বি.এড Archives - Proshikkhon

Category "বি.এড"

18Jan2022

Class Management: Concepts, Materials and Strategies

শ্রেণি ব্যবস্থাপনা: ধারণা, উপাদান ও কৌশল

শিখন-শেখানো কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে শ্রেণি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক যদি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রেণি ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারেন তবেই সার্থক ও কার্যকর পাঠদান সম্ভব ।

শ্রেণি ব্যবস্থাপনা কী?

বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষব্যবস্থাপনা বলতে শিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য হাসিল করার জন্য ভে․ত এবং মানবীয় উপাদানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে জ্ঞান চর্চার অনুকূল
পরিবেশ সৃষ্টির সামগ্রিক প্রক্রিয়াকেই বোঝায়। অর্থাৎ শিক্ষক শিক্ষাক্রমের আলোকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়াকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকেন তাকেই শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা বলে।

শ্রেণি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বা লক্ষ্যণীয় দিক:

[…]
18Jan2022

Strategies for building good school relations with community members

সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক সৃষ্টির কৌশল

বিদ্যালয় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান৷ এখানে সেতু বন্ধনে আছেন  শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক৷ যেখানে শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের প্রাণ; সেখানে শিক্ষক ও অভিভাবক হচ্ছেন বিদ্যালয়ের দেহ স্বরূপ৷ একক প্রচেষ্টায় কখনো কোন প্রতিষ্ঠানের  উন্নতি সাধন  সম্ভব নয়৷ প্রত্যেক বিদ্যালয়ের একটি নির্ধারিত এলাকা (Catchment area) আছে৷ বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য ঐ এলাকার জনগোষ্ঠির বিদ্যালয়ের সাথে সুসম্পর্ক একান্ত প্রয়োজন৷ বিশেষ করে বিদ্যালয়ের সংগে এলাকার অভিভাবক শ্রেণি ও বিদ্যোত্সাহী ব্যক্তিবর্গের সুসম্পর্ক অপরিহার্য৷ যে প্রতিষ্ঠানের সংগে সমাজের  সদস্যদের যত ভাল সম্পর্ক, সে প্রতিষ্ঠান তত লেখাপড়ায় উন্নত৷ সমাজে বসবাসকারিগণই মূলত বিদ্যালয় উন্নয়নে  এগিয়েআসেন ৷ ব্যক্তিগত  নয়, সমষ্টিগত প্রচেষ্টাই কোন বিদ্যালয়  উন্নয়নের  পূর্বশর্ত ৷ কাজেই বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য  সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্কের  কোন বিকল্প নেই ৷এইঅধিবেশনে সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেই কৌশলসমূহ আলোচনা করা হবে৷

সমাজ সদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যম :

  • শ্রেণিওয়ারি মা সমাবেশ;
  • এস এম সি;
  • অভিভাবক দিবস;
  • উঠান বৈঠক;
  • শিশু র‌্যালি;
  • গণ্যমান্যব্যক্তিদের নিয়ে সভা;
  • শিক্ষোপকরণ প্রদর্শন;
  • গৃহ পরিদর্শন;
  • সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান;
  • বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য পুরস্কার;
  • দরিদ্র, অসহায় শিশুদের জন্য পুরস্কার;
  • একীভথত শিক্ষা সম্পর্কে অবহিতকরণ;
  • বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন;
  • শিক্ষা সপ্তাহ/ক্রীড়াসপ্তাহ;
  • প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় যুবক;
  • বিদ্যালয় সম্পর্কে মালিকানাবোধ;
  • পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ;
  • বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি।

সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক সৃষ্টির কৌশল:

  • শ্রেণিওয়ারি মা সমাবেশের ব্যবস্থা করা;
  • এস এম সি সদস্যদের সাথে নিয়মিত  সভা করা;
  • নির্ধারিত  দিনে অভিভাবক দিবস পালন  করা;
  • নিয়মিত ভাবে উঠান বৈঠকের ব্যবস্থা করা;
  • নির্ধারিত দিনে শিশুর‌্যালির ব্যবস্থা করা;
  • মাঝে মাঝে গণ্যমান্যব্যক্তিদের নিয়ে সভা করা;
  • শিক্ষার্থী কর্ত্তৃক তৈরিকৃত শিক্ষোপকরণ প্রদর্শনীতে অভিভাবকদের আমন্ত্রণ করা;
  • রুটিন  অনুযায়ী গৃহ পরিদর্শন করা;
  • সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এলাকার ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ করা;
  • বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা;
  • দরিদ্র, অসহায় শিশুদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা;
  • এলাকার জনগণকে একীভূত শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত করা;
  • বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা প্রণয়নে এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করা;
  • শিক্ষা সপ্তাহে ও ক্রীড়াসপ্তাহে স্থানীয় জনগণকে আমন্ত্রণ করা;
  • প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় যুবকদের বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত করা;
  • বিদ্যালয়টি সম্পর্কে এলাকাবাসীর মনে মালিকানাবোধ সৃষ্টি করা;
  • পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে সকলকে আমন্ত্রণ জানানো;
  • এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠা/ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির হাত দিয়ে পুরস্কার প্রদান।

আরও পোস্ট দেখুন:

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য

18Jan2022

Impact of teacher’s sense of community and human values in teaching and learning

শিখন-শেখানো কাজে শিক্ষকের সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রভাব

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের একজন দক্ষ শিক্ষক সমাজের পথ প্রদর্শক, সমাজসংস্করক ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব৷ তাঁর আদর্শে  শিক্ষার্থীরা ও সমাজের  অন্যান্য সদস্যবৃন্দ অনুপ্রাণিত  হন৷ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়: শিখন-শেখানো কার্যাবলির মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনে ভবিষ্যতের জন্য সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটে,  যা তাদের প্রকৃত  মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ধনাত্মক নিয়ামকের মত কাজ করে৷ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব৷ মানুষই একমাত্র বিবেকসম্পন্ন জীব৷ মানুষ অনেকগুলো গুণের অধিকারী৷ কিন্তু একজন শিক্ষককে মানুষের গুণাবলির পাশাপাশি আর অনেকগুনের অধিকারী হতে হয়, যা তাঁকে এক অনন্য মানুষে পরিনত করে৷ শিখন-শেখানো কাজে একজন শিক্ষকের সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রভাবসুদূরপ্রসারী, যা ভবিষ্যতে আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিফলিত হয়৷ আমরা এই অধিবেশনে  শিখন-শেখানো কাজে শিক্ষকের সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব৷

শিক্ষকের সমাজবোধ :

  • সমঝোতা,
  • সম্প্রীতি,
  • সহিষ্ণুতা,
  • মিলেমিশে কাজ করার মনোভাব,
  • নারীজাতির  প্রতি সম্মান প্রদর্শন,
  • মেয়ে শিক্ষার্থী ও ছেলে শিক্ষার্থীদের সমদৃষ্টিতে দেখা,
  • সংবেদনশীল,
  • প্রাণবন্ত,
  • আনন্দমুখর,
  • কৌতুকপ্রিয়।

শিক্ষকের মানবিক মূল্যবোধ

  •  সহনশীলতা,
  •  আত্মসংযমী,
  •  উদার দৃষ্টিভঙ্গি,
  •  ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন,
  •  কৌতুক রসবোধ,
  •  আত্মমর্যাদা সম্পন্ন,
  • কৌতুহল পরায়ণ,
  • শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ,
  • দয়া ও স্নেহপরায়ণ,
  • মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা।

সমাজবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রভাব বিস্তারের কৌশল

  •  শিশুকে ভাল আচরণ শিখতে অনুপ্রাণিত করা;
  •  নিজকে অনুকরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা;
  •   ভাল কাজের জন্য শিশুকে পুরস্কার দেয়া;
  •  ভাল কাজের জন্য শিশুকে প্রশংসা  করা;
  •  শিশুকে নিরাপদ পরিবেশ  প্রদান করা;
  •  শিশুদের মানবতামূলক গল্প শোনানো;
  •  মানবজাতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা;
  •  বড়দের সম্মান ও ছোটদের প্রতি সহানুভথতিশীল আচরণ  করতে শেখানো;
  •  সকলের  প্রতি মানবিক হতে  শেখানো;
  •  ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণে উদ্বুদ্ধ করা;
  •  সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করানো;
  •  পরমতসহিষ্ণুতা শেখানো;
  •  জাতীয়, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করানো;
  •  দেশের  স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করা।

আরও পোস্ট দেখুন:

সমাজসদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের সুসম্পর্ক সৃষ্টির কৌশল

18Jan2022

Strategies for formulating objective and structured tests

শিখনফল অনুসারে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক ও কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা প্রনয়ন কৌশল

যোগ্যতাভিত্তিক টেষ্ট আইটেম তৈরি করা একটি জটিল ও চিন্তাশীল কাজ। আইটেম প্রণয়নের পূর্বে আইটেম প্রস্তুতকারীকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যাপক তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। কারণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞানের ঘাটতি থাকলে কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। সে কারণে বর্তমান অধিবেশনটিতে টেষ্ট আইটেম তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তাত্ত্বিক বিষয়াদি যেমন: টেষ্ট আইটেম তৈরির জন্য পূর্ব প্রস্তুতিমূলক কাজ, ব্লুমের ট্যাক্সোনমি অনুসারে মূল্যায়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রসমূহ, নমুণা টেবিল, আইটেম তৈরির বিভিন্ন কলাকৌশল এবং তৈরিকৃত আইটেম মূল্যায়ন ও উন্নয়নের চেকলিষ্ট সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। নিম্নে বর্ণিত আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষকগণ যোগ্যতাভিত্তিক টেষ্ট আইটেম প্রস্তুত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

বেঞ্জামিন ব্লুমের ট্যাক্সোনমি অনুসারে শিখনের উদ্দেশ্যর শ্রেণিকরণ/ক্ষেত্রসমূহ ব্যাখ্যা

 আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক বেঞ্জামিন ব্লুম শিখনের উদ্দেশ্যসমূহকে প্রথমতঃ ৩ ক্ষেত্রে ভাগ করেছেন। যথা-

(১) জ্ঞানমূলক/মননশীলতার ক্ষেত্র (Cognitive Domain),

(২) অনুভূতিমূলক/আবেগিক ক্ষেত্র (Affective Domain) ও

(৩) মনোপেশীজ ক্ষেত্র (Psychomotor Domai)।

জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের উপক্ষেত্র

জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রকে মোট ৬টি উপক্ষেত্রে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো:

জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের প্রথম ধাপ হলো জ্ঞান। 

৫ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পাঠ্য বইয়ের ৮৮-৮৯ পৃষ্ঠায়  বেগম রোকেয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য বর্ণিত আছে। প্রথম বাক্যটি শুরু করা হয়েছে এভাবে, ‘বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

  • ‘বেগম রোকেয়া কত সালে জন্মগ্রহন করেন’? উত্তর: ‘১৮৮০ সালে’।
  • ‘১৮৮০ সালে’তথ্যটি  সরাসরি টেক্সট বইয়ে আছে কিনা? সঙ্গত কারণেই ‘হ্যাঁ’

জ্ঞান বলতে পূর্বে শেখা কোন সুনির্দ্দিষ্ট /সর্বজনীন কোন কিছুর (সংজ্ঞা, ঘটনা, প্রক্রিয়া, তত্ত্ব ইত্যাদি) স্মরণ করার মানসিক প্রক্রিয়াকে বুঝায়। এটি জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের সবচেয়ে নিচু স্তরের উদ্দেশ্য।’

জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের দ্বিতীয় ধাপ হলো অনুধাবণ। 

৫ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পাঠ্য বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বণিত আছে, ‘নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এ সময় নারী শিক্ষা বিস্তারে নিরলস পরিশ্রম করেন।’ 

এখন প্রশ্ন হলো- ‘বেগম রোকেয়াকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি কেন?

প্রশ্নটির উত্তর উক্ত বাক্যটি মধ্যে লুকায়িত আছে। শিক্ষার্থীরা বর্ণিত বাক্যটি যথাযথভাবে অনুধাবণ করতে পারলে প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারবে। এটিই হলো অনুধাবণ।

‘অনুধাবণ বলতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যাংশ পড়ে বিষয়বস্তু/তথ্যসমূহ কতকখানি উপলব্ধি করতে পেরেছে শিশুর সে ক্ষমতাকে বুঝায়। অর্থাৎ কোন ধারণা/তথ্যকে বুঝে সহজভাবে উহা বর্ণনা করার ক্ষমতাকে অনুধাবন/বোধগম্যতা বলা হয়।’

জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের তৃতীয় ধাপ হলো প্রয়োগ। 

প্রশ্ন: বেগম রোকেয়ার মত সমাজের মানুষের কল্যানের জন্য তুমি করতে পার এমন ৫টি কাজের নাম লেখ।

এ সকল তথ্য পাঠ্য বইয়ে নেই। শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যাংশ থেকে বেগম রোকেয়ার জীবনী পড়ে পাঠের মর্ম অনুধাবনের পর আরও গভীর চিন্তা করে নিজ জীবনে উহা প্রয়োগের চিন্তা থেকে  এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে সেটিই হবে ‘প্রয়োগশীলতা’।

জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের চতুর্থ ধাপ হলো বিশ্লেষণ। 

সমাজের মানুষ হিসেবে আমাদের অনেক অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে আমাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্বলিত একটি সমণি¦ত চার্ট দিয়ে উক্ত চার্ট থেকে যদি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলাদা করতে দেই, সেক্ষেত্রে কাজটি করতে গিয়ে সে নিশ্চয়ই অধিকার ও কর্তব্যের বৈশিষ্ট্যগুলো ভালভাবে জেনে নিয়ে উক্ত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে অধিকার ও কর্তব্যসমূহ আলাদা করবে।

এভাবে কোন সমগ্রকের ক্ষুদ্র অংশসমূহ পুঙ্খানুরূপে চিনে সমগ্রকের সংগে ক্ষুদ্র অংশসমূহের সম্পর্ক স্থাপন করতে জানা এবং  বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকে সমগ্রকের অংশসমূহ আলাদা করতে পারাকে বিশ্লেষণ বলা হয়।

জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের পঞ্চম ধাপ হলো সংশ্লেষণ। 

একটি মানচিত্রের বিভিন্ন অংশে খন্ডিত করে পঞম শ্রেণির কোন শিক্ষার্থীকে উক্ত খন্ডিত অংশসমূহ জোড়া লাগিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র তৈরি করতে দিলে উক্ত শিক্ষার্থী সমগ্রকের (পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র) সাথে খন্ডিত অংশসমূহের সম্পর্ক চিন্তা করে যদি কাজটি সফলভাবে সমাপ্ত করতে পারে তবে সেটি হবে সংশ্লেষণ।

অর্থাৎ কোন বস্তু/উপাদানের ক্ষুদ্র উপাদানসমূহকে একত্রিকরণের মাধ্যমে পূণাঙ্গ রূপ দেয়ার নাম হলো সংশ্লেষণ। এ স্তরের পরিবর্তন হবে সৃষ্টিধর্মী কাজ বা পরিকল্পনা করার ক্ষমতা।

জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের ষষ্ঠ এবং সর্বশেষ ধাপ হলো মূল্যায়ন।

‘সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর মধ্যে কে বেশী ভুমিকা পালন করেছেন’ শিক্ষার্থীদের ইহা বিচার করতে দিলে সেটি কীভাবে করবে? অবশ্যই পাঠ্য বই থেকে প্রাপ্ত এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। অতএব, মূল্যায়ন হলো বিশেষ উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে নির্র্দিষ্ট মানদন্ডের আলোকে কোন কিছুর মূল্যমান বিচার করার প্রক্রিয়া।

বুদ্ধিভিত্তিক ডোমেইনগুলো সিড়ির ধাপের সাথে তূলনা করা যায়:

  • মূল্যায়ন (৬)
  • সংশ্লেষণ (৫)
  • বিশ্লেষণ (৪)
  • প্রয়োগ (৩)
  • উপলব্ধি (২)
  • জ্ঞান (১)

মননশীলতার উপরোক্ত ৬টি পর্যায় কাঠিন্যের মাত্রা অনুসারে বিন্যস্ত। জ্ঞান হল সহজতম এবং মূল্যায়ন হল জটিলতম পর্যায়। এক্ষেত্রে শিখন প্রক্রিয়ায় মননশীলতার প্রথম পর্যায়টি পুরোপুরি অর্জনের পরই পরবর্তী পর্যায়ে উত্তরণের প্রচেষ্টা নেয়া উচিত। অন্যথায় শিখন প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে। শিখন প্রক্রিয়ার ন্যায় একই ভাবে মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও সহজ থেকে কঠিন নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। প্রশ্নপত্রের শুরুতেই সহজ প্রশ্ন করলে শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং মনোনিবেশ সহজ হয়। বিপরীতক্রমে প্রশ্নপত্রের শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করলে শিক্ষার্থীদের জন্য উহা ক্ষতির কারণ হতে পারে।

অভীক্ষা পদ কীভাবে তৈরি করতে হয়?

(ক) বহুনির্বাচনী প্রশ্ন:

অভীক্ষা পদ তৈরি নমুনা-১:      

প্রান্তিক যোগ্যতা: ১২. পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের গুরুত্ব উপলব্ধি এবং এসব কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ। 

শিখনফল: ১২.১.৫ আর্সেনিকযুক্ত পানি ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো বলতে পারবে।

অভীক্ষা পদ-১. টিউবয়েলের আর্সেনিকযুক্ত পানি দীর্ঘদিন পান করলে নিম্নের কোন রোগটি হবার ঝুঁকি রয়েছে ?

(ক) ডায়রিয়া

(খ) ক্যান্সার

(গ) সর্দি ও কাশি

(ঘ) যক্ষা         

উত্তর: (খ) ক্যান্সার

ডোমেইন : জ্ঞানমূলক

জ্ঞানমূলক ডোমেইন কেন? কারণ এর উত্তর পাঠ্যপুস্তকে সরাসরি পাওয়া যায়।

অভীক্ষা পদ তৈরি নমুনা-২:

প্রান্তিক যোগ্যতা: ১০ মৌলিক মানবাধিকার সম্পর্কে ধারণা লাভ এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তার অনুশীলন।     

শিখনফল: ১০.১.৩ মৌলিক মানবাধিকার সমুন্নত রাখার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুফল বর্ণনা করতে পারবে।

অভীক্ষা পদ-২: শিশু শ্রম বন্ধ হলে কী উপকার হবে?

(ক) দেশের আয় বৃদ্ধি পাবে

(খ) শিশু পাচার বন্ধ হবে

(গ) শিশুদের অধিকার রক্ষা হবে

(ঘ) কলকারখানার উৎপাদন বাড়বে         

উত্তর:  (গ) শিশুদের অধিকার রক্ষা হবে

ডোমেইন : অনুধাবনমূলক

অভীক্ষা পদ তৈরি নমুনা-৩:

প্রান্তিক যোগ্যতা: ১২. পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের গুরুত্ব উপলব্ধি এবং এসব কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ। 

শিখনফল: ১২.১.৭ রাস্তা, পুল, সাঁকো ইত্যাদি মেরামত কাজে অংশগ্রহণ করবে।

অভীক্ষা পদ-৩. তুমি বাড়ীর নিকটবর্তী মাঠে খেলতে যাবার পথে দেখলে এলাকার লোকজন মিলে ভাংগা রাস্তা মেরামত করছে। এক্ষেত্রে তুমি কী করবে?

