অধ্যায়-০৭: গণিত শিখন মূল্যায়ন
পাঠ-৭.৪: গণিত শিখন ঘাটতি সনাক্তকরণ ও নিরাময়মূলক ব্যবস্থা
ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:
১. কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করা যায় তা ব্যাখ্যা করুন।
২. শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির কারণসমূহ উল্লেখ করুন।
৩. অপারগ শিক্ষার্থী শনাক্তকরণ কৌশল ব্যাখ্যা করুন।
৪. নিরাময়মূলক ব্যবস্থা বলতে কী বুঝায়?
৫. নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যামে কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করা যায় তা ব্যাখ্যা করুন।
১. কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করা যায় তা ব্যাখ্যা করুন।
শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিতকরণ
শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটটি চিহ্নিত করা মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা দৈনন্দিন পাঠদান কার্যক্রমে মূল্যায়ন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাঠ চলাকালিন ও পাঠ শেষে আলোচিত বিষয়বস্তুর উপর শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি পরিমাপ করা পাঠেরই একটি অঙ্গ যা কেবলমাত্র মূল্যায়নের মাধ্যমেই সম্ভব। আর প্রতিটি পাঠের শিক্ষার্থীর এই অগ্রগতি পরিমাপকে বলা হয় ধারাবাহিক মূল্যায়ন।
মূলত শিক্ষার্থীদের শিখন চিহ্নিত করে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুরোপুরি শিখন নিশ্চিত করাই শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করার মূল উদ্দেশ্য। নিম্নে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করার কৌশল ব্যাখ্যা করা হলো:
- পাঠ চলাকালিন শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করতে হয়, যাতে পাঠ শেষের আগেই ঘাটতি পূরণ করা যায়।
- মূল্যায়ন করার আগে শিক্ষার্থীদের জানানো হয় না ফলে শিক্ষার্থীদের মনে পরীক্ষা ভীতি তৈরি হয় না।
- কোনো একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতার শিখন-শেখানো কার্যক্রম চলার সময় এবং শেষে ঐ যোগ্যতার উপর মূল্যায়ন করে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করা হয়।
- কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার কারণ অথবা পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করে পুনরায় বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাময়ের ব্যবস্থা করা হয় যা নিরাময়মূলক ব্যবস্থা নামে পরিচিত। শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকল শিক্ষার্থীর দুর্বলতা বা শিখন ঘাটতি সবসময় একরকম হয় না এবং একই কৌশল অবলম্বন করে তা দুর করাও সম্ভব হয় না। ফলে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে ঘাটতি দূর করার ব্যবস্থা করা হয়।
২. শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির কারণসমূহ উল্লেখ করুন।
শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির কারণ:
- শ্রেণি কার্যক্রমে নিয়মিত উপস্থিত না থাকলে,
- পাঠের প্রতি অমনোযোগি থাকলে,
- আগ্রহ ও আস্থার অভাব থাকলে,
- পূর্ব প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলে,
- শিক্ষার্থীদের মেধায় ঘাটতি থাকলে,
- পাঠদান পদ্ধতি আকর্ষনীয় না হলে,
- সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু পর্যাপ্ত অনুশীলন না করার ফলে,
- সকল শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের মনোযোগের ঘাটতি থাকলে,
- শিক্ষার্থী সম্পর্কে শিক্ষকের সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে।
৩. অপারগ শিক্ষার্থী শনাক্তকরণ কৌশল ব্যাখ্যা করুন।
অপারগ শিক্ষার্থী শনাক্তকরণ:
নিয়মিত শিখন-শেখানো কার্যক্রম চলাকালিন এবং শেষে কোনো একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা শিক্ষার্থীরা অর্জনে করতে পারছে কি না তা যাচাই করে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে হয়। অপারগ শিক্ষার্থী নিম্নোক্ত কৌশল অবলম্বন করে শনাক্ত করা যেতে পারে। তা হলো:
- সর্বপ্রথম শিক্ষার্থীদের ঘাটতির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে হবে। যেমন, কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ঘাটতি রয়েছে। যেমন- সংখ্যা চেনা, গণনা করা, নামতা না জানা ইত্যাদি।
- সুবিধামতো সময়ে শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে হবে। সাক্ষাৎকারের সময় শিক্ষার্থীকে তার নিজের অসুবিধা বা সমস্যার কথা বলতে উৎসাহিত করতে হবে।
- শিখন ঘাটতি থাকলেও সমালোচনা না করে তার ভাল দিকগুলোর প্রশংসা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে।
- সর্বদা বন্ধুত্বসূলভ পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যার কথা সহজে শিক্ষককে জানাতে পারে।
- শিক্ষার্থী যাই বলুক তাকে ইতিবাচকভাবে নিতে হবে যাতে গঠনমূলক আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৪. নিরাময়মূলক ব্যবস্থা বলতে কী বুঝায়?
নিরাময়মূলক ব্যবস্থা:
কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার কারণ অথবা পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করে পুনরায় বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাময়ের ব্যবস্থা করাকে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা বলা হয়। সকল শিক্ষার্থীর দুর্বলতা বা শিখন ঘাটতি সবসময় একরকম হয় না এবং একই কৌশল অবলম্বন করে তা দুর করাও সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীর শিখন ক্ষমতা বিবেচনা করে বিভিন্ন কৌশল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করে সহযোগিতা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় অনুশীলনের ব্যবস্থার করা নিরাময়মূলক ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য।
৫. নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যামে কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করা যায় তা ব্যাখ্যা করুন।
নিম্নে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যামে কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করা যায় তা ব্যাখ্যা করা হলো:
- শিক্ষার্থীর ভিন্নতার কারণে তাদের দুর্বলতা বা শিখন ঘাটতিও সবসময় একরকম হয় না এবং একই কৌশল অবলম্বন করে তা দুর করাও সম্ভব হয় না। সুতরাং শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি অনুসারে শিখন কৌশলও পরিবর্তন করতে হবে যাতে ঘাটতি পূরণ করা যায়।
- শিক্ষার্থীর শিখন ক্ষমতায়ও পার্থক্য রয়েছে। তাদের গ্রহণ ক্ষমতা বিবেচনা করে বিভিন্ন কৌশল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করে সহযোগিতা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় অনুশীলনের ব্যবস্থার করা নিরাময়মূলক ব্যবস্থা করা যায়।
- শিখন ঘাটতির কারণ অনুযায়ী সহযোগিতা প্রদান করা এবং অনুশীলন করানো।
- শিক্ষকের আন্তরিকতা ও ব্যাক্তিগত সহযোগিতা প্রদান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই শিক্ষককে প্রতিটি যোগ্যতা অর্জনে প্রতিটি শিশুর প্রতি সহযোগি মনোভাবাপন্ন হতে হবে।
- পারগ শিক্ষার্থীর সাহায্যে অপারগ শিক্ষার্থীকে শিখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে শিক্ষককে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন পারগ শিক্ষার্থী অপারগ শিক্ষার্থীর উপর প্রভাব বিস্তার না করে।
- আন্তরিক পরিবেশে শিশুকে না জানিয়ে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের মনে কোনভাবেই ভীতি সঞ্চার না হয়।