صلاة| Conditions for Salah to be obligatory
– মোঃ মাহফুযূর রহমান
সালাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি ও কী কী?
সালাত / নামাজ ফরজ অর্থাৎ অত্যাবশকীয় হওয়ার শর্ত হল তিনটি। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত ৩টি শর্ত একই সঙ্গে পাওয়া যাবে না, ততক্ষণ কারও উপর নামাজ ফরজ হবে না। শর্ত তিনটি হল:
১) মুসলিম হওয়া,
২) প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, এবং
৩) সুস্থ মস্তিষ্কের হওয়া।
১) মুসলিম হওয়া:
শুধু সালাত / নামাজই নয় বরং অন্যান্য যে কোন ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রেই মুসলমান হওয়া পূর্বশর্ত। কেননা ইসলাম ছাড়া কোন ‘ইবাদাতই আল্লাহ্র নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। একজন লোক ইসলাম গ্রহণ করার পরই কেবল তার উপর ইসলামের অন্যান্য আদেশ-নিষেধগুলো বর্তাবে। আর মুসলমান হলো সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে একমাত্র সত্যিকার রাব্ ও মা‘বূদ বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস ও স্বীকার করে, মুহাম্মাদকে আল্লাহ্র রাসূল বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস ও স্বীকার করে এবং ইসলামকে একমাত্র দ্বীন বলে সর্বতোভাবে (মনে-প্রাণে, কথায় ও কাজে) গ্রহণ করে।
অমুসলিমদের যাবতীয় ‘ইবাদাত প্রত্যাখ্যাত। তারা যদি পৃথিবী ভর্তি স্বর্ণও ভালো কাজে ব্যয় করে তথাপি তা আল্লাহ্র নিকট গৃহীত হবে না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ্র এককত্বে এবং রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর রিসালাতে পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাসী হবে।
এ সম্পর্কে কুরআন আল কারীমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন-
وَقَدِمْنَاۤ اِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنٰهُ هَبَآءً مَّنْثُوْرًا
আমি উহাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করিব, অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করিব। (সূরা আল ফুরকান, সূরা নম্বরঃ ২৫, আয়াত নম্বরঃ ২৩)
২) প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া:
কারো উপর সালাত / নামাজ, সিয়ামসহ ইসলামের যে কোন ‘ইবাদাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য শারী‘য়াত নির্ধারিত মানদন্ডে তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পূর্বশর্ত। কেননা ভালো-মন্দ বুঝার মত বয়সে উপনীত হওয়া, এটা হলো শারী‘য়াতের বিধানাবলী উপলব্ধি ও গ্রহণ করার যথাযথ সময়।
এর প্রমাণ হলো উপরোল্লেখিত হাদীসে। এতে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন যে, শিশু বালিগ না হওয়া পর্যন্ত তার কোন হিসাব লিখা হয় না। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী)।
৩) সুস্থ মস্তিষ্কের হওয়া:
জ্ঞানবান তথা ভালো-মন্দ বুঝতে সক্ষম হওয়া। কান্ড-জ্ঞানহীন ব্যক্তির উপর শারী‘য়াতের কোন বিধানই প্রযোজ্য নয় যতক্ষণ না তার জ্ঞান-বুদ্ধি ফিরে আসে। তাই শারী‘য়াতের বিধান থেকে তিন ব্যক্তি দায়মুক্ত- (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি (২) পাগল (৩) ছোট বাচ্চা। এর প্রমাণ হল – রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেনঃ
رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ، وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ.৩
অর্থ – তিন ধরনের লোকের কোন হিসাব লিখা হয় না। ঘুমন্ত ব্যক্তি যে পর্যন্ত না ঘুম থেকে জাগ্রত হয়, ছোট বাচ্চা যে পর্যন্ত না প্রাপ্তবয়স্ক (বালিগ) হয়, পাগল যে পর্যন্ত না জ্ঞান ফিরে পায়। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী)।
সন্তান যখন সাত বছরের হবে, তখন মা-বাবার উচিত তাদের নামাজ পড়ার হুকুম দেওয়া। ১০ বছরে উপনীত হলে নামাজ ওয়াজিব হওয়ার আগে নামাজে অভ্যস্ত বানানোর জন্য (প্রয়োজনে) তাদের বেত্রাঘাত করা বৈধ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং – ৪১৮)।
সালাত / নামাজ বৈধ হওয়ার শর্ত হল:
সালাত / নামাজ বৈধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত আছে যা সালাত / নামাজ শুদ্ধ বা সহিহ হওয়ার জন্য আবশ্যক। এগুলোকে আহকাম ও আরকান বলা হয়ে থাকে। এগুলো সম্পূর্ণ ভাবে সংঘটিত হলেই নামাজ বৈধ হবে। যদি এই শর্তগুলোর মধ্যে শুধু একটি মাত্র শর্তও অনুপস্থিত থাকে তাহলে সালাত / নামাজ শুদ্ধ বা সহিহ হবে না।