(ক) অন্য রাস্তা দিয়ে খেলতে যাব

(খ) রাস্তা মেরামতের কাজে সাহায্য করব

(গ) লোকজনকে ঐ পথ দিয়ে যেতে নিষেধ করব

(ঘ) খেলা না করে বাড়ি ফিরে আসব

উত্তর:  (খ) রাস্তা মেরামতের কাজে সাহায্য করব

ডোমেইন :  প্রয়োগমূলক

(খ) কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা (সিআরকিউ):

অভীক্ষা পদ তৈরি নমুনা-১:

প্রান্তিক যোগ্যতা: ৯. জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং সমাজের সদস্যদের মধ্যে সাম্য, মৈত্রী, সহমর্মিতা ও সহযোগিতাবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে শান্তিময় সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টিতে আগ্রহী হওয়া। 

শিখনফল: ৯.১.১ সমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন ধর্ম ও জীবন ধারার অনুসারী কয়েকজন নারী ও পুরুষের অবদান সম্পর্কে বলতে পারবে।

অভীক্ষা পদ-১: নারী উন্নয়নে বেগম রোকেয়ার ৫টি অবদান লিখ।     

ডোমেইন : জ্ঞান

উত্তর: নারী উন্নয়নে বেগম রোকেয়ার ৫টি অবদান হল:

১.মুসলিম নারীদেরকে শিক্ষিত ও সচেতন করার মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায়ে সহায়তা দিয়েছিলেন।

২.নারীসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনেক পুস্তক রচনা করেছিলেন।

৩.নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য মুসলিম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

৪.মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীদেরকে আধুনিক রান্না, সেলাই ও সন্তান প্রতিপালনে দক্ষ হতে সহায়তা করেছিলেন।

৫.মুসলিম নারীদেরকে সমাজের কঠোর পর্দা প্রথা ভেঙ্গে সমাজে স্বাভাবিকভাবে চলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

অভীক্ষা পদ তৈরি নমুনা-২:

প্রান্তিক যোগ্যতা: ১১. কায়িক শ্রমের প্রতি আগ্রহী হওয়া এবং শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ।

শিখনফল: ১১.২.২ সমাজে সকল শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের গুরুত্ব বলতে পারবে।

অভীক্ষা পদ-৫: তুমি সমাজের সকল শ্রমজীবি মানুষকে কেন শ্রদ্ধা করবে? ৫টি কারণ লেখ।     

ডোমেইন : উপলব্ধি

উত্তর: আমি সমাজের সকল শ্রমজীবি মানুষকে শ্রদ্ধা করব। কারণ:

১.সমাজে সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য আমরা শ্রমজীবিদের ওপর নির্ভরশীল।

২.শ্রমিকরাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।

৩.শ্রমিককদের কারণেই সমাজ ও রাস্ট্রীয় কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলতে পারে।

৪.আমাদের প্রতিদিনের সকল কাজে কোন না কোনভাবে শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল।

৫. কোন দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে দেশের শ্রমিক শ্রেনীর সেবার মানের ওপর।

অভীক্ষা পদ তৈরি নমুনা-৩:

প্রান্তিক যোগ্যতা: ১৪. সমাজ জীবনে পরমত সহিষ্ণুতা প্রদর্শন এবং গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির অনুশীলন।  

শিখনফল: ১৪.৪.১ নেতৃত্বের সাধারণ গুণাবলি উল্লেখ করতে পারবে।

অভীক্ষা পদ-৬: তোমার শ্রেণিতে ক্লাশ ক্যাপ্টেন নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে তুমি যাকে যোগ্য মনে করে ভোট দিবে তার পাঁচটি গুন উল্লেখ কর।   

ডোমেইন :  প্রয়োগ

উত্তর:  ক্লাশ ক্যাপ্টেন হবার জন্য নিম্নের ৫টি গুন থাকা প্রয়োজন। যথা:

১. সবার সাথে মিশতে পারা

২. স্পষ্ট ও সুন্দর করে কথা বলা

৩. দায়িত্বশীল

৪. সৎ ও ন্যায়বান

৫. পরোপকারী।

আরও পোস্ট দেখুন:

মার্কিং স্কিম কী? নমুনা মার্কিং স্কিম

18Jan2022

Evaluation: Objectives, Types and Strategies

মূল্যায়ন: উদ্দেশ্য, প্রকারভেদ ও কৌশল

শিখন-শেখানো কার্যাবলির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল মূল্যায়ন (Assessment)। একটি সফল শিখন-শেখানো কার্যাবলি পরিচালনার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য মূল্যায়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যায়নের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর কোন একটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান/দক্ষতা/দৃষ্টিভঙ্গি তথা যোগ্যতার মান যাচাই করা যায়। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়নকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়েছে। গাঠনিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন হলো মূল্যায়নের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শ্রেণিবিভাগ। শিক্ষার্থীকে শিখনে সহায়তা করার জন্য শিখন শেখানো চলাকালীন যে মূল্যায়ন করা হয়, উহাই হলো গাঠনিক মুল্যায়ন (Formative Assessment); আর শিক্ষার্থী যা শিখেছে উহা মূল্যায়ন করাকে বলা হয় সামষ্টিক মূল্যায়ন (Summtive Assement)। বাংলাদেশে প্রচলিত যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অর্জিত যোগ্যতা সার্থকভাবে পরিমাপের জন্য গাঠনিক মূল্যায়নের ওপর জোর দিতে হবে। এজন্য গাঠনিক মূল্যায়নের কৌশলগুলো ভালভাবে জেনে শিখন শেখানোর কাজে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা গেলে শিখন শেখানোর প্রচষ্টা সফল হবে বলে ধরে নেয়া যায়।

মূল্যায়ন

শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ/উপাদান হলো শিক্ষার্থী মূল্যায়ন (assessment) যা শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি নিরূপণের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেক শিক্ষকের পেশাগত দায়িত্বের অংশ হলো শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারছে, কী মাত্রায় এবং কতটা ভালোভাবে শিখতে পারছে সে সম্পর্কে অবহিত হয়ে সর্বোচ্চ শিখন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

সাধারণভাবে মূল্যায়ন বলতে কোন কিছুর উপর মূল্য আরোপ করাকে বুঝায়। Gronlund & Linn (১৯৯০) এর মতে, শিক্ষণ উদ্দেশ্যের কতটুকু শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে পেরেছে তা নির্ণয়ের জন্য তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হল মূল্যায়ন। ঋৎববসধহ এবং খবরিং (১৯৯৮) এর মতে মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন – এর মাত্রা বা স্তর যাচাই করা হয়। এর কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থী কী জানে, বা কী করতে সক্ষম তা নিরূপণ করা। অর্থাৎ, মূল্যায়ন হলো একটি উপকরণ বা কৌশল যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য নির্ধারিত শিখন ফল (learning outcome) কতটা ভালভাবে অর্জন করতে পেরেছে তা নিরূপণ করা বা মাপা যায়। তবে শিখন মূল্যায়ন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে শিক্ষার্থীর শিখন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা, তা পর্যালোচনা করা এবং পর্যালোচনার ফসল শিক্ষার্থীদের শিখন মান উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হয়।

সাধারণভাবে শিক্ষাক্রম ও বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট যোগ্যতা শিক্ষার্থী কতখানি অর্জন করতে পেরেছে, বা কতটা অগ্রসর হয়েছে তা যাচাই করা হয় মূল্যায়নের মাধ্যমে। অর্থাৎ, কোন বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর জ্ঞান, বোধগম্যতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয়। আর তা করতে হবে নির্ধারিত শিখন উদ্দেশ্যের (learning intention) ভিত্তিতে।

মূল্যায়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

মূল্যায়নের প্রধান লক্ষ্য হলো পাঠের বিষয়বস্তু শেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত বা উদ্বুদ্ধ করা। এটি প্রধানত শিক্ষার্থীর শিখন মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীদের শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনে মূল্যায়ন তাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(ক) মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য প্রদান। শিক্ষার্থী কতখানি অগ্রসর হয়েছে বা কতটা পিছিয়ে পড়েছে সে সম্পর্কিত তথ্য জানা যায়; এবং সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীকে তার শিখন মান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যায়।

(খ) বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে সাধনের লক্ষ্যে মূল্যায়নের ফল ব্যবহার করে থাকে। যেমন: শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টি বা শিখনে আগ্রহ বৃদ্ধি, শিখনের সুযোগ প্রসারিত করা, শিক্ষার্থীকে শিখন সহায়ক পরামর্শ বা ফলাবর্তন দেয়া, শিক্ষককে শিক্ষণ পদ্ধতি যাচাই করার সুযোগ প্রদান, গ্রেড প্রদান, উপরের শ্রেণিতে পদোন্নতি, শিখন মান নিশ্চিত করা ইত্যাদি ।

(গ) মূল্যায়নের একটি বহুল ব্যবহৃত বা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীকে তার কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেয়া। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী কোন কোর্স বা বিষয়ে নির্ধারিত মানদন্ড (Particular standard) অর্জন করতে পেরেছে কিনা তার একটি প্রমাণ বা সনদ প্রদান করা হয় মূল্যায়নের মাধ্যমে।

(ঘ) শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা/কৃতিত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ নথিবদ্ধ করা, অন্য কথায় শিক্ষার্থীর প্রোফাইল বর্ণনা করা শিক্ষার্থীর শিখন মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

(ঙ) মূল্যায়নের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর শিখনকে সহায়তা করা। যেমন: প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আগ্রহ বৃদ্ধি করা, শিক্ষার্থীর কাজ বা পারদর্শিতার ওপর ফলাবর্তন (ভববফনধপশ) দেয়া যার দ্বারা শিক্ষার্থী তার দূর্বলতা দূর করে শিখন মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে, শিক্ষার্থীকে তার অগ্রগতি চিহ্নিত করতে সহায়তা করা।

