পেশাগত শিক্ষা-২ Archives - Proshikkhon

Category "পেশাগত শিক্ষা-২"

28Apr2020

পেশাগত শিক্ষা (২য় খন্ড)

২য় অধ্যায়: শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল

ক্লাস-১৮: প্রশ্নকরণ কৌশল, বড় ও ছোট শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি পরিচালনার কৌশল

ক্লাসের আলোচিত বিষয়:

·  প্রশ্ন কাকে বলে?

·  প্রশ্ন করার ৫টি উদ্দেশ্য লিখুন।

· শিখন-শেখানো কার্যক্রমে কখন কী প্রশ্ন করা যেতে পারে তা উদাহরণসহ বর্ণনা দিন।

·  শ্রেণিকক্ষে প্রশ্নকরণের শ্রেণিবিভাগ লিখুন।

·  শ্রেণিকক্ষে প্রশ্ন করার ধারাবাহিকতার একটি চার্ট তৈরি করুন।

· বড় শ্রেণিকক্ষ কাকে বলে? বড় শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি পরিচালনার কৌশল ব্যাখ্যা করুন।

·  ছোট শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি পরিচালনার কৌশল ব্যাখ্যা করুন।

·  একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুসরণীয় চার্ট কেমন হতে পারে তা লিখুন।

প্রশ্ন কাকে বলে?

যখন কেউ কোন কিছু বা কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় এবং সেই বিষয় সম্পর্কে অন্যের কাছে মৌখিক বা লিখিতভাবে জিজ্ঞেস করে তখন তাকে ‘প্রশ্ন’ বলা হয়। এক কথায়, প্রশ্ন বলতে কোন জিজ্ঞাসু বাক্যকেই বুঝায়।

শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগের একটা বড় উপায় হলো প্রশ্ন করা। প্রশ্ন করার মাধ্যমে শিখন-শেখানো কাজকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জটিল চিন্তন দক্ষতা ও অনুসন্ধানী মানসিকতা বৃদ্ধি করা যায়। শিক্ষার্থী কী জানে বা জানেনা, তা জানার জন্য কিংবা মনোযোগী করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করা যায়।

প্রশ্ন করার ৫টি উদ্দেশ্য লিখুন।

শ্রেণিকক্ষে আমরা বিভিন্ন উদ্দেশ্য প্রশ্ন করি। যেসব উদ্দেশ্যে শ্রেণিকক্ষে প্রশ্ন করা হয় তা হলো:

·   শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান যাচাই করা।

·  প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শিখন-শেখানো কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা।

· শিক্ষার্থীদের জটিল চিন্তন দক্ষতা বাড়ানো যাতে শিক্ষার্থী নিজে নিজে কোন বিষয় সম্পর্কে শিখতে আগ্রহী হয়।

·  প্রশ্ন করণের মাধ্যমে পাঠের অগ্রগতি যাচাই করা।

· শ্রেণি শৃঙ্খলা ধরে রাখা। যেমন- অমনোযোগী শিক্ষার্থীকে আলোচিত বিষয়ে প্রশ্নের মাধ্যমে মনোযোগ বাড়ানো। 

শিখন-শেখানো কার্যক্রমে কখন কী প্রশ্ন করা যেতে পারে তা উদাহরণসহ বর্ণনা দিন।

পাঠদান কার্যক্রম সাধারণত ৩টি পর্যায়ে হয়ে থাকে। যেমন- ক্লাসের শুরু, পাঠ চলাকালীন এবং ক্লাসের শেষাংশ। নিম্নে এই ৩টি পর্যায়ে কখন কী প্রশ্ন করা যেতে পারে তা বর্ণনা করা হলো:

. ক্লাশের শুরুতে প্রশ্ন:

·       শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। যেমন- শুভ সকাল, কেমন আছো তোমরা?

·       নিরাপদ বা শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে। যেমন- এসো আমরা একটি গাই গাই, তোমরা কী গান শুনতে চাও?

·       পূর্বজ্ঞান যাচাই করতে।

·       শিখন-শেখানো কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে।

২. পাঠ চলাকালীন প্রশ্ন:

·       নতুন কাজে যাওয়ার আগে পূর্ববর্তী বিষয়ে শিক্ষার্থীর শিখন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে। যেমন- এ পর্যন্ত যা আলোচনা হয়েছে বুঝতে পেরেছে? অথবা, সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করা।

·       শিক্ষার্থীরা কাজের নির্দেশনা বুঝতে পেরেছে কিনা তা নিশ্চিত হতে।

·       শিক্ষার্থীর শিখনকে সহায়তা করতে।

·       শিক্ষার্থীর ধারণা পরিস্কার করতে। যেমন- এই বিষয় সম্পর্কে তোমাদের কোন প্রশ্ন আছে কী?

৩. পাঠের শেষাংশে প্রশ্ন:

·       পাঠের শিখন অভিজ্ঞতার সংশ্লেষ ও সার-সংক্ষেপ করতে। যেমন- আজকের পাঠ থেকে তোমরা কি কি বুঝলে?

·       শিক্ষার্থীর শিখনকে মূল্যায়ন করতে ও স্বীকৃতি দিতে।

·       শিক্ষার্থীর শিখনকে স্বীকৃতি দিতে ও তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে।

·       পাঠের শিখনকে বিস্তৃত পাঠ্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করতে।

·       শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর আত্ম-মূল্যায়নকে সহায়তা করতে।

শ্রেণিকক্ষে প্রশ্নকরণের শ্রেণিবিভাগ লিখুন।

শ্রেণিকক্ষে প্রশ্নকে নানাভাবে শ্রেণি বিভক্ত করা যায়। যেমন-

· বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন: 

শিক্ষার্থীর অনুধাবন যাচাইকরণে প্রশ্ন করা। যেমন: পানিচক্র কী?

· পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যভিত্তিক প্রশ্ন: 

শিক্ষারথীদের ইন্দ্রিয় দ্বারা পর্যবেক্ষণকৃত প্রমাণের ওপর নির্ভর করে প্রশ্ন করা। যেমন: এক টুকরো বরফকে রোদে রেখে দিলে বরফের তামপাত্রা বাড়বে কি?

· মূল্যবোধ সম্পর্কিত প্রশ্ন:

শিক্ষার্থীর মূল্যবোধ-এর ওপর ভিত্তি করে কোন কিছুর প্রশংসা করে বা সমালোচনা করে বা মূল্য আরোপ করে প্রশ্ন করা। যেমন: শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, কীটনাশক পরিবেশ দূষণ করে, অতএব এটি কি বন্ধ করা উচিত?

চূড়ান্ত পরীক্ষা, ধারাবাহিক মূল্যায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেঞ্জামিন ব্লুম প্রদত্ত ট্যাক্সোনোমি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। যেমন- প্রশ্নসমূহকে জ্ঞানমূলক বা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রের ট্যাক্সোনোমির ভিত্তিতেও শ্রেণিবিভাগ করা যায়। সেগুলো হলো:

·       জ্ঞানমূলক,

·       অনুধাবন,

·       প্রয়োগ,

·       বিশ্লেষণ,

·       মূল্যায়ন ও

·       সংশ্লেষণ।

শ্রেণিকক্ষে প্রশ্ন করার ধারাবাহিকতার একটি চার্ট তৈরি করুন।

 শ্রেণিকক্ষে প্রশ্ন করার ধারাবাহিকতার চার্ট:

বড় শ্রেণিকক্ষ কাকে বলে? বড় শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি পরিচালনার কৌশল ব্যাখ্যা করুন।

সাধারণত একটি শ্রেনিতে শিক্ষক ছাত্র অনুপাত ১:২৫ বা ১:৩০ থাকলে তাকে আমরা আদর্শ বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে একটি শ্রেণিতে ৫০-৬০ বা তারও বেশি ছাত্র থাকে। শ্রেণিতে শিশু সংখ্যা ৪০-এর অধিক হলেই আমরা ঐ ধরনের শ্রেণিকে অধিক শিশুসংবলিত শ্রেণি বলে থাকি। বড় শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষকের পক্ষে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য। ফলে এ ধরনের শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় শিক্ষককে বিশেষ দক্ষতা ও বিভিন্ন ধরনের কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে। 

