স্বল্পকালীন আয়োজনই
হচ্ছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ।
শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষক যেন আবশ্যক শিক্ষণ
দক্ষতাগুলো অর্জন করতে পারেন তাতে সমর্থ করে তোলা। স্বল্প সময়ে কোনো বিষয়ে
দক্ষতা সরবরাহের প্রয়োজন হলে তখন প্রশিক্ষণ দরকার হয়। আবার কখনো কখনো নতুন একটা
বিষয়ে শিক্ষকদের তাৎক্ষণিক দক্ষতা সরবরাহ করার প্রয়োজন হলে প্রশিক্ষণই সর্বোত্তম
ব্যবস্থা। যেমন- সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন বিষয়ে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য
প্রশিক্ষণ আয়োজন করা। শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে অর্জন করা
যায়।
শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রকারভেদ
বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের
প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু রয়েছে। যেমন-
ü চাকুরিপূর্ব
প্রশিক্ষণ,
ü চাকুরিকালীন
প্রশিক্ষণ,
ü বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ,
ü সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণ,
ü বিষয়ভিত্তিক
প্রশিক্ষণ,
ü পেশাভিত্তিক
প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।
শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যাবলী
v শিক্ষক শিক্ষা ও
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের শিখন-শিখানো কলাকৌশল সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা
অর্জনে সহায়তা করা।
v শিক্ষকদের পেশাগত
জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং সময়ের সঙ্গে যুগোপযোগীকরণে সহায়তা দান।
v শিক্ষকদের মধ্যে
ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুনাবলী জাগ্রত
করা।
v শিক্ষকদেরকে
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দেশের জরুরী সমস্যাগুলোর সাথে পরিচিত করা এবং তাদের সাথে
সম্পৃক্ত করতে সাহায্য করা।
v শিক্ষকদের আচরনিক
দক্ষতা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং দুর্বলতার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিশোধনমূলক
ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করা।
v শিক্ষণের জন্য আধুনিক
উপকরণ ব্যবহার স¤পর্কে দক্ষতা অর্জন এবং তা ব্যবহারে উৎসাহিত করা।
v নতুন নতুন শিক্ষা
পদ্ধতি স¤পর্কে দক্ষতা ও কৌশল বৃদ্ধি করা।
v গবেষণাপত্র তৈরী ও
প্রতিবেদন পেশের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব অর্জনে সহায়তা করা।
v সমাজের সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্ত্বা, আর্থ-সামাজিক শ্রেণীর শিক্ষাথীকে
সমান সুযোগ দিয়ে পাঠদানে উৎসাহিত করা।
v সমাজের সুবিধা বঞ্চিত
ক্ষুদ্রজাতিসত্ত্বা এবং প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের বিশেষ শিখন চাহিদা অনুসারে শিখন
সেবা প্রদানের কলাকৌশল অর্জনে সহায়তা করা।
v সমস্যাদি বিশ্লেষণে
দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা।
v তথ্যপ্রযুক্তি
শিক্ষায় সকল স্তরের শিক্ষককে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তির
ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করে উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এর সর্বোচ্চ
অনুশীলনে উৎসাহিত করা।
v দায়িত্ব ও কর্তব্য
সচেতন থেকে কার্য সম্পাদনের জন্য শিক্ষকদেরকে উৎসাহিত করা।
v গবেষণা কাজে
অংশগ্রহণের জন্য আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি এবং গবেষণা কাজে উৎসাহিত করা।
শিক্ষক-শিক্ষা কী?
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব সমাজেই শিক্ষকতা একটি
সুপরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ পেশা। সমাজে বিভিন্ন ধরণের পেশাজীবি রয়েছে এবং প্রতিটি
পেশার জন্য কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারিত থাকে। অনুরূপভাবে শিক্ষকদের পেশাগত
দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পেশাগত জ্ঞান ও উপলব্ধি অর্জনের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন
হয়। মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও পেশাগত জ্ঞান অর্জনের জন্য তাদের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষার
প্রায়োগিক জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়াই হলো শিক্ষক শিক্ষা ।
এছাড়াও বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানসম্পদ গঠনের
জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদের
জ্ঞান, দক্ষতা ও
দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ তথা ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়
তাকেই ‘শিক্ষক শিক্ষা’ বলা হয়।
উন্নত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন উন্নত শিক্ষক ।
উন্নত শিক্ষক তৈরির জন্য দরকার হয় উন্নতমানের চাকুরি-পূর্ব শিক্ষা কার্যক্রম ।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষক শিক্ষাকে অভিন্ন মনে করলেও আসলে
এই দুটি বিষয় ধারণা বা প্রকৃতিগতভাবে পুরোপুরি আলাদা । বিশেষ ধরণের শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সুনির্দিষ্ট শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষা পরিচালিত হয়।
শিক্ষার সমাপ্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পেশাগত ডিগ্রি প্রদান করে ।
মতামত দিন