(চ) শিক্ষার্থীর শিখন মূল্যায়নের তথ্য শিক্ষককে তার শিক্ষণ পদ্ধতি ও কলা-কৌশল পর্যালোচনা করার সুযোগ প্রদান করে। যেমন, শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা কোন প্রশ্নের উত্তর কতটা সঠিকভাবে দিতে পারছে; সব শিক্ষার্থী উত্তর দিতে পারছে কিনা ইত্যাদি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষক তার শিক্ষণ পদ্ধতির মান যাচাই করতে পারেন।

(ছ) শিক্ষার্থীর কতটা অগ্রগতি হয়েছে, বা শিক্ষার্থী কোন কাজের জন্য কতটা যোগ্য – এ বিষয়ে অভিভাবককে অবহিত করা মূল্যায়নের একটি উল্লখযোগ্য কাজ।

মূল্যায়নের প্রকারভেদ:

১. অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়ন (Informal Assessment) ও আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন (Formal Assessment):

শ্রেণীকক্ষের প্রতিদিনের শিখন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত না করে যে মূল্যায়ন করা হয়, তাই অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়ন । যেমন: শিক্ষার্থীর উত্তর ও উপস্থাপন শুনে, শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে, বাড়ির কাজ বা নির্ধারিত কাজ যাচাই করে তাকে মূল্যায়ন করা।

পক্ষান্তরে, কোন উদ্দেশ্য নিয়ে শ্রেণীকক্ষের শিখন কাজ বন্ধ রেখে নির্দিষ্ট সময়ে ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় যে মূল্যায়ন করা হয়, তাই আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন । যেমন: ষান্মাসিক পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা ইত্যাদি।

২. গাঠনিক (Formative) ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (Summative):

শিখন শেখানো কাজ চলাকালীন যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকে গাঠনিক মূল্যায়ন বলে। যেমন: শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা (পড়া, লেখা, বলা, অভিনয়, আবৃত্তি, আঁকা ইত্যাদি) পর্যবেক্ষণ করে, মৌখিক প্রশ্ন করে । 

অন্যদিকে একটি ইউনিটের / সাময়িকের/ বছরের কার্যক্রমের শেষে শিক্ষার্থী কী অর্জন করল তা যাছাই এর জন্য যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলে। যেমন: সাপ্তহিক পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা ইত্যাদি ।

৩.  ধারাবাহিক মূল্যায়ন (Continuous Assessment) ও প্রান্তিক মূল্যায়ন (Terminal Assessment):

শিখন শেখানো কার্যাবলিতে অবিরতভাবে যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বলে। অন্যদিকে একটি কোর্সের শেষে শিক্ষার্থী কী অর্জন করল তা যাছাই এর জন্য যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকে প্রান্তিক মূল্যায়ন বলে।

৪. নির্ণায়ক মূল্যায়ন বা দুর্বলতা সনাক্তকরণ মূল্যায়ন (Diagnostic Assessment):

যে মূল্যায়ন বিশেষ ক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থীর শিখন সমস্যা, ভুল ধারণা সনাক্ত করতে তৈরি করা হয়, তাকে নির্ণায়ক মূল্যায়ন বলে। যেমন: সব বর্ণমালা না চেনা এবং কম শব্দ ভাণ্ডারের কারণে স্বাভাবিক গতিতে লেখায় অসুবিধা হয়। নির্ধারিত শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে এ মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

গাঠনিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের কৌশল:

গাঠনিক মূল্যায়নের কৌশল:

এ প্রক্রিয়ার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে ফলাবর্তন (feedback) করা। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ই ফলাবর্তন লাভ করে এবং তা ব্যবহার করে তাদের শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে পারে। গাঠনিক মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর শিখনে সহায়তা করে বলে আন্তর্জাতিক অনেক শিক্ষাবিদ বা বিশেষজ্ঞ এর নাম দিয়েছেন ‘শিখনের জন্য মূল্যায়ন’ (Assessment for Learning)। সুতরাং গাঠনিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় তা হলো-

(ক) শিক্ষার্থীদের সমস্যা সনাক্ত করা;

(খ) সমস্যা কখন/কোন সময়ে দেখা দিয়েছে;

(ঘ) সমস্যার কারণ সনাক্ত করা এবং

(ঙ) সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় ইত্যাদি।

সুতরাং বহুমুখী কৌশল, পদ্ধতি ও কার্যাবলীর সমন্বয়ে গাঠনিক মূল্যায়ন সংঘটিত হয়। এ কার্যাবলির মধ্যে থাকতে পারে- কুইজ, বিষয়ভিত্তিক মৌখিক ও লিখিত প্রশ্ন, দলীয় কাজ ও উপস্থাপন, জোড়া কাজ, বা ব্যাক্তিগত পঠন, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি।

গাঠনিক মূল্যায়নের জন্য  একজন শিক্ষার্থীকে একাকী অথবা দলীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে, প্রশ্ন করে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখতে দিয়ে অথবা বলতে দিয়ে তার  অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এজন্য শিক্ষক কী টুলস বা প্রক্রিয়া ব্যবহার করবেন অর্থাৎ কী প্রশ্ন করবেন, কী বলতে দেবেন, কী লিখতে দেবেন অথবা কী কাজ করতে দেবেন সে সম্পর্কে একটি লিখিত পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে পারেন। প্রশ্ন করলে তা হতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত এবং চিন্তা উদ্রেককারী। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করতে হবে। প্রশ্নোত্তর ছাড়াও মিলকরণ, শূন্যস্থান পূরণ, চিহ্নিতকরণ ইত্যাদি ব্যবহার করেও শিক্ষার্থীর অবস্থান জানা যেতে পারে।

সামষ্টিক মূল্যায়ন:

যখন একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিক্ষার্থী কী জানে বা জানেনা তা নিরূপণ করার জন্য যে মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হয়। যেমন, বাংলাদেশের বিদ্যালয়ে ১ম ও ২য় সাময়িক (তিন/চার মাস পর পর) এবং বছরের শেষে যে মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণভাবে কোন কোর্স, ইউনিট, অধ্যায়, সেমিস্টার বা টার্মের শেষে এ মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এ থেকে শিক্ষার্থী কোন কোর্স বা পাঠের বিষয়বস্তু কতখানি আয়ত্ব করতে বা শিখতে পেরেছে তা জানা যায়।

 Gipps (1994: p.vii) এর মতে- “Summative assessment takes place at the end of a term or a course and is used to provide information about how much students have learned and how well a course has worked.”

সামষ্টিক মূল্যায়ন কৌশল:

এ মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে সাধারণতঃ গ্রেড বা নম্বর প্রদান করা হয় এবং শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেমন: শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ; কিংবা পাশ-ফেল হিসেবে ফলাবর্তন দেয়া হয়। শিক্ষার্থীর শিখন সমস্যা সমাধান বা উন্নয়নের সুযোগ থাকেনা। এ ধরনের মূল্যায়ন একাডেমিক বছরের নির্ধারিত কিছু সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। যেমন, ৩ মাস পর পর, বা একাডেমিক বছরের শেষে।

এ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান বা শিখন পরীক্ষা করা হয় যা তার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জন করার কথা। শ্রেণীকক্ষ পর্যায়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন তথ্য কাজে লাগিয়ে শিক্ষণ বা শিখন প্রক্রিয়ায় কোন পরিবর্তন আনা যায় না। 

এ মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর শিখন অবস্থা এবং মান সম্পর্কে শুধু তথ্য প্রদান করে বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষাবিদগণ এর নাম দিয়েছেন ‘শিখন বা পারদর্শিতার মূল্যায়ন’ অথবা Assessment of Learning । সাধারণতঃ আনুষ্ঠানিক এবং বিশেষ পরিবেশে (যেমন, পরীক্ষার হল) এ ধরনের মূল্যায়ন সংঘটিত হয়। তাই একে আনুষ্ঠানিক মূল্যায়নও (Formal Assessment) বলা হয়।

সামষ্টিক মূল্যায়নের কার্যাবলী ও সময়:

সাধারনতঃ বিভিন্ন অভীক্ষা ও পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়নের ফল স্কোর বা গ্রেডের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমন, ক, খ, গ, ঘ ইত্যাদি। অর্থাৎ, মূল্যায়নের ফল শিক্ষার্থীকে সাংখ্যিকভাবে শ্রেণীবিভক্ত (যেমন, সিরিয়াল করা; বা রোল নং প্রদান অথবা গ্রেড প্রদান) করা এবং শিক্ষার্থীদের পরস্পরের সাথে তুলনা করার কাজে ব্যবহার করা হয়।

মূল্যায়নে গাঠনিক এবং সামষ্টিক মূল্যায়নের ভূমিকা:

এই দুই ধরনের মূল্যায়ন কৌশলের মধ্যে কোন একটি অপরটির চেয়ে অধিক কার্যকর নয়। শিক্ষার্থীদের শিখন সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য দুটি পদ্ধতিরই প্রয়োজন রয়েছে (Garrison & Ehringhaus, ২০০৭)। পদ্ধতি দুটিকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। যে কোন একটি ওপর অত্যধিক নির্ভরতা বাস্তব শ্রেণীকক্ষে অনুষ্ঠিত শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণার জন্ম দিবে।

আরও পোস্ট দেখুন:

নৈর্ব্যক্তিক ও কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা প্রনয়ন কৌশল

17Jan2022

Erickson’s psychosocial development theory

এরিক এরিকসনের মনোসামাজিক উন্নয়ন তত্ত্ব

শিখন-শেখানোর জন্য মনোচিকিৎসক এরিক এরিকসনের মনোসামাজিক উন্নয়ন তত্ত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এই তত্ত্বের মূলকথা হচ্ছে শিশুদের এবং বয়:সন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের সামাজিক ও আবেগিক বিকাশ পরিনত বয়স পর্যন্ত চলতে থাকে । তাঁর মতে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া আটটি অবস্থার ভিতর দিয়ে গঠিত হয় । বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে মনোসামাজিক বিকাশের জন্য শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে তিনি কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখনে সহায়তা  করতে পারেন এই পাঠে তারই আলোচনা করা হয়েছে । সর্বোপরি, এই পাঠে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা উন্নয়নের উপায়সমূহ আলোচনা করা হয়েছে ।

