M.Ed Archives - Proshikkhon

Category "M.Ed"

18Jan2022

Class Management: Concepts, Materials and Strategies

শ্রেণি ব্যবস্থাপনা: ধারণা, উপাদান ও কৌশল

শিখন-শেখানো কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে শ্রেণি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক যদি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রেণি ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারেন তবেই সার্থক ও কার্যকর পাঠদান সম্ভব ।

শ্রেণি ব্যবস্থাপনা কী?

বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষব্যবস্থাপনা বলতে শিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য হাসিল করার জন্য ভে․ত এবং মানবীয় উপাদানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে জ্ঞান চর্চার অনুকূল
পরিবেশ সৃষ্টির সামগ্রিক প্রক্রিয়াকেই বোঝায়। অর্থাৎ শিক্ষক শিক্ষাক্রমের আলোকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়াকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকেন তাকেই শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা বলে।

শ্রেণি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বা লক্ষ্যণীয় দিক:

[…]
18Jan2022

Strategies for building good school relations with community members

সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক সৃষ্টির কৌশল

বিদ্যালয় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান৷ এখানে সেতু বন্ধনে আছেন  শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক৷ যেখানে শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের প্রাণ; সেখানে শিক্ষক ও অভিভাবক হচ্ছেন বিদ্যালয়ের দেহ স্বরূপ৷ একক প্রচেষ্টায় কখনো কোন প্রতিষ্ঠানের  উন্নতি সাধন  সম্ভব নয়৷ প্রত্যেক বিদ্যালয়ের একটি নির্ধারিত এলাকা (Catchment area) আছে৷ বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য ঐ এলাকার জনগোষ্ঠির বিদ্যালয়ের সাথে সুসম্পর্ক একান্ত প্রয়োজন৷ বিশেষ করে বিদ্যালয়ের সংগে এলাকার অভিভাবক শ্রেণি ও বিদ্যোত্সাহী ব্যক্তিবর্গের সুসম্পর্ক অপরিহার্য৷ যে প্রতিষ্ঠানের সংগে সমাজের  সদস্যদের যত ভাল সম্পর্ক, সে প্রতিষ্ঠান তত লেখাপড়ায় উন্নত৷ সমাজে বসবাসকারিগণই মূলত বিদ্যালয় উন্নয়নে  এগিয়েআসেন ৷ ব্যক্তিগত  নয়, সমষ্টিগত প্রচেষ্টাই কোন বিদ্যালয়  উন্নয়নের  পূর্বশর্ত ৷ কাজেই বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য  সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্কের  কোন বিকল্প নেই ৷এইঅধিবেশনে সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেই কৌশলসমূহ আলোচনা করা হবে৷

সমাজ সদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যম :

  • শ্রেণিওয়ারি মা সমাবেশ;
  • এস এম সি;
  • অভিভাবক দিবস;
  • উঠান বৈঠক;
  • শিশু র‌্যালি;
  • গণ্যমান্যব্যক্তিদের নিয়ে সভা;
  • শিক্ষোপকরণ প্রদর্শন;
  • গৃহ পরিদর্শন;
  • সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান;
  • বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য পুরস্কার;
  • দরিদ্র, অসহায় শিশুদের জন্য পুরস্কার;
  • একীভথত শিক্ষা সম্পর্কে অবহিতকরণ;
  • বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন;
  • শিক্ষা সপ্তাহ/ক্রীড়াসপ্তাহ;
  • প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় যুবক;
  • বিদ্যালয় সম্পর্কে মালিকানাবোধ;
  • পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ;
  • বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি।

সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক সৃষ্টির কৌশল:

  • শ্রেণিওয়ারি মা সমাবেশের ব্যবস্থা করা;
  • এস এম সি সদস্যদের সাথে নিয়মিত  সভা করা;
  • নির্ধারিত  দিনে অভিভাবক দিবস পালন  করা;
  • নিয়মিত ভাবে উঠান বৈঠকের ব্যবস্থা করা;
  • নির্ধারিত দিনে শিশুর‌্যালির ব্যবস্থা করা;
  • মাঝে মাঝে গণ্যমান্যব্যক্তিদের নিয়ে সভা করা;
  • শিক্ষার্থী কর্ত্তৃক তৈরিকৃত শিক্ষোপকরণ প্রদর্শনীতে অভিভাবকদের আমন্ত্রণ করা;
  • রুটিন  অনুযায়ী গৃহ পরিদর্শন করা;
  • সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এলাকার ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ করা;
  • বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা;
  • দরিদ্র, অসহায় শিশুদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা;
  • এলাকার জনগণকে একীভূত শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত করা;
  • বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা প্রণয়নে এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করা;
  • শিক্ষা সপ্তাহে ও ক্রীড়াসপ্তাহে স্থানীয় জনগণকে আমন্ত্রণ করা;
  • প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় যুবকদের বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত করা;
  • বিদ্যালয়টি সম্পর্কে এলাকাবাসীর মনে মালিকানাবোধ সৃষ্টি করা;
  • পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে সকলকে আমন্ত্রণ জানানো;
  • এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠা/ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির হাত দিয়ে পুরস্কার প্রদান।

আরও পোস্ট দেখুন:

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য

18Jan2022

Impact of teacher’s sense of community and human values in teaching and learning

শিখন-শেখানো কাজে শিক্ষকের সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রভাব

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের একজন দক্ষ শিক্ষক সমাজের পথ প্রদর্শক, সমাজসংস্করক ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব৷ তাঁর আদর্শে  শিক্ষার্থীরা ও সমাজের  অন্যান্য সদস্যবৃন্দ অনুপ্রাণিত  হন৷ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়: শিখন-শেখানো কার্যাবলির মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনে ভবিষ্যতের জন্য সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটে,  যা তাদের প্রকৃত  মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ধনাত্মক নিয়ামকের মত কাজ করে৷ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব৷ মানুষই একমাত্র বিবেকসম্পন্ন জীব৷ মানুষ অনেকগুলো গুণের অধিকারী৷ কিন্তু একজন শিক্ষককে মানুষের গুণাবলির পাশাপাশি আর অনেকগুনের অধিকারী হতে হয়, যা তাঁকে এক অনন্য মানুষে পরিনত করে৷ শিখন-শেখানো কাজে একজন শিক্ষকের সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রভাবসুদূরপ্রসারী, যা ভবিষ্যতে আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিফলিত হয়৷ আমরা এই অধিবেশনে  শিখন-শেখানো কাজে শিক্ষকের সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব৷

শিক্ষকের সমাজবোধ :

  • সমঝোতা,
  • সম্প্রীতি,
  • সহিষ্ণুতা,
  • মিলেমিশে কাজ করার মনোভাব,
  • নারীজাতির  প্রতি সম্মান প্রদর্শন,
  • মেয়ে শিক্ষার্থী ও ছেলে শিক্ষার্থীদের সমদৃষ্টিতে দেখা,
  • সংবেদনশীল,
  • প্রাণবন্ত,
  • আনন্দমুখর,
  • কৌতুকপ্রিয়।

শিক্ষকের মানবিক মূল্যবোধ

  •  সহনশীলতা,
  •  আত্মসংযমী,
  •  উদার দৃষ্টিভঙ্গি,
  •  ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন,
  •  কৌতুক রসবোধ,
  •  আত্মমর্যাদা সম্পন্ন,
  • কৌতুহল পরায়ণ,
  • শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ,
  • দয়া ও স্নেহপরায়ণ,
  • মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা।

সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রভাব বিস্তারের কৌশল

  •  শিশুকে ভাল আচরণ শিখতে অনুপ্রাণিত করা;
  •  নিজকে অনুকরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা;
  •   ভাল কাজের জন্য শিশুকে পুরস্কার দেয়া;
  •  ভাল কাজের জন্য শিশুকে প্রশংসা  করা;
  •  শিশুকে নিরাপদ পরিবেশ  প্রদান করা;
  •  শিশুদের মানবতামূলক গল্প শোনানো;
  •  মানবজাতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা;
  •  বড়দের সম্মান ও ছোটদের প্রতি সহানুভথতিশীল আচরণ  করতে শেখানো;
  •  সকলের  প্রতি মানবিক হতে  শেখানো;
  •  ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণে উদ্বুদ্ধ করা;
  •  সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করানো;
  •  পরমতসহিষ্ণুতা শেখানো;
  •  জাতীয়, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করানো;
  •  দেশের  স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করা।

আরও পোস্ট দেখুন:

সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক সৃষ্টির কৌশল

18Jan2022

Evaluation: Objectives, Types and Strategies

মূল্যায়ন: উদ্দেশ্য, প্রকারভেদ ও কৌশল

শিখন-শেখানো কার্যাবলির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল মূল্যায়ন (Assessment)। একটি সফল শিখন-শেখানো কার্যাবলি পরিচালনার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য মূল্যায়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যায়নের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর কোন একটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান/দক্ষতা/দৃষ্টিভঙ্গি তথা যোগ্যতার মান যাচাই করা যায়। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়নকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়েছে। গাঠনিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন হলো মূল্যায়নের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শ্রেণিবিভাগ। শিক্ষার্থীকে শিখনে সহায়তা করার জন্য শিখন শেখানো চলাকালীন যে মূল্যায়ন করা হয়, উহাই হলো গাঠনিক মুল্যায়ন (Formative Assessment); আর শিক্ষার্থী যা শিখেছে উহা মূল্যায়ন করাকে বলা হয় সামষ্টিক মূল্যায়ন (Summtive Assement)। বাংলাদেশে প্রচলিত যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অর্জিত যোগ্যতা সার্থকভাবে পরিমাপের জন্য গাঠনিক মূল্যায়নের ওপর জোর দিতে হবে। এজন্য গাঠনিক মূল্যায়নের কৌশলগুলো ভালভাবে জেনে শিখন শেখানোর কাজে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা গেলে শিখন শেখানোর প্রচষ্টা সফল হবে বলে ধরে নেয়া যায়।

মূল্যায়ন

শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ/উপাদান হলো শিক্ষার্থী মূল্যায়ন (assessment) যা শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি নিরূপণের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেক শিক্ষকের পেশাগত দায়িত্বের অংশ হলো শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারছে, কী মাত্রায় এবং কতটা ভালোভাবে শিখতে পারছে সে সম্পর্কে অবহিত হয়ে সর্বোচ্চ শিখন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

সাধারণভাবে মূল্যায়ন বলতে কোন কিছুর উপর মূল্য আরোপ করাকে বুঝায়। Gronlund & Linn (১৯৯০) এর মতে, শিক্ষণ উদ্দেশ্যের কতটুকু শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে পেরেছে তা নির্ণয়ের জন্য তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হল মূল্যায়ন। ঋৎববসধহ এবং খবরিং (১৯৯৮) এর মতে মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন – এর মাত্রা বা স্তর যাচাই করা হয়। এর কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থী কী জানে, বা কী করতে সক্ষম তা নিরূপণ করা। অর্থাৎ, মূল্যায়ন হলো একটি উপকরণ বা কৌশল যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য নির্ধারিত শিখন ফল (learning outcome) কতটা ভালভাবে অর্জন করতে পেরেছে তা নিরূপণ করা বা মাপা যায়। তবে শিখন মূল্যায়ন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে শিক্ষার্থীর শিখন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা, তা পর্যালোচনা করা এবং পর্যালোচনার ফসল শিক্ষার্থীদের শিখন মান উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হয়।

