অধ্যায়-১৫: জনসংখ্যা সচেতনতা
১. বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণসমূহ এবং জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে আপনার সুপারিশসমূহ আলােচনা করুন।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ :
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বহুবিধ কারণ রয়েছে। এর মধ্যে নিচেরগুলাে অন্যতম-
১। অসচেতনতা :
বাংলাদেশ জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হলো গণ অসচেতনতা। এদেশের অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে শিক্ষার আলাে পৌছায়নি। ফলে তারা অসচেতন অবস্থায় থেকে জীবনাবসান ঘটাচ্ছে । আর জীবদ্দশায় অধিক সন্তান জন্ম দিয়ে চলছে। এতে করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলছে।
২.সামাজিক কারণ :
শিক্ষার অভাব, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, নারী শিক্ষার ও নারীর ক্ষমতায়নের অভাব, পুত্র সন্তানের প্রত্যাশা ত্যাদি সামাজিক কারণ গুলো আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
৩. অর্থনৈতিক কারণ :
দারিদ্র ও নিম্ন জীবনমানের কারণে মানসম্পন্ন জীবন সম্পর্কে অসচেতনতা, কৃষি নির্ভরশীলতা প্রভৃতি আমাদের দেশে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি :
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি, সংক্রামক ও মহামারী রোগের প্রতিরােধ, প্রতিষেধক আবিষ্কার, পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং নিরাপদ পানির ব্যবহার ইত্যাদি কারণে জনগণের আযু বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫. কুসংস্কার:
আমাদের দেশে শিক্ষার হার কম হওয়ার কারণে মানুষ সহজেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফলে তারা কি সন্তানকে আশীর্বাদ মনে করে। অনেক পরিবারে মেয়েদের লেখাপড়ায় বাধা দেওয়া হয় এবং তাদের মতামত মূল্যায়ন করা হয় না। এই অসচেতন ও অনুন্নত জীবনযাপন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা সমাধানের উপায়ঃ
জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায় আছে। এর মধ্যে প্রধান হলাে :
১. সচেতনতা সৃষ্টি
২. জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে রূপান্তর
৩. জন্ম নিয়ন্ত্রণ।
১. সচেতনতা সৃষ্টি:
দেশের মানুষকে সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। প্রাথমিক স্তরের শিশুরা যেহেতু অল্পবয়সী সেহেতু তাদের মধ্যে সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা অধিকতর জররি। এভাবে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবন পরিবার গঠনে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মনােভাব তৈরি করতে হবে।
২.জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে রূপান্তর :
কোন দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মানব সম্পদের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ। অতিরিক্ত এই জনসংখ্যাকে কেবল সমস্যা হিসেবে দেখলে হবে না, বরং তাদের সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। এতে একদিকে দেশের উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে। অন্যদিকে জনসংখ্যা সমস্যারও কিছুটা সমাধান হবে। অতএব কেবল সরকার নয়, আমাদের সবার এ বিষয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
৩. জন্মনিয়ন্ত্রণ :
জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফল করার জন্য নিচের বিষয়গুলাের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যথা:
১. নিয়মিত পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান এবং এ সেবা তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের দুয়ারে পৌছানাে।
২. মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয়।
৩, প্রশাসনিক এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ।
৪.উচ্চ জন্মহার রােধে বিবিধ ব্যবস্থাদি গ্রহন ।
৫. বাধ্যতামূলক সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার সার্থক বাস্তবায়ন।
৬, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির বাস্তবায়নে জোরালাে রাজনৈতিক সমর্থন।
৭. শিশু মৃত্যুর হার কমানো উদ্দেশ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন।
৮, বাল্যবিবাহ রােধ সংশ্লিষ্ট সকল আইনের সঠিক ও কঠোর বাস্তবায়ন।
৯, নারী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
১০, পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কুসংস্কার দূরীকরণের জন্য মসজিদের ইমামদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানাে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে শুধুমাত্র পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কখনাে সম্ভবপর নয়। জনসংখ্যা রােধে তাই কতিপয় বিষয় পরিবার-পরিকল্পনার পাশাপাশি সুবিবেচনায় রাখতে হবে। যেমন : অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমােচন কর্মসূচি,খাদ্য উৎপাদন, পরিবেশ সংরক্ষণে, শিক্ষা ও কর্মের সুযোগ সৃষ্টি। এজন্য সরকারের বিভিন্ন মণ্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার মনােভার গঠনে একটি বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়ােজন।
২. বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব আলােচনা করুন।
অথবা, জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে আপনার পরামর্শগুলো লিখুন।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব: বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এক মারাতক সমস্যা ।এ সমস্যার প্রভাব আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিত্ত বিনােদনের উপর পড়ছে। এতে আমাদের বসবাসের জন্য নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নিম্নে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবগুলাে আলােচনা করা হলো:
১. দারিদ্র্য সমস্যা :
অপরিকল্পিত ও অপরিমিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি দারিদ্রের প্রধান কারণ। বাংলাদেশে সম্পদের তুলনায় দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের মাথাপিছু আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। মানুষকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিবারের বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে। জনগনের মৌলিক চাহিদা মেটানাের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ পিছনে পড়ে যাচ্ছে। ফলশ্রতিতে সামাজিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দিন দিন দারিদ্র সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এভাবে জনসংখ্যার অধিক চাপ আমাদের অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
২.খাদ্য ঘাটতি :
অধিক জনসংখ্যার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশ বিপুল খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির চেয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অধিক হওয়ায় ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বার্ষিক ১৫৬-২০০লক্ষ টন খাদ্যশস্য ঘাটতি দেখা যায়। এছাড়া জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে মাথাপিছু খাদ্যের পরিমাণও অনেক কমে যাচ্ছে।
৩.শিক্ষায় অনগ্রসরতা:
দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার হার আশানুরুপ বাড়ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার ৬৫%। তাছাড়া শিক্ষাখাতে প্রয়ােজনের তুলনায় অর্থ বরাদ্দের অভাবে বাড়তি জনসংখ্যার শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ও প্রয়ােজনীয় সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার উপকরণ, শিক্ষক সংকট পূরণ করা কষ্টসাধ্য হচ্ছে।
৪. কৃষি জমি কমে যাওয়া ও ভূমিহীনদের সংখ্যা বৃদ্ধি :
অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে জমিগুলাে ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হচ্ছে, যা উন্নয়নের জন্য বাধা। আবার বাড়তি জনসংখ্যার বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি তৈরির কারণে আবাদি জমিতে তােলা হচ্ছে নতুন নতুন বসত বাড়ি, জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপে ভূমিহীনদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ভূমিহীনদের সংখ্যা প্রায় ৬০%।
৫. বেকারত্ব:
জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মক্ষেত্র না বাড়ায় দেশে দিন দিন বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে ।পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৮৫ সালে দেশে কর্মক্ষম জনশক্তির মােট ৩৮% বেকার ছিল। ১৯৮২ সালে চাকরির দরখাস্ত পড়ে একটি পদের বিপরীতে ২০ জন। সেখানে ১৯৮৮ সালে এ সংখ্যা দাড়িয়েছে ১২৬ জনে। এ বর্ধিঞ্চু জনশক্তির প্রায় সাড়ে ছয় পক্ষ কাজের সংস্থান প্রয়ােজন, সেটি বাংলাদেশের জন্য প্রায় অসম্ভব।
৬. স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতা :
পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্যের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থসেবা বাড়ানাে সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে স্বাস্থ্যাহীনতা, নিরক্ষরতার সাথে খাদ্যাভাবের দারুণ অভাব পড়েছে। যার ফলে পুষ্টিহীনতা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে।
৭.বাসস্থান সমস্যা:
বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে তাতে প্রতিবছর এ বাড়তি জনসংখ্যার জন্য প্রায় ৩ লক্ষ নতুন গৃহের প্রয়ােজন। বাংলাদেশের পক্ষে কোনােভাবেই এ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই বস্তি ও গৃহহীনদের সংখ্যা বাড়ছে ।জাতিসংঘের সূত্রমতে, এদেশে প্রায় ১০ লক্ষ লােক গৃহহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। জনসংখ্যার অত্যধিক চাপের ফলে উপযুক্ত বাসস্থানের অভাবে মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়।
৮.প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট ও পরিবেশ দূষণ:
পৃখিবীতে মানুষের বসবাসের উপযােগী প্রকৃতির নিজস্ব যে পরিবেশ রয়েছে জনসংখ্য বৃদ্ধির কারণে তা আজ নানা কারণে দৃষিত, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যন্ত। অতিরিক্ত জনসংখ্যা বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে জমি সংকট, গাছপালা কর্তনসহ নানা সমস্যার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
৯.সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধপ্রবণতা:
বাংলাদেশের পক্ষে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনাে বিশেষ ব্যবস্থা বা জনসংখ্যার ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সমাজে হতাশা, ক্ষোভ ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।
জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন :
জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে আমার পরামর্শগুলো নিম্নরূপ :
১.নিয়মিত পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান এবং এ সেবা জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌছানাে।
২. মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয়।
৩.পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির বাস্তবায়নে জোরালো রাজনৈতিক সমর্থন।
৪.বাল্যবিবাহের হার কমানাের জন্য কার্যকর আইন বাস্তবায়ন।
৫. নারী শিক্ষা ও নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।৬.বিভিন্ন কুসংস্কার দূরীকরণের লক্ষ্যে মসজিদের ইমামদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানাে।
৭.অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমােচন কর্মসূচি, খাদ্য উৎপাদন, যুগোপযোগী শিক্ষা সুযােগ সৃষ্টি করা।