বড় শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের কৌশলগুলো নিম্নরূপ হতে পারে:

১. বসার ব্যবস্থা বিন্যস্ত করা: যেমন- ইউ শেপ, আই শেপ বিন্যস্ত করার মাধ্যমে এমন হবে যাতে শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাছাকাছি সহজে যেতে পারেন এবং কার্যক্রম তদারকি করতে পারেন।

২. শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করার সুবিধা রাখা। যেমন- বোর্ডের ব্যবহার, ডান, বাম ও পেছনে চলাচলের ব্যবস্থা রাখা।

৩. ‘আই কন্ট্যাক্ট’ বজায় রাখা মাধ্যমে সকল শিশুর প্রতি লক্ষ রাখা।

৪. জোড়ায় ও দলীয় কাজের মাধ্যম সকলের জন্য একই অথবা ভিন্ন ভিন্ন কাজ (Activity) দেয়া। এক ঘেঁয়েমী দূর করার জন্য প্রতি সপ্তাহে দলে নাম ও স্থান পরিবর্তন করা।

৫. বৈচিত্র্যময় প্রশ্নকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো ও উৎসাহ প্রদান করা।

৬. শিশুদের মাধ্যমে এক অন্যের সমস্যার সমাধান:

৭. সঠিক উত্তর বোর্ডে লিখে দেওয়ার মাধ্যমে সময় বাঁচানো।

৮. একাধিক শ্রেণিনেতা নির্বাচন করা যা প্রতিমাসেই পরিবর্তন করে দেওয়ালে টাঙিয়ে দেয়া।

৯. শ্রেণিকক্ষে অনুসরণীয় চার্ট স্থাপন করা।

১০. একাধিক উপকরণ ব্যবহার করা। যেমন- ১টি গ্লোবের জায়গায় ৫টি গ্লোব।

ছোট শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি পরিচালনার কৌশল ব্যাখ্যা করুন।

বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলেও কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনেক কমও লক্ষ করা যায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০ এর কম হলেই তাকে ছোট শ্রেণিকক্ষ বলা যায়।

 এ ধরনের শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি পরিচালনার কৌশল কী হতে পারে তা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. শিক্ষার্থীরা যেন সহজে শিক্ষককে শুনতে ও দেখতে পায় সেজন্য উপযোগী আসন বিন্যাস করা।

২. সকলের প্রতি সমান মনোযোগ প্রদান করা।

৩. প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষভাবে অনুশীলন করানো সুযোগ রাখা।

৪. শিক্ষার্থীদের দিয়ে কাজ তদারক করা।

৫. শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেয়া।

৬. চিন্তণ ক্ষমতা বাড়ানো ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা।

৭. সরাসরি প্রশ্ন করা এবং ফিডব্যাক প্রদান করা।

৮. মাঝে মধ্যেই বসার জায়গা পরিবর্তন করা।

একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুসরণীয় চার্ট কেমন হতে পারে তা লিখুন।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুসরণীয় (ক্লাসরুম রুলস) নিম্নরূপ হতে পারে:

১। শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনব।

২। দলে কাজের সময় সবার মতামত শুনব। অন্যের মতের সাথে একমত না হলে ভদ্রভাবে যুক্তি দিয়ে তার মত খন্ডন করব।

৩। দলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করব।

৪। কিছু বলার আগে হাত তুলব।

৫। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করব এবং সদ্ভাব বজায় রাখব।

৬। আমার খাতায় আমার কথা বা চিন্তা নিজেই লিখব।

৭। সবাই একসাথে কথা বলব না, একজন বলার পর অন্যজন বলব।

৮। সবাইকে দলের কাজ উপস্থাপন করার এবং অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেব।

৯। শান্তি বজায় রাখব, যাতে সবাই সবার কথা শুনতে পায়।

১০। দলের কাজ পরিচালনায় একে অন্যকে সহযোগিতা করব।

27Apr2020

পেশাগত শিক্ষা (২য় খন্ড)

২য় অধ্যায়: শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল

ক্লাস-১৭: শিক্ষার্থীর আচরণগত ভিন্নতা ও শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ কৌশল

ক্লাসের আলোচিত বিষয়:

· শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের আচরণগত ভিন্নতার ধরণগুলো লিখুন।

· শিক্ষার্থীদের জেন্ডার ভিন্নতার কারণে কী কী সমস্যা তৈরি হয়?

· শিক্ষার্থীদের জেন্ডার ভিন্নতায় সৃষ্ট সমস্যা দূরীকরণে বিদ্যালয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন- তা বর্ণনা দিন।

·  শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থাগত ভিন্নতা বজায় রেখে পাঠদানের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে আপনার ধারণা ব্যক্ত করুন।

· যোগাযোগ কী?

·  শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ বলতে কী বুঝেন?

· শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগযোগ্য যোগাযোগ কৌশল কী কী হতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করুন।

· বাচনিক যোগাযোগ কৌশল কাকে বলে?

·  অবাচনিক যোগাযোগ কৌশল কাকে বলে?

· শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা বা চ্যালেঞ্জসমুহ আলোকপাত করুন।

· শ্রেণিকক্ষে কার্যকর যোগাযোগে নিশ্চিতকরণে শিক্ষকের করণীয় দিকসমূহ আলোচনা করুন।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের আচরণগত ভিন্নতার ধরণগুলো লিখুন।

শ্রেনিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের আচরণ পরিলক্ষিত হয়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের কাজে যেকোন ধরনের অসহযোগিতামূলক আচরণই সমস্যামূলক আচরণ। শ্রেণিকক্ষে কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা তাদের আচরণের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে শিখন শেখানোর কাজে সমস্যা তৈরি করে। শিখন-শেখানো কাজের সুবিধার্ধে এ ধরণের আচরণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। সেগুলো হলো:

·  শিক্ষার্থীদের জেন্ডার ভিন্নতা,

·  শিক্ষার্থীদের ভাষাগত ভিন্নতা,

· শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থাগত ভিন্নতা।

শিক্ষার্থীদের জেন্ডার ভিন্নতার কারণে কী কী সমস্যা তৈরি হয়?

শিক্ষার্থীদের জেন্ডার ভিন্নতার কারণে বিদ্যালয়ে তাদের অংশগ্রহণ ও শিখনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা হয়। যেমন-

· মেয়েদের প্রতি শিক্ষক বা সহপাঠী ছেলেদের কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ ও অশালীন মন্তব্য,

· অশালীন আকার-ইঙ্গিত ও যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি বিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ ও শিখন শেখানোর কাজে অংশগ্রহণে বাধা তৈরি করে।

· শ্রেণিকক্ষেও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অধিক অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া ও পক্ষপাত করার ফলে মেয়েরা শিখন শেখানো কার্যক্রমে অংশগ্রহণে পিছিয়ে পড়ে।

· স্বাস্থ্যসম্মত এবং আলাদা টয়লেট ব্যবস্থা, বিশ্রাম বা অবসর কাটানোর জন্য আলাদা কমনরুমের ব্যবস্থা না থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে শিখনে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।

শিক্ষার্থীদের জেন্ডার ভিন্নতায় সৃষ্ট সমস্যা দূরীকরণে বিদ্যালয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন- তা বর্ণনা দিন।

জেন্ডার ভিন্নতায় সৃষ্ট সমস্যা দূরীকরণে যে সকল পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা হলো:

· শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরের বিভিন্ন কাজে নারী বা পুরুষ বাচক বৈষম্য যাতে তৈরি না হয় এমনভাবে পরিবেশ তৈরি করা।