সাধারণভাবে শিক্ষাক্রম ও বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট যোগ্যতা শিক্ষার্থী কতখানি অর্জন করতে পেরেছে, বা কতটা অগ্রসর হয়েছে তা যাচাই করা হয় মূল্যায়নের মাধ্যমে। অর্থাৎ, কোন বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর জ্ঞান, বোধগম্যতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয়। আর তা করতে হবে নির্ধারিত শিখন উদ্দেশ্যের (learning intention) ভিত্তিতে।

মূল্যায়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

মূল্যায়নের প্রধান লক্ষ্য হলো পাঠের বিষয়বস্তু শেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত বা উদ্বুদ্ধ করা। এটি প্রধানত শিক্ষার্থীর শিখন মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীদের শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনে মূল্যায়ন তাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(ক) মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য প্রদান। শিক্ষার্থী কতখানি অগ্রসর হয়েছে বা কতটা পিছিয়ে পড়েছে সে সম্পর্কিত তথ্য জানা যায়; এবং সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীকে তার শিখন মান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যায়।

(খ) বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে সাধনের লক্ষ্যে মূল্যায়নের ফল ব্যবহার করে থাকে। যেমন: শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টি বা শিখনে আগ্রহ বৃদ্ধি, শিখনের সুযোগ প্রসারিত করা, শিক্ষার্থীকে শিখন সহায়ক পরামর্শ বা ফলাবর্তন দেয়া, শিক্ষককে শিক্ষণ পদ্ধতি যাচাই করার সুযোগ প্রদান, গ্রেড প্রদান, উপরের শ্রেণিতে পদোন্নতি, শিখন মান নিশ্চিত করা ইত্যাদি ।

(গ) মূল্যায়নের একটি বহুল ব্যবহৃত বা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীকে তার কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেয়া। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী কোন কোর্স বা বিষয়ে নির্ধারিত মানদন্ড (Particular standard) অর্জন করতে পেরেছে কিনা তার একটি প্রমাণ বা সনদ প্রদান করা হয় মূল্যায়নের মাধ্যমে।

(ঘ) শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা/কৃতিত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ নথিবদ্ধ করা, অন্য কথায় শিক্ষার্থীর প্রোফাইল বর্ণনা করা শিক্ষার্থীর শিখন মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

(ঙ) মূল্যায়নের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর শিখনকে সহায়তা করা। যেমন: প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আগ্রহ বৃদ্ধি করা, শিক্ষার্থীর কাজ বা পারদর্শিতার ওপর ফলাবর্তন (ভববফনধপশ) দেয়া যার দ্বারা শিক্ষার্থী তার দূর্বলতা দূর করে শিখন মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে, শিক্ষার্থীকে তার অগ্রগতি চিহ্নিত করতে সহায়তা করা।

(চ) শিক্ষার্থীর শিখন মূল্যায়নের তথ্য শিক্ষককে তার শিক্ষণ পদ্ধতি ও কলা-কৌশল পর্যালোচনা করার সুযোগ প্রদান করে। যেমন, শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা কোন প্রশ্নের উত্তর কতটা সঠিকভাবে দিতে পারছে; সব শিক্ষার্থী উত্তর দিতে পারছে কিনা ইত্যাদি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষক তার শিক্ষণ পদ্ধতির মান যাচাই করতে পারেন।

(ছ) শিক্ষার্থীর কতটা অগ্রগতি হয়েছে, বা শিক্ষার্থী কোন কাজের জন্য কতটা যোগ্য – এ বিষয়ে অভিভাবককে অবহিত করা মূল্যায়নের একটি উল্লখযোগ্য কাজ।

মূল্যায়নের প্রকারভেদ:

১. অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়ন (Informal Assessment) ও আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন (Formal Assessment):

শ্রেণীকক্ষের প্রতিদিনের শিখন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত না করে যে মূল্যায়ন করা হয়, তাই অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়ন । যেমন: শিক্ষার্থীর উত্তর ও উপস্থাপন শুনে, শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে, বাড়ির কাজ বা নির্ধারিত কাজ যাচাই করে তাকে মূল্যায়ন করা।

পক্ষান্তরে, কোন উদ্দেশ্য নিয়ে শ্রেণীকক্ষের শিখন কাজ বন্ধ রেখে নির্দিষ্ট সময়ে ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় যে মূল্যায়ন করা হয়, তাই আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন । যেমন: ষান্মাসিক পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা ইত্যাদি।

২. গাঠনিক (Formative) ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (Summative):

শিখন শেখানো কাজ চলাকালীন যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকে গাঠনিক মূল্যায়ন বলে। যেমন: শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা (পড়া, লেখা, বলা, অভিনয়, আবৃত্তি, আঁকা ইত্যাদি) পর্যবেক্ষণ করে, মৌখিক প্রশ্ন করে । 

অন্যদিকে একটি ইউনিটের / সাময়িকের/ বছরের কার্যক্রমের শেষে শিক্ষার্থী কী অর্জন করল তা যাছাই এর জন্য যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলে। যেমন: সাপ্তহিক পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা ইত্যাদি ।

৩.  ধারাবাহিক মূল্যায়ন (Continuous Assessment) ও প্রান্তিক মূল্যায়ন (Terminal Assessment):

শিখন শেখানো কার্যাবলিতে অবিরতভাবে যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বলে। অন্যদিকে একটি কোর্সের শেষে শিক্ষার্থী কী অর্জন করল তা যাছাই এর জন্য যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকে প্রান্তিক মূল্যায়ন বলে।

৪. নির্ণায়ক মূল্যায়ন বা দুর্বলতা সনাক্তকরণ মূল্যায়ন (Diagnostic Assessment):

যে মূল্যায়ন বিশেষ ক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থীর শিখন সমস্যা, ভুল ধারণা সনাক্ত করতে তৈরি করা হয়, তাকে নির্ণায়ক মূল্যায়ন বলে। যেমন: সব বর্ণমালা না চেনা এবং কম শব্দ ভাণ্ডারের কারণে স্বাভাবিক গতিতে লেখায় অসুবিধা হয়। নির্ধারিত শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে এ মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

গাঠনিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের কৌশল:

গাঠনিক মূল্যায়নের কৌশল:

এ প্রক্রিয়ার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে ফলাবর্তন (feedback) করা। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ই ফলাবর্তন লাভ করে এবং তা ব্যবহার করে তাদের শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে পারে। গাঠনিক মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর শিখনে সহায়তা করে বলে আন্তর্জাতিক অনেক শিক্ষাবিদ বা বিশেষজ্ঞ এর নাম দিয়েছেন ‘শিখনের জন্য মূল্যায়ন’ (Assessment for Learning)। সুতরাং গাঠনিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় তা হলো-

(ক) শিক্ষার্থীদের সমস্যা সনাক্ত করা;

(খ) সমস্যা কখন/কোন সময়ে দেখা দিয়েছে;

(ঘ) সমস্যার কারণ সনাক্ত করা এবং

(ঙ) সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় ইত্যাদি।

সুতরাং বহুমুখী কৌশল, পদ্ধতি ও কার্যাবলীর সমন্বয়ে গাঠনিক মূল্যায়ন সংঘটিত হয়। এ কার্যাবলির মধ্যে থাকতে পারে- কুইজ, বিষয়ভিত্তিক মৌখিক ও লিখিত প্রশ্ন, দলীয় কাজ ও উপস্থাপন, জোড়া কাজ, বা ব্যাক্তিগত পঠন, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি।

গাঠনিক মূল্যায়নের জন্য  একজন শিক্ষার্থীকে একাকী অথবা দলীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে, প্রশ্ন করে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখতে দিয়ে অথবা বলতে দিয়ে তার  অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এজন্য শিক্ষক কী টুলস বা প্রক্রিয়া ব্যবহার করবেন অর্থাৎ কী প্রশ্ন করবেন, কী বলতে দেবেন, কী লিখতে দেবেন অথবা কী কাজ করতে দেবেন সে সম্পর্কে একটি লিখিত পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে পারেন। প্রশ্ন করলে তা হতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত এবং চিন্তা উদ্রেককারী। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করতে হবে। প্রশ্নোত্তর ছাড়াও মিলকরণ, শূন্যস্থান পূরণ, চিহ্নিতকরণ ইত্যাদি ব্যবহার করেও শিক্ষার্থীর অবস্থান জানা যেতে পারে।

সামষ্টিক মূল্যায়ন:

যখন একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিক্ষার্থী কী জানে বা জানেনা তা নিরূপণ করার জন্য যে মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হয়। যেমন, বাংলাদেশের বিদ্যালয়ে ১ম ও ২য় সাময়িক (তিন/চার মাস পর পর) এবং বছরের শেষে যে মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণভাবে কোন কোর্স, ইউনিট, অধ্যায়, সেমিস্টার বা টার্মের শেষে এ মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এ থেকে শিক্ষার্থী কোন কোর্স বা পাঠের বিষয়বস্তু কতখানি আয়ত্ব করতে বা শিখতে পেরেছে তা জানা যায়।

 Gipps (1994: p.vii) এর মতে- “Summative assessment takes place at the end of a term or a course and is used to provide information about how much students have learned and how well a course has worked.”

সামষ্টিক মূল্যায়ন কৌশল:

এ মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে সাধারণতঃ গ্রেড বা নম্বর প্রদান করা হয় এবং শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেমন: শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ; কিংবা পাশ-ফেল হিসেবে ফলাবর্তন দেয়া হয়। শিক্ষার্থীর শিখন সমস্যা সমাধান বা উন্নয়নের সুযোগ থাকেনা। এ ধরনের মূল্যায়ন একাডেমিক বছরের নির্ধারিত কিছু সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। যেমন, ৩ মাস পর পর, বা একাডেমিক বছরের শেষে।

এ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান বা শিখন পরীক্ষা করা হয় যা তার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জন করার কথা। শ্রেণীকক্ষ পর্যায়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন তথ্য কাজে লাগিয়ে শিক্ষণ বা শিখন প্রক্রিয়ায় কোন পরিবর্তন আনা যায় না। 

এ মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর শিখন অবস্থা এবং মান সম্পর্কে শুধু তথ্য প্রদান করে বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষাবিদগণ এর নাম দিয়েছেন ‘শিখন বা পারদর্শিতার মূল্যায়ন’ অথবা Assessment of Learning । সাধারণতঃ আনুষ্ঠানিক এবং বিশেষ পরিবেশে (যেমন, পরীক্ষার হল) এ ধরনের মূল্যায়ন সংঘটিত হয়। তাই একে আনুষ্ঠানিক মূল্যায়নও (Formal Assessment) বলা হয়।

সামষ্টিক মূল্যায়নের কার্যাবলী ও সময়:

সাধারনতঃ বিভিন্ন অভীক্ষা ও পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়নের ফল স্কোর বা গ্রেডের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমন, ক, খ, গ, ঘ ইত্যাদি। অর্থাৎ, মূল্যায়নের ফল শিক্ষার্থীকে সাংখ্যিকভাবে শ্রেণীবিভক্ত (যেমন, সিরিয়াল করা; বা রোল নং প্রদান অথবা গ্রেড প্রদান) করা এবং শিক্ষার্থীদের পরস্পরের সাথে তুলনা করার কাজে ব্যবহার করা হয়।

মূল্যায়নে গাঠনিক এবং সামষ্টিক মূল্যায়নের ভূমিকা:

এই দুই ধরনের মূল্যায়ন কৌশলের মধ্যে কোন একটি অপরটির চেয়ে অধিক কার্যকর নয়। শিক্ষার্থীদের শিখন সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য দুটি পদ্ধতিরই প্রয়োজন রয়েছে (Garrison & Ehringhaus, ২০০৭)। পদ্ধতি দুটিকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। যে কোন একটি ওপর অত্যধিক নির্ভরতা বাস্তব শ্রেণীকক্ষে অনুষ্ঠিত শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণার জন্ম দিবে।

আরও পোস্ট দেখুন:

নৈর্ব্যক্তিক ও কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা প্রনয়ন কৌশল

17Jan2022

Multiple Intelligences

বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্ব

হাওয়ার্ড গার্ডনার অ্যামেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খ্যাতনামা শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী। বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে তার তত্ত্ব সাম্প্রতিক কালে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানে একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে এ তত্তে¡র প্রয়োগ করা হচ্ছে। গার্ডনার তাঁর বিখ্যাত বই “Frames of Mind: The Theory of Multiple Intelligences” তে শিখনের ক্ষেত্রে ৮ ধরনের বুদ্ধিমত্তা কাজ করে বলে উল্লেখ করেছেন, বুদ্ধিমত্তাগুলো হলো-

১। মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা;

২। যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা;

৩। দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা;

৪। ছন্দ ও সংগীত বুদ্ধিমত্তা;

৫। অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা;

৬। অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা;

৭। আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা;

৮। প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা।

বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ ও শিখন প্রক্রিয়া

বুদ্ধিমত্তা লক্ষণ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের শিখন শেখানো ক্ষেত্রে শ্রেণীকক্ষে বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বের প্রয়োগ যেভাবে করবেন- মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা: এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা শোনা, বলা ও পড়ার মাধ্যমে সহজে শেখে।

মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • শুনতে পছন্দ করে।
  • বলতে পছন্দ করে।
  • পড়তে পছন্দ করে।
  • লিখতে পছন্দ করে।
  • সহজে বানান করে।
  • গল্প বলে, গল্প লেখে।
  • সাবলীল ভাষায় বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে।
  • শব্দভান্ডার বেশি ও তা যথাযথ ব্যবহার করে।
  • গুছিয়ে কথা বলে।
  • স্মরণ শক্তি বেশি হয়।
  • ভালো বক্তৃতা দেয় ।      

মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • বিভিন্ন ধরনের পড়ার উপকরণ যেমন বইপত্র, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, লেখার বিভিন্ন উপকরণ, শ্রবণমূলক উপকরণ যেমন অডিও টেপ, শ্রবণ-দর্শনমূলক যেমন টেলিভিশন ইত্যাদি শ্রেণিকক্ষে ব্যবহারের সুবিধা নিশ্চিত করবেন।
  • মৌখিকভাবে ভাব প্রকাশে শিশুকে উৎসাহিত করবেন।
  • ভাষা সম্বন্ধীয় বুদ্ধিমত্তাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শিশুকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য বিভিন্ন কৌশলে প্রশ্ন করবেন (যেমন, তোমার মধ্যে কী কী সামাজিক গুণাবলি রয়েছে?)
  • ব্যক্তি, স্থান বা বস্তুর নাম স্মরণ করে বলার প্রতিযোগিতা করা
  • দেয়াল পত্রিকা সম্পাদনা করা।
  • জীবনের দৈনন্দিন ঘটনা লিখে রাখা।
  • সমস্যা বা ঘটনা বর্ণনা করা।
  • কোন বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা।
  • কারো সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা।

যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা:

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা সংখ্যা ও নকশার সাহায্যে সহজে শেখে। যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ:

  • গুনতে আনন্দ পায়।
  • বস্তুর সাহায্য ছাড়াই কোন বিষয়ে সহজে ধারণা লাভ করে।
  • সংক্ষিপ্ততা পছন্দ করে।
  • যুক্তি দিয়ে বিচার-বিবেচনা করে।
  • ধাঁ ধাঁ ও অঙ্কের খেলা পছন্দ করে।
  • সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে।
  • সমস্যা সমাধানে আনন্দ পায়।

যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • শ্রেণিতে নানা ধরনের ব্লক, বিভিন্ন আকৃতির, রংয়ের, আদলের, গঠন বিন্যাসের বস্তু থাকবে।
  • শিক্ষক এমন কিছু কাজ পরিকল্পনা করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা পরিমাপ ও হিসাব নিকাশ কাজে সম্পৃক্ত করার জন্য মানচিত্র, গ্রাফ পেপার, কম্পাস, থার্মোমিটার ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারে। যেমন চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব’ অধ্যায়ের জন্য বিগত চল্লিশ বছরে জনসংখ্যার বৃদ্ধি দেখাতে বলবেন।
  • তথ্য বর্ণনা করার সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য চার্ট ব্যবহার করবেন।
  • শিক্ষার্থীর সহায়তায় কোন কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা।
  • শিক্ষার্থীর সহায়তায় সমস্যা সমাধান করা।
  • একাধিক বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য খুঁজে বের করা।
  • জীবজন্তু ও গাছপালা শ্রেণিকরণ করা।

দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা: এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা ছবি, রেখাচিত্র ও রূপরেখার সাহায্যে সহজে শেখে।

দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • ছবির বিষয়বস্তু সম্বন্ধে চিন্তা করে।
  • ছবির সাহায্যে মনে রাখে।
  • ছবি আঁকতে ও রং করতে ভালবাসে।
  • প্রতিকৃতি বানাতে পছন্দ করে।
  • মানচিত্র, চার্ট এবং নকশা সহজে বুঝতে পারে।
  • কোন কিছুর চিত্র সহজে কল্পনা করে।
  • রূপক শব্দ ও বাক্য বেশি ব্যবহার করে।     

দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • তথ্য উপস্থাপনের সময় তথ্যগুলোকে দর্শনমূলকভাবে বা ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন। যেমন পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিবেশ’ অধ্যায়টি আপনি বাংলাদেশের সাহায়্যে উপস্থাপন করলে সবচেয়ে সফল হবেন। পাওয়ারপয়েন্ট, মানচিত্র, চার্ট, গ্রাফ, মডেল, কার্টুন, ভিডিও, স্লাইড ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
  • শিক্ষার্থীদের একক বা দলগত কাজ দর্শনমূলকভাবে উপস্থাপনা করা। যেমন: পোস্টার, সময় রেখা, মডেল, মানচিত্র, চার্ট, ধারণা মানচিত্র ও ব্যাখ্যামূলক ছবি ব্যবহার করার মতো উপযুক্ত কাজ দলগতভাবে করতে দিবেন।
  • পাঠ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকার ছবির ব্যবহার করা।

ছন্দ বা সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তা :

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা ছড়া, ছন্দ ও ধ্বনির তালে তালে সহজে শেখে।

ছন্দ বা সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • তাল ও লয়ের প্রতি বেশি আকর্ষণ থাকে।
  • সুর ও ছন্দ সহজে মনে প্রভাব বিস্তার করে।
  • গান পছন্দ করে। কবিতা ও ছড়া তালে তালে আবৃত্তি করতে পছন্দ করে।
  • প্রকৃতির বিভিন্ন শব্দ শুনে সহজে আকৃষ্ট হয়।

ছন্দ বা সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তু মনে রাখার জন্য ছন্দময় ছড়া তৈরি ও ব্যবহার করা।
  • বিষয়বস্তু দিয়ে কোনছড়া, ছন্দ, গান বা সুর তৈরি করা যাতে প্রয়োজনে সহজে স্মরণ করা যায়।

অনুভুতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা :

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা শারীরিক কলাকৌশল ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাহায্যে সহজে শেখে।         

অনুভুতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • খেলাধুলা পছন্দ করে।
  • কোন কিছু সহজে স্পর্শ করতে চায়।
  • হাতে কলমে কাজ করতে পছন্দ করে।
  • হস্ত শিল্পে দক্ষ হয়।
  • শরীর ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপর নিজের যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে।
  • অংশগ্রহণ করে সহজে শেখে।
  • বস্তু সহজে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • শুনে দেখে শেখার চেয়ে নিজে করে শেখে ও বেশি মনে রাখে।         

বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া

  • তাই শ্রেণিকক্ষে শারীরিক সঞ্চালনমূলক কিছু কাজের পরিকল্পনা করবেন যাতে এরা উপকৃত হয়। যেমন দলগত কাজ উপস্থাপন, নাচ, গান, ছবি আঁকা, পাজল, ব্লক, কাঠের ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতে দিন।
  • ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে উৎসাহিত করুন। পরিকল্পনা করে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য শ্রেণীকক্ষের বাইরে নিয়ে যান।
  • অভিনয়ের মাধ্যমে শেখান যেমন: ‘বিদ্যালয়ে আমাদের কাজ’।

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা অন্যের সঙ্গে ও দলে কাজ করে সহজে শেখে। অন্যের মনের কথা সহজে বুঝতে পারে।

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে।
  • অনেক বন্ধু বান্ধব থাকে।
  • ঝগড়া মেটাতে পছন্দ করে।
  • অন্যের কাজে সাহায্য করে।
  • দলে কাজ করতে পছন্দ করে।
  • সামাজিক পরিস্থিতি সহজে বুঝতে পারে।  

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া

  • এ ধরনের শিক্ষার্থীদের জন্য সহযোগিতামূলক শিখন কার্যক্রম পরিকল্পনা করবেন।
  • শ্রেণীতে এমন কিছু কাজ দিবেন যেখানে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে, সবাই মতামত দিতে পারে এবং যুক্তি দিতে পারে।
  • শিক্ষার্থীদেরকে ভালো কাজের জন্য উৎসাহিত (জবরহভড়ৎপব) করুন। যাতে একে অপরের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে শিখে।
  • সহযোগিতামূলক খেলার ব্যবস্থা করা

অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা একাকী চিন্তা ও কাজ করে সহজে শেখে।        

অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • একাকী থাকতে পছন্দ করে।
  • কম কথা বলে।
  • অধিক চিন্তা করে।
  • নিজে নিজে শিখতে চায়।
  • নিজের সম্বন্ধে সচেতন থাকে।
  • কোন ঘটনার পূর্বাভাস সহজে অনুমান করতে পারে।
  • একাকী কাজে উৎসাহী হয়।
  • নিজের সবলতা ও দূর্বলতা সহজে বুঝতে পারে।
  • সামাজিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে দূরে রাখে।      

অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া

  • নিজ নিজ কাজ পরিকল্পনা করতে দিন। কাজের পর আত্ম প্রতিফলনের সুযোগ করে দিন।
  • লেখার ভিতর দিয়ে তাদের অভিব্যক্তির ইতিবাচক প্রকাশকে উৎসাহিত করুন।
  • ব্যক্তিগত ডায়রি ব্যবহারে উৎসাহিত করুন। নিজের জীবন কথা বা ঘটনা, নিজের শিখন অভিজ্ঞতা ইত্যাদি ডায়রিতে লিখতে উৎসাহিত করুন।
  • পাঠ শেষে কী শিখতে অসুবিধা হয়েছে জিজ্ঞেস করুন।

প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা প্রকৃতির গাছপালা, পশুপাখি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে সহজে শেখে।

প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • গাছপালা ও পশুপাখি পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করে।
  • পশুপাখি ও গাছপালার বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা করতে পছন্দ করে।
  • গাছপালা ও পশুপাখি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করে।
  • গাছ লাগাতে এবং যত্ন করতে ভালবাসে।
  • জীব জগতের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করতে পছন্দ করে।
  • প্রাণী ও উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করে।    

প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • শিখন শেখানোর সময় শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণিকক্ষের বাইরে নিয়ে যান যাতে শিশুরা পাঠগ্রহণের পাশাপাশি প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারে।
  • প্রকৃতিতে যা কিছু বৈচিত্র্য আছে (যেমন : গাছপালা, আবহাওয়া ইত্যাদি) তার সাথে বিষয়বস্তুর সম্পর্ক স্থাপন করতে সহায়তা দিন।
  • ফিল্ড ট্রিপ এর ব্যবস্থা করুন।
  • এ্যাকুরিয়ামে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সংগ্রহ রাখুন।

বহুমুখী বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা হয় আকর্ষণীয়, এতে শিশুর সুপ্ত প্রতিভার স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং প্রতিটি শিশুর মধ্যে জোরালো বুদ্ধিমত্তাকে শিখনের কাজে ব্যবহার করা যায়। ফলে শিখন প্রক্রিয়া আনন্দদায়ক হয়। অন্যদিকে কোনো শিশুর যেসব বুদ্ধিমত্তা কম, অন্যদের জোরালো বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় সেগুলোও শক্তিশালী হয়।

আরও পোস্ট দেখুন:

11Aug2021

Teaching Aids : Uses & Its Principles, Collection, Making and Preservation

শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার

প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ শিশুর সামনে বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য শিক্ষোপকরণের বিকল্প নেই৷ এর মাধ্যমে জটিল, বিমূর্ত, ও দূর্বোধ্য বিষয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের সামনে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা যায়৷ একজন শিক্ষকের তাই শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা প্রয়োজন৷ 

শ্রেণিতে শিক্ষাপোকরণ ব্যবহার করে কি ধরণের সুবিধা পাওয়া যায়, পাঠকে কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, কিভাবে পাঠকে বাস্তবভিত্তিক করে তোলা যায় কিভাবে বিমূর্ত বিষয়কে মূর্ত করে তোলা যায় এগুলো বোঝার জন্য শিক্ষাপোকরণের প্রয়োজনীয়তা জানা প্রয়োজন৷

শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা

  • বিষয়বস্তুকে সহজ ও প্রাণবন্ত করতে;
  • শিক্ষার্থীদের মনযোগ আকর্ষণ করতে;
  • শিখনফল অর্জন নিশ্চিত করা;
  • জটিল বিষয়কে খুব সহজে উপস্থাপন করা;
  • শিখনফল দীর্ঘস্থায়ী করা;
  • শিখন ফলপ্রসূ ও স্থায়ী করতে;
  • উপকরণ ব্যবহার ও অনুশীলনের যথাযথ সুযোগ সৃষ্টি করা;
  • শিখন শেখানো কার্যক্রমে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা;
  • পাঠকে জীবনভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত করা;
  • শিক্ষার্থীদের পাঠের সাথে সম্পৃক্ত করে তুলতে;
  • শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও চিন্তাশীল করে তুলতে;
  • পাঠের একঘেয়েমী দূর করতে;
  • ইন্দ্রিয় শক্তির ব্যবহার বাড়াতে;
  • শ্রেণি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে।

শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের নীতিমালা

  • শ্রেণির আয়তন ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার প্রতি খেয়াল রেখে উপকরণের সাইজ নির্ধারণ করা।
  • পেছনের সারি হতেও যাতে দেখা যায় তা মাথায় রেখে সকলের দৃষ্টিগ্রাহ্য ও স্পষ্টতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া।
  • শিক্ষার্থীর বয়স, মেধা, রূচি ও সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখা।
  • পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর সহিত মিল রাখা।
  • কাঠিন্য পরিহার করে সহজভাবে উপস্থাপন করা।
  • উপকরণকে শিক্ষাক্রমের সাথে সমন্বয় করা।
  • অকারণেই অধিক চাকচিক্য পরিহার করা।
  • উপকরণকে বোধগম্য ও অর্থপূর্ণ করা।

উপকরণ ব্যবহারের কৌশল

  • শ্রেণিতে প্রবেশ করেই উপকরণ প্রদর্শন না করা;
  • উপস্থাপন পর্যায়ে যখন প্রয়োজন তখন প্রদর্শন করা;
  • যতক্ষণ প্রয়োজন ঝুলিয়ে রাখা;
  • উপকরণ প্রদর্শনে শিশুদের সহায়তা নেওয়া;
  • উপকরণ হিসেবে শ্রেণির শিশুদের ব্যবহার করা;
  • সকলের জন্য দৃশ্যমান করে উপকরণ উপস্থাপন করা;
  • শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি জিনিসকে প্রয়োজনে পাঠের সাথে সংশ্লিষ্ট করে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা;
  • উপকরণের ওপর প্রশ্ন করা বা উপকরণ সম্পর্কে কিছু বলতে দেওয়া।

আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানান রকমের শিক্ষোপকরণ ব্যবহার হয়৷ বিষয় ভিত্তিক নানান উপকরণ রয়েছে৷ উপকরণগুলোর ব্যবহার শৈলীর মধ্যেও অনেক পার্থক্য আছে৷ একজন শিক্ষকের এই ভিন্ন ভিন্ন উপকরণগুলোর ব্যবহার শৈলী জানা প্রয়োজন৷ এছাড়াও শ্রেণিকক্ষে উপকরণ প্রদর্শনের নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন আছে যাতে সকল শিক্ষার্থী উপকরণ ব্যবহারের সুফল পায় এবং শ্রেণি পাঠদান সার্থক হয়৷  

একটি শিক্ষোপকরণ শুধু একবারই ব্যবহার হয় না৷ কিংবা বিদ্যালয়ে শুধু একজন শিক্ষকই ব্যবহার করেন না৷ এগুলো বার বার ব্যবহার হয়৷ তাই এগুলো সঠিক ভাবে সংরক্ষণের উপায় জানা জরুরী৷ বিদ্যালয়ে বিষয় অনুযায়ী উপকরণ গুলো সাজিয়ে রাখলে খুজে পেতে সুবিধা হয়৷ ছোট ছোট উপকরণ গুলো বক্সে রাখা যেতে পারে৷ পোস্টার, ছবি, মানচিত্র ইত্যাদি দেয়ালে ঝুলিয়ে বা গোল করে পেচিয়ে রাখা যেতে পারে৷ সকল উপকরণ শুকনা স্থানে রাখা প্রয়োজন৷

শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি

প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষক স্ব-প্রণোদিত হয়ে বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও সংগ্রহ করবেন। একজন শিক্ষক নিজ উদ্যোগে শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও সংগ্রহ করার জন্য যা করতে পারেন:

  • তিনি যেসকল বিষয়ে পাঠদান করেন তার একটি তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
  • তালিকা দেখে কোন কোন উপকরণ সহজলভ্য ও স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাবে তা চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে তালিকা প্রণয়নের সময় সহজলভ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
  • তালিকা অনুসারে প্রথমে নিকট পরিবেশ, স্থানীয় জনগণ ও অভিভাবকদের থেকে সহজলভ্য উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে।
  • বিনামূল্যে উপকরণ সংগ্রহ করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
  • যে সকল উপকরণ সংগ্রহ করা হবে তার স্থায়ীত্ব বিবেচনা করে তা দীর্ঘদিন অথবা বারবার ব্যবহার করা যাবে কিনা তা মাথায় রাখতে হবে।
  • শিক্ষার্থীর বয়স, আগ্রহ, সামর্থ্য ও রুচির প্রতি খেয়াল রেখে শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পরিকল্পনা করতে হবে।
  • সম্ভাব্য উপকরণটি শিক্ষার্থীর পাঠ গ্রহণে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সহায়ক কি না তা বিবেচনা করতে হবে।
  • প্রয়োজনে একই উপকরণ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবহার করা যায় কি না তা খেয়াল রাখতে হবে।
  • শিক্ষা উপকরণের কাঠামো শ্রেণী উপযোগী কি না তা বিবেচনা করতে হবে।
  • তালিকা অনুসারে উপকরণ সংগ্রহের পাশাপাশি স্বল্পখরচে উপকরণ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সকলে মিলে পরিকল্পনা মাফিক সময় নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়েও কম খরচে ও স্বল্প পরিশ্রমে উপকরণ তৈরি করতে হবে।

শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণ

শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পাশাপাশি শিক্ষককে অবশ্যই একটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে তা হলো যথাযথভাবে উপকরণ সংরক্ষণ করা। আমাদের দেশে উপকরণ সংরক্ষণ করে সেই উপকরণ বারবার ব্যবহার করার বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। সঠিকভাবে শিক্ষা উপকরণ সংগঠিত না করলে এবং এগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পুরো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে। কাজেই শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি হয়ে গেলে এসবের যথাযথ সংরক্ষণ করা জরুরী।

শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণের কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো:

  • সর্বপ্রথমে একটি উপকরণ কর্ণার নির্ধারণ করতে হবে।
  • স্টক রেজিস্টার চালু করতে হবে এবং সব ঠিকঠাক আছে কিনা নিয়মিত যাচাই করতে হবে।
  • কক্ষটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, যথাযথ আলোর ব্যবস্থা এবং অবশ্যই জীবাণুমুক্ত ও কীট পতঙ্গমুক্ত হতে হবে।
  • প্রত্যেক শ্রেণি ও বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা আলমারী কিংবা র‌্যাক ট্যাগ লাগিয়ে রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনের সময় দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়।
  • প্রতিটি শিক্ষা উপকরণের নাম, সংগ্রহের তারিখ, স্থান, সংগ্রহকারীর নাম ইত্যাদির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণযুক্ত লেবেল লাগিয়ে রাখলে ভালো হয়।
  • দামী ও দুর্লভ উপকরণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
  • ব্যবহারের পর অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • পঁচনশীল উপকরণ সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি, ফরমালিন ইত্যাদি মিশিয়ে রাখতে হবে।
  • বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করার পূর্বেই তা পরীক্ষা করতে হবে এবং অতি সাবধানতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
  • উপকরণ সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত কক্ষের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষককে প্রদান করলে ভালো হয়।
  • যেসব উপকরণ শ্রেণীকক্ষে ঘন ঘন ব্যবহারের প্রয়োজন হয় সেসব উপকরণ একটি নির্দিষ্ট স্থানে এবং যেসব উপকরণ ঘন ঘন ব্যবহার হয় না সেসব উপকরণ পৃথক স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষা উপকরণ ও এর সংজ্ঞা, শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে প্রেস করুন।

10Aug2021

Summative evaluation

সামষ্টিক মূল্যায়ন কী?