এরিক এরিকসনের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ

মনোবিদ ফ্রয়েডের প্রত্যক্ষ ছাত্র জার্মান E.H. Erikson Zuvi Childhood & Society (1950)  নামক গ্রন্থে মনোসামাজিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। তিনি এ তত্ত্বে শারীরীক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক ঘটনাবলির ওপর ভিত্তি করে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের বিবর্তনমূলক প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। মূলত তাঁর এ মতামতটি ৮টি পর্যায়ের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত বলে এটিকে ‘Eight Stages of Man’ বলে অভিহিত করা হয়। এরিকসন প্রতিটি পর্যায়কে ‘মনোসামাজিক সংকটকাল’ বলে অভিহিত করে দুটি বিপরীতধর্মী ফলাফলের কথা উল্লেখ করেছেন।

মনোসামাজিক বিকাশের ৮টি ধাপ হল :

১। মৌলিক বিশ্বাস বনাম অবিশ্বাস (Basic Trust versus Basic Mistrust):

শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রারম্ভিক পর্যায় হিসেবে এ স্তরটি জন্ম থেকে প্রায় ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত ব্যাপৃত। এ স্তরে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে অসহায় ও মাতাপিতার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে। শিশু যদি আদর ভালোবাস ও প্রয়োজনীয় যত্ন পায় তবে তার মধ্যে বিশ্বাস নামক বৈশিষ্ট্যটি সুস্পষ্ট হয় এবং সে পৃথিবীতে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। যদি আদর ভালোবাসা ও যত্ন না পায় তবে সে নিজেকে অনিরাপদ মনে করে এবং সবার প্রতি তার অবিশ্বাস জন্মে। শিশুর সুস্থ বিকাশে প্রথম ধাপটি স্বার্থকভাবে অতিক্রমের জন্য অভিভাবকের যত্নবান হওয়া উচিৎ।

২। স্বাধীনতা বনাম লজ্জা ও সন্দেহবোধ (Autonomy Versus Shame & Doubt) :

 এ স্তরের ব্যাপ্তি ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়স অর্থাৎ প্রাক শৈশবকাল পর্যন্ত। বাবা মায়ের ভালো যত্ন শিশুদের এই সময় ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণে দক্ষ করে তোলে। অর্থাৎ পরবর্তী পর্যায়ে শিশুর আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা তথা স্বনির্ভরশীলতা এ পর্যায় থেকেই গড়ে ওঠে। শিশু নিজেকে চিনতে পারে, নিজেকে নিয়ে গর্ব বোধ করে। পক্ষান্তরে অভিভাবকের যত্ন না পেলে, কিংবা শিশু স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে মা-বাবা কিংবা অন্যের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হলে শিশু নিজের উপর সন্দিহান হয়ে পড়ে এবং লজ্জা ও অপমানিত বোধ করে। তাই কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও শাসন অপেক্ষা শিশুদের পছন্দ ও স্বাধীনতার দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

৩। উৎসাহ বনাম অপরাধবোধ (Initiative Versus Guilt):

এ স্তরের ব্যাপ্তি ৩ বছর বয়স থেকে শুরুকরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত। এ স্তরে অভিভাবকদের সঠিক পরিচর্যা প্রাপ্ত শিশুরা সক্রিয় খেলার মাধ্যমে তাদের চিন্তা ও কল্পনার বিস্তৃতি ঘটায়, অন্যদের সহায়তা করতে শেখে এবং নেতৃত্ব দিতে ও নেতৃত্ব মেনে চলতে শেখে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে শিশু হয় ভীতু, দলের সদস্যদের দ্বারা হয় একঘরে, বড়দের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল এবং খেলা ও চিন্তন দক্ষতা বাধা প্রাপ্ত হয়।

৪। অধ্যবসায় বনাম হীনমন্যতা (Industry Versus Inferiority):

এ স্তরের ব্যাপ্তি ৬ থেকে ১২ বৎসর পর্যন্ত। এ স্তরে শিশুরা পরিবেশের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সঙ্গতিবিধান ও বন্ধুবান্ধব এবং সহপাঠীদের সাথে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে নিত্যনতুন আচরণ ও অভিজ্ঞতা আয়ত্ব করে। এভাবে নতুন কার্য সম্পাদন ও অভিজ্ঞতা আয়ত্ব করার ফলে শিশুর মধ্যে পরিশ্রমী হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং তার মধ্যে সন্তুষ্টিবোধ ও  সাফল্য উপভোগ করার ইচ্ছা দৃঢ় হয়। যে সব শিশু তাদের পিতামাতা এবং শিক্ষক কর্তৃক উৎসাহিত ও পরিচালিত হয় তারা তাদের দক্ষতার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ও যোগ্যতার উন্নয়ন ঘটায়। যারা তাদের পিতামাতা, শিক্ষক অথবা সতীর্থদের কাছ থেকে উৎসাহ পায় না তারা তাদের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ প্রবণ হয়ে ওঠে। তাই এ পর্যায়ে শিশুর কার্য সম্পাদনের সামর্থ্যকে যথাযথভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে হবে।

৫। আত্মপরিচয়বোধ বনাম ভূমিকার দ্বন্দ্ব (Identity Versus Role confusion):

এ স্তরের ব্যাপ্তি হল বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ ১৩ বছর থেকে ১৯ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত। এ ধাপে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বকীয়তা ও নিজস্বতার উপলদ্ধি করে। “আমি কে” এই প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তর দিতে জানে। যারা ব্যক্তিগতভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে যথাযথ উৎসাহ ও বলবৃদ্ধিকরণ পায় তারা এ ধাপ থেকে বিকাশ লাভ করে, শক্তিশালী ব্যক্তিকরণ এবং স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণ অনুভব করে। যারা এভাবে পরিচালিত হয় না তারা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়। নিজের সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা পোষণ করতে পারে না। তারা ভবিষ্যত সম্পর্কে কোন পরিকল্পণা গ্রহণে, এমনকি সমাজের কাছ থেকে যথাযথ পরিচিতি লাভে ব্যর্থ হয়।

৬। ঘনিষ্ঠতা ও সংহতি বনাম একাকীত্ব (Intimacy abd solidarity Versus Isolation):

এ স্তরের ব্যাপ্তি ২০-২৪ বছর বয়স পর্যন্ত হওয়ায় এরিকসন এটিকে প্রাথমিক বয়স্ককাল বলে অভিহিত করেছেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তির মধ্যে অহংবোধ পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে। যার ফলে গভীর ভাবানুভূতি ও বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব গড়ে উঠে। তাই মানুষ এ ধাপে এসে সমলিঙ্গ কিংবা বিপরীত লিঙ্গের সাথে প্রকৃত ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ সম্পর্ক বাকী জীবনের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে অটুট থাকে। এমনকি কোন কোন সম্পর্ক বিয়ের মাধ্যমে স্থায়ী হয়। পূর্বের ধাপগুলোতে থাকা বিভিন্ন সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ মানুষেরা প্রকৃত ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরিতে সফল হয় না। এমনকি পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবে পারিবারিক জীবনেও সমস্যা তৈরি হয়।

৭। উৎপাদনশীলতা বনাম নিশ্চলতা (Generativity Versus Self-Absorption-Care) :

ব্যক্তিত্বের এ মনোসামাজিক বিকাশের এ মধ্য প্রাপ্ত বয়স্ককাল ২৫ -৬৪ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ পর্যায়কে উৎপাদনশীলতার সর্বোৎকৃষ্ট সময়কাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ উৎপাদনশীলতা হতে পারে বিয়ের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন অথবা ভালো কাজের মাধ্যমে কোন কিছু সৃষ্টি করা (সৃষ্টিশীল কাজ)। উৎপাদনশীলতার এ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হলে ব্যক্তি দেশ ও সমাজের প্রতি যথার্থ আবদান রাখতে সমর্থ হয়। অন্যদিকে এ পর্যায়ে ব্যক্তির স্বাভাবিক কার্যের ব্যতিক্রম ঘটলে উৎপাদনশীলতার পরিবর্তে হতাশা ও স্থবিরতা জন্ম নেয়।

৮। পূর্ণতা বনাম হতাশা (Integrity Versus Despair) :

৬৫ বৎসর থেকে এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হল এ স্তরের ব্যাপ্তিকাল। এ পর্যায়ে অহমের পূর্ণতা আসে বলে এটিকে ঊমড় ওহঃবমৎরঃু বলা হয়। মানুষ এ ধাপে পেছনে ফেলে আসা জীবনের প্রতিফলন করে থাকে। পূর্বের বিভিন্ন ধাপের সঙ্কটসমূহ স্বার্থকভাবে স্থির করতে পারা মানুষেরা সমাজে অভিযোজনের সর্বোচ্চ চ‚ড়ায় নিজেদেরকে দেখতে পায়। জীবনের সকল কাজের হিসেব নিকেশ করে নিজেকে একজন সুখী মানুষ হিসেবে ভাবতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি পূর্ববর্তী ৮টি ধাপের একটি বা একাধিক সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থ হয় তবে সে নিজেকে একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করে এবং হতাশায় নিমজ্জিত হয়।

শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রতিটি ধাপেই অভিভাবক, শিক্ষক ও ঘনিষ্ঠজনের বিশেষ সহায়তার প্রযোজন রয়েছে। পরিবারে শিশুর জন্মের পর থেকে পিতামাতার দায়িত্ব শিশুর মনোসামাজিক বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করা। তেমনি বিদ্যালয়ে শিক্ষকের কর্তব্য শিশুদের উপযুক্ত মানসিক বিকাশে সাহায্য করা যাতে সমাজে অভিযোজনে সফল হয়।

শিশুদের শেখার একটি মাধ্যম হচ্ছে খেলা। তাই শিক্ষক বা অভিভাবকগণ শিশুকে তার চারপাশের পরিবেশ, মানুষ সম্পর্কে ধারণা পেতে খেলার সাহায্যে নিতে পারেন। শিশুর মনোসামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর জন্য সমস্ত খেলাকে ৫টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা:

  • নিঃশব্দ খেলা (Quiet Play)
  • সৃজনশীল খেলা (Creative Play)
  • সক্রিয় খেলা (Active Play)
  • সমবেত বা দলগত খেলা (Co- operative Play)
  • অভিনয় জাতীয় খেলা (Dramatic Play)।

আরও পোস্ট দেখুন:

শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা উন্নয়নের উপায়সমূহ

17Jan2022

Multiple Intelligences

বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্ব

হাওয়ার্ড গার্ডনার অ্যামেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খ্যাতনামা শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী। বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে তার তত্ত্ব সাম্প্রতিক কালে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানে একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে এ তত্তে¡র প্রয়োগ করা হচ্ছে। গার্ডনার তাঁর বিখ্যাত বই “Frames of Mind: The Theory of Multiple Intelligences” তে শিখনের ক্ষেত্রে ৮ ধরনের বুদ্ধিমত্তা কাজ করে বলে উল্লেখ করেছেন, বুদ্ধিমত্তাগুলো হলো-

১। মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা;

২। যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা;

৩। দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা;

৪। ছন্দ ও সংগীত বুদ্ধিমত্তা;

৫। অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা;

৬। অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা;

৭। আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা;

৮। প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা।

বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ ও শিখন প্রক্রিয়া

বুদ্ধিমত্তা লক্ষণ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের শিখন শেখানো ক্ষেত্রে শ্রেণীকক্ষে বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বের প্রয়োগ যেভাবে করবেন- মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা: এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা শোনা, বলা ও পড়ার মাধ্যমে সহজে শেখে।

মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • শুনতে পছন্দ করে।
  • বলতে পছন্দ করে।
  • পড়তে পছন্দ করে।
  • লিখতে পছন্দ করে।
  • সহজে বানান করে।
  • গল্প বলে, গল্প লেখে।
  • সাবলীল ভাষায় বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে।
  • শব্দভান্ডার বেশি ও তা যথাযথ ব্যবহার করে।
  • গুছিয়ে কথা বলে।
  • স্মরণ শক্তি বেশি হয়।
  • ভালো বক্তৃতা দেয় ।      

মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • বিভিন্ন ধরনের পড়ার উপকরণ যেমন বইপত্র, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, লেখার বিভিন্ন উপকরণ, শ্রবণমূলক উপকরণ যেমন অডিও টেপ, শ্রবণ-দর্শনমূলক যেমন টেলিভিশন ইত্যাদি শ্রেণিকক্ষে ব্যবহারের সুবিধা নিশ্চিত করবেন।
  • মৌখিকভাবে ভাব প্রকাশে শিশুকে উৎসাহিত করবেন।
  • ভাষা সম্বন্ধীয় বুদ্ধিমত্তাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শিশুকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য বিভিন্ন কৌশলে প্রশ্ন করবেন (যেমন, তোমার মধ্যে কী কী সামাজিক গুণাবলি রয়েছে?)
  • ব্যক্তি, স্থান বা বস্তুর নাম স্মরণ করে বলার প্রতিযোগিতা করা
  • দেয়াল পত্রিকা সম্পাদনা করা।
  • জীবনের দৈনন্দিন ঘটনা লিখে রাখা।
  • সমস্যা বা ঘটনা বর্ণনা করা।
  • কোন বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা।
  • কারো সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা।

যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা:

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা সংখ্যা ও নকশার সাহায্যে সহজে শেখে। যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ:

  • গুনতে আনন্দ পায়।
  • বস্তুর সাহায্য ছাড়াই কোন বিষয়ে সহজে ধারণা লাভ করে।
  • সংক্ষিপ্ততা পছন্দ করে।
  • যুক্তি দিয়ে বিচার-বিবেচনা করে।
  • ধাঁ ধাঁ ও অঙ্কের খেলা পছন্দ করে।
  • সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে।
  • সমস্যা সমাধানে আনন্দ পায়।

যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • শ্রেণিতে নানা ধরনের ব্লক, বিভিন্ন আকৃতির, রংয়ের, আদলের, গঠন বিন্যাসের বস্তু থাকবে।
  • শিক্ষক এমন কিছু কাজ পরিকল্পনা করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা পরিমাপ ও হিসাব নিকাশ কাজে সম্পৃক্ত করার জন্য মানচিত্র, গ্রাফ পেপার, কম্পাস, থার্মোমিটার ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারে। যেমন চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব’ অধ্যায়ের জন্য বিগত চল্লিশ বছরে জনসংখ্যার বৃদ্ধি দেখাতে বলবেন।
  • তথ্য বর্ণনা করার সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য চার্ট ব্যবহার করবেন।
  • শিক্ষার্থীর সহায়তায় কোন কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা।
  • শিক্ষার্থীর সহায়তায় সমস্যা সমাধান করা।
  • একাধিক বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য খুঁজে বের করা।
  • জীবজন্তু ও গাছপালা শ্রেণিকরণ করা।

দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা: এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা ছবি, রেখাচিত্র ও রূপরেখার সাহায্যে সহজে শেখে।

দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • ছবির বিষয়বস্তু সম্বন্ধে চিন্তা করে।
  • ছবির সাহায্যে মনে রাখে।
  • ছবি আঁকতে ও রং করতে ভালবাসে।
  • প্রতিকৃতি বানাতে পছন্দ করে।
  • মানচিত্র, চার্ট এবং নকশা সহজে বুঝতে পারে।
  • কোন কিছুর চিত্র সহজে কল্পনা করে।
  • রূপক শব্দ ও বাক্য বেশি ব্যবহার করে।     

দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • তথ্য উপস্থাপনের সময় তথ্যগুলোকে দর্শনমূলকভাবে বা ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন। যেমন পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিবেশ’ অধ্যায়টি আপনি বাংলাদেশের সাহায়্যে উপস্থাপন করলে সবচেয়ে সফল হবেন। পাওয়ারপয়েন্ট, মানচিত্র, চার্ট, গ্রাফ, মডেল, কার্টুন, ভিডিও, স্লাইড ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
  • শিক্ষার্থীদের একক বা দলগত কাজ দর্শনমূলকভাবে উপস্থাপনা করা। যেমন: পোস্টার, সময় রেখা, মডেল, মানচিত্র, চার্ট, ধারণা মানচিত্র ও ব্যাখ্যামূলক ছবি ব্যবহার করার মতো উপযুক্ত কাজ দলগতভাবে করতে দিবেন।
  • পাঠ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকার ছবির ব্যবহার করা।

ছন্দ বা সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তা :

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা ছড়া, ছন্দ ও ধ্বনির তালে তালে সহজে শেখে।

ছন্দ বা সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • তাল ও লয়ের প্রতি বেশি আকর্ষণ থাকে।
  • সুর ও ছন্দ সহজে মনে প্রভাব বিস্তার করে।
  • গান পছন্দ করে। কবিতা ও ছড়া তালে তালে আবৃত্তি করতে পছন্দ করে।
  • প্রকৃতির বিভিন্ন শব্দ শুনে সহজে আকৃষ্ট হয়।

ছন্দ বা সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তু মনে রাখার জন্য ছন্দময় ছড়া তৈরি ও ব্যবহার করা।
  • বিষয়বস্তু দিয়ে কোনছড়া, ছন্দ, গান বা সুর তৈরি করা যাতে প্রয়োজনে সহজে স্মরণ করা যায়।

অনুভুতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা :

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা শারীরিক কলাকৌশল ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাহায্যে সহজে শেখে।         

অনুভুতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • খেলাধুলা পছন্দ করে।
  • কোন কিছু সহজে স্পর্শ করতে চায়।
  • হাতে কলমে কাজ করতে পছন্দ করে।
  • হস্ত শিল্পে দক্ষ হয়।
  • শরীর ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপর নিজের যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে।
  • অংশগ্রহণ করে সহজে শেখে।
  • বস্তু সহজে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • শুনে দেখে শেখার চেয়ে নিজে করে শেখে ও বেশি মনে রাখে।         

বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া

  • তাই শ্রেণিকক্ষে শারীরিক সঞ্চালনমূলক কিছু কাজের পরিকল্পনা করবেন যাতে এরা উপকৃত হয়। যেমন দলগত কাজ উপস্থাপন, নাচ, গান, ছবি আঁকা, পাজল, ব্লক, কাঠের ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতে দিন।
  • ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে উৎসাহিত করুন। পরিকল্পনা করে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য শ্রেণীকক্ষের বাইরে নিয়ে যান।
  • অভিনয়ের মাধ্যমে শেখান যেমন: ‘বিদ্যালয়ে আমাদের কাজ’।

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা অন্যের সঙ্গে ও দলে কাজ করে সহজে শেখে। অন্যের মনের কথা সহজে বুঝতে পারে।

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে।
  • অনেক বন্ধু বান্ধব থাকে।
  • ঝগড়া মেটাতে পছন্দ করে।
  • অন্যের কাজে সাহায্য করে।
  • দলে কাজ করতে পছন্দ করে।
  • সামাজিক পরিস্থিতি সহজে বুঝতে পারে।  

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া

  • এ ধরনের শিক্ষার্থীদের জন্য সহযোগিতামূলক শিখন কার্যক্রম পরিকল্পনা করবেন।
  • শ্রেণীতে এমন কিছু কাজ দিবেন যেখানে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে, সবাই মতামত দিতে পারে এবং যুক্তি দিতে পারে।
  • শিক্ষার্থীদেরকে ভালো কাজের জন্য উৎসাহিত (জবরহভড়ৎপব) করুন। যাতে একে অপরের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে শিখে।
  • সহযোগিতামূলক খেলার ব্যবস্থা করা

অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা একাকী চিন্তা ও কাজ করে সহজে শেখে।        

অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • একাকী থাকতে পছন্দ করে।
  • কম কথা বলে।
  • অধিক চিন্তা করে।
  • নিজে নিজে শিখতে চায়।
  • নিজের সম্বন্ধে সচেতন থাকে।
  • কোন ঘটনার পূর্বাভাস সহজে অনুমান করতে পারে।
  • একাকী কাজে উৎসাহী হয়।
  • নিজের সবলতা ও দূর্বলতা সহজে বুঝতে পারে।
  • সামাজিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে দূরে রাখে।      

অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া

  • নিজ নিজ কাজ পরিকল্পনা করতে দিন। কাজের পর আত্ম প্রতিফলনের সুযোগ করে দিন।
  • লেখার ভিতর দিয়ে তাদের অভিব্যক্তির ইতিবাচক প্রকাশকে উৎসাহিত করুন।
  • ব্যক্তিগত ডায়রি ব্যবহারে উৎসাহিত করুন। নিজের জীবন কথা বা ঘটনা, নিজের শিখন অভিজ্ঞতা ইত্যাদি ডায়রিতে লিখতে উৎসাহিত করুন।
  • পাঠ শেষে কী শিখতে অসুবিধা হয়েছে জিজ্ঞেস করুন।

প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা

এ বুদ্ধিমত্তা যাদের প্রবল তারা প্রকৃতির গাছপালা, পশুপাখি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে সহজে শেখে।

প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণসমূহ:

  • গাছপালা ও পশুপাখি পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করে।
  • পশুপাখি ও গাছপালার বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা করতে পছন্দ করে।
  • গাছপালা ও পশুপাখি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করে।
  • গাছ লাগাতে এবং যত্ন করতে ভালবাসে।
  • জীব জগতের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করতে পছন্দ করে।
  • প্রাণী ও উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করে।    

প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার শিখন প্রক্রিয়া:

  • শিখন শেখানোর সময় শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণিকক্ষের বাইরে নিয়ে যান যাতে শিশুরা পাঠগ্রহণের পাশাপাশি প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারে।
  • প্রকৃতিতে যা কিছু বৈচিত্র্য আছে (যেমন : গাছপালা, আবহাওয়া ইত্যাদি) তার সাথে বিষয়বস্তুর সম্পর্ক স্থাপন করতে সহায়তা দিন।
  • ফিল্ড ট্রিপ এর ব্যবস্থা করুন।
  • এ্যাকুরিয়ামে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সংগ্রহ রাখুন।

বহুমুখী বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা হয় আকর্ষণীয়, এতে শিশুর সুপ্ত প্রতিভার স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং প্রতিটি শিশুর মধ্যে জোরালো বুদ্ধিমত্তাকে শিখনের কাজে ব্যবহার করা যায়। ফলে শিখন প্রক্রিয়া আনন্দদায়ক হয়। অন্যদিকে কোনো শিশুর যেসব বুদ্ধিমত্তা কম, অন্যদের জোরালো বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় সেগুলোও শক্তিশালী হয়।

আরও পোস্ট দেখুন:

27Oct2021

Information and Communication Technology

তথ্য :

অর্থবহ কোন খবরই হলো তথ্য৷ সাধারণ অর্থে তথ্য হলো অর্থ বোধক বাক্য, সংকেত, সংখ্যা বা সংখ্যার সমষ্টি ৷ তথ্য হতে হলে একে অবশ্যই অর্থবহ হতে হবে৷

যোগাযোগ :

যোগাযোগ হচ্ছে তথ্য বা ভাবের আদান প্রদান করা৷ সংক্ষেপে বলতে গেলে-যোগাযোগ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ কথা,আকার-ইঙ্গিত বা প্রতীকের মাধ্যমে অর্থবহ উপায়ে এবং প্রয়োজনে কার্যকরভাবে তথ্য, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, আবেগ, মত বিনিময় করে থাকে৷ 

ই.সি.আয়ার (E.C EYrc)-এর মতে ‘‘অন্যে বুঝতে পারেন এবং সে মতে কাজও করতে পারেন এরুপ  বক্তব্য বা ভাব প্রেরক হতে গ্রাহক এর নিকট পৌঁছনকে যোগাযোগ বলা হয়”৷

ICT বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি :

[…]
11Aug2021

Teaching Aids : Uses & Its Principles, Collection, Making and Preservation

শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার

প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ শিশুর সামনে বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য শিক্ষোপকরণের বিকল্প নেই৷ এর মাধ্যমে জটিল, বিমূর্ত, ও দূর্বোধ্য বিষয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের সামনে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা যায়৷ একজন শিক্ষকের তাই শিক্ষোপকরণ ও এর ব্যবহার সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা প্রয়োজন৷ 

শ্রেণিতে শিক্ষাপোকরণ ব্যবহার করে কি ধরণের সুবিধা পাওয়া যায়, পাঠকে কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, কিভাবে পাঠকে বাস্তবভিত্তিক করে তোলা যায় কিভাবে বিমূর্ত বিষয়কে মূর্ত করে তোলা যায় এগুলো বোঝার জন্য শিক্ষাপোকরণের প্রয়োজনীয়তা জানা প্রয়োজন৷

শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা

  • বিষয়বস্তুকে সহজ ও প্রাণবন্ত করতে;
  • শিক্ষার্থীদের মনযোগ আকর্ষণ করতে;
  • শিখনফল অর্জন নিশ্চিত করা;
  • জটিল বিষয়কে খুব সহজে উপস্থাপন করা;
  • শিখনফল দীর্ঘস্থায়ী করা;
  • শিখন ফলপ্রসূ ও স্থায়ী করতে;
  • উপকরণ ব্যবহার ও অনুশীলনের যথাযথ সুযোগ সৃষ্টি করা;
  • শিখন শেখানো কার্যক্রমে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা;
  • পাঠকে জীবনভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত করা;
  • শিক্ষার্থীদের পাঠের সাথে সম্পৃক্ত করে তুলতে;
  • শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও চিন্তাশীল করে তুলতে;
  • পাঠের একঘেয়েমী দূর করতে;
  • ইন্দ্রিয় শক্তির ব্যবহার বাড়াতে;
  • শ্রেণি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে।

শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের নীতিমালা

  • শ্রেণির আয়তন ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার প্রতি খেয়াল রেখে উপকরণের সাইজ নির্ধারণ করা।
  • পেছনের সারি হতেও যাতে দেখা যায় তা মাথায় রেখে সকলের দৃষ্টিগ্রাহ্য ও স্পষ্টতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া।
  • শিক্ষার্থীর বয়স, মেধা, রূচি ও সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখা।
  • পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর সহিত মিল রাখা।
  • কাঠিন্য পরিহার করে সহজভাবে উপস্থাপন করা।
  • উপকরণকে শিক্ষাক্রমের সাথে সমন্বয় করা।
  • অকারণেই অধিক চাকচিক্য পরিহার করা।
  • উপকরণকে বোধগম্য ও অর্থপূর্ণ করা।

উপকরণ ব্যবহারের কৌশল

  • শ্রেণিতে প্রবেশ করেই উপকরণ প্রদর্শন না করা;
  • উপস্থাপন পর্যায়ে যখন প্রয়োজন তখন প্রদর্শন করা;
  • যতক্ষণ প্রয়োজন ঝুলিয়ে রাখা;
  • উপকরণ প্রদর্শনে শিশুদের সহায়তা নেওয়া;
  • উপকরণ হিসেবে শ্রেণির শিশুদের ব্যবহার করা;
  • সকলের জন্য দৃশ্যমান করে উপকরণ উপস্থাপন করা;
  • শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি জিনিসকে প্রয়োজনে পাঠের সাথে সংশ্লিষ্ট করে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা;
  • উপকরণের ওপর প্রশ্ন করা বা উপকরণ সম্পর্কে কিছু বলতে দেওয়া।

আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানান রকমের শিক্ষোপকরণ ব্যবহার হয়৷ বিষয় ভিত্তিক নানান উপকরণ রয়েছে৷ উপকরণগুলোর ব্যবহার শৈলীর মধ্যেও অনেক পার্থক্য আছে৷ একজন শিক্ষকের এই ভিন্ন ভিন্ন উপকরণগুলোর ব্যবহার শৈলী জানা প্রয়োজন৷ এছাড়াও শ্রেণিকক্ষে উপকরণ প্রদর্শনের নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন আছে যাতে সকল শিক্ষার্থী উপকরণ ব্যবহারের সুফল পায় এবং শ্রেণি পাঠদান সার্থক হয়৷  

একটি শিক্ষোপকরণ শুধু একবারই ব্যবহার হয় না৷ কিংবা বিদ্যালয়ে শুধু একজন শিক্ষকই ব্যবহার করেন না৷ এগুলো বার বার ব্যবহার হয়৷ তাই এগুলো সঠিক ভাবে সংরক্ষণের উপায় জানা জরুরী৷ বিদ্যালয়ে বিষয় অনুযায়ী উপকরণ গুলো সাজিয়ে রাখলে খুজে পেতে সুবিধা হয়৷ ছোট ছোট উপকরণ গুলো বক্সে রাখা যেতে পারে৷ পোস্টার, ছবি, মানচিত্র ইত্যাদি দেয়ালে ঝুলিয়ে বা গোল করে পেচিয়ে রাখা যেতে পারে৷ সকল উপকরণ শুকনা স্থানে রাখা প্রয়োজন৷

শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি

প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষক স্ব-প্রণোদিত হয়ে বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও সংগ্রহ করবেন। একজন শিক্ষক নিজ উদ্যোগে শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও সংগ্রহ করার জন্য যা করতে পারেন:

  • তিনি যেসকল বিষয়ে পাঠদান করেন তার একটি তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
  • তালিকা দেখে কোন কোন উপকরণ সহজলভ্য ও স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাবে তা চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে তালিকা প্রণয়নের সময় সহজলভ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
  • তালিকা অনুসারে প্রথমে নিকট পরিবেশ, স্থানীয় জনগণ ও অভিভাবকদের থেকে সহজলভ্য উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে।
  • বিনামূল্যে উপকরণ সংগ্রহ করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
  • যে সকল উপকরণ সংগ্রহ করা হবে তার স্থায়ীত্ব বিবেচনা করে তা দীর্ঘদিন অথবা বারবার ব্যবহার করা যাবে কিনা তা মাথায় রাখতে হবে।
  • শিক্ষার্থীর বয়স, আগ্রহ, সামর্থ্য ও রুচির প্রতি খেয়াল রেখে শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পরিকল্পনা করতে হবে।
  • সম্ভাব্য উপকরণটি শিক্ষার্থীর পাঠ গ্রহণে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সহায়ক কি না তা বিবেচনা করতে হবে।
  • প্রয়োজনে একই উপকরণ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবহার করা যায় কি না তা খেয়াল রাখতে হবে।
  • শিক্ষা উপকরণের কাঠামো শ্রেণী উপযোগী কি না তা বিবেচনা করতে হবে।
  • তালিকা অনুসারে উপকরণ সংগ্রহের পাশাপাশি স্বল্পখরচে উপকরণ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সকলে মিলে পরিকল্পনা মাফিক সময় নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়েও কম খরচে ও স্বল্প পরিশ্রমে উপকরণ তৈরি করতে হবে।

শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণ

শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পাশাপাশি শিক্ষককে অবশ্যই একটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে তা হলো যথাযথভাবে উপকরণ সংরক্ষণ করা। আমাদের দেশে উপকরণ সংরক্ষণ করে সেই উপকরণ বারবার ব্যবহার করার বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। সঠিকভাবে শিক্ষা উপকরণ সংগঠিত না করলে এবং এগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পুরো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে। কাজেই শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি হয়ে গেলে এসবের যথাযথ সংরক্ষণ করা জরুরী।

শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণের কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো:

  • সর্বপ্রথমে একটি উপকরণ কর্ণার নির্ধারণ করতে হবে।
  • স্টক রেজিস্টার চালু করতে হবে এবং সব ঠিকঠাক আছে কিনা নিয়মিত যাচাই করতে হবে।
  • কক্ষটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, যথাযথ আলোর ব্যবস্থা এবং অবশ্যই জীবাণুমুক্ত ও কীট পতঙ্গমুক্ত হতে হবে।
  • প্রত্যেক শ্রেণি ও বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা আলমারী কিংবা র‌্যাক ট্যাগ লাগিয়ে রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনের সময় দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়।
  • প্রতিটি শিক্ষা উপকরণের নাম, সংগ্রহের তারিখ, স্থান, সংগ্রহকারীর নাম ইত্যাদির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণযুক্ত লেবেল লাগিয়ে রাখলে ভালো হয়।
  • দামী ও দুর্লভ উপকরণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
  • ব্যবহারের পর অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • পঁচনশীল উপকরণ সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি, ফরমালিন ইত্যাদি মিশিয়ে রাখতে হবে।
  • বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করার পূর্বেই তা পরীক্ষা করতে হবে এবং অতি সাবধানতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
  • উপকরণ সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত কক্ষের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষককে প্রদান করলে ভালো হয়।
  • যেসব উপকরণ শ্রেণীকক্ষে ঘন ঘন ব্যবহারের প্রয়োজন হয় সেসব উপকরণ একটি নির্দিষ্ট স্থানে এবং যেসব উপকরণ ঘন ঘন ব্যবহার হয় না সেসব উপকরণ পৃথক স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষা উপকরণ ও এর সংজ্ঞা, শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে প্রেস করুন।

10Aug2021

Summative evaluation

সামষ্টিক মূল্যায়ন কী?

সামষ্টিক মূল্যায়ন টার্মটি চূড়ান্ত বা প্রান্তিক মূল্যায়ন নামেও পরিচিত। একটি নির্দিষ্ট কোর্স শেষে শিক্ষার্থীর শিখন অর্জন চূড়ান্তভাবে যাচাই করার উদ্দেশ্যে যে মূল্যায়ন করা হয়, তাকেই সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হয়। এ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন অর্জনের তুলনামূলক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়৷ চূড়ান্ত বা সামষ্টিক মূল্যায়ন একটি নিদিষ্ট সময়ের শেষেও নেওয়া যায়৷ কোন শিক্ষা পরিকল্পনা বা শিক্ষা কার্যক্রমের শেষে এসে যে মূল্যায়ন করা হয় তাকে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলে।

সামষ্টিক মূল্যায়নের সংজ্ঞা

আর. এন প্যাটেলের এর মতে- “কোন কর্মকান্ড সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সর্বশেষ মূল্যায়ন বা সিদ্ধান্ত কে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলে”।

এর প্রাথমিক উদ্দেশ্যসমূহ- গ্রেড নির্ণয়, শিক্ষণ দক্ষতার বিচার, শিক্ষাক্রমের পর্যালোচনা, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন, শিক্ষণ পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই ইত্যাদি ।

সামষ্টিক বা চূড়ান্ত মূল্যায়নের বৈশিষ্ট্য

  • সামষ্টিক মূল্যায়ন আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়।
  • শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি সম্পর্কে সার সংক্ষেপ পাওয়া যায়।
  • একটি নির্দিষ্ট সময় যেমন : বছর, ৩ মাস, ৬ মাস ইত্যাদি শেষে এ মূল্যায়ন করা হয়৷
  • এ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নম্বর/মাকর্স প্রদান করে শিক্ষার্থীদের শিখনের তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যায়৷
  • এ মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকার উল্লে­খ থাকে৷ কখনও গ্রেড দেওয়া হয়৷
  • এ মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের পাশ ও ফেল নির্ধারণ করা হয়৷ যারা পাশ করে তাদের কোন কোন ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট ও পুরস্কার দেওয়া হয়৷
  • এ মূল্যায়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব বা পারদর্শিতা মূল্যায়ন৷
  • চূড়ান্ত মূল্যায়ন অভীক্ষা প্রয়োগ করে বা প্রজেক্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
  • এটি শিক্ষার্থী কর্তৃক নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের চূড়ান্ত অবস্থার মূল্যায়ন।

  সামষ্টিক বা চূড়ান্ত মূল্যায়নের সীমাবদ্ধতা

এ মূল্যায়ন অনেকক্ষেত্রে পাশনির্ভর পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়৷ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ব্যতীত এ পদ্ধতি এককভাবে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জন সফল না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷দুর্বল শিক্ষার্থীদের নিরাময়মূলক ব্যবস্থা নিয়ে শিখন ঘাটতি দূরীকরণের সুযোগ থাকে না৷এ মুল্যায়নে শিক্ষার্থীর আচরণের যে দিকগুলো আসা উচিত তা হল জ্ঞান, দক্ষতা ও অনুভূতি৷ প্রচলিত চূড়ান্ত মূল্যায়নে সাধারণত জ্ঞান অর্জনমূলক আচরণ যাচাই করা হয়৷

সামষ্টিক বা চূড়ান্ত মূল্যায়নে ব্যবহৃত উপকরণ

১. লিখিত পরীক্ষা : যেমন-  রচনামূলক ও নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা।

২. মৌখিক পরীক্ষা : যেমন- ভর্তি পরীক্ষা বা এ ধরণের কোন পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষা।

৩. ব্যবহারিক পরীক্ষা

৪. এছাড়াও অ্যাসাইনমেন্ট, টার্ম পেপার বা কিউমুলেটিভ রেকর্ড সামষ্টিক মূল্যায়নে ব্যবহৃত হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রচলিত সামষ্টিক মূল্যায়ন

সাময়িক মূল্যায়ন:

প্রথম সাময়িক ও দ্বিতীয় সাময়িক কখন সম্পন্ন হয়?

৩-৪ মাস পরে প্রথম সাময়িক মূল্যায়ন হয়, ৬-৭ মাস পরে দ্বিতীয় সাময়িক মূল্যায়ন হয়৷

বার্ষিক মূল্যায়ন:

বছরের শেষে সমগ্র বইয়ের ওপর অনুষ্ঠিত হয৷

মূল্যায়নের স্থান: নিজ বিদ্যালয়

পরিচালনার দায়িত্ব:

বিদ্যালয় পর্যায়ে পরিচালনার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকগণের এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছে, স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের বিষয় শিক্ষকগণ সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে থাকেন৷

উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক প্রণীত অভিন্ন প্রশ্ন ব্যবহার করে এ মুল্যায়ন করা হয়৷

ফলাফল:

বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং প্রধান শিক্ষক উত্তরপত্র যাচাই করা হয়৷

ফলাফল প্রস্তুত করে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক কর্তৃক অংশীজনের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়৷ ফলাফলে কৃতকার্য ও অকৃতকার্য এবং শ্রেণিতে মেধা তালিকায় স্থান ঘোষণা করা হয়৷

প্রাথমিক স্তরের সমাপনী পরীক্ষা কী?   

পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পরে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষায় যোগ্যতা অর্জন যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে যে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তা হল সমাপনী পরীক্ষা৷

কখন ও কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?

পঞ্চম শ্রেণির শেষে নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে এ পরীক্ষা উপজেলা পর্যায়ে কয়েকটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়৷

ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে প্রেস করুন।

মূল্যায়ন ও এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে এই লিংকে প্রেস করুন।

Ad

error: Content is protected !!