· সকল ধরণের কর্মকান্ডে উভয়ের সমান অধিকার ও সমান সুযোগ থাকা।

· বৈষম্যপূর্ণ ও জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা।

·  পৃথক টয়লেট এবং কমনরুমের ব্যবস্থা থাকা।

· বিদ্যালয়ে এবং এর বাইরে যৌন নিপীড়ন এবং অশালীন ইঙ্গিতমূলক আচরণমুক্ত পরিবেশ থাকা।

শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থাগত ভিন্নতা বজায় রেখে পাঠদানের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে আপনার ধারণা ব্যক্ত করুন।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ অবস্থাগত ভিন্নতা অনেক সময় পাঠদান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করে। তাদের সংস্কৃতিগত ভিন্নতা, রীতিনীতি ও আচার-আচরণগত ভিন্নতার কারণে বৈষম্য তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতিগত বা আর্থ-সামাজিক অবস্থাগত ভিন্নতা সত্ত্বেও শ্রেণিকক্ষে কোন ধরনের বৈষম্য তৈরি করা না হয়। শিক্ষার্থীদের অবস্থাগত ভিন্নতা মাথায় রেখে পাঠদানে জন্য বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সেগুলো হলো:

· ভিন্নতাই শক্তি এমন ধারণা বিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটানো।

· আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ভিন্নতার কারণে কোন ধরনের বৈষম্য না করে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা ও সমান সুযোগ প্রদান করা।

· সকল ধরণের বৈষম্য নীতি বর্জন করা।

· প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে তাদের নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা গঠনে সহায়তা করা।

· কাউকে কোন ধরনের হেয় না করা বা কারো প্রতি কোন ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা।

· পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া, প্রয়োজনে তাদের বাড়ীতে গিয়ে মাঝে মধ্যে খোঁজ-খবর রাখা।

·  কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবস্থানগত ভিন্নতা মাথায় রেখে বাড়ীর কাজ প্রদান করা।

· শিক্ষার্থীদের ভালো কাজকে প্রশংসা করা এবং মন্দ কাজকে নিরুৎসাহিত করা।

যোগাযোগ কী?

Information is power অর্থাৎ তথ্যই শক্তি। আর তথ্য যোগাযোগের মাধ্যমেই আদান প্রদান হয়। ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের মাঝে তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াকে যোগাযোগ বলে। অন্যকথায়, বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে তথ্যাদির আদান-প্রদান প্রক্রিয়াকে যোগাযোগ (Communication) বলা হয়।

ডাই ম্যাকুয়েল এর মতে-

“যোগাযোগ হল সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার আদান-প্রদান প্রক্রিয়া যেখানে জীবনযাপনের বিধি বিধান, প্রথা, লোকাচার, লোকরীতি, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের যাবতীয় চেতনা বিদ্যমান রয়েছে।”

সুতরাং বলা যায় যে, যোগাযোগ একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা একে অন্যের সাথে আমাদের অনুভূতি, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও তথ্য ভাগাভাগি করি।

শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ বলতে কী বুঝেন?

শ্রেণিতে যোগাযোগ তথা তথ্য আদান-প্রদানের ভূমিকায় থাকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা আমদের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি অন্যদের সাথে বিনিময় করি। শ্রেণিতে যোগাযোগের অন্যতম হাতিয়ার হলো প্রশ্নকরণ। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ভাব বিনিময়, জ্ঞান, তথ্য ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করার প্রক্রিয়াকে শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ বলা যায়। শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ বলতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সকল ধরনের যোগাযোগকে বোঝায়।

শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগযোগ্য যোগাযোগ কৌশল কী কী হতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করুন।

শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ধরণের যোগাযোগ কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. দৃষ্টিনির্ভর যোগাযোগ কৌশল:যেখানে শিখন-শেখানোর কৌশল হিসেবে দৃষ্টিশক্তিকে ব্যবহার করা হয়, যেমন- বিভিন্ন প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার, ছবি, মডেল ইত্যাদি ব্যবহার করে যোগাযোগ করা হয়।

২. কথন-শ্রবণ নির্ভর যোগাযোগ কৌশল: মূলত পরস্পরের আলোচনা, ব্যাখ্যা, বক্তৃতা ইত্যাদি বিনিময় ও শোনার মাধ্যমে এ ধরনের যোগাযোগ ঘটে।

৩. পঠন-লিখন নির্ভর যোগাযোগ কৌশল: কোন নির্দেশনা লেখা বা পাঠের মাধ্যমে এ ধরনের যোগাযোগ ঘটে। বোর্ড, খাতা বা বইয়ে লিখে এবং তা পাঠের মাধ্যমে এ ধরনের যোগাযোগ সংঘটিত হয়।

৪. অনুভূতি-স্পর্শ নির্ভর যোগাযোগ কৌশল: কোন কিছুর প্রতিকৃতি তৈরি করা, হাতের কাজ করা, কিংবা হাতে-কলমে কোন কিছু করা এই ধরনের কৌশলের অন্তর্ভুক্ত।

এর বাইরেও যোগাযোগের অন্য যেসব উপায় আছে তার ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ কৌশল প্রধানত ২ ধরনের। যথা:

১) বাচনিক যোগাযোগ ও

২) অবাচনিক যোগাযোগ কৌশল।

বাচনিক যোগাযোগ কৌশল কাকে বলে?

যেখানে মৌখিকভাবে বা ভাষা ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ করা হয় তাকে বাচনিক যোগাযোগ বলা হয়। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করা, বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেয়া, প্রশংসা করা সবই বাচনিক যোগাযোগের উদাহরণ। শ্রেণিকক্ষের অধিকাংশ যোগাযোগই ঘটে বাচনিক দক্ষতার প্রয়োগ করে। বিভিন্ন ধরনের শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল, যেমন- বক্তৃতা পদ্ধতি, আলোচনা পদ্ধতি, প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি ইত্যাদি ঘটে বাচনিক যোগাযোগ কৌশল ব্যবহার করে।

অবাচনিক যোগাযোগ কৌশল কাকে বলে?

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক মুখে কী বলছেন শুধু তাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, কীভাবে তা উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটিওগুরুত্বপূর্ণ। মূলত মৌখিক যোগাযোগ বাদে আকার-ইঙ্গিত, মুখভঙ্গি বা অন্য কোন উপায়ে শিক্ষার্থীদের যে বার্তা শিক্ষক দেন তাই অভাষিক যোগাযোগ কৌশল । এগুলো হতে পারে-

·       শিক্ষকের মুখের ভাব

·       বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গি ও দেহভঙ্গিমা

·       শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের চলাফেরা করা

·       শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি যাওয়া

·       শিক্ষার্থীদের সাথে দৃষ্টি বিনিময় ইত্যাদি।

শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা বা চ্যালেঞ্জসমুহ আলোকপাত করুন।

শ্রেণিকক্ষে সফল যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়সমুহ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে:

· পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া অপরিকল্পিত বা অগোছালোভাবে বক্তব্য প্রদান করা।

· শ্রেণিতে প্রমিত ভাষার ব্যবহার ও আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করা।

· শ্রেণিকক্ষের ভৌত পরিবেশ অনেক সময় যোগাযোগর ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।

·  শিক্ষকের শব্দভান্ডারে প্রয়োজনীয় শব্দের অভাব।

· শ্রেণিতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী থাকলে তাদের সাথে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করা দুরূহু হতে পারে।

· শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মানসিক ও আবেগিক প্রস্তুতির ঘাটতি।

· সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা বা ভিন্নতা।

·  অপ্রয়োজনীয় অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি কারণে যোগাযোগ বিঘ্ন হতে পারে।

শ্রেণিকক্ষে কার্যকর যোগাযোগে নিশ্চিতকরণে শিক্ষকের করণীয় দিকসমূহ আলোচনা করুন।

শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ কার্যকরী করতে বিভিন্ন ধরণের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য শিক্ষক হিসাবে পাঠদান ফলপ্রসূ তথা নিশ্চিতকরণে করণীয় দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:

· পাঠদানের পূর্বে যথাযথ পরিকল্পনা করা। যদি পূর্ণাঙ্গ পাঠ পরিকল্পনা সম্ভব না হয় তবে অবশ্যই পরিকল্পনাটির সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করা।

·  প্রতি ধাপে সতর্কতার সহিত শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা।

· শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সক্রিয় রাখা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

· শ্রেণিকক্ষের ভৌত পরিবেশ শিক্ষার্থীবান্ধব করা।  

· শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের অবস্থান ঠিক রাখা। বিভিন্ন একটিভিটির ধরণ অনুসারে শিক্ষার্থীদের নিকট তাদের চাহিদা অনুসারে অবস্থান অর্থাৎ নৈকট্য বজায় রাখা।

·  চোখে চোখে যোগাযোগ (Eye contact) এর মাধ্যমে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা।

·  সহজ-সরল ও বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করা।

· সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা। প্রয়োজনে নির্দেশনাটি পুনরাবৃত্তি করা।

· কণ্ঠস্বরের উঠা-নামা এবং শ্রেণির আকার অনুসারে প্রয়োজন মাফিক ব্যবহার করা।

· শারীরিক ভাষা ও অঙ্গভঙ্গির ব্যবহার করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের চলাচল, হাত পা নাড়ানো, মুখের এক্সপ্রেশন বা প্রকাশভঙ্গি বক্তব্যের ভাবার্থ অনুযায়ী শিক্ষার্থীকে সঠিক বিষয়টি অনুধাবনে সহায়তা করতে হবে।

· প্রতিবন্ধী কোন শিক্ষার্থী থাকলে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন: তাদের কাছে গিয়ে বলা এবং উপকরণ থাকলে তাদের কাছে নিয়ে দেখানো।

· আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করা। যেমন- মজার গল্প বলা, প্রাসঙ্গিক কৌতুক বলা, মজার কোন অভিজ্ঞতা বলা ইত্যাদি।

26Apr2020

বিষয়: পেশাগত শিক্ষা (২য় খন্ড)

২য় অধ্যায়: শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল

ক্লাস-১৬: প্রতিবন্ধী শিশুর লক্ষণ ও চাহিদা।

ক্লাসের আলোচিত বিষয়:

· শারীরিক প্রতিবন্ধিতা কী? শারীরিক প্রতিবন্ধিতা কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

· শারীরিক প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর কয়েকটি চাহিদা উল্লেখ করুন।

· বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা কী? বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার লক্ষণগুলো লিখুন।

· বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর চাহিদা নিরসনের উপায় উল্লেখ করুন।

·  অটিজম কী? কাদের অটিস্টিক শিশু বলা হয়?

· অটিস্টিক শিশুদের লক্ষণসমূহ লিখুন।

· অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিক্ষার্থীর চাহিদা নিরসনে শিক্ষকের করণীয় দিকগুলো আলোকপাত করুন।

· শিখন প্রতিবন্ধিতা কী? শিখন প্রতিবদ্ধিতার লক্ষণগুলো উল্লেখ করুন।

শারীরিক প্রতিবন্ধিতা কী? শারীরিক প্রতিবন্ধিতা কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

শারীরিক প্রতিবন্ধিতা

যেসব শিশু স্বাভাবিক মানুষের মতো শারীরিক কর্মকান্ড, চলাফেরা, শরীরের অঙ্গ ব্যবহার বা সঞ্চালন করতে পারে না, তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী বলা হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে হাত দিয়ে ঠিকভাবে কিছু ধরতে না পারা, ঠিকভাবে বসতে না পারা, ঠিকভাবে হাটতে না পারা, নিজের পরিচর্যা করতে না পারা ইত্যাদি।

শারীরিক প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ:

নিম্নোক্ত লক্ষণ দেখে শিশুর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা যেতে পারে-

·  অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহারে অসুবিধা হওয়া।

· শরীরের কোন অংশে কাটা বা ক্ষতযুক্ত থাকা।

· শারীরিক সমন্বয়ে সমস্যা যেমন- ভারসাম্যপূর্ণভাবে হাঁটতে না পারা বা শারীরিক সমন্বয়হীনতা থাকা।

· শরীরে কাঁপুনি হওয়া।

· প্রয়োজনীয় কাজ করতে অসুবিধা হওয়া।

শারীরিক প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর কয়েকটি চাহিদা উল্লেখ করুন।

শিখন শেখানো কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য এ ধরণের শিক্ষার্থীর নিম্নোক্ত ধরনের চাহিদা অনুভূত হয়-

·  চলাচলের জন্য শিক্ষক বা সহপাঠীদের সহায়তা।

· বিশেষ ধরণের আসন ব্যবস্থা।

· বিদ্যালয়ে উঁচু-নিচু জায়গায় চলাফেরার জন্য র‌্যাম্প থাকা।

·  হুইল চেয়ার যাতে বিদ্যালয়ের করিডোর ও শ্রেণিকক্ষ পর্যন্ত সহজে ব্যবহার করা যায় এমন ব্যবস্থা রাখা।

· শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ব্যবহার উপযোগী বোর্ড ও উপকরণ ব্যবস্থা থাকা।

· এদের জন্য ব্যবহার উপযোগী টয়লেটের ব্যবস্থা করা।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা কী? বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার লক্ষণগুলো লিখুন।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা

যেসব শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা, বুদ্ধি বিকাশে ধীরগতি, শিক্ষা গ্রহণে অক্ষমতা, গড় বুদ্ধির চেয়ে সুস্পষ্টভাবে কম বুদ্ধি, পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো, সামাজিক ও আচরণগত সামঞ্জস্য বিধানের অভাব রয়েছে তাদের বুদ্ধি বা মানসিক প্রতিবন্ধী বলা হয়। সাধারণ মানুষের গড় বুদ্ধ্যাংক ৮০-১০০।

সাধারণত শিশুরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা জন্মেগতভাবে নিয়ে আসে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে শিশু স্থুল না যাওয়া পর্যন্ত তাদের অসুবিধা চিহ্নিত হয় না। যদিও খুব ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার বেশ কিছু লক্ষণ তাদের মধ্যে প্রকাশ পায়। বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার লক্ষণকে ছয়টি ক্ষেত্রে ভাগ করা হয়েছে। যদি কোন শিশুর মাঝে এই লক্ষণগুলো দেখা যায় তবে মনে করা হয় যে শিশুটি বুদ্ধির দিক থেকে পিছিয়ে আছে।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ

· শিশুর হাঁটা, চলা, বসা, কথা বলা ইত্যাদি বিকাশগুলো বয়সের তুলনায় কম হয়।

· কোনো বিষয়ে শিশু মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।

· কোনো নির্দেশনা সহজে বুঝতে পারে না, একই নির্দেশনা বার বার দিতে হয়।

· শিশুকোনো শিক্ষণ, এমনকি মলমূত্র ত্যাগের শিক্ষণও সহজে গ্রহণ করতে পারে না।

· সূক্ষ্ম কোনো কাজ করতে পারে না।

· অবাঞ্ছিত আচরণ করে।

· সমবয়সীদের সাথে মিশতে পারে না। সামাজিক আচরণ ঠিকমতো প্রদর্শন করতে পারে না।

· ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যায় বা খিঁচুনি হয়।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর চাহিদা নিরসনের উপায় উল্লেখ করুন।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে শিখন শেখানো কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। সেগুলো হলো:

· পড়ালেখার প্রতি বেশি চাপ না দেওয়া।

· প্রশংসার মাধ্যমে উৎসাহিত করা।

· নির্দেশনা প্রদানের জন্য সহজ-সরলতা বজায় রাখা।

· বিমূর্ত বিষয় নয়, বরং বাস্তব সমস্যাভিত্তিক কাজের মাধ্যমে শেখার সুযোগ পাওয়া। এক্ষেত্রে শেখার সুযোগের কাজটি হাতে-কলমে করার মাধ্যমে হবে।

· বড় কাজ নয়, বরং ছোট ছোট ধাপে কাজ করার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে একটি বড় কাজ সম্পন্ন করার বা শেখার সুযোগ পাওয়া।

· সতীর্থ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদানের সুযোগ রাখা।

অটিজম কী? কাদের অটিস্টিক শিশু বলা হয়?