সামষ্টিক মূল্যায়ন টার্মটি চূড়ান্ত বা প্রান্তিক মূল্যায়ন নামেও পরিচিত। একটি নির্দিষ্ট কোর্স শেষে শিক্ষার্থীর শিখন অর্জন চূড়ান্তভাবে যাচাই করার উদ্দেশ্যে যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকেই সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হয়। এ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন অর্জনের তুলনামূলক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়৷ চূড়ান্ত বা সামষ্টিক মূল্যায়ন একটি নিদিষ্ট সময়ের শেষেও নেওয়া যায়৷ কোন শিক্ষা পরিকল্পনা বা শিক্ষা কার্যক্রমের শেষে এসে যে মূল্যায়ন করা হয় তাকে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলে।

সামষ্টিক মূল্যায়নের সংজ্ঞা

আর. এন প্যাটেলের এর মতে- “কোন কর্মকান্ড সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সর্বশেষ মূল্যায়ন বা সিদ্ধান্ত কে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলে”।

এর প্রাথমিক উদ্দেশ্যসমূহ- গ্রেড নির্ণয়, শিক্ষণ দক্ষতার বিচার, শিক্ষাক্রমের পর্যালোচনা, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন, শিক্ষণ পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই ইত্যাদি ।

সামষ্টিক বা চূড়ান্ত মূল্যায়নের বৈশিষ্ট্য

  • সামষ্টিক মূল্যায়ন আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়।
  • শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি সম্পর্কে সার সংক্ষেপ পাওয়া যায়।
  • একটি নির্দিষ্ট সময় যেমন : বছর, ৩ মাস, ৬ মাস ইত্যাদি শেষে এ মূল্যায়ন করা হয়৷
  • এ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নম্বর/মাকর্স প্রদান করে শিক্ষার্থীদের শিখনের তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যায়৷
  • এ মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকার উল্লে­খ থাকে৷ কখনও গ্রেড দেওয়া হয়৷
  • এ মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের পাশ ও ফেল নির্ধারণ করা হয়৷ যারা পাশ করে তাদের কোন কোন ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট ও পুরস্কার দেওয়া হয়৷
  • এ মূল্যায়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব বা পারদর্শিতা মূল্যায়ন৷
  • চূড়ান্ত মূল্যায়ন অভীক্ষা প্রয়োগ করে বা প্রজেক্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
  • এটি শিক্ষার্থী কর্তৃক নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের চূড়ান্ত অবস্থার মূল্যায়ন।

  সামষ্টিক বা চূড়ান্ত মূল্যায়নের সীমাবদ্ধতা

এ মূল্যায়ন অনেকক্ষেত্রে পাশনির্ভর পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়৷ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ব্যতীত এ পদ্ধতি এককভাবে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জন সফল না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷দুর্বল শিক্ষার্থীদের নিরাময়মূলক ব্যবস্থা নিয়ে শিখন ঘাটতি দূরীকরণের সুযোগ থাকে না৷এ মুল্যায়নে শিক্ষার্থীর আচরণের যে দিকগুলো আসা উচিত তা হল জ্ঞান, দক্ষতা ও অনুভূতি৷ প্রচলিত চূড়ান্ত মূল্যায়নে সাধারণত জ্ঞান অর্জনমূলক আচরণ যাচাই করা হয়৷

সামষ্টিক বা চূড়ান্ত মূল্যায়নে ব্যবহৃত উপকরণ

১. লিখিত পরীক্ষা : যেমন-  রচনামূলক ও নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা।

২. মৌখিক পরীক্ষা : যেমন- ভর্তি পরীক্ষা বা এ ধরণের কোন পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষা।

৩. ব্যবহারিক পরীক্ষা

৪. এছাড়াও অ্যাসাইনমেন্ট, টার্ম পেপার বা কিউমুলেটিভ রেকর্ড সামষ্টিক মূল্যায়নে ব্যবহৃত হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রচলিত সামষ্টিক মূল্যায়ন

সাময়িক মূল্যায়ন:

প্রথম সাময়িক ও দ্বিতীয় সাময়িক কখন সম্পন্ন হয়?

৩-৪ মাস পরে প্রথম সাময়িক মূল্যায়ন হয়, ৬-৭ মাস পরে দ্বিতীয় সাময়িক মূল্যায়ন হয়৷

বার্ষিক মূল্যায়ন:

বছরের শেষে সমগ্র বইয়ের ওপর অনুষ্ঠিত হয৷

মূল্যায়নের স্থান: নিজ বিদ্যালয়

পরিচালনার দায়িত্ব:

বিদ্যালয় পর্যায়ে পরিচালনার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকগণের এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছে, স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের বিষয় শিক্ষকগণ সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে থাকেন৷

উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক প্রণীত অভিন্ন প্রশ্ন ব্যবহার করে এ মুল্যায়ন করা হয়৷

ফলাফল:

বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং প্রধান শিক্ষক উত্তরপত্র যাচাই করা হয়৷

ফলাফল প্রস্তুত করে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক কর্তৃক অংশীজনের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়৷ ফলাফলে কৃতকার্য ও অকৃতকার্য এবং শ্রেণিতে মেধা তালিকায় স্থান ঘোষণা করা হয়৷

প্রাথমিক স্তরের সমাপনী পরীক্ষা কী?   

পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পরে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষায় যোগ্যতা অর্জন যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে যে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তা হল সমাপনী পরীক্ষা৷

কখন ও কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?

পঞ্চম শ্রেণির শেষে নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে এ পরীক্ষা উপজেলা পর্যায়ে কয়েকটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়৷

ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে প্রেস করুন।

মূল্যায়ন ও এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে এই লিংকে প্রেস করুন।

9Aug2021

Formative Evaluation

ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়ন

গাঠনিক মূল্যায়ন ধারাবাহিক মূল্যায়ন নামেও পরিচিত৷ শিখন শেখানো চলাকালে যে মূল্যায়ন করা হয় তাকে ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়ন বলে৷ অন্যকথায় প্রতিদিনের প্রতি পিরিয়ডের পাঠ মূল্যায়নই হল গাঠনিক মূল্যায়ন৷ গাঠনিক বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন শিখন শেখানো কার্যক্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশ; ধারাবাহিক মূল্যায়নের সাহায্যে যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিতকরণ সহজ হয়৷ শিখনফল অনুযায়ী বিষয়বস্তু উস্থাপন করা হয় এবং শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা কার্যে মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অর্জনের অগ্রগতি নির্ধারণ করা যায়৷ অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করার জন্য প্রযোজ্য নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়৷

ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়নের উদ্দেশ্য

  • পাঠের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত শিখনফল শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে পেরেছে কিনা তা যাচাই করা৷
  • কোন শিক্ষার্থী শিখনফল অর্জন করতে না পারলে তার কারণ অনুসন্ধান করা।
  • শিখন ব্যর্থতার কারণ জেনে সে সম্পর্কে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা করা।
  • শিক্ষকের নিজের কাজের মূল্যায়ন করা৷
  • পুনরায় মূল্যায়ন করে শিশুর পুরোপুরি শিখন নিশ্চিত করা৷

ধারাবাহিক মূল্যায়নের সময়

ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রতিদিন প্রতি পাঠে করা হয়৷ প্রতি পাঠে মূল্যায়নের যে সময় তা হলো-

পাঠের শুরুতে:

  • স্বল্প পরিসরে প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে পাঠের পূর্বজ্ঞান যাচাই করেন।
  • পাঠের শুরুতে ছবি দেখতে দিয়ে ছবিতে কী কী আছে বলে মূল্যায়ন করা যায়৷

পাঠের মাঝে:

  • পাঠের একটি ধাপ শেষ করে ছোট ছোট প্রশ্নের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যায়৷
  • প্রশ্ন করতে দিয়ে ও প্রশ্নের উত্তরদানের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যায়৷

পাঠের শেষে:

  • পাঠের সবকয়টি ধাপের বিস্তৃত মূল্যায়ন করা হয়৷
  • সাধারণত প্রশ্নের উত্তরের পরিসর একটু বড় হয়৷

গাঠনিক বা ধারাবাহিক মূল্যায়নের কৌশল

ধারবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ কতকগুলো কৌশল ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর ধরণ অনুসারে কৌশল ও কাজের কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। নিম্নে ধারাবাহিক মূল্যায়নের কৌশল বর্ণনা করা হলো:

কৌশলকাজ (উদাহরণ)
১. পর্যবেক্ষণবস্তু দেখা, ছবি দেখা, অক্ষর সাজিয়ে শব্দ তৈরি পরিশেষে বিভিন্ন উপাদান শ্রেণিকরণ, সক্রিয়তা৷
২. মৌখিক উত্তর বলাসংখ্যা বলতে দেওয়া, একত্রে কয়টি হয় বলতে দেওয়া, বর্ণ, শব্দ ও বাক্য পড়তে দেওয়া, ছোট প্রশ্নের উত্তর বলা (গাছের কয়টি অংশ)৷
৩. লিখতে দিয়েগুণ করা, ভাগ করা, শব্দ দিয়ে বাক্যগঠন, শূণ্যস্থান পূরণ, বর্ণ, শব্দ ও বাক্য লেখা৷
৪. কাজ করতে দিয়েবস্তু দলে সাজানো, জ্যামিতি চিত্র আঁকা, কাগজ ও মাটি দিয়ে বিভিন্ন তৈরি, আকৃতি করতে দিয়ে৷
৫. দলগত মূল্যায়নদলে কাজ দিয়ে, অন্যদলের সাথে কাজ মূলায়ন বিনিময় করে৷

একটি পাঠে যে শিখনফল থাকে তা অর্জন করার জন্য শিক্ষক শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করেন৷ শিক্ষক যদি ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে দেখেন যে কোন শিশু সংশ্লিষ্ট শিখনফলসমূহ সর্ম্পূণ অথবা আংশিকভাবে অর্জন করতে পারেনি তখন তিনি ঐ শিখনফল অর্জনের জন্য বা শিক্ষার্থীর ঘাটতি পূরণের জন্য যে ব্যবস্থা নেন তাকে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা বলে৷

গাঠনিক মূল্যায়নের উপকরণ

  • শ্রেণীর কাজ ;
  • ব্যবহারিক কাজ ;
  • শ্রেণীকক্ষে মৌখিক প্রশ্ন ;
  • শ্রেণীর পরীক্ষা ;
  • টার্ম পেপার ;
  • চেক লিস্ট ;
  • সাপ্তাহিক পরীক্ষা ;
  • ত্রৈমাসিক পরীক্ষা ;
  • অ্যাসাইনমেন্ট ;
  • বিতর্ক ও আলোচনা সভা ইত্যাদি।

নিরাময়মূলক ব্যবস্থার জন্য অনুসরণযোগ্য কৌশল:

নিরাময়ে সহায়তা দানকারীকখন ও কোথায়কীভাবে
শিক্ষক নিজেপাঠ চলাকালে শ্রেণিকক্ষেযখন শিক্ষার্থী শিখনফল অর্জন করতে পারছে না, তাত্ক্ষণিকভাবে তিনি সহায়তা দেবেন৷ সামান্য ইঙ্গিত দিয়ে ভুলের জায়গাটি ধরিয়ে দিয়ে বার বার অনুশীলন করতে দিয়ে  শ্রেণির বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ব্যর্থ হলে বিষয়বস্তু পুনরায় উপস্থাপন করে৷
পারগ শিশুপাঠ চলাকালে শ্রেণিকক্ষেএকজন পারগ শিশুর পাশে একজন দুর্বল শিশুকে বসিয়ে তাকে সহায়তার জন্য পারগ শিশুকে উদ্বুদ্ধ করে৷ যাদের মূল্যায়ন হয়ে গেছে তাদের দিয়ে কয়েকজন দুর্বল শিশুকে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করে৷ দলগত কাজ করার সময় দলের সকল সদস্যকে একই পর্যায়ে আনার অনুপ্রেরণা দিয়ে৷
শিক্ষিত মা/বাবা/অভিভাবকবাড়িতেএলাকায় শিক্ষিত অভিভাবককে নিজের ছেলে/মেয়েরে শিখন ঘাটতি পূরণ করার জন্য অনুরোধ করে৷
শিক্ষক/প্রধান শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ছুটির পরে/পরের দিন স্কুল শুরুর আগেছুটির পরে যে কয়জন দুর্বল শিক্ষার্থী থাকে তাদের নিয়ে বিশেষ নিরাময়ের ব্যবস্থা করে৷ বিদ্যালয়ের নিয়মিত কাজ শুরুর আগে এ কাজটি করে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিরাময়মূলক ব্যবস্থার পরে পুনরায় মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের শিখনফল অর্জন নিশ্চিত করে৷
4Aug2021

Ecological system theory of Bronfrenbrenner

ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব

শিশুর শিখন ও বিকাশে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ মানুষ সাধারণত তার নিকট পরিবেশ থেকে শেখে৷ শিশুর চারপাশের পরিবেশ তার জীবনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ফেলে৷ পরিবেশের প্রভাবের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে, গতানুগতিক ধারণা ও তত্ত্বের বাইরে অনেকটা ব্যতিক্রমধর্মী ও কার্যকরী ধারণার উদ্ভাবন করেন ব্রনফেনব্রেনার নামক একজন শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী৷ তাঁর এ তত্ত্ব ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব (Ecological system theory) নামে পরিচিত৷ এ তত্ত্বে শিশুকে একটি পূর্ণাঙ্গ সত্তা হিসেবে দেখে তাকে সমাজের প্রতিটা স্তর বা সিস্টেমে কিভাবে প্রভাবিত করছে এবং তাঁর আচরণে প্রভাব ফেলছে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে৷ তার মতে, শিশু শুধু শিশু নয়, সে একটি পরিবারের অংশ, আবার পাড়ার একজন সক্রিয় সদস্য, আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (বিদ্যালয়/ ক্লাব/দলের) এবং রাষ্ট্র ও সমাজেরও একজন নাগরিক৷ তাই তাকে সমাজে সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রতি জোর দিয়ে মতামত ব্যক্তি করা হয়৷ আধুনিক যুগে শিক্ষা-বিজ্ঞানে এ তত্ত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ শিশু তার নিকট পরিবেশ থেকে দেখে বা নিজে বাস্তবে প্রয়োগ করে অনেক কিছু শেখে৷ বাস্তু-সংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বের মূল কথা হলো- শিশু পরিবেশ, পরিবেশের বিভিন্ন সদস্য ও উপাদান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বৃহত্তর সমাজ ও এগুলোর মধ্যকার বিদ্যমান সিস্টেম শিশুর শিখন ও বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে৷ বাস্তুসংস্থান তত্ত্বটি সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল৷ এ তত্ত্ব শিশুর নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও পরিবেশের ভিন্নতাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে না, বরং তত্ত্বটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে সার্বিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে৷ শিশুর বিকাশে পরিবেশের এই প্রভাবকে এ তত্ত্বে খুবই সুসংগঠিতভাবে দেখানো হয়৷ বর্তমান যুগে এ তত্ত্বটি শিশু শিক্ষায় বেশ গুরুত্বের সাথে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়৷

তত্ত্বটিতে মানব উন্নয়নের ধারাকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে পরিবার, স্থানীয় সামাজিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিদ্যালয়, গণমাধ্যম (রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজ, বিজ্ঞাপন) রাষ্ট্র এবং বর্তমান রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়৷ এ তত্ত্ব অনুযায়ী শিশু যে পরিবেশে বাস করে তার একটি প্রভাব তার জীবনের বিভিন পর্যায়ে পড়ে থাকে৷ এখানে পরিবেশ বলতে শুধু শিশুর পারিবারিক পরিবেশের কথা বলা হয়নি৷ বরং তার চারপাশে যে পরিবেশ সেগুলোকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে, যেমন-তার পরিবার, সহপাঠী ও খেলার সাথী, পাড়া-প্রতিবেশী, শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজন এবং নানা ধরনের সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ও নিয়ম-কানুন, যা তাকে প্রভাবিত করে তার কথাও বলা হয়েছে৷ পারিবারিক পর্যায়ে যেমন-ভাইবোনের আচরণ, বাবা/মায়ের নির্দেশনা তাকে ভালো আচরণ বা নিয়মিত বিদ্যালয়ে হাজির হতে প্রভাবিত করছে; তেমনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন আইন/ বিধিও (বিদ্যালয়ে শিশুদের কোনো শাস্তি প্রদান করা যাবে না, নির্দিষ্ট বয়সে টীকা দেয়া, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিকারের প্রশ্নে) শিশুর শিখন ও বিকাশে প্রভাব ফেলছে, অনুরূপভাবে শিশুর প্রতি বৃহত্তর সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি (রাস্তায়/মিডিয়াতে/রাজনীতি/খেলার মাঠ) শিশুর আচরণ ও বিকাশের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে৷ বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বে শিশু তার পরিবেশের সাথে কিভাবে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয় ও বিভিন্ন সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) হয় তা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়৷ এ তত্ত্বে একটি সিস্টেমের বা চক্রের মাধ্যমে মানব উন্নয়নের বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করা হয়েছে৷

ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব –এর ধাপসমূহ

মাইক্রো সিস্টেম (Microsystem) :

এটি হলো এ চক্রের প্রথম স্তর৷ শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব, সকল অভিজ্ঞতা, সকল প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সহযোগে মাইক্রো সিস্টেম অংশটি গঠিত৷ পরিবার, শিশু সেবাকারী এবং সহকারী, বিদ্যালয়, শিক্ষক, শিশু চিকিৎসাসেবা, সামাজিক সেবা ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত৷ শিশুরা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও শিশু কর্তৃক প্রভাবিত হয়৷ যেমন-শিশু তার পরিবারের লোকজন এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক প্রভাবিত হয়৷ একইভাবে শিশুর আচরণের ফলে তাদেরও মানসিক পরিবর্তন আসে৷ শিশুর সামাজিক আচরণ শিক্ষকের নির্দিষ্ট ধরনের কর্মকান্ড দ্বারা প্রভাবিত হয়; একইভাবে শিক্ষক কী করবেন সেটি শিশুর আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়৷

মেসো সিস্টেম (Mesosystem) :

মাইক্রো সিস্টেমে একজন দ্বারা অন্যজনের প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে বা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার কারণেই বাস্তববিদ্যার দ্বিতীয় স্তরের সৃষ্টি হয়, যাকে তিনি নাম দিয়েছেন মেসো সিস্টেম৷ এর মাধ্যমে একটি সম্পর্কের শক্ত ভিত গড়ে ওঠে৷ মেসো সিস্টেমে যখন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে দৃঢ় সহযোগিতা এবং যোগাযোগ বর্তমান থাকে তখন বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বানুযায়ী শিশু উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়৷

এক্সো সিস্টেম (Exosystem) :

শিশুর উন্নয়নের ওপর প্রভাবকারী পরিবেশের এই ধাপ (এক্সো সিস্টেম) যা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরস্পর সংযুক্তি তৈরি করে তবে তা শিশুর জীবনকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে না৷ কিন্তু, পরোক্ষভাবে তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে৷ দেখা যায় যে, অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, সরকারি ব্যবস্থা, ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদি প্রত্যক্ষভাবে শিশুর সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে সহায়তা না করলেও শিশুর পরিবার, পিতা-মাতাকে সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সহায়তা করে, যা পরোক্ষভাবে শিশুর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ যা বিশেষভাবে শিশুর শিখন ও সার্বিক বিকাশে প্রভাব ফেলে৷ যেমন, একটি দেশ যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করে, কিংবা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন বা শিশু অধিকার সম্পর্কে কার্যকরী বিধি-বিধান প্রণয়ন করে, তা শিশুর বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে৷

ম্যাক্রো সিস্টেম (Macrosystem) :

বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বের/চক্রের শেষ বা চূড়াস্ত ধাপ৷ এখানে মূলত সমাজে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও আদর্শের দিকগুলোর কথা বলা হয়েছে৷ আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় শিশুর উনড়বয়নে এর সংশ্লিষ্টতা নেই, কিন্তু বাস্তবে শিশুর সার্বিক উন্নয়নে এর গভীর প্রভাব রয়েছে৷ যেমন-যে সমাজে শিশু নির্যাতনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় সেখানে শিশুনির্যাতনের ঘটনা কম ঘটে৷ একইভাবে যে সমাজ বা রাষ্ট্র শিশুর বিকাশের উপযোগী আইন তৈরি করে (শিশুদের সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া, তার খেলা/কাজকে ও শিখনকে গুরুত্ব দেয়া হয়) সেখানে শিশু যেভাবে বেড়ে উঠবে, যে সমাজে এ ধরনের সংস্কৃতি ও মূলবোধ নেই সেখানে অন্যভাবে বেড়ে উঠবে৷

ক্রোনো সিস্টেম (Chronosystem):

এটি এরিক ব্রনফেনব্রেনার কর্তৃক প্রদত্ত কোনো ধাপ নয়৷ পরবর্তীতে বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বের ধাপগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, শিশু এসব ধাপ দ্বারা সৃষ্ট প্রভাবের বাইরেও কোনো ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে৷ যেমন-পারিবারিক বিপর্যয়, সামাজিক বিপর্যয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি বিষয় শিশুকে প্রভাবিত করে৷ বলা হয়ে থাকে, যে কোন প্রাকৃতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিপর্যয়ে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি৷ যেমন, যখন বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে অথবা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হয় তখন শিশুরাই মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়৷ এসব ঘটনাকে ক্রোনো সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷

শিক্ষাক্ষেত্রে ‘ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব’ -এর প্রভাব

শিক্ষাক্ষেত্রে বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে৷ একটি শিশু যে পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে সেই পরিবেশের যাবতীয় উপাদানের দ্বারা শিশুটির শিখন ও বিকাশে প্রভাব পড়ে৷ যেমন-

  • শিশুর পরিবারে তার বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন তাকে কিভাবে লালন-পালন করছে তার ওপর শিশুটির বেড়ে ওঠা তথা যাবতীয় বিকাশ নির্ভর করে৷ ক্রমান্বয়ে শিশুটি যখন বড় হতে থাকে তখন তার আশপাশে যে সমস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থাকে তারা শিশুটির বিকাশে ভূমিকা রাখে৷
  • সমাজের সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, রীতি-নীতি ইত্যদির প্রভাবও শিশুটির ওপর পড়তে থাকে৷ একটি দেশের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা কেমন হবে তার ওপর নির্ভর করে শিশুটির সাথে বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কী ধরনের আচরণ করছে বা সেবা প্রদান করছে৷ সুতরাং, শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক কেমন হবে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক কেমন আচরণ করবেন, পাঠদান পদ্ধতি কেমন হবে এতদ্‌সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় ঐ দেশের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে, যা বাস্তববিদ্যার তত্ত্বেরই উপাদান৷ আবার, দেশে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও শিশুদের বেশি প্রভাবিত হতে দেখা যায়৷
  • বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত তত্ত্বটি সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল৷ এটা শুধু সাংস্কৃতিক ভিন্নতাকেই গ্রহণ করে না, বরং ভিন্নতাকে মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত করার চেষ্টা করে৷ তত্ত্বটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷
  • শিশুকে শুধু একক শিশু হিসেবে না দেখে তাকে একটি পরিবারের, নিকট পাড়া/গ্রাম, বন্ধু-বান্ধব, বিদ্যালয়, রাষ্ট্র ও সমাজের সদস্য হিসেবে দেখতে হবে৷ তাকে, প্রতিটা স্তরেই এক এক ধরনের মিথস্ক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে লিপ্ত হতে হয়, যা দ্বারা সে প্রভাবিত হয়৷ শিশুর উন্নয়নে তাই এসব বিষয়ও আমাদেরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে৷
  • আমাদের দায়িত্ব হলো, শিশু-বান্ধব শিখন ও বিকাশ উপযোগী পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি, রাষ্ট্র ও সমাজ উপহার দেয়া যা তাকে সার্বিক বিকাশে বিকশিত করে তুলবে৷ আর বাস্তববিদ্যা তত্ত্বে এ কথাগুলোই গুরুত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷

শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং বিকাশের ব্রনফ্রেনব্রেনারের বাস্তুসংস্থান তত্ত্ব -এর আলোকে শিক্ষকের করণীয়

আমরা জানি শিশু হলো অফুরন্ত সম্ভাবনাময় একটি পূর্ণাঙ্গ মানবসত্তা৷ উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় উদ্দীপনার সুযোগ পেলে পরিপূর্ণ বিকাশে লাভ করবে৷ যুগে যুগে শিশু সম্পর্কে মানুষের ধারণার অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে৷ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুর শিখন ও বিকাশ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা ও তত্ত্বের উদ্ভাবন শিশুদের সম্পর্কে উন্নত ধারণার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷ শিশুর সম্পর্কে ধারণা অর্জন, দৃষ্টিভঙ্গি, শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও সার্বিক বিকাশ সম্পর্কিত ধারণা একজন শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত জরুরি৷

একথা সহজে বোধগম্য যে, একজন শিক্ষক যিনি শিশুদের সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারন করেন, শিশুর বৃদ্ধি, বিকাশ ও শিখন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা রাখেন তার সাথে, যে শিক্ষক এ সম্পর্কিত ধারণা ও দক্ষতা রাখে না তার শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়৷ শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশ ও শিখন দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষকের এসকল বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক৷

শিশু একজন মানুষ হিসেবে পরিবারের, রাষ্ট্রের ও সমাজের সদস্য হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরিতে এবং শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনের জন্য শিক্ষকের দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ শিক্ষকের সহায়তা তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, বিকাশমূলক চাহিদা ও প্রয়োজন মেটানো ও সার্বিকভাবে দেখা জরুরি৷ শিশু বিকাশের সাথে মস্তিষ্কের বিকাশের ভূমিকা এবং সেক্ষেত্রে পরিবেশ ও বড়দের সেবা/পরিচর্যার প্রভাব দুই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ৷ পাশাপাশি পরিবেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাব ও বড়দের বিভিন্ন রকম ক্রিয়ামূলক কাজের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা থাকতে হবে, যা আমাদের করণীয় কাজসমূহ নির্ধারণ ও প্রণয়নে ভূমিকা রাখে৷

একথা সত্য যে, একটি শিশুর সামাজিক প্রেক্ষাপঠ, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে তার বিকাশে ভিন্নতা দেখা দেয়৷ পাশাপাশি, এটাও সত্য যে, বিকাশের ধারাবাহিক যে ধারাক্রম বা বয়ঃক্রম বেড়ে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে তা বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া প্রায় সকল শিশুর ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করে৷ আর এসব বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ও সার্বিক ধারণা লাভ (ব্যবহারের কৌশল প্রয়োগ) করা একজন শিক্ষক হিসেবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷

4Aug2021

Socio-cultural theory of Lev Vygotsky

লেভ ভিগটস্কির সামাজিক-সাংস্কৃতিক তত্ত্ব

শিশুর বিকাশ সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত রাশিয়ান শিক্ষাবিদ লেভ ভিগস্কি (Lev Semyonovich Vygotsky) যে তত্ত্ব প্রদান করেন তা ‘Social Learning Theory’ বা সামাজিক-সাংস্কৃতিক তত্ত্ব নামে পরিচিত । এ তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য হলো শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে তার পরিবার, পরিবেশ ও তাকে দেওয়া শিক্ষা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে। লেভ ভিগটস্কির সামাজিক-সাংস্কৃতিক তত্ত্ব মতে একজন শিশু সমাজ হতে প্রাপ্ত জ্ঞানকে একত্রিত করে তার কাজ সম্পাদন করে। শিশুর জ্ঞানমূলক বিকাশের সাথে দৈহিক বিকাশ জড়িত থাকলেও সামাজিক ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না।

লেখ ভিগটস্কি (১৮৯৬-১৯৩৪) সালে রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আইন বিষয়ে পড়াশুনা করলে পুরো জীবদ্দশায় তিনি ২৭০টি বৈজ্ঞানিক আর্টিকেল, অসংখ্য লেকচার এবং মার্ক্সভিত্তিক মনোবৈজ্ঞানিক শিখন তত্ত্ব প্রদান করে।  লেভ ভিগটস্কির সামাজিক-সাংস্কৃতিক তত্ত্ব মতে- চিন্তন (thinking) এবং শিক্ষণ (learning) শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ (inside) এবং স্বতন্ত্র (individual) প্রক্রিয়া নয়৷ বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশে ভাষা, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া (social interaction) এবং সংস্কৃতির দ্বারা উচ্চমাত্রায় প্রভাবিত হয়৷ সংস্কৃতি (মূল্যবোধ, বিশ্বাস, রীতি-নীতি, দক্ষতা, সামাজিক দল বা গোত্রের কার্য সম্পাদন প্রক্রিয়া) কিভাবে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয় সেই বিষয়ের ওপরই ভিগস্কির মানব বিকাশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক তত্ত্ব আলোকপাত করেছেন৷ ভিগস্কির মতে, সমাজের পূর্ণবয়স্ক জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকেই বুদ্ধিবৃত্তীয় প্রক্রিয়া এবং দক্ষতাসমূহ সামাজিক উপায়ে শিশুদের কাছে হস্তান্তরিত হয়৷ তিনি বিশ্বাস করেন, চিন্তা করার ধরন এবং সে অনুযায়ী আচরণ করার উপায় আয়ত্তের জন্য সামাজিকভাবে মেলামেশা, বিশেষ করে শিশু এবং পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে সহযোগিতামূলক কথোপকথন অত্যাবশ্যকীয়৷ শিশুরা ভাষার ব্যবহারে সক্ষমতা অর্জনের সাথে সাথেই অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয় এবং তাদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফলে বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশে ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকে৷ বিকাশকে তিনি অপেক্ষাকৃত সক্ষম শিশুর সাথে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মেলামেশা বা আদান-প্রদানের ফলাফল হিসেবে দেখেন৷ লেভ ভিগস্কির তত্ত্বের আলোকে, শিশুকে আমরা একজন ‘খুদে সামাজিক বিজ্ঞানী’ হিসেবে অভিহিত করতে পারি, যেখানে পিয়াজের তত্ত্বের আলোকে শিশুকে শুধু ‘খুদে বিজ্ঞানী’ বলা যেতে পারে।

ভিগস্কি লক্ষ করেছেন যে কিছু কিছু কাজ শিশুদের জন্য একা করা একটি দুরূহ ব্যাপার কিন্তু এই কাজটিই কোনো পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি অথবা একজন অপেক্ষাকৃত অধিক দক্ষ শিশুর সহায়তা নিয়ে তারা সহজে করতে পারে৷ শিশুর এই জ্ঞানের দুইটি মুহূর্তের ব্যবধানকে তিনি ‘জোন অব প্রক্সিমাল ডিভলপমেন্ট’ (zone of proximal development) হিসেবে আখ্যায়িত কছেন৷ জোন অব প্রক্সিমাল ডেভেলপমেন্টের সর্বনিম্ন পরিসীমা হলো সমস্যা সমাধানের স্তর যেখানে কোনো শিশু একা একা কাজ করে পৌঁছাতে পারে৷ আবার, সর্বোচ্চ পরিসীমা হচ্ছে বাড়তি দক্ষতার স্তর যেখানে শিশু তার নিজের থেকে অধিক দক্ষ কোনো ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে কাজ করতে পারে৷ যখন শিশু কোনো বিমূর্ত (abstract) বিষয় থেকে সমস্যা সমাধান করে তখন তারা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে৷ তবে ভিগস্কি বরাবরই বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বাইরের প্রভাব, যেমন-ভাষা, সামাজিক মিথস্কিয়া (social interaction)এবং বৃহত্তর সমাজের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ তিনি মনে করেন, শিশুরা অবাচনিক (non-verbal) এবং ধারণাহীন এ দুই ধরনের ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র মানসিক প্রক্রিয়ায় জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে নিজেদেরকে সংযুক্ত রাখে৷

‘লেভ ভিগটস্কির সামাজিক-সাংস্কৃতিক তত্ত্ব’ -এর মূল ধারণাসমূহ (Concepts)

অবাচনিক চিন্তা (non-verbal) :