৮.উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করলে জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান অনেকাংশেই সম্ভব বলে আমি মনে করি
৩. জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরের পাঁচটি উপায় লিখুন।
বাংলাদেশে যথেষ্ট মূলধন না থাকলেও আছে পর্যাপ্ত জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যার দক্ষতা বাড়ানাের মাধ্যমে তাদের জনসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। দক্ষ জনসম্পদ গঠনের কয়েকটি উপায় হলাে:
১. শিক্ষা:
মানব সম্পদ উন্নয়নের মূল উপাদান হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে জনসম্পদকে দক্ষ করে তোলা যায়।
২. দক্ষতা বৃদ্ধি :
শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির পূর্বশর্ত হলাে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মাধ্যমে তাদের কর্মক্ষমতা ও গুণগত মান বৃদ্ধি করা যায়।
৩.জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান :
অতিরিক্ত দক্ষতা বাড়াতে গেলে অতিরিক্ত সম্পদের প্রয়ােজন হয়। বর্তমান জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান করার জন্য প্রয়ােজন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৪.জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি:
উপযুক্ত বাসস্থান, পরিবেশ ও মানসম্মত জীবন-যাপন, সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা পাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ ইত্যাদি বিষয় জীবনযাত্রার মানের মূল উপাদান। এগুলাে নিশ্চিত করার মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়।
৫.জনশক্তি পরিকল্পনা:
বাংলাদেশের জনসম্পদকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রয়ােজন সুষ্ঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ।এ লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হবে।
৪. জীবনযাত্রার মানের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব সংক্ষেপে লিখুন।
অথবা, বাংলাদেশে অধিক জনসংখ্যার কারণে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে?
একটি দেশ কতটা উন্নত তা বুঝা যায় দেশটির নাগরিকগণের জীবনযাত্রার মান থেকে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্ন পর্যায়ের। জীবনযাত্রার মানের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব আমরা নিম্মলিখিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে লক্ষ করি।
১. খাদ্য :
খাদ্যের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি হয়ে থাকে। এ ফলে অনেক লোক দারিদ্র ও অপুষ্টির শিকার হয়।
২.বস্ত্র :
পরিবারে লােকসংখ্যা বেশি হলে অনেকক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের প্রয়ােজনীয় কাপড়-চোপড়, বিদ্যালয়ের চ্রেস ইত্যাদি কিনে দেওয়া সম্ভব হয় না।
৩. বাসস্থান:
বর্তমানে দেশে যে হারে লােকসংখ্যা বাড়ছে তাতে প্রতিবছর আড়াই লক্ষের মতো অতিরিক্ত গৃহের প্রয়ােজন। এ প্রয়ােজন মেটাতে গিয়ে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। গাছপালা ও বনজঙ্গল উজাড় হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে পরিবেশ সমস্যা।
৪. শিক্ষা :
সম্পদ সীমিত হওয়ার কারণে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকার ও পরিবার উভয়ই ব্যর্থ।ফলে অনেক শিশু শিক্ষা লাত থেকে বঞ্চিত হয়।৫. চিকিৎসা :জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি বাংলাদেশের সকল নাগরিককে চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। উপরিউক্ত আলােচনা থেকে বােঝা যায় যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে ।
৫. জনসংখ্যা বিস্ফোরণ কী? জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি কিভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে?
জনসংখ্যা যেকোনাে দেশের তথা পৃথিবীর মূল সম্পদ। তবে এ জনসংখ্যা যদি কোনাে দেশে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয় তবে দেখা দেয়া বহবিধ সমস্যা । বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যা সমস্যা একটি বিশাল সমস্যা। উন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলােতে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে আছে। কারণ উন্নয়নশীল দেশগুলােতে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের এক হিসেব অনুযায়ী ৫০ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে ছিল। পৃথিবী বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৬,৯৩৫,৩০০ বিলিয়ন (ইউ এস. সেনসাস ব্যুরাে’স ওয়ার্ল্ড পপুলেশন ক্লক , ৪ আগস্ট, ২০১১)। এ বিপল জনস্ফীতিকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুধের মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার উপর যেমন প্রভাব পড়ছে তেমনিভাবে নষ্ট করছে পরিবেশের ভারসাম্য। নিচে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি কীভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে তা উল্লেখ করা হলাে:
১) জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে যানবাহনের সংখ্যা। আর ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন যানবাহনের নির্গত কালাে ধোয়ার ফলে পরিবেশের অন্যতম উপাদান বায়ু বা বাতাস দূষিত হচ্ছে।
২) বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহৃত হর্ন শব্দ দূষণ করছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
৩) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে দেশের সকল নাগরিকের সার্বিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য মহামারি আকারে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৪) জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে গাছপালা সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে।