প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে শিল্পকলা - Proshikkhon

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে শিল্পকলা

শিল্পকলা/চারু ও কারুকলা : প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ

আলোচ্য বিষয়:

  • শিল্পকলা কী?
  • শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বিকাশে শিল্পকলা
  • প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে শিল্পকলার গুরুত্ব

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে শিল্পকলা (Arts in primary education)

শিল্পকলা কী?

শিল্পকলাকে সুনির্দিষ্টভাবে সজ্ঞায়িত করা কঠিন। কারো মতে দৃশ্য বা অদৃশ্য কোন ভাবরূপ শিল্পীর চিত্তরসে নবরূপায়িত হয়ে যে স্থিতিশীল রূপপ্রকাশ ঘটে তাকে শিল্পকলা বা সংক্ষেপে শিল্প বলে। (উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ)

শিল্পের জগৎ ও বিষয়বস্তুর বৈচিত্রময়তার জন্য শিল্পের সজ্ঞায় মতপার্থক্য থাকলেও নিম্নোক্ত দুটি বিষয়ে অনেকের মধ্যেই মতানৈক্য রয়েছে; যেমন-

প্রথমত, শিল্প হচ্ছে, মানুষের মধ্যে ভাব প্রকাশের যে একটি অবিরত তাগিদ রয়েছে তারই বাহ্যিক রূপায়ন এবং

দ্বিতীয়ত, শিল্প মানুষকে সত্য, সুন্দর এবং মঙ্গলের কাছাকাছি নিয়ে যায়। (শিল্পে নান্দনিকতা: দর্শন, লোপামুদ্রা চক্রবত্তী, অতিথি অধ্যাপিকা, মেমরি কলেজ, কলকাতা)।

শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে; যেমন- চারু ও কারুকলা, সংগীত, বাদ্য, নৃত্য, অভিনয়, সাহিত্য, ভাস্কর্য, স্থাপত্য ইত্যাদি।

শিশু বিকাশে শিল্পকলার গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায় শিল্পকলাকে বিষয় হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষায় শিল্পকলা বিষয় হিসেবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ অনুরূপভাবে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকে অন্যান্য বিষয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রেও শিল্পকলার গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণে শিল্পকলা নামে একটি বিষয়ে শিল্পের চারটি মাধ্যমকে সন্নিবেশ করে উপস্থাপন করা হয়েছে। মাধ্যমগুলো হলো – ১) চারু ও কারুকলা ২) সংগীত ৩) নৃত্য এবং ৪) নাট্য কলা।

শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বিকাশে শিল্পকলা

প্রতিটি শিশুই অনন্য ও বৈচিত্রপূর্ণ। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, চাহিদা, পছন্দ-অপছন্দ, চিন্তা, আচরণ ইত্যাদির ভিন্নতার কারনেই তারা বৈচিত্রপূর্ণ। শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যার্জন দিয়ে একটি শিশুর সার্বিক বিকাশ সম্ভব হয়ে ওঠে না। শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের পূর্ণতা পেতে বই, খাতা, কলমের পাশাপাশি শিল্প ও সাংস্কৃতিক চর্চা অপরিহার্য। শিশুর সুষম ও সমন্বিত বিকাশ নিশ্চিত করতে তার পঞ্চইন্দ্রিয় এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার বৃদ্ধি করা জরুরি। যা শিল্পকলার প্রায় প্রতিটি শাখার চর্চার মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব।

একটি শিশু অপার সম্ভবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কেউ-ই কোন বিষয়ে পূর্ণতা নিয়ে বা প্রতিষ্ঠিত হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। জন্মের পর তার আগ্রহ ভাললাগার ওপর ভিত্তি করে চর্চার মাধ্যমে এক একটি বিষয়ে এক একজন মানুষ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠেন। আমরা কেউ-ই বলতে পারি না যে, আজকের শিশুটির মধ্যে একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানীর পাশাপাশি লুকায়িত নেই আগামীর জয়নুল আবেদীন, রবীন্দ্রনাথ, রুনালায়লা, রাজ্জাক, কবরী, কিংবা বুলবুল চৌধুরী। শিল্পসত্বা নিয়ে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে শিক্ষা ক্ষেত্রে তাকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি শিল্প চর্চার সুযোগ দেওয়ায় হলো শিশুর চাহিদা ভিত্তিক বিকাশের ক্ষেত্র নিশ্চিত করা।

প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক বিষয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রেও শিল্পকলা বিষয়টির গুরুত্ব অপরিসীম। পাঠের বিষয়বস্তু অনুযায়ী শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠ উপস্থাপন করলে প্রতিটি শিশু যেমন আনন্দের সাথে শেখে-তেমনি তার শিখনফল অর্জিত হয় সহজে এবং শিখনফল দীর্ঘস্থায়ী হয়। এছাড়াও শ্রেণিকক্ষের কার্যাবলি সক্রিয় ও প্রাণবন্ত হয় এবং শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে পাঠে অংশগ্রহণ করে। আবার শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ে পাঠের ক্ষেত্রে মূর্ত থেকে বিমূর্ত ধারনা লাভের জন্য যে কল্পনা বা চিন্তা শক্তির প্রয়োজন তা শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে বিকশিত হয়। শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে অন্যান্য বিষয়ে পাঠদান যেমন আনন্দদায়ক করা যায় তেমনি আবার শিল্পকলা শিখনে শিশুরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহন করে মনোযোগের সাথে ছবি আঁকে,গান গায়, দেহের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নৃত্য করে, অভিনয় করে। এর মাধ্যমে শিশুর শৃজনী শক্তির বিকাশ ঘটে এবং উদ্ভাবনী ও কল্পনাশক্তির প্রসার ঘটে।

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে শিল্পকলার গুরুত্ব

শিশুরা খেলতে খেলতে শেখে। তারা শেখে আঁকিবুঁকি, গান, ছন্দ-ছড়ার মাধ্যমে। তারা আঁকিবুঁকি, গান, আর ছন্দ-ছড়ার মাধ্যমে যেমন শেখে তেমনি আঁকিবুঁকি, গান আর ছন্দ ছড়াও শেখে। শিল্প আনন্দদায়ক। শিল্প শিখন আনন্দদায়ক; আবার শিল্পের মাধ্যমে শিখনও আনন্দদায়ক। শিশুদের শিখন পরিবেশ যতবেশি আনন্দদায়ক হবে শিখন ততবেশি ফলপ্রসু হবে। সার্বিক বিবেচনায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায় শিল্পকলা বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষায় শিল্পকলা বিষয়ের কিছু গুরুত্ব নির্ণয় করা যায়, যেমন-

  • শিল্পকলার মাধ্যমে শিশু আকার, আকৃতি, রং, রূপ, গঠন ইত্যাদি ধারণা স্পষ্ট হয়।
  • শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক হয়।
  • শিল্পকলা চর্চা শিশুর মধ্যে যে শিল্পবোধ, সৌন্দর্যবোধের জন্ম দেয় তা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে    সহায়তা করে।
  • শিশুকে পরিবেশের সাথে পরিচয় ঘটায় এবং পরিবেশ সচেতন হতে শেখায়।
  • শিশুর সৃজনী শক্তি, কল্পনাশক্তি বিকাশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
  • নান্দনিক মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
  • সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়।
  • শিখন পরিবেশ আনন্দদায়ক ও ফলপ্রসূ করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!