এটি হলো প্রাথমিক স্তরের একটি মানসিক ক্রিয়া, যেখানে শিশু কোনো ঘটনা বা বস্তুকে দেখে এবং ভাষা ব্যবহার না করেও কাজ করে৷

বাচনিক চিন্তা (verbal) :

ভাষা এবং চিন্তা শিশুকে সুসংহত হতে এবং পরস্পরকে জানতে সহায়তা করে৷ বাচনিক চিন্তা জটিল ধারণাগুলো শেখার ক্ষমতা গঠন করে৷

ধারণাহীন কথামালা :

এটি হলো প্রাথমিক স্তরের একটি ভাষা, যেখানে শিশু কোনো কিছুর অর্থ চিন্তা না করেই শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করে৷ যা পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে ধারণাগত শব্দ হিসেবে তৈরি হয়৷

স্বপরিচালিত কথামালা:

বড় শিশুরা কোনো কিছুর শিক্ষণকে পরিচালনা করার জন্য ভাষা ব্যবহার করে৷ এ সময় শিশুরা নিজের সাথে কথা বলে, প্রায়ই জোরে শব্দ করে কথা বলে৷

স্ক্যাফোল্ডিং (Scalfolding) :

ভিগসস্কির তত্ত্বে স্ক্যাফোল্ডিং শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বিশেষ আবিষ্কার হিসেবে দেখা হয়৷ যেখানে শিশুর সাথে সরাসরি বড়দের কাজ করার বা সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে৷ তাঁর মতে, স্ক্যাফোল্ডিং হলো শিশুর কোনো সমস্যার সমাধান বা উত্তরণের জন্য প্রদত্ত ধারাবাহিক সহায়তা, যা শিশুর অবস্থান বুঝে ধাপে ধাপে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রদান করা হয়৷ শিখনের ক্ষেত্রে শিশুর অবস্থান বুঝে শিক্ষক বা বড়দের দ্বারা অথবা অপেক্ষাকৃত সক্ষম সঙ্গীর দ্বারা বিভিন অবস্থায় স্ক্যাফোল্ড করা হয়৷ শিক্ষক (প্রাপ্তবয়স্করা) শিশুকে পরোক্ষভাবে সূত্র, ইঙ্গিত, উপকরণ/পরিবেশ দিয়ে ও প্রশড়ব করে সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করবেন, কিংবা সমস্যার সরাসরি সমাধান করে দেবেন, কিংবা তাদেরকে সুযোগ করে দেবেন নিজে থেকে সমস্যাটির সমাধান করতে পারার, যার পুরোটাই নির্ভর করবে শিশুর বিকাশের অবস্থানের ওপর৷ তবে, এ প্রক্রিয়ায় শিশুর নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ধারণা/দক্ষতা অর্জনের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি করাই মুখ্য হবে, তাকে কোনো কাজ সরাসরি করে দেয়া নয়৷

প্রক্সিমাল বিকাশের জোন/অঞ্চল (Zone of proximal development) :

কোনো পরিস্থিতি বা সমস্যা যখন শিশুর সামর্থ্য বা চিন্তা ক্ষমতার কিছুটা ওপরের স্তরে অবস্থান করে থাকে তখন শিক্ষক বা পিতা-মাতা অথবা অপেক্ষাকৃত সক্ষম সাথি ইশারা, ইঙ্গিত, উপকরণ, সূত্র ধরিয়ে দিয়ে বা প্রশড়ব করে নিজে থেকে সমাধান খুঁজে পেতে শিশুকে সহায়তা করেন৷ এই অবস্থাকে ভিগস্কি বলেছেন ‘জোন অব প্রক্সিমাল ডেভেলপমেন্ট’৷ ভিগস্কির ত্বরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো Zone of Proximal Development (ZPD)৷ শিশুর একা কোনো কাজ করার সামর্থ্য এবং অন্যের সাহায্য নিয়ে কাজ করার সামর্থ্যের মধ্যে যে এলাকা বা স্তর তা-ই তচউ৷ শিশুর শিখনকে যদি একটি স্কেলের সাথে তুলনা করি, তাহলে এই স্কেলের কোনো একটি পয়েন্টে শিশুর বর্তমান যোগ্যতাগুলো (current abilities)আছে, যা সে নিজে নিজে সম্পন্ন করতে পারে৷ আর এর ওপরে আরো কিছু যোগ্যতা আছে, যা শিশুর সামর্থ্য বা চিন্তা ক্ষমতার কিছুটা ওপরে (potential abilities), যা সে একা একা করতে পারে না৷ কিন্তু যদি পিতা-মাতা বা শিক্ষক সূত্র ধরিয়ে দেন বা প্রশ্ন করে সমাধান খুঁজতে সাহায্য করেন, তবে সেই কাজগুলো শিশুর জন্য করা সম্ভব হয়ে ওঠে৷ এই যে শিশুর current abilities এবং potential abilities-এর মধ্যবর্তী যে এলাকা বা যে দূরত্ব, এটাই জোন অব প্রস্কিমাল ডেভেলপমেন্ট৷ ভিগস্কির মতে, এই জোনের মাঝেই শিশুর শিখন ঘটে এবং এই জোন সর্বদা পরিবর্তনশীল৷

ভিগটস্কি প্রস্তাব অনুযায়ী, শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ত্বরান্বিত করতে শিক্ষক ও পিতা-মাতা শিশুর শিখন প্রμিয়া বা তার চিন্তন প্রμিয়াকে ভাষা এবং সামাজিক মিথস্ঙিঊয়ার (interaction)মাধ্যমে উদ্দীপ্ত করতে পারেন৷ এই অবস্থাটিকে ইংরেজিতে স্ক্যাফোল্ডিং বলে, যাকে আমরা রাজমিস্ত্রি ও তার জোগানদাতার সঙ্গে তুলনা করতে পারি৷ এক্ষেত্রে শিশু হলো রাজমিস্ত্রি আর শিক্ষক বা বাবা/মা হলো জোগানদাতা৷ ভিগস্কি বলেছেন, শিশু যখন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হবে তখন তাকে নিজ থেকেই সেটি সমাধানের সুযোগ দিতে হবে৷ কারণ শিখন বা সন্তান লালন-পালনের মূল লক্ষ্য হলো শিশুর স্বাধীন চিন্তার ক্ষমতা তৈরি হওয়া৷ কিন্তু কোনো সমস্যা যদি শিশুর জন্য অনতিμম্য হয় সেক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্করা সেটি সমাধান করে দেবেন৷ আবার সমস্যাটি যদি এমন হয় যে একটু সূত্র ধরে দিলেই শিশু নিজের মতো করে সমস্যাটির সমাধান করতে পারবে সেক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের দায়িত্ব হলো ইঙ্গিত দেয়া বা সূত্র ধরিয়ে দেয়া৷ শিশুর শিখন-চাহিদার ওপর নির্ভর করেই সে অনুযায়ী স্ক্যাফোল্ড করতে হবে৷ তবে কোনো পরিস্থিতি বা সমস্যা যখন শিশুর সামর্থ্য বা চিন্তা ক্ষমতার কিছুটা ওপরের স্তরে থাকে তখন শিক্ষক ও পিতা-মাতা সূত্র ধরিয়ে দিয়ে বা প্রশড়ব করে নিজে থেকে সমাধান খুঁজে পেতে শিশুকে সহায়তা করবেন৷

শিশুর শিখনে এ তত্ত্বের প্রভাব ও শিক্ষক হিসেবে করণীয়: শিশু শিক্ষা ও বিকাশে এ তত্ত্বের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে৷ বেশিরভাগ গবেষক এই তত্ত্বটিকে শিশু শিক্ষায় সরাসরি শিশুর সাথে কাজ করাকে উত্সাহিত করে৷ এ তত্ত্বটিকে অনেকে শিশুর বিকাশে সরাসরি কাজের তথা শ্রেণিকক্ষে বা বিভিন্ন পরিবেশে শিশুর সাথে কাজ করাকে উত্সাহিত করেছে বলে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন৷ কারণ, একজন শিশু শুধু নিজের বয়স ও জ্ঞানের বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী কোনো ধারণা অর্জন করে না; এর জন্য তার বড়দের ধারাবাহিক সহায়তা (স্ক্যাফোল্ডিং) প্রয়োজন৷ এ সহায়তা ছাড়া তার কোনো জ্ঞান অর্জনের চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারা সম্ভব হয় না৷ শিশুর প্রতিটা স্তরে তার বিকাশের বিশেষ বিশেষ চাহিদা ও স্তর রয়েছে৷ তাছাড়া, একটি বিশেষ বিষয়েও সে উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে না যদি তুলনামূলকভাবে সক্ষম সঙ্গী বা বড়দের ধারাবাহিক সহায়তা (স্ক্যাফোল্ডিং) না পায়৷ শিশুদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানাকে এখানে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে৷ একজন শিশু বিশেষ কোনো স্তরে অবস্থান করছে এবং তার পরবর্তী কোনো স্তরে যেতে হবে তা জানা জরুরি৷ এজন্য তার জোন অব প্রক্সিমাল ডেভেলপমেন্ট (জেপিডি) জানা ও বোঝা একজন শিক্ষক ও যতড়বকারীর জন্য আবশ্যক৷ আবার, তার অবস্থান অনুযায়ী তাকে স্ক্যাফোল্ডিং করার কৌশল জেনে তার সঠিক প্রয়োগ করাও বেশ জরুরি৷ সর্বোপরি, একজন শিক্ষক হিসেবে শিশুর শিখন ও বিকাশে কার্যকর সহায়তা প্রদান করতে এ তত্ত্বের ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷

সমাজের পূর্ণবয়স্ক জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকেই বুদ্ধিবৃত্তীয় প্রক্রিয়া এবং দক্ষতাসমূহ সামাজিক উপায়ে শিশুদের কাছে হস্তান্তরিত হয়৷ তিনি বিশ্বাস করেন, চিন্তা করার ধরন এবং সে অনুযায়ী আচরণ করার উপায় আয়ত্তের জন্য সামাজিকভাবে মেলামেশা, বিশেষ করে শিশু এবং পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে সহযোগিতামূলক কথোপকথন অত্যাবশ্যকীয়৷ শিশুরা ভাষার ব্যবহারে সক্ষমতা অর্জনের সাথে সাথেই অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয় এবং তাদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফলে বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশে ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকে৷ লেভ ভিগস্কির তত্ত্বের আলোকে শিশুকে আমরা একজন খুদে সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে অভিহিত করতে পারি, যেখানে পিয়াজের তত্ত্বের আলোকে শিশুকে শুধু খুদে বিজ্ঞানী বলা হয়েছে৷ এ তত্ত্বে শিশু শুধু শিশু নয় সে, একজন সামাজিক শিশু৷ সে সমাজের অন্যদের সাথে মিলেমিশে ও সহাযতা নিয়ে শেখে৷ তাই, শিক্ষক হিসেবে আমাদের এসব তত্ত্ব সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে সে অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে শিশুদের সহায়তা করতে হবে৷

গঠনবাদ ও সামাজিক গঠনবাদ, ZPD ও স্ক্যাফোল্ডিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে প্রেস করুন।

Ad

error: Content is protected !!