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) একটি মানসিক বিকাশ ঘটিত সমস্যা যা স্নায়ু বা স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও পরিবর্ধন জনিত অস্বাভাবিকতার ফলে হয়। এ এস ডি ধরণের রোগ সাধারণত: শৈশবে শুরু হয় এবং বড় হওয়া পর্যন্ত থাকে। অটিজমে সমস্যাগ্রস্ত শিশুকে বলা হয় অটিস্টিক শিশু।

অটিজমে আক্রান্ত শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে অসুবিধা হয়। অটিজমের কারণে কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি ও আচরণ একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ থাকে আবার অনেকক্ষেত্রে শিশুর মানসিক ও ভাষার উপর দক্ষতা কম থাকে। সাধারনত ১৮ মাস থেকে ৩ বছর সময়ের মধ্যেই এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা যায়। কোন কোন শিশুর এটি অতিমাত্রায় দেখা যায়, আবার কাউকে বেশ স্বাভাবিক মনে হয়।

অটিস্টিক শিশুদের লক্ষণসমূহ লিখুন।

নিম্নোক্ত লক্ষণ দেখে অটিস্টিক শিশু চিহ্নিত করা যেতে পারে-

· সমবয়সীদের তুলনায় শিশুর যোগাযোগে পিছিয়ে পড়া।

· সরাসরি চোখের দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে বা অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলে।

· খেলাধুলায় সমস্যা যেমন- অন্য শিশুদের সাথে খেলতে অনীহা প্রকাশ করে।

· একই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি করে।

·পড়াশুনায় অমনোযোগি থাকে।

· অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ যেমন- থুথু ফেলা, খামচি দেওয়া ইত্যাদি।

·  বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অতি প্রতিভাবান যেমন- মুখস্থ করা, ছবি আঁকা, কম্পিউটার দক্ষতা ইত্যাদি।

অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিক্ষার্থীর চাহিদা নিরসনে শিক্ষকের করণীয় দিকগুলো আলোকপাত করুন।

অটিজমের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষক নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন:

·  প্রশংসার মাধ্যমে ভাল কাজ ও আচরণকে উৎসাহিত করা।

· সহজ এবং পছন্দের ছবি বা শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা।

·  বার বার অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানো।

·  সুযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা।

·  দক্ষতার প্রতিটি অংশ পরিপূর্ণভাবে আয়ত্তে না আসা পর্যন্ত বারবার চর্চার সুযোগ পাওয়া।

·  সতীর্থ শিখনের ব্যবস্থা করা।

·  ব্যবহারিক কাজের সুযোগ রাখা।

শিখন প্রতিবন্ধিতা কী?

কিছু শিক্ষার্থীর সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও শিখতে সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। যে সকল শিক্ষার্থী একই শব্দ বারবার পড়ে বা লিখে, শব্দ বা প্রতীক উলটা করে লিখে, প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে না ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যার কারণে শিখন বাধাগ্রস্থতার সম্মূখীন হয় এমন অবস্থাকে শিখন প্রতিবদ্ধিতা বলে। এ ধরণের সমস্যাকে অনেকেই শিশুর ইচ্ছাকৃত ভুল বা অমনোযোগী শিশু ভাবেন। কিন্তু তা নয় বরং তারা অনি‪ছাকৃতভাবে এবং অবচেতনেই এ ধরনের ভুল করে।

শিখন প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ

·  শব্দ বাদ দিয়ে, যুক্ত করে বা বারবার পড়া

· সমবয়সীদের তুলনায় অনগ্রসরতা যেমন-সহপাঠীদের মত শিশুর সংখ্যা গণনা করতে না পারা বা শিশুর লেখা বিসদৃশ, অপটু বা ধীরগতি হওয়া।

·  অপ্রাসঙ্গিক কাজে মনোযোগ দেওয়া।

· শব্দ বা সংখ্যা উলটা করে পড়া বা লেখা যেমন- ন কে ফ, ৬ কে ৯, ১৩ কে ৩১ ইত্যাদি।

·  লিখতে অসুবিধা হওয়া

·  শব্দ বা বাক্য বুঝতে সমস্যা হওয়া।

·  কথা বলতে সমস্যা হওয়ার কারণে অসম্পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করে।

25Apr2020

বিষয়: পেশাগত শিক্ষা (২য় খন্ড)

২য় অধ্যায়: শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল

ক্লাস-১৫: শিশুর শিখন সীমাবদ্ধতা বা প্রতিবন্ধকতা এবং শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর লক্ষণ ও চাহিদা।

ক্লাসের আলোচিত বিষয়:

·  প্রতিবন্ধী কাকে বলে?

· প্রতিবন্ধী শিশুর শ্রেণিবিভাগ কয়টি ও কী কী?

·  শিক্ষার্থীদের শিখন সীমাবদ্ধতার পেছনে প্রতিবন্ধকতাগুলো উল্লেখ করুন।

·  শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা কী? এর কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

· শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চাহিদা নিরসনে করণীয় দিকগুলো উল্লেখ করুন।

·  দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা কী? দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতার ৫ টি লক্ষণ লিখুন।

· শ্রেণিকক্ষে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কোন কোন ধরণের চাহিদা লক্ষ্য করা যায় তা বর্ণনা করুন।

প্রতিবন্ধী কাকে বলে?

প্রতিবন্ধিত্ব বলতে স্বাভাবিক সক্ষমতার অভাবকে বুঝায়। সাধারণতঃ প্রতিবন্ধী বলতে স্বাভাবিক কর্ম অক্ষম ব্যক্তিকে বুঝায়। যেসব শিশুর শারীরিক ক্ষমতা, মানসিক যোগ্যতা, সংবেদীয় ক্ষমতা, সামাজিক ও ভাববিনিময় দক্ষতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিক শিশুর তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম থাকে, তাদের প্রতিবন্ধী শিশু বলা হয়। যাদের দেহের কোনো অঙ্গ যেমন- হাত-পা নেই, দৈহিক গঠন অস্বাভাবিক, চোখে দেখে না বা কানে শোনে না, বুদ্ধিমত্তা কম-এরাই প্রতিবন্ধী শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। এরা আমাদের সমাজেরই অন্যতম।

প্রতিবন্ধী শিশুর শ্রেণিবিভাগ কয়টি ও কী কী?

প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

ক) শারীরিক প্রতিবন্ধী

খ) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

গ) শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী

ঘ) বুদ্ধি বা মানসিক প্রতিবন্ধী

ঙ) বহু প্রতিবন্ধী (একাধিক প্রতবন্ধীতা)।

শিক্ষার্থীদের শিখন সীমাবদ্ধতার পেছনে প্রতিবন্ধকতাগুলো উল্লেখ করুন।

পাঠদানের ক্ষেত্রে একই শ্রেণিতে সকল শিক্ষার্থীর অগ্রগতি সমান হয় না। কেউ খুব দ্রুত বুঝে আবার কেউ ধীরে শেখে। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের ব্যবধান বা পার্থক্য থেকে যায়। সুতরাং একই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পারগতার স্তরগত এই ভিন্নতা নির্ণয় করা প্রয়োজন হয় এবং সে অনুসারে তাদের শিখন সীমাবদ্ধতাগুলো দূরা করার ব্যবস্থা করতে হয়। শিক্ষার্থীদের শিখন সীমাবদ্ধতার পেছন কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রতিবন্ধকতাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

·       শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা,

·       দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা,

·       শারীরিক প্রতিবন্ধকতা,

·       বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা,

·       অটিজম ও শিখন প্রতিবন্ধকতা।

শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা কী? এর কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা বলতে কানে কম শোনা বা একেবারেই না শোনাকে বোঝায়। যারা শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করে বা না করে কেবল কানের সাহায্যে অন্যের কথা শুনতে পায় না, তাদের শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলা হয়। শ্রবণ ক্ষমতা মাপার একককে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডেসিবল (dB) বলা হয়। স্বাভাবিক শ্রবণক্ষমতা ০-২৬ ডেসিবল। অনেক সময় শ্রবণ সমস্যাগ্রস্ত দেখে বোঝা যায় না যে তার সমস্যা রয়েছে।

শ্রবণ প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ

·       কানের গঠনগত ত্রুটি বা বিকৃতি থাকলে, কান পাকা রোগ ইত্যাদি সমস্যা থাকা।

·       উচ্চারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা বা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের অসুবিধা বা উচ্চারণ এড়িয়ে যাওয়া।

·       শ্রেণি কার্যক্রমে অমনোযোগিতা, শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী পাঠ গ্রহণে সমস্যা হলে।

·       কানে শুনতে অসুবিধাগ্রস্ত শিশুরা ছোট গ্রুপে, নির্জন পরিবেশে ও ক্লাসের সামনের সারিতে বসে কাজ করতে আগ্রহী হয়।

·       প্রশ্ন করা হলে ভুল উত্তর দেয় অথবা উত্তর দিতে পারে না।

·      জন্মের পরে কথা বলার বয়সে কথা না বলে হাত এবং মুখ ভঙ্গিমার মাধ্যমে ভাব বিনিময় করা।

·       বিশেষ আচরণ করে যেমন- শিক্ষার্থী নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে, কোন কৌতুক বা রসিকতার সময় তা না বোঝার কারণে সবার সঙ্গে হাসে না ইত্যাদি।

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চাহিদা নিরসনে করণীয় দিকগুলো উল্লেখ করুন।

শ্রবণ প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর চাহিদাগুলো নিরসনের উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

·   শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা হিয়ারিং ডিভাইস ব্যবহার করে শুনতে পায়। সুতরাং এমন শিক্ষার্থীদের হিয়ারিং ব্যবহারের মাধ্যমে শোনা।

· স্বল্প শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীর কাছকাছি গিয়ে কিছুটা জোরে কথা বলা।

· আসন ব্যবস্থা পূনর্বিন্যাসের মাধ্যমে তাদের ক্লাসের সামনে বা শিক্ষকের কাছাকাছি বসার ব্যবস্থা করা।

·  বিকল্প উপায় ব্যবহার করা যাতে না শুনলেও তারা বিষয়বস্তু বুঝতে পারে। যেমন- ছবি বা ভিডিও প্রদর্শন। ইশারা ভাষা ব্যবহার বা আকার-ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বিষয়বস্তু বোঝানো।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা কী? দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতার ৫ টি লক্ষণ লিখুন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা

যারা চোখে খুব সামান্য দেখে বা এক চোখে দেখতে পায় না বা দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়, তাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলা হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা বিভিন্ন প্রকার ও মাত্রার হতে পারে। যেমন- অনেকে আলো আঁধারের পার্থক্য বুঝতে পারে, কিন্তু কোনো বস্তুর আকার বুঝতে পারে না। আবার অনেকে বড় আকৃতির বস্তু দেখতে পায়, কিন্তু ছোট জিনিস দেখতে পায় না।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ:

·  পড়া বা অন্য কাজে সমস্যা হয় এবং চোখের কাছে নিয়ে দেখা।

·  কোনো বর্ণ বা শব্দ উল্টো দেখা।

·  ঘন ঘন চোখ রগড়ানো।

·   চোখ ঢেকে রাখা ও ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করা।

·  উজ্জ্বল আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা।

·  দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া।

·  বর্ণ চিনতে ভুল করা ইত্যাদি।

· লিখতে গিয়ে খাতার লাইনের বাইরে লেখা কিংবা আঁকাবাঁকা করে লেখা ইত্যাদি।

· স্বাভাবিক দৃষ্টিতে পড়তে অসুবিধা হওয়া যেমন- পড়ার সময় ট্যারা চোখে তাকানো।

শ্রেণিকক্ষে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কোন কোন ধরণের চাহিদা লক্ষ্য করা যায় তা বর্ণনা করুন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর দিক থেকে যে যে ধরনের চাহিদা লক্ষ্য করা যায় তা হলো:

·  ভালমতো দেখতে না পেয়ে বিকল্প উপায়ে শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করা। যেমন- মৌখিক যোগাযোগ ও বিষয়বস্তু মুখে বর্ণনা করা ও শোনানো।

· স্বল্প দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর কাছাকাছি থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া।

· লেখার ক্ষেত্রে সহপাঠী বা অন্য শ্রুতি লেখকের সহায়তা নেয়া।

· প্রয়োজনে ব্রেইল পদ্ধতির সহায়তা নেয়া।

· অডিও রেকর্ড বা লিখিত বর্ণনা সংরক্ষণ যা পরবর্তীতেও শুনে অনুশীলন করার সুযোগ রাখা।

24Apr2020

বিষয়: পেশাগত শিক্ষা (২য় খন্ড)

২য় অধ্যায়: শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল

ক্লাস-১৪: হাওয়ার্ড গার্ডনারের বহুমূখী বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ

প্রিয় DPEd শিক্ষার্থী-শিক্ষকবৃন্দ, গার্ডনারের বহুমূখী তত্ত্ব থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে। যেমন- মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তার ৪টি লক্ষণ লিখুন। আজকের ক্লাস আলোচনায় হাওয়ার্ড গার্ডনারের উল্লেখযোগ্য ৮টি বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি লক্ষণ বর্ণনা করা হলো:

মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

যে শিশুর মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা প্রবল সে শোনা, বলা ও পড়ার মাধ্যমে সহজে শেখে। এর লক্ষণগুলো হলো-

·       শিশু ভালো বক্তৃতা দিতে পারে।

·       শিশু গল্প বলতে ও লিখতে পারে।

·       শিশু গুছিয়ে কথা বলতে পারে।

·       শিশু সাবলীল ভাষায় বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে পারে।

·       শিশু শুনতে, বলতে, পড়তে ও লিখতে পছন্দ করে।

·       শিশু প্রখর স্মরণশক্তির অধিকারী হয়।

যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

যে শিশুর যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা প্রবল সে সংখ্যা, নকশা, যুক্তি প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে সহজে শেখে। এর লক্ষণগুলো হলো-

·       শিশু সংক্ষিপ্ততা পছন্দ করে।

·       শিশু যুক্তি দায়িত্ব বিচার বিবেচনা করে।

·       শিশু ধাঁধা ও অঙ্কের খেলা পছন্দ করে।

·       শিশু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে।

·       শিশু সমস্যা সমাধান করতে আনন্দ পায়।

·       শিশু যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

এটি শিশুর কোনো স্থানের বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষণ করা ও পার্থক্য করার সামর্থ্যকে বোঝায়। যে শিশুর এ বুদ্ধিমত্তা প্রবল সে ছবি, রেখাচিত্র ও রূপকল্পনার সাহায্যে সহজে শেখে। এর লক্ষণগুলো হলো-

·       শিশু ছবি আঁকতে ও রঙ করতে ভালোবাসে।

·       শিশু মানচিত্র, চার্ট ও নকশা সহজে বুঝতে পারে।

·       শিশু ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করে।

·       শিশু ছবির সাহায্যে মনে রাখে।

·       শিশু কোন কিছুর চিত্র সহজে কল্পনা করে।

·       শিশু রূপক শব্দ ও বাক্য বেশি ব্যবহার করে।

ছন্দ ও সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

যে শিশুর এ ধরণের বুদ্ধিমত্তা প্রবল সে ছড়া, ছন্দ ও ধ্বনির তালে তালে সহজে শেখে। এর লক্ষণগুলো হলো-

·       শিশু গান পছন্দ করে।

·       শিশু তাল ও লয়ের প্রতি আর্কষণ বেশি থাকে।

·       শিশু সুর ও ছন্দ পছন্দ করে।

·       শিশু কবিতা ও ছড়া তালে তালে আবৃত্তি করতে পছন্দ করে।

·       শিশু প্রকৃতির ছন্দময় শব্দ শুনে সহজে আকৃষ্ট হয়।

·       শিশু বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পছন্দ করে।

অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

যে শিশুর অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা প্রবল সে শারীরিক কলাকৌশল ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে সহজে শেখে। এর লক্ষণগুলো হলো-

·       শিশু অংশগ্রহণ করে সহজে শেখে।

·       শিশু কোন কিছু ধরতে বা র্স্পশ করতে চায়।

·       শিশু খেলাধুলা পছন্দ করে।

·       শিশু হতেনাতে কাজ করতে পছন্দ করে।

·       শিশু হস্তশিল্পে দক্ষ হয়।

·       শিশু বস্তু সহজে নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রকৃতিবিষয়ক বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

শিশু উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রজাতি চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়। যে শিশুর এ বুদ্ধিমত্তা প্রবল সে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান প্রত্যক্ষণ করে সহজে শেখে। এর লক্ষণগুলো হলো-

·       শিশু গাছ লাগাতে ও যত্ন করতে ভালোবাসে।

·       শিশু জীবজগতের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করতে পছন্দ করে।

·       শিশু গাছপালা ও পশুপাখি পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করে।

·       শিশু পশু-পাখি ও গাছপালার বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা করতে পছন্দ করে।

·       শিশু গাছপালা ও পশুপাখি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করে।

·       শিশু, প্রাণী ও উদ্ভিদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পছন্দ করে।

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

যে শিশুর আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা প্রবল সে সামাজিক মিথষ্ক্রিয়ার পাশাপাশি অন্যের সঙ্গে ও দলে কাজ করে সহজে শেখে। এর লক্ষণগুলো হলো-

·       শিশু দলে কাজ করতে পছন্দ করে।

·       শিশুর অনেক বন্ধুবান্ধব থাকে।

·       শিশু অন্যের কাজে সাহায্য ও সহযোগিতা করে।

·       শিশু অন্যের সঙ্গে সহজে সম্পর্ক গড়ে তোলে।

·       শিশু অন্যের ঝগড়া-বিবাদ মেটাতে এবং মধ্যস্থতা করতে পছন্দ করে।

·       শিশু সামাজিক পরিস্থিতি সহজে বুঝতে পারে।

অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি লক্ষণ লিখুন।

এটি শিশুর নিজেকে বুঝতে পারার সামর্থ্য। যে শিশুর এ বুদ্ধিমত্তা প্রবল সে একাকী চিন্তা ও কাজ করে সহজে শেখে। এর লক্ষণগুলো হলো-

·       শিশু কম কথা বলে।

·       শিশু একাকী থাকতে পছন্দ করে।

·       শিশু নিজে নিজে শিখতে চায়।

·       শিশু নিজের সম্মন্ধে সচেতন থাকে।

·       শিশু নিজে নিজে কাজ করতে উৎসাহিত হয়।

·       শিশু নিজের সবলতা ও দুর্বলতা সহজে বুঝতে পারে।

23Apr2020

বিষয়: পেশাগত শিক্ষা (২য় খন্ড)

২য় অধ্যায়: শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল

ক্লাস-১৩: শৃঙ্খলা, শৃঙ্খলার প্রকারভেদ, শিশুর ভিন্নতা ও শিশুর ভিন্নতার ধরণ

· শৃঙ্খলা (Discipline) কী?

· শ্রেণি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা কত প্রকার ও কী কী?

· একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থায় কী বলা হয়েছে?

· শিশুর ভিন্নতা বলতে কী বুঝায়?

· শিশুদের ভিন্নতার ধরনসমূহ উল্লেখপূর্বক বর্ণনা করুন।

· শিক্ষার্থীদের ভিন্নতা চিহ্নিতকরণ ও চাহিদা নিরূপণের উপায় লিখুন।

শৃঙ্খলা (Discipline) কী?

শৃঙ্খলা হলো এমন কিছু কর্ম যা একটি নির্দিষ্ট প্রশাসনের ব্যবস্থা বা চুক্তি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। শৃঙ্খলা সাধারণত মানব ও প্রাণী আচরণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োগ করা হয়। শ্রেণি ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শৃ‫ঙ্খলা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেউদ্দেশ্যমুখী আচরণে অভ্যস্ত করে তোলা যায়।

শ্রেণি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা কত প্রকার ও কী কী?

শৃঙ্খলা শ্রেণি ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্ব একটি উপাদান। সাধারণ শিক্ষার্থীদরে আচরণ নিয়ন্ত্রণে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ৩ ধরনের শৃ‫খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, যথা:

১. প্রতিরোধমূলক শৃঙ্খলা,

২. সহায়তামূলক শৃঙ্খলা এবং

৩. সংশোধনমূলক শৃঙ্খলা।

একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থায় কী বলা হয়েছে?

আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে সকল শিশুর অংশগ্রহণের অধিকার আছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদ, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশ সরকার প্রণীত শিশু অধিকার আইন অনুযায়ী সকল শিশুরই মৌলিক শিক্ষার অধিকার আছে এবং এ উদ্দেশ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অধিকার আছে। আমাদের শিক্ষানীতিও একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নের কথা বলেছে যেখানে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা নির্বিশেষে সকল শিশুরই একই বিদ্যালয়ে এবং একই শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষালাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং বাস্তব কারণেই শ্রেণিকক্ষ বলতে এখন একীভূত শ্রেণিকক্ষই বোঝায়।

শিশুর ভিন্নতা বলতে কী বুঝায়?

সকল শিশুর শেখার ধরণ এক নয়। শিশুদের এই ভিন্নতার জন্যেই বিভিন্ন শিখন তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে। প্রতিটি শিশুই অনন্য এবং সতন্ত্র। ফলে শ্রেণিকক্ষের অনেক শিশুর মধ্যে নানা ধরনের ভিন্নতা দেখা যায়। কেউ হয়তো দ্রুত শিখে, কেউ ধীরে, কেউ হয়তো কম শুনতে বা কম দেখতে পায় ইত্যাদি।

শিশুদের ভিন্নতার ধরনসমূহ উল্লেখপূর্বক বর্ণনা করুন।

প্রতিটি শিশুই আলাদা। শ্রেণি শিশুরা একসাথে পাশাপাশি অবস্থান করলেও কেউ হয়ত লাজুক, কেউ চটপটে, কেউ দ্রুত শিখে, কেউ ধীরে, কেউ পড়ায় ভালো কিন্তু অঙ্কে কাঁচা, কেউ ক্লাসে মনোযোগী, কেউ নিজে মনোযোগী নয় আবার অন্যদেরও সমস্যা করে, কেউ অন্যদের মত ভালো দেখতে বা শুনতে পায় না। শিশুদের নানান ভিন্নতা তাদের শিখনকে প্রভাবিত করে। শিশুদের এসব ভিন্নতাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-

শিক্ষার্থীদের শেখার ধরনগত ভিন্নতা:

হাওয়ার্ড গার্ডনার তাঁর বহুমূখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বে শিক্ষার্থীদের শেখার ভিন্নতার কথা উল্লেখ করেছেন। কেউ ভাষাগত বিষয় ভালো শেখে, কেউ গাণিতিক বিষয় ভালো শেখে, কেউ পড়ে ভালো শেখে, কেউ কাজ করার মাধ্যমে ভালো শেখে ইত্যাদি।

শিক্ষার্থীদের পারগতার স্তরে ভিন্নতা:

শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার ভিন্নতার কারণে এ ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। যেমন- কেউ দ্রুত শেখে, কেউ ধীরে শেখে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধিতার কারণে সৃষ্ট ভিন্নতা:

প্রতিবন্ধিতা শিশুদের শিখনের ক্ষেত্রে প্রচুর অন্তরায় সৃষ্টি করে। যেমন- দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা ইত্যাদি কারণে অন্য শিশুদের থেকে তারা কিছুটা ভিন্ন হয়।

শিক্ষার্থীদের আচরণগত ভিন্নতা:

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের আচরণের ভিত্তিতেও তাদেরকে আলাদা করা হয়। যেমন- কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে যারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে, শিক্ষকের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ অথবা প্রতিবন্ধকতাও তৈরি করে।

শিক্ষার্থীদের জেন্ডার ভিন্নতা:

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জেন্ডার ভিন্নতার কারণে শিশুদের শিখন কার্যক্রম প্রভাবিত হয়। তবে উন্নত দেশগুলো তেমন প্রভাবিত হয় না।

শিক্ষার্থীদের ভাষাগত ভিন্নতা:

ভাষাগত ভিন্নতাও শিশুদের শিখনকে প্রভাবিত করে। বাংলাভাষী শিশুদের কাছে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও বিভিন্ন ভাষাভাষী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা (যেমন: ত্রিপুরা, লুসাই, তঞ্চঙ্গ্যা) বিদ্যালয়ে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়।

শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থাগত ভিন্নতা:

শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থাগত পার্থক্য ইত্যাদি কারণেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- যেসব শিশুর বাসায় পড়াশোনা জানা লোক নেই তাদের বাড়ির কাজ দেয়া হলে সহায়তার অভাবে তাদের পক্ষে সেটা করা সম্ভব নাও হতে পারে।

শিক্ষার্থীদের ভিন্নতা চিহ্নিতকরণ ও চাহিদা নিরূপণের উপায় লিখুন।

একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর ভিন্নতার ধরণ জানা থাকলে শিখন শেখানো কার্যক্রম সহজ হয়। কিছু লক্ষণ দেখে শিশুদের ভিন্নতা ও চাহিদা চিহ্নিত করা যায়। যেমন-

·       শিক্ষার্থী পড়ে আয়ত্ব করেতে পছন্দ করে,

·       কেউ কেউ গল্প শুনে শেখে,

·       কিছু শিক্ষার্থী যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে আয়ত্ব করে,

·       কেউ কেউ ছবি বা ভিডিও দেখে শিখতে পছন্দ করে,

·       কেউ কেউ আবার প্রকৃতি থেকে শিখতে ভালবাসে,

·       এমন কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা ছন্দ বা সঙ্গীতের মাধ্যমে শেখে ইত্যাদি।

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। এমনকি একজন ব্যক্তির একাধিক বুদ্ধিমত্তা থাকতে পারে। শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রধান বুদ্ধিমত্তাকে কাছে লাগিয়ে কোন কিছু আয়ত্ব করতে শেখে। হাওয়ার্ড গার্ডনার মূলত মানুষের এই বহুমূখী বুদ্ধিমত্তার উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের ভিন্নতা চিহ্নিত করে তাদের চাহিদা অনুসারে পাঠদানের পরামর্শ দিয়েছেন।

21Apr2020

বিষয়: পেশাগত শিক্ষা (২য় খন্ড)

২য় অধ্যায়: শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল

ক্লাস-১১: শ্রেণি ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার্থীদের আচরণ

·       শ্রেণি ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?

·       শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের আচরণ কয় প্রকার ও কী কী?

·       শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের আচরণে প্রভাব বিস্তারকারী পরিবেশগত উপাদানসমূহের ধারণা দিন।

·       শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের যে সকল অসহযোগিতামূলক আচরণ লক্ষ্য করা যায় সেগুলোর বর্ণনা দিন।

·       বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যার ধরনসমূহ উল্লেখ করুন।

শ্রেণি ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?

শ্রেণি ব্যবস্থাপনা:

শ্রেণি ব্যবস্থাপনা পাঠদান কার্যক্রমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুষ্ঠুভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে পাঠদানের সহিত জড়িত বিভিন্ন কার্যাবলিকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করাকে বলা হয় শ্রেণি ব্যবস্থাপনা। এর ফলে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মান উন্নয়ন করা যায়। অন্যভাবে বলা যায় বাধাহীনভাবে পরিকল্পিত কাজগুলো সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক যে কৌশল অবলম্বন করা হয়, তাকেই শ্রেণি ব্যবস্থাপনা বলে। যেমন-শিক্ষার্থীদের অসদাচরণ নিয়ন্ত্রণ করে সুসম্পর্ক তৈরি করা।

শ্রেণি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য:

·       শিক্ষার্থীদের অসহযোগিতামূলক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে তাদের দিয়ে সহযোগিতামূলক আচরণ করানো;

[…]
20Apr2020

অধ্যায়-০১: শিক্ষার্থীর শিখন: শিখনের ক্ষেত্র ও শিখন তত্ত্ব, 

ক্লাস-১০: হাওয়ার্ড গার্ডনারের বহুমূখী বুদ্ধিমত্তার প্রকারভেদ এবং শ্রেণিকক্ষে এর প্রয়োজনীয়তা ও প্রয়োগ

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

  • হাওয়ার্ড গার্ডনারের বুদ্ধিমত্তাগুলোর বর্ণনা দিন।
  • শ্রেণিকক্ষে বুদ্ধির বহু উপাদান তত্ত্বকে প্রয়োগের জন্যশিক্ষকের করণীয় দিকসমূহ বর্ণনা করুন।
  • একজন শিক্ষক হিসেবে বহুমূখী বুদ্ধিমত্ত্বার জানার প্রয়োজনীতা ব্যাখ্যা করুন।

হাওয়ার্ড গার্ডনারের বুদ্ধিমত্তাগুলোর বর্ণনা দিন।

১. মৌখিক বা ভাষাভিত্তিক বুদ্ধিমত্তা:

[…]
19Apr2020

অধ্যায়-০১: শিক্ষার্থীর শিখন: শিখনের ক্ষেত্র ও শিখন তত্ত্ব

ক্লাস-০৯: বুদ্ধিমত্তা, বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য এবং হাওয়ার্ড গার্ডনারের বহুমূখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্ব।

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

  • বুদ্ধিমত্তা কী?
  • বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করুন।
  • বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা (Multiple Intelligence) তত্ত্ব কী?
  • বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা কত প্রকার ও কী কী?

বুদ্ধিমত্তা কী?

বুদ্ধিমত্তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ব্যক্তির যুক্তি, বোধ, আত্মসচেতনতা, শিখন, আবেগিক জ্ঞান, যৌক্তিকতা, পরিকল্পনা, সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বুদ্ধিমত্তাকে আরও বিস্তৃত করে সংজ্ঞায়িত করলে বলা যায় যে তথ্য বুঝতে পারার ক্ষমতা ও তা জ্ঞান হিসেবে ধারণ এবং পরবর্তীতে পরিবেশ অথবা অবস্থা অনুযায়ী খাপ খাইয়ে চলার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাই হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা। David Wechsler বুদ্ধিমত্তাকে ব্যক্তির আপন পরিবেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার, যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করা এবং কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করাকে বুঝিয়েছেন।

[…]
19Apr2020

অধ্যায়-০১: শিক্ষার্থীর শিখন: শিখনের ক্ষেত্র ও শিখন তত্ত্ব

ক্লাস-০৮: গঠনবাদ, সামাজিক গঠনবাদ, ZPD, এবং স্ক্যাফোল্ডিং

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়ঃঃ

  • গঠনবাদ (Constructivism) কী?
  • সামাজিক গঠনবাদ কী?
  • MKO কী?
  • ·ZPD কী?
  • স্ক্যাফোল্ডিং কী?
  • স্ক্যাফোল্ডিং-এর জন্য শিক্ষকের করণীয় দিকগুলো আলোচনা করুন।

গঠনবাদ (Constructivism) কী?

[…]

Ad

error: Content